বেলুন ফোলানোর গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে শরীরে লোহার টুকরা বিদ্ধ ও অগ্নিদগ্ধ হওয়া পাঁচজনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার মোকরা ইউনিয়নের বিরলী গ্রামে এই বিস্ফোরণ হয়। এতে শিশুসহ অন্তত ৪১ জন আহত হন। আর হাত-পা ভেঙে গেছে কয়েকজনের। আহত ৪১ জনের মধ্যে ৩৮ জনকে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কুমিল্লা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয় বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দেবদাস দেব জানান।
গুরুতর আহতরা হলেন বিরুলিয়া গ্রামের বেলুন বিক্রেতা আনোয়ার (৩৫), একই গ্রামের শাহ আলমের ছেলে আবদুর রব (২৭), সালাউদ্দীনের ছেলে সাব্বির হোসেন, ওমর ফারুলের ছেলে সাইফুল, পাশের পশ্চিম বামপাড়া গ্রামের শাহ আলমের ছেলে ইমন হোসেন (১৫)। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ সারথি বলেন, কুমিল্লার নাঙ্গলকোর্টে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধদের মধ্যে গুরুতর পাঁচজনকে শেখ হাসিনা বার্নে ভর্তি করা হয়েছে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মির্জা মুহাম্মদ তাইয়েবুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সিলিন্ডারের অনেকাংশ ‘ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। তিনি জানান, অনেকের শরীরে এক হাজারের বেশি লোহার টুকরা প্রবেশ করেছে।
তিনি আরও বলেন, আহতদের পাঁচ-ছয়জন অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি হয়েছে স্পিøন্টার ইনজুরি। এছাড়া অনেকে ব্লাস্ট ইনজুরিতে আহত হয়েছে। অনেকের হাত-পা ভেঙে গেছে। অন্তত ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের আহতদের ঢাকায় পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক মো. আসিফ ইমরান।
সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের মোঘরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রতিবছর পহেলা মাঘ শীতকালীন মেলা হয়। আজ সেই মেলা হওয়ার কথা। মেলায় বিক্রির জন্য বিরলী গ্রামের আনোয়ার হোসেন বেলুনে গ্যাস ভরছিলেন। আর তা দেখার জন্য ভিড় করেছিল এলাকার শিশুরা। তাদের সঙ্গে ছিলেন বয়স্ক অনেকে। হঠাৎ সিলিন্ডারটি বিস্ফোরিত হয়ে উড়ে যায়। এতে পাশে ভিড় জমানো অন্তত ৪১ জন আহত হন। আহতদের বেশির ভাগই শিশু।
৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি
কুমিল্লা জেলা বার্তা পরিবেশক জানান, কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বেলুনের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লামইয়া সাইফুল গত বৃহস্পতিবার রাতে এ তদন্ত কমিটি করেন। কমিটির সদস্যরা হলেন নাঙ্গলকোট উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল হক, নাঙ্গলকোট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাকিবুল ইসলাম ও উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের একজন প্রতিনিধি। কমিটিকে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এদিকে আহতদের চিকিৎসার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা সহায়তা দেয়া হয়েছে।
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শাহাদৎ হোসেন জানান, গুরুতর আহত ছয়জনের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। বাকিদেরও ১০ হাজার করে বা প্রয়োজনে আরও টাকা দেয়া হবে। আহতদের চিকিৎসার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা দেয়া হবে।
নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী অফিসার লামইয়া সাইফুল বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি সিলিন্ডার বিস্ফোরণেই এ ঘটনা ঘটেছে। তবে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে। গতকাল বিকেলে নাঙ্গলকোট থানার ওসি ফারুক হোসেন বলেন, ঘটনার পরই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আপাতত নিশ্চিত হয়েছে বেলুন ফোলানোর জন্য ব্যবহার করা গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণেই এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
শনিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২২ , ০১ মাঘ ১৪২৮ ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৩
নিজস্ব বার্র্তা পরিবেশক
বেলুন ফোলানোর গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে শরীরে লোহার টুকরা বিদ্ধ ও অগ্নিদগ্ধ হওয়া পাঁচজনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার মোকরা ইউনিয়নের বিরলী গ্রামে এই বিস্ফোরণ হয়। এতে শিশুসহ অন্তত ৪১ জন আহত হন। আর হাত-পা ভেঙে গেছে কয়েকজনের। আহত ৪১ জনের মধ্যে ৩৮ জনকে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কুমিল্লা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয় বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দেবদাস দেব জানান।
গুরুতর আহতরা হলেন বিরুলিয়া গ্রামের বেলুন বিক্রেতা আনোয়ার (৩৫), একই গ্রামের শাহ আলমের ছেলে আবদুর রব (২৭), সালাউদ্দীনের ছেলে সাব্বির হোসেন, ওমর ফারুলের ছেলে সাইফুল, পাশের পশ্চিম বামপাড়া গ্রামের শাহ আলমের ছেলে ইমন হোসেন (১৫)। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ সারথি বলেন, কুমিল্লার নাঙ্গলকোর্টে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধদের মধ্যে গুরুতর পাঁচজনকে শেখ হাসিনা বার্নে ভর্তি করা হয়েছে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মির্জা মুহাম্মদ তাইয়েবুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সিলিন্ডারের অনেকাংশ ‘ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। তিনি জানান, অনেকের শরীরে এক হাজারের বেশি লোহার টুকরা প্রবেশ করেছে।
তিনি আরও বলেন, আহতদের পাঁচ-ছয়জন অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি হয়েছে স্পিøন্টার ইনজুরি। এছাড়া অনেকে ব্লাস্ট ইনজুরিতে আহত হয়েছে। অনেকের হাত-পা ভেঙে গেছে। অন্তত ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের আহতদের ঢাকায় পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক মো. আসিফ ইমরান।
সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের মোঘরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রতিবছর পহেলা মাঘ শীতকালীন মেলা হয়। আজ সেই মেলা হওয়ার কথা। মেলায় বিক্রির জন্য বিরলী গ্রামের আনোয়ার হোসেন বেলুনে গ্যাস ভরছিলেন। আর তা দেখার জন্য ভিড় করেছিল এলাকার শিশুরা। তাদের সঙ্গে ছিলেন বয়স্ক অনেকে। হঠাৎ সিলিন্ডারটি বিস্ফোরিত হয়ে উড়ে যায়। এতে পাশে ভিড় জমানো অন্তত ৪১ জন আহত হন। আহতদের বেশির ভাগই শিশু।
৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি
কুমিল্লা জেলা বার্তা পরিবেশক জানান, কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বেলুনের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লামইয়া সাইফুল গত বৃহস্পতিবার রাতে এ তদন্ত কমিটি করেন। কমিটির সদস্যরা হলেন নাঙ্গলকোট উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল হক, নাঙ্গলকোট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাকিবুল ইসলাম ও উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের একজন প্রতিনিধি। কমিটিকে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এদিকে আহতদের চিকিৎসার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা সহায়তা দেয়া হয়েছে।
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শাহাদৎ হোসেন জানান, গুরুতর আহত ছয়জনের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। বাকিদেরও ১০ হাজার করে বা প্রয়োজনে আরও টাকা দেয়া হবে। আহতদের চিকিৎসার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা দেয়া হবে।
নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী অফিসার লামইয়া সাইফুল বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি সিলিন্ডার বিস্ফোরণেই এ ঘটনা ঘটেছে। তবে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে। গতকাল বিকেলে নাঙ্গলকোট থানার ওসি ফারুক হোসেন বলেন, ঘটনার পরই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আপাতত নিশ্চিত হয়েছে বেলুন ফোলানোর জন্য ব্যবহার করা গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণেই এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।