পাঞ্জাব, রাজনৈতিক সমীকরণের ‘আপ’ ভালো অবস্থানে

একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই

একাধিক রাজনৈতিক সমীকরণের আবহে পাঞ্জাবে এবার ক্ষমতায় কারা আসবে এ নিয়ে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চর্চা। তবে এবিপিআনন্দ যৌথ ওপিনিয়ন পোল বলছে, কৃষক আন্দোলনের অন্যতম উৎসস্থল এই রাজ্যে এবার ভোটে এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ)। তবে, সি ভোটার সমীক্ষা বলছে, অন্যদলকে পিছনে ফেলে বেশি আসন পেলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে না অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল।

পাঞ্জাবের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন আগেই। বেরিয়ে আসার পর পরই তিনি ‘লোক কংগ্রেজ’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। প্রথমে দ্বিধাগ্রস্ত থাকলেও বিধানসভা নির্বাচনের আগে এবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপির হাত ধরলেন পঞ্জাবের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহ। কৃষি আইন নিয়ে গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে সমঝোতা চলছে বলে আগেই জানিয়েছিলেন তিনি। কৃষি আইন প্রত্যাহারের দু’সপ্তাহ পর, গতকাল তাতে সিলমোহর দিলেন অমরিন্দর সিং। জানিয়ে ছিলেন, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে পঞ্জাবে বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ে লড়বে তার দল পঞ্জাব লোক কংগ্রেস।

শুক্রবার পঞ্জাব বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াতের সঙ্গে দেখা করেন অমরিন্দর সিং। তার পর টুইটারে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা পঞ্জাব বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াতের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা জানিয়ে বলেন তার সঙ্গে পঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনের রণকৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

কৃষি আইন ঘিরে পঞ্জাবে এমনিতেই কোণঠাসা বিজেপি। তাদের হাত ধরার সিদ্ধান্তে তাই প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে অমরিন্দর সিং ও তার দলকে। কিন্তু অমরিন্দরের কথায়, ‘আমরা প্রস্তুত। নির্বাচন আমরাই জিততে চলেছি। এলাকাভিত্তিতে আসন সমঝোতা হবে। নির্বাচন জেতাকেই প্রাধান্য দেয়া হবে সে ক্ষেত্রে। নির্বাচনে জয় নিয়ে ১০১ শতাংশ নিশ্চিত আমরা।’

পঞ্জাবে বিধানসভা নির্বাচন ঘোষণার আগে গত ছয় মাস ধরে পাঞ্জাবের রাজনীতিতে অনেক উঠা-নামা দেখেছে রাজ্যবাসী। এই উঠা-নামার দুই বিপরীত মেরুতে ছিলেন অমরিন্দর সিং এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নভজ্যোত সিংহ সিধু। বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেয়া সিধুকে নিয়ে শুরু থেকেই অসন্তুষ্ট ছিলেন অমরিন্দ। সিধুও কিন্তু অমরিন্দ্রের প্রতি বেশ অসন্তোষ মনোভাব দেখিয়েছেন শুরু থেকেই।

সিধু অমরেন্দ্র মধ্যে ওই টানাপড়েন নিয়ে বিরক্ত পঞ্জাবের কংগ্রেস বিধায়কদের সিংহভাগই অমরিন্দরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এই টানাপড়েন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের তরফে অমরিন্দরকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে বলা হয়।এই ‘অপমান’ সহ্য করতে না পেরে শুধু মুখ্যমন্ত্রী থেকেই নয়, কংগ্রেস থেকেও বেরিয়ে যান অমরিন্দর, নিজের আলাদা দল গঠন করেন। আর তখনই বিজেপির সঙ্গে সম্ভাব্য সমঝোতার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি।

অমরিন্দরের সিদ্ধান্তে যদিও আশ্চর্য নন রাজ্যে কংগ্রেস নেতারা। কৃষি আইন নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কংগ্রেস যখন প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে, সেই সময় দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ভালোভাবে নেননি দলীয় নেতৃত্ব। এমনকি কৃষি আইন নিয়ে কেন্দ্র সংস্কারের নামে খোলনলচে পাল্টে দিলেও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অমরিন্দর সিং প্রতিবাদ তো দূরের কথা, বরং কেন্দ্রের প্রশংসাই করেন।

তবে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে আসন্ন নির্বাচনে অমরিন্দর আদৌ সুবিধা করতে পারবেন কি-না, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। সম্পূর্ণ নতুন একটি দল নিয়ে নির্বাচনে নাম লেখাতে চলেছেন অমরিন্দর। সেই পরিস্থিতে রাজনৈতিকভাবে বিজেপিই জোটের হর্তাকর্তা হবে বলে মনে করছেন অনেকেই। সে ক্ষেত্রে বিজেপিই বেশি সংখ্যক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে শোনা যাচ্ছে।

এদিকে একদা কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর কংগ্রেস ভরসা রেখেছেন নভজ্যোৎ সিংহ সিধু ওপর। সিধুকে পাঞ্জাব প্রদেশ কংগএসের সভাপতি করা হয়েছে। আসন্ন বিধান সভা নির্বাচনে তার নেতৃত্বে কংগ্রেস কতটা ফলাফল করতে পারে সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল। অন্যদিকে শিরোমণি অকালি দল তার দীর্ঘদিনের শরিক বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করেছে।

এ পরিস্থিতিতে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে পাঞ্জাবে। ১১৭টি আসনে নির্বাচন। এবিপি নিউজ-সিভোটারের জনমত সমীক্ষা বলছে, পাঞ্জাবে আম আদমি পার্টি (আপ) সবথেকে বেশি আসন পেতে চলেছে। তবে ৫৯টি আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে না। ৫২ থেকে ৫৮টি আসন পেতে পারে কেজরির দল। অন্যদিকে কংগ্রেসের যেতোসন পেতে পারে ৩৭ থেকে ৪৩টি আসন। দ্বিতীয় স্থানে থাকবে তারা। শরিক দলকে নিয়ে কিংমেকার হয়ে উঠতে পারে শিরোমণি অকালি দল। তারা পেতে পারে ১৭ থেকে ২৩টি আসন। কিন্তু খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না বিজেপি। সমীক্ষা বলছে, তাদের ঝুলিতে খুব জোর ১-৩টি আসন যেতে পারে।

শনিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২২ , ০১ মাঘ ১৪২৮ ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

ভারত : বিধানসভা নির্বাচনী সমীক্ষা

পাঞ্জাব, রাজনৈতিক সমীকরণের ‘আপ’ ভালো অবস্থানে

একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই

দীপক মুখার্জী, কলকাতা

একাধিক রাজনৈতিক সমীকরণের আবহে পাঞ্জাবে এবার ক্ষমতায় কারা আসবে এ নিয়ে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চর্চা। তবে এবিপিআনন্দ যৌথ ওপিনিয়ন পোল বলছে, কৃষক আন্দোলনের অন্যতম উৎসস্থল এই রাজ্যে এবার ভোটে এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ)। তবে, সি ভোটার সমীক্ষা বলছে, অন্যদলকে পিছনে ফেলে বেশি আসন পেলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে না অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল।

পাঞ্জাবের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন আগেই। বেরিয়ে আসার পর পরই তিনি ‘লোক কংগ্রেজ’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। প্রথমে দ্বিধাগ্রস্ত থাকলেও বিধানসভা নির্বাচনের আগে এবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপির হাত ধরলেন পঞ্জাবের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহ। কৃষি আইন নিয়ে গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে সমঝোতা চলছে বলে আগেই জানিয়েছিলেন তিনি। কৃষি আইন প্রত্যাহারের দু’সপ্তাহ পর, গতকাল তাতে সিলমোহর দিলেন অমরিন্দর সিং। জানিয়ে ছিলেন, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে পঞ্জাবে বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ে লড়বে তার দল পঞ্জাব লোক কংগ্রেস।

শুক্রবার পঞ্জাব বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াতের সঙ্গে দেখা করেন অমরিন্দর সিং। তার পর টুইটারে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা পঞ্জাব বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াতের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা জানিয়ে বলেন তার সঙ্গে পঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনের রণকৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

কৃষি আইন ঘিরে পঞ্জাবে এমনিতেই কোণঠাসা বিজেপি। তাদের হাত ধরার সিদ্ধান্তে তাই প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে অমরিন্দর সিং ও তার দলকে। কিন্তু অমরিন্দরের কথায়, ‘আমরা প্রস্তুত। নির্বাচন আমরাই জিততে চলেছি। এলাকাভিত্তিতে আসন সমঝোতা হবে। নির্বাচন জেতাকেই প্রাধান্য দেয়া হবে সে ক্ষেত্রে। নির্বাচনে জয় নিয়ে ১০১ শতাংশ নিশ্চিত আমরা।’

পঞ্জাবে বিধানসভা নির্বাচন ঘোষণার আগে গত ছয় মাস ধরে পাঞ্জাবের রাজনীতিতে অনেক উঠা-নামা দেখেছে রাজ্যবাসী। এই উঠা-নামার দুই বিপরীত মেরুতে ছিলেন অমরিন্দর সিং এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নভজ্যোত সিংহ সিধু। বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেয়া সিধুকে নিয়ে শুরু থেকেই অসন্তুষ্ট ছিলেন অমরিন্দ। সিধুও কিন্তু অমরিন্দ্রের প্রতি বেশ অসন্তোষ মনোভাব দেখিয়েছেন শুরু থেকেই।

সিধু অমরেন্দ্র মধ্যে ওই টানাপড়েন নিয়ে বিরক্ত পঞ্জাবের কংগ্রেস বিধায়কদের সিংহভাগই অমরিন্দরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এই টানাপড়েন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের তরফে অমরিন্দরকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে বলা হয়।এই ‘অপমান’ সহ্য করতে না পেরে শুধু মুখ্যমন্ত্রী থেকেই নয়, কংগ্রেস থেকেও বেরিয়ে যান অমরিন্দর, নিজের আলাদা দল গঠন করেন। আর তখনই বিজেপির সঙ্গে সম্ভাব্য সমঝোতার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি।

অমরিন্দরের সিদ্ধান্তে যদিও আশ্চর্য নন রাজ্যে কংগ্রেস নেতারা। কৃষি আইন নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কংগ্রেস যখন প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে, সেই সময় দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ভালোভাবে নেননি দলীয় নেতৃত্ব। এমনকি কৃষি আইন নিয়ে কেন্দ্র সংস্কারের নামে খোলনলচে পাল্টে দিলেও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অমরিন্দর সিং প্রতিবাদ তো দূরের কথা, বরং কেন্দ্রের প্রশংসাই করেন।

তবে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে আসন্ন নির্বাচনে অমরিন্দর আদৌ সুবিধা করতে পারবেন কি-না, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। সম্পূর্ণ নতুন একটি দল নিয়ে নির্বাচনে নাম লেখাতে চলেছেন অমরিন্দর। সেই পরিস্থিতে রাজনৈতিকভাবে বিজেপিই জোটের হর্তাকর্তা হবে বলে মনে করছেন অনেকেই। সে ক্ষেত্রে বিজেপিই বেশি সংখ্যক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে শোনা যাচ্ছে।

এদিকে একদা কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর কংগ্রেস ভরসা রেখেছেন নভজ্যোৎ সিংহ সিধু ওপর। সিধুকে পাঞ্জাব প্রদেশ কংগএসের সভাপতি করা হয়েছে। আসন্ন বিধান সভা নির্বাচনে তার নেতৃত্বে কংগ্রেস কতটা ফলাফল করতে পারে সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল। অন্যদিকে শিরোমণি অকালি দল তার দীর্ঘদিনের শরিক বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করেছে।

এ পরিস্থিতিতে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে পাঞ্জাবে। ১১৭টি আসনে নির্বাচন। এবিপি নিউজ-সিভোটারের জনমত সমীক্ষা বলছে, পাঞ্জাবে আম আদমি পার্টি (আপ) সবথেকে বেশি আসন পেতে চলেছে। তবে ৫৯টি আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে না। ৫২ থেকে ৫৮টি আসন পেতে পারে কেজরির দল। অন্যদিকে কংগ্রেসের যেতোসন পেতে পারে ৩৭ থেকে ৪৩টি আসন। দ্বিতীয় স্থানে থাকবে তারা। শরিক দলকে নিয়ে কিংমেকার হয়ে উঠতে পারে শিরোমণি অকালি দল। তারা পেতে পারে ১৭ থেকে ২৩টি আসন। কিন্তু খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না বিজেপি। সমীক্ষা বলছে, তাদের ঝুলিতে খুব জোর ১-৩টি আসন যেতে পারে।