সাকরাইন উৎসবে ফানুস আতসবাজি নিষিদ্ধের দাবি

আসন্ন সাকরাইন উৎসবসহ সবধরনের উৎসবে বাজি, শব্দ ও বায়ুদূষণকারী কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। একইসঙ্গে এর ক্রেতা ও বিক্রেতাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবিও জানানো হয়েছে। ক্যাপসের প্রধান এবং স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার এ দাবি জানান। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

এদিকে, আজ উৎযাপন হতে যাওয়া পুরান ঢাকার ঐতাহ্যবাহী সাকরাইন উৎসবে এবার নিষিদ্ধ থাকছে ফানুস ও আতশবাজি। পৌষ মাসের শেষ দিন পৌষ সংক্রান্তির এ অনুষ্ঠান ঘিরে ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা সাকরাইন উৎসবে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ব্যবস্থা করছি। তারা যাতে এমন উদযাপন না করে সেজন্য পুরান ঢাকার বিভিন্ন কমিউনিটির নেতাদের সঙ্গেও কথা বলবো। মানুষের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করা কঠিন। কমিউনিটি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এগুলো বন্ধের উদ্যোগ নিচ্ছি। লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, সাকরাইন ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। ঘুড়ি উড়ানোর পাশাপাশি এই উৎসবে ফানুস উড়ানো এবং আতশবাজি ফোটানোসহ শব্দ ও বায়ু দূষণকারী নানান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এটি দেশের প্রচলিত পরিবেশ সংরক্ষণ আইন এবং শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালায় সুস্পষ্ট অপরাধ হলেও দূষণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় না।

তিনি বলেন, অযথা শব্দ ও বায়ুদূষণ করা আইনত নিষিদ্ধ থাকার পরও প্রশাসনের নীরব ভূমিকার কারণে গত ৩১ ডিসেম্বর থার্টিফার্স্ট নাইট এবং বর্ষবরণে এটি অতিরিক্ত মাত্রায় পৌঁছেছে। যা উৎসবকে সন্ত্রাসের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এতে ভীত হয়ে একটি শিশুর প্রাণ ঝরেছে, আগুনে সর্বস্ব হারিয়েছে অনেকে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো এসব দেখেও কিছুই না জানার ভাব করে আছে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের নীরবতার সুযোগে ক্রমশ বেড়ে চলেছে উৎসবের নামে শব্দ সন্ত্রাস।

গত ৫ বছর ধরে জাতীয় উৎসবকেন্দ্রীক শব্দ ও বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণ করে আসছে ক্যাপস। এতে নিশ্চুপ ভূমিকায় না থেকে সাকরাইন উৎসবের আগেই আতশবাজি ফাটানো এবং ফানুস উড়ানো বন্ধের দাবি জানায়। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত ইংরেজি নববর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে আতশবাজি ফাটানো ও ফানুস উড়ানোকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই সময় রাজধানীর অন্তত ১০টি স্থানে অগ্নিকা-ের ঘটনা এবং এক শিশুর অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে উঠে এসেছে। বর্ষবরণের রাতে ক্যাপসের গবেষণায় অন্য সময়ের তুলনায় ৭৮ শতাংশ বেশি শব্দ ও ৩৩ শতাংশ বেশি বায়ু দূষণের তথ্য উঠে এসেছে। যা সবদিক থেকে মানুষ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর। একইসঙ্গে অন্তত জনস্বাস্থ্যের বিবেচনায় বিয়ে অনুষ্ঠানসহ সব ধরনের উৎসবে আতশবাজি ফাটানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এর ক্রেতা ও বিক্রেতাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবিও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

উল্লেখ্য, এবার থার্টিফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন শুরুর কিছু সময়ের মধ্যে অনেকগুলো অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। একসঙ্গে ফায়ার সার্ভিস ও জাতীয় জরুরিসেবা ৯৯৯-এর হটলাইন নম্বরগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে সারাদেশ থেকে প্রায় ২০০টি অগ্নিকা-ের খবর আসে ফায়ার সার্ভিস ও ৯৯৯ এর কন্ট্রোল রুমে। ফায়ার সার্ভিস প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারে, এসব অগ্নিকা-ের বেশিরভাগই ঘটেছে ফানুসের কারণে। তবে কয়েকটি অগ্নিকা- আতশবাজির কারণে হয়েছে বলে জানা গেছে।

শুক্রবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২২ , ৩০ পৌষ ১৪২৮ ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

সাকরাইন উৎসবে ফানুস আতসবাজি নিষিদ্ধের দাবি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

আসন্ন সাকরাইন উৎসবসহ সবধরনের উৎসবে বাজি, শব্দ ও বায়ুদূষণকারী কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। একইসঙ্গে এর ক্রেতা ও বিক্রেতাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবিও জানানো হয়েছে। ক্যাপসের প্রধান এবং স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার এ দাবি জানান। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

এদিকে, আজ উৎযাপন হতে যাওয়া পুরান ঢাকার ঐতাহ্যবাহী সাকরাইন উৎসবে এবার নিষিদ্ধ থাকছে ফানুস ও আতশবাজি। পৌষ মাসের শেষ দিন পৌষ সংক্রান্তির এ অনুষ্ঠান ঘিরে ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা সাকরাইন উৎসবে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ব্যবস্থা করছি। তারা যাতে এমন উদযাপন না করে সেজন্য পুরান ঢাকার বিভিন্ন কমিউনিটির নেতাদের সঙ্গেও কথা বলবো। মানুষের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করা কঠিন। কমিউনিটি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এগুলো বন্ধের উদ্যোগ নিচ্ছি। লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, সাকরাইন ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। ঘুড়ি উড়ানোর পাশাপাশি এই উৎসবে ফানুস উড়ানো এবং আতশবাজি ফোটানোসহ শব্দ ও বায়ু দূষণকারী নানান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এটি দেশের প্রচলিত পরিবেশ সংরক্ষণ আইন এবং শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালায় সুস্পষ্ট অপরাধ হলেও দূষণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় না।

তিনি বলেন, অযথা শব্দ ও বায়ুদূষণ করা আইনত নিষিদ্ধ থাকার পরও প্রশাসনের নীরব ভূমিকার কারণে গত ৩১ ডিসেম্বর থার্টিফার্স্ট নাইট এবং বর্ষবরণে এটি অতিরিক্ত মাত্রায় পৌঁছেছে। যা উৎসবকে সন্ত্রাসের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এতে ভীত হয়ে একটি শিশুর প্রাণ ঝরেছে, আগুনে সর্বস্ব হারিয়েছে অনেকে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো এসব দেখেও কিছুই না জানার ভাব করে আছে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের নীরবতার সুযোগে ক্রমশ বেড়ে চলেছে উৎসবের নামে শব্দ সন্ত্রাস।

গত ৫ বছর ধরে জাতীয় উৎসবকেন্দ্রীক শব্দ ও বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণ করে আসছে ক্যাপস। এতে নিশ্চুপ ভূমিকায় না থেকে সাকরাইন উৎসবের আগেই আতশবাজি ফাটানো এবং ফানুস উড়ানো বন্ধের দাবি জানায়। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত ইংরেজি নববর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে আতশবাজি ফাটানো ও ফানুস উড়ানোকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই সময় রাজধানীর অন্তত ১০টি স্থানে অগ্নিকা-ের ঘটনা এবং এক শিশুর অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে উঠে এসেছে। বর্ষবরণের রাতে ক্যাপসের গবেষণায় অন্য সময়ের তুলনায় ৭৮ শতাংশ বেশি শব্দ ও ৩৩ শতাংশ বেশি বায়ু দূষণের তথ্য উঠে এসেছে। যা সবদিক থেকে মানুষ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর। একইসঙ্গে অন্তত জনস্বাস্থ্যের বিবেচনায় বিয়ে অনুষ্ঠানসহ সব ধরনের উৎসবে আতশবাজি ফাটানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এর ক্রেতা ও বিক্রেতাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবিও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

উল্লেখ্য, এবার থার্টিফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন শুরুর কিছু সময়ের মধ্যে অনেকগুলো অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। একসঙ্গে ফায়ার সার্ভিস ও জাতীয় জরুরিসেবা ৯৯৯-এর হটলাইন নম্বরগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে সারাদেশ থেকে প্রায় ২০০টি অগ্নিকা-ের খবর আসে ফায়ার সার্ভিস ও ৯৯৯ এর কন্ট্রোল রুমে। ফায়ার সার্ভিস প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারে, এসব অগ্নিকা-ের বেশিরভাগই ঘটেছে ফানুসের কারণে। তবে কয়েকটি অগ্নিকা- আতশবাজির কারণে হয়েছে বলে জানা গেছে।