গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন বন্ধের আশঙ্কা

মাগুরা সদরের রাঘবদাইড় ইউনিয়নের পাটবেলবাড়ি গ্রামে স্থানীয় দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বে বন্ধ হতে বসেছে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন। জানা গেছে, একটি পরিবারের শোবার ঘরের দেয়াল ঘেষে পার্শ্ববর্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল বাথরুম নির্মাণ করা হচ্ছে। বিজলী খাতুন নামে এক গৃহবধূ এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে ওই স্থানে বাথরুম নির্মাণের জন্য নির্মাণ সামগ্রী ফেলেছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঠিকাদার। কিন্তু পরস্পরের জেদাজেদিতে বন্ধ হতে বসেছে প্রায় ১৬ লাখ টাকার উন্নয়ন কাজ।

লিখিত অভিযোগে বিজলী খাতুন জানান, তার বসত ঘরের পাশেই আখেজ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অবস্থিত। ইতিমধ্যে তার বাড়ির দক্ষিণ পাশে বিদ্যালয়ের একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ওই ভবনের উত্তর দিকে অর্থাৎ বিজলীর বাড়ির দক্ষিণ দিকে ঘরের দেয়াল ঘেষে একটি ১৩ ফুট বাই ১২ ফুটের দ্বিতল বাথরুম তথা ওয়াশ ব্লক নির্মানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। ওয়াশ ব্লকটি নির্মিত হলে দুর্গন্ধে তার বাড়িতে টেকা অসম্ভব হবে ও জনস্বাস্থ্য বিঘিœত হবে মর্মে অভিযোগ জানালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি তদন্ত দেয়া হয়। ওই তদন্তের পর জমি মাপের ব্যবস্থা করা হয়। এতে তার জায়গার মধ্যে বাথরুম চলে আসার কারণে বাথরুমের আকার ছোট করে হলেও তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয় বর্তমান কর্তৃপক্ষ। অথচ বিদ্যালয়ের উত্তর দিকে একটি র‌্যাম্প ও বেশ কিছুটা জায়গা পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে। উত্তর দিকের ফাঁকা জায়গায় ওয়াশ ব্লক নির্মাণের সিদ্ধান্ত না নিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জেদের বশে তার ঘরের দেয়াল ও জানালা ঘেঁষে এ ওয়াশ ব্লক তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিজলী আরও জানান, মূলত এ গ্রামে মৃধা গোষ্ঠী ও মোল্যা গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি মৃধা গোষ্ঠীর পুত্রবধু হালিমা বেগমের সাথে গ্রামীণ দলাদলির কারণেই মোল্যা গোষ্ঠীর সমর্থক তাদের পরিবারের উপর অন্যায় চাপ প্রয়োগ করতে এ ধরনের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের উত্তর অংশে প্রতিবন্ধীদের জন্য যে র‌্যাম্প ও সিঁড়ি রয়েছে সেখানে ওয়াশ ব্লক করতে চাইলে আমরা প্রয়োজনে দক্ষিণ দিকে অর্থাৎ আমার বাড়ির পাশে সিড়ি করতে যে টাকা প্রয়োজন হয় তা দিতে রাজি আছি। কিন্তু আমাদের শোবার ঘরের দেয়াল ঘেষে বিদ্যালয়ের ২শ ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের ব্যবহারের বাথরুম তৈরি হলে আমাদের পরিবার স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে।

এদিকে দুই গোষ্ঠীর জেদাজেদির ফলে প্রায় ১৬ লাখ টাকা মূল্যমানের সুদৃশ্য ওয়াশ ব্লকটির কাজ ফেরত যেতে পারে এমন আশংকা থেকে ওই স্কুলের কায়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিদ্যালয়ের নবনির্মিত দ্বিতল ভবনে কোন বাথরুম নেই। ফলে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের খুবই কষ্ট হয়। বিদ্যালয়ের পাশেই দুই তলা বিশিষ্ট এই ওয়াশ ব্লকটি নির্মিত হলে সকলেরই সুবিধা হবে। কিন্তু স্কুলের পার্শ্ববর্তী এলাকার দুটি গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের ফলে ওয়াশ ব্লকটি নির্মাণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হালিমা বেগম বলেন, বিদ্যালয়ের দক্ষিণ দিকে যে জায়গা রয়েছে সেখানে আধুনিক বাথরুম নির্মাণ করলে কোনপ্রকার সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আর উত্তর দিকে বিদ্যালয়ের তেমন কোন জায়গাই নেই। সে কারণে জনস্বার্থে সকল ভেদাভেদ ভুলে এ ওয়াশ ব্লক তৈরিতে সহায়তা করতে তিনি সবাইকে আহবান জানান।

শনিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২২ , ০১ মাঘ ১৪২৮ ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন বন্ধের আশঙ্কা

প্রতিনিধি, মাগুরা

image

মাগুরা সদরের রাঘবদাইড় ইউনিয়নের পাটবেলবাড়ি গ্রামে স্থানীয় দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বে বন্ধ হতে বসেছে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন। জানা গেছে, একটি পরিবারের শোবার ঘরের দেয়াল ঘেষে পার্শ্ববর্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল বাথরুম নির্মাণ করা হচ্ছে। বিজলী খাতুন নামে এক গৃহবধূ এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে ওই স্থানে বাথরুম নির্মাণের জন্য নির্মাণ সামগ্রী ফেলেছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঠিকাদার। কিন্তু পরস্পরের জেদাজেদিতে বন্ধ হতে বসেছে প্রায় ১৬ লাখ টাকার উন্নয়ন কাজ।

লিখিত অভিযোগে বিজলী খাতুন জানান, তার বসত ঘরের পাশেই আখেজ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অবস্থিত। ইতিমধ্যে তার বাড়ির দক্ষিণ পাশে বিদ্যালয়ের একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ওই ভবনের উত্তর দিকে অর্থাৎ বিজলীর বাড়ির দক্ষিণ দিকে ঘরের দেয়াল ঘেষে একটি ১৩ ফুট বাই ১২ ফুটের দ্বিতল বাথরুম তথা ওয়াশ ব্লক নির্মানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। ওয়াশ ব্লকটি নির্মিত হলে দুর্গন্ধে তার বাড়িতে টেকা অসম্ভব হবে ও জনস্বাস্থ্য বিঘিœত হবে মর্মে অভিযোগ জানালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি তদন্ত দেয়া হয়। ওই তদন্তের পর জমি মাপের ব্যবস্থা করা হয়। এতে তার জায়গার মধ্যে বাথরুম চলে আসার কারণে বাথরুমের আকার ছোট করে হলেও তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয় বর্তমান কর্তৃপক্ষ। অথচ বিদ্যালয়ের উত্তর দিকে একটি র‌্যাম্প ও বেশ কিছুটা জায়গা পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে। উত্তর দিকের ফাঁকা জায়গায় ওয়াশ ব্লক নির্মাণের সিদ্ধান্ত না নিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জেদের বশে তার ঘরের দেয়াল ও জানালা ঘেঁষে এ ওয়াশ ব্লক তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিজলী আরও জানান, মূলত এ গ্রামে মৃধা গোষ্ঠী ও মোল্যা গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি মৃধা গোষ্ঠীর পুত্রবধু হালিমা বেগমের সাথে গ্রামীণ দলাদলির কারণেই মোল্যা গোষ্ঠীর সমর্থক তাদের পরিবারের উপর অন্যায় চাপ প্রয়োগ করতে এ ধরনের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের উত্তর অংশে প্রতিবন্ধীদের জন্য যে র‌্যাম্প ও সিঁড়ি রয়েছে সেখানে ওয়াশ ব্লক করতে চাইলে আমরা প্রয়োজনে দক্ষিণ দিকে অর্থাৎ আমার বাড়ির পাশে সিড়ি করতে যে টাকা প্রয়োজন হয় তা দিতে রাজি আছি। কিন্তু আমাদের শোবার ঘরের দেয়াল ঘেষে বিদ্যালয়ের ২শ ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের ব্যবহারের বাথরুম তৈরি হলে আমাদের পরিবার স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে।

এদিকে দুই গোষ্ঠীর জেদাজেদির ফলে প্রায় ১৬ লাখ টাকা মূল্যমানের সুদৃশ্য ওয়াশ ব্লকটির কাজ ফেরত যেতে পারে এমন আশংকা থেকে ওই স্কুলের কায়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিদ্যালয়ের নবনির্মিত দ্বিতল ভবনে কোন বাথরুম নেই। ফলে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের খুবই কষ্ট হয়। বিদ্যালয়ের পাশেই দুই তলা বিশিষ্ট এই ওয়াশ ব্লকটি নির্মিত হলে সকলেরই সুবিধা হবে। কিন্তু স্কুলের পার্শ্ববর্তী এলাকার দুটি গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের ফলে ওয়াশ ব্লকটি নির্মাণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হালিমা বেগম বলেন, বিদ্যালয়ের দক্ষিণ দিকে যে জায়গা রয়েছে সেখানে আধুনিক বাথরুম নির্মাণ করলে কোনপ্রকার সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আর উত্তর দিকে বিদ্যালয়ের তেমন কোন জায়গাই নেই। সে কারণে জনস্বার্থে সকল ভেদাভেদ ভুলে এ ওয়াশ ব্লক তৈরিতে সহায়তা করতে তিনি সবাইকে আহবান জানান।