ইউপি সদস্যের টর্চার সেলে আটকে রেখে নির্যাতনে যুবকের মৃত্যু

মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ মহাসড়ক অবরোধ

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের চলবলা ইউনিয়নের সুকানদিঘিতে এক ইউপি সদস্যের টর্চারসেলে তিন দিন আটকে রেখে অমানসিক নির্যাতনের পর আনোয়ারুল ইসলাম (৩০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এদিকে গতকাল বিকেলে ওই যুবকের মরদেহ রংপুর থেকে তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলে স্বজন ও এলাকাবাসী হত্যার প্রতিবাদে জেলার নামুড়ি বাজারে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী অবরোধের পর লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানার আশ্বাসে অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে।

গতকাল দুপুরে কালীগঞ্জ থানার ওসি গোলাম রসুল এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, তিন দিন আটকে রেখে নির্যাতনের খবর পাওয়ার পর ওই টর্চারসেলে অভিযান চালিয়ে যুবক আনোয়ারুলকে গত ৬ জানুয়ারি উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার রাতে তিনি মারা যান।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামে মজিবরের ছেলে আনোয়ারুল ইসলাম। তার কাছে টাকা পাওনা ছিল কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউপির ৯নং ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত সদস্য মোজাম্মেল হক। পাওনা টাকা চাইতে আনোয়ারুলের বাড়িতে যান ইউপি সদস্য ও তার বাহিনী। পরে টাকা না পেয়ে আনোয়ারুলকে ধরে নিয়ে আসে তার টর্চারসেলে। তিন দিন আটকে রেখে তার ওপর চলে পৈশাচিক নির্যাতন। আনোয়ারুলের হাত ও পায়ের নখ হাতুড়ি দিয়ে থেতলে দেয়াসহ অমানসিক নির্যাতন করা হয়।

এ সময় তাকে উদ্ধার করতে প্রতিবেশী কুদ্দুসের ছেলে রোকনুজ্জামান এগিয়ে এলে তাকেও আটকে রেখে নির্যাতন করে মোজাম্মেল বাহিনী। আনোয়ারুল চিৎকার-চেঁচামেচি করলে এক পর্যায়ে ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক তার বৃদ্ধাঙুল কেটে দেন।

পরদিন আত্মীয়-স্বজনরা আটকে রাখার খবর পেয়ে ইউপি সদস্যের বাড়িতে ছুটে যান। কিন্তু ইউপি সদস্য তার পরিবারের কথা না শুনে লাঠি দিয়ে ধাওয়া করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। উপায় না পেয়ে তারা কালীগঞ্জ থানা ও ৯৯৯ ফোন করেন। খবর পেয়ে পুলিশ গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। ওইদিন সন্ধ্যায় পাঁচজনকে আসামি করে কালীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার আসামিরা হলেন জেলার কালীগঞ্জ ইউনিয়নের চলবলা ইউপির ৯নং ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত সদস্য মোজাম্মেল হক (৪৬), তার ছোট ভাই মোশারফ হোসেন ভুট্টু (৩০) ও ছেলে সুজন (২৪)। বাকিদের নাম জানা যায়নি।

কালীগঞ্জ থানার ওসি গোলাম রসুল আরও জানান, এ ঘটনায় অভিযুক্ত প্রধান আসামি ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক ও তার ভাই মোশারফ হোসেন ভুট্টুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

শুক্রবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২২ , ৩০ পৌষ ১৪২৮ ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

লালমনিরহাট

ইউপি সদস্যের টর্চার সেলে আটকে রেখে নির্যাতনে যুবকের মৃত্যু

মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ মহাসড়ক অবরোধ

মনিরুজ্জামান সরকার, লালমনিরহাট

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের চলবলা ইউনিয়নের সুকানদিঘিতে এক ইউপি সদস্যের টর্চারসেলে তিন দিন আটকে রেখে অমানসিক নির্যাতনের পর আনোয়ারুল ইসলাম (৩০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এদিকে গতকাল বিকেলে ওই যুবকের মরদেহ রংপুর থেকে তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলে স্বজন ও এলাকাবাসী হত্যার প্রতিবাদে জেলার নামুড়ি বাজারে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী অবরোধের পর লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানার আশ্বাসে অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে।

গতকাল দুপুরে কালীগঞ্জ থানার ওসি গোলাম রসুল এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, তিন দিন আটকে রেখে নির্যাতনের খবর পাওয়ার পর ওই টর্চারসেলে অভিযান চালিয়ে যুবক আনোয়ারুলকে গত ৬ জানুয়ারি উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার রাতে তিনি মারা যান।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামে মজিবরের ছেলে আনোয়ারুল ইসলাম। তার কাছে টাকা পাওনা ছিল কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউপির ৯নং ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত সদস্য মোজাম্মেল হক। পাওনা টাকা চাইতে আনোয়ারুলের বাড়িতে যান ইউপি সদস্য ও তার বাহিনী। পরে টাকা না পেয়ে আনোয়ারুলকে ধরে নিয়ে আসে তার টর্চারসেলে। তিন দিন আটকে রেখে তার ওপর চলে পৈশাচিক নির্যাতন। আনোয়ারুলের হাত ও পায়ের নখ হাতুড়ি দিয়ে থেতলে দেয়াসহ অমানসিক নির্যাতন করা হয়।

এ সময় তাকে উদ্ধার করতে প্রতিবেশী কুদ্দুসের ছেলে রোকনুজ্জামান এগিয়ে এলে তাকেও আটকে রেখে নির্যাতন করে মোজাম্মেল বাহিনী। আনোয়ারুল চিৎকার-চেঁচামেচি করলে এক পর্যায়ে ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক তার বৃদ্ধাঙুল কেটে দেন।

পরদিন আত্মীয়-স্বজনরা আটকে রাখার খবর পেয়ে ইউপি সদস্যের বাড়িতে ছুটে যান। কিন্তু ইউপি সদস্য তার পরিবারের কথা না শুনে লাঠি দিয়ে ধাওয়া করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। উপায় না পেয়ে তারা কালীগঞ্জ থানা ও ৯৯৯ ফোন করেন। খবর পেয়ে পুলিশ গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। ওইদিন সন্ধ্যায় পাঁচজনকে আসামি করে কালীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার আসামিরা হলেন জেলার কালীগঞ্জ ইউনিয়নের চলবলা ইউপির ৯নং ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত সদস্য মোজাম্মেল হক (৪৬), তার ছোট ভাই মোশারফ হোসেন ভুট্টু (৩০) ও ছেলে সুজন (২৪)। বাকিদের নাম জানা যায়নি।

কালীগঞ্জ থানার ওসি গোলাম রসুল আরও জানান, এ ঘটনায় অভিযুক্ত প্রধান আসামি ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক ও তার ভাই মোশারফ হোসেন ভুট্টুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।