ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে

শনাক্তের হার ৩১ শতাংশ ছাড়িয়েছে

ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলছে। এটি ক্রমই করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের স্থান দখল করে নিচ্ছে। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের (ধরন) প্রভাবে সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে করোনা সংক্রমণ। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের সব জেলায় কম-বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে গত পাঁচদিনেই কোভিড শনাক্তের হার ১১ শতাংশের বেশি বেড়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুও নিয়মিত বাড়ছে।

দেশে চিকিৎসাধীন কোভিড রোগী (অ্যাক্টিভ কেস) লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আর ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় কোভিড শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ২৯ শতাংশে। অথচ তিন সপ্তাহ আগেও শনাক্তের হার তিন শতাংশের নিচে ছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম গতকাল ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে জানান, ওমিক্রনের প্রভাবে দেশে কোভিড রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার চাপও বাড়ছে। দেশে ডেল্টা এখনও ‘প্রিডমিনেন্ট ভ্যারিয়েন্ট’। কিন্তু ‘একটু একটু’ করে ওমিক্রন সে জায়গা দখল করে নিচ্ছে।

নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘রোগীর সংখ্যা যদি প্রতিদিন বাড়তে থাকে, আর স্বাস্থ্যবিধি যদি অমান্য করে মানুষ নিজের মতো করে চলতে থাকলে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে এবং সেটা সামগ্রিকভাবে পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর বাড়তি চাপ ফেলবে।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের ৬৪ জেলায় কম-বেশি কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদিন মোট ৩৪ হাজার ৮৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০ হাজার ৯০৬ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এদিন করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

একদিনে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় কোভিড শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ২৯ শতাংশ। এটি গত ২২ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে গত বছরের ২২ জুলাই করোনা শনাক্তের হার ছিল ৩২ দশমিক ১৮ শতাংশ। ওই সময় করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রাদুর্ভাবে সংক্রমণ পিকে পাঁচদিনে শনাক্তের হার

১১ শতাংশ বৃদ্ধি

গত ১৭ জানুয়ারি থেকে ২২ জানুয়ারি এই পাঁচ দিনে দেশে করোনা শনাক্তের হার ১১ শতাংশের বেশি বেড়েছে জানিয়ে ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, সেইসঙ্গে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ পড়বে।

গত বছরের শেষ দিক থেকে প্রায় প্রতিদিনই কোভিড রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই মুখপাত্র বলেন, ‘গত ১৭ জানুয়ারিতেও শনাক্তের হার ছিল ১৭ শতাংশ, ২২ জানুয়ারিতে সেটা পৌঁছায় ২৮ শতাংশের বেশি।’

সক্রিয় রোগী লাখ ছাড়িয়েছে

যে হারে রোগী শনাক্ত হচ্ছে সেভাবে বাড়তে থাকলে হাসপাতালে শয্যাসংখ্যার ওপর ক্রমাগত চাপ বেড়েই চলবে জানিয়ে অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘গত তিন থেকে চার মাসের তুলনায় সম্প্রতি রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি বেড়েছে। আর এটা অব্যাহত রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সামর্থ্য অসীম নয়, তাই সীমিত জনবল, সীমিত সমর্থ্যরে সর্বোত্তম ব্যবহার যদি করতে হয়, তাহলে প্রত্যেককেই দায়িত্বপূর্ণ আচরণ করতে হবে, আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোন কারণ নেই।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১ জানুয়ারি দেশে সক্রিয় রোগী (চিকিৎসাধীন) ছিল আট হাজার ৫২৬ জন। এর দুই সপ্তাহ পর ১৫ জানুয়ারি সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩১ হাজার ৭৫৩ জনে। সর্বশেষ গতকাল সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ছিল এক লাখ ৫২ জন। মোট শনাক্ত রোগীর মধ্য থেকে মৃত্যু হওয়া ও সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা বাদ দিলে সক্রিয় রোগীর এই সংখ্যা দাঁড়ায়।

ওমিক্রনের প্রধান লক্ষণ সর্দি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ওমিক্রনের প্রধান লক্ষণ বা উপসর্গ হলো নাক দিয়ে পানি ঝরা। এজন্য করোনার উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে অধিদপ্তর। ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘ওমিক্রনে সংক্রমিতদের শতকরা ৭৩ শতাংশ মানুষ সর্দিতে আক্রান্ত, মাথা ব্যথা করছে ৬৮ শতাংশের, অবসন্নতা বা ক্লান্তি অনুভব করছেন ৬৪ শতাংশ, হাঁচি দিচ্ছেন ৬০ শতাংশ, গলা ব্যথা ৬০ শতাংশ এবং কাশি দিচ্ছেন ৪৪ শতাংশ রোগী। এ বিষয়গুলো আমাদের মাথায় রাখতে হবে। এর সঙ্গে কিন্তু সিজনাল যে ফ্লু হচ্ছে, ইনফ্লুয়েঞ্জা হচ্ছে, তার সঙ্গেও কিন্তু মিল রয়েছে।’

২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ও মৃত্যু

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে; যা আগের দিন ছিল ১৭ জন। এ নিয়ে দেশে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ২৮ হাজার ২২৩ জনে। একদিনে শনাক্ত হওয়া ১০ হাজার ৯০৬ জনকে নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত ১৬ লাখ ৮৫ হাজার ১৩৬ জনের করোনা শনাক্ত হলো। মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ।

করোনা আক্রান্তদের মধ্যে একদিনে ৭৮২ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৫৬ হাজার ৮৬১ জন। মোট শনাক্ত অনুপাতে সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং শনাক্ত অনুপাতে মৃত্যুহার এক দশমিক ৬৭ শতাংশ।

একদিনে মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে নারী আটজন ও পুরুষ ছিলেন ছয়জন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে চারজন মারা গেছেন। এছাড়া ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, ভোলা, সিলেট এবং হবিগঞ্জে একজন করে কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

শনাক্তের হারে শীর্ষে ময়মনসিংহ বিভাগ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে ১৩ জেলায় মোট ২৪ হাজার ২০৬টি নমুনা পরীক্ষায় সাত হাজার ২৯২ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা অনুপাতে এই বিভাগে শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ১২ শতাংশ। ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় একদিনে ৫০৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৮৮ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ হিসাবে শনাক্তের হার ৩৭ দশমিক ০৮ শতাংশ।

চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলায় একদিনে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে চার হাজার ৭১৩ জনের। এই পরীক্ষায় এক হাজার ৫৪৬ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের কোভিড শনাক্তের হার ৩২ দশমিক ৮০ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৫২৮ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এতে ৫২৫ জনের দেহে করোনাভাইরাসের জীবাণু পাওয়া গেছে। পরীক্ষা বিবেচনায় রাজশাহীতে শনাক্তের হার ৩৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

রংপুর বিভাগের আট জেলায় একদিনে ৪৫১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে ১৬৫ জনের দেহে করোনার জীবাণু পাওয়া গেছে। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে রংপুর বিভাগে শনাক্তের হার ৩৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় একদিনে এক হাজার ৪১১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এই পরীক্ষায় ৪৮৭ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ হিসাবে খুলনায় কোভিড শনাক্তের হার ৩৪ দশমিক ৫১ শতাংশ।

বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ২৪ ঘণ্টায় ৫৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৭৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই বিভাগে নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনা শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৩১ শতাংশ। সিলেট বিভাগের চার জেলায় একদিনে এক হাজার ৪৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে ৫২৯ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছ। পরীক্ষা বিবেচনায় সিলেট বিভাগে রোগী শনাক্তের হার ৩৬ দশমিক ১৩ শতাংশ।

সোমবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২২ , ১০ মাঘ ১৪২৮ ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে

শনাক্তের হার ৩১ শতাংশ ছাড়িয়েছে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলছে। এটি ক্রমই করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের স্থান দখল করে নিচ্ছে। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের (ধরন) প্রভাবে সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে করোনা সংক্রমণ। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের সব জেলায় কম-বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে গত পাঁচদিনেই কোভিড শনাক্তের হার ১১ শতাংশের বেশি বেড়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুও নিয়মিত বাড়ছে।

দেশে চিকিৎসাধীন কোভিড রোগী (অ্যাক্টিভ কেস) লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আর ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় কোভিড শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ২৯ শতাংশে। অথচ তিন সপ্তাহ আগেও শনাক্তের হার তিন শতাংশের নিচে ছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম গতকাল ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে জানান, ওমিক্রনের প্রভাবে দেশে কোভিড রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার চাপও বাড়ছে। দেশে ডেল্টা এখনও ‘প্রিডমিনেন্ট ভ্যারিয়েন্ট’। কিন্তু ‘একটু একটু’ করে ওমিক্রন সে জায়গা দখল করে নিচ্ছে।

নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘রোগীর সংখ্যা যদি প্রতিদিন বাড়তে থাকে, আর স্বাস্থ্যবিধি যদি অমান্য করে মানুষ নিজের মতো করে চলতে থাকলে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে এবং সেটা সামগ্রিকভাবে পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর বাড়তি চাপ ফেলবে।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের ৬৪ জেলায় কম-বেশি কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদিন মোট ৩৪ হাজার ৮৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০ হাজার ৯০৬ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এদিন করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

একদিনে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় কোভিড শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ২৯ শতাংশ। এটি গত ২২ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে গত বছরের ২২ জুলাই করোনা শনাক্তের হার ছিল ৩২ দশমিক ১৮ শতাংশ। ওই সময় করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রাদুর্ভাবে সংক্রমণ পিকে পাঁচদিনে শনাক্তের হার

১১ শতাংশ বৃদ্ধি

গত ১৭ জানুয়ারি থেকে ২২ জানুয়ারি এই পাঁচ দিনে দেশে করোনা শনাক্তের হার ১১ শতাংশের বেশি বেড়েছে জানিয়ে ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, সেইসঙ্গে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ পড়বে।

গত বছরের শেষ দিক থেকে প্রায় প্রতিদিনই কোভিড রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই মুখপাত্র বলেন, ‘গত ১৭ জানুয়ারিতেও শনাক্তের হার ছিল ১৭ শতাংশ, ২২ জানুয়ারিতে সেটা পৌঁছায় ২৮ শতাংশের বেশি।’

সক্রিয় রোগী লাখ ছাড়িয়েছে

যে হারে রোগী শনাক্ত হচ্ছে সেভাবে বাড়তে থাকলে হাসপাতালে শয্যাসংখ্যার ওপর ক্রমাগত চাপ বেড়েই চলবে জানিয়ে অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘গত তিন থেকে চার মাসের তুলনায় সম্প্রতি রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি বেড়েছে। আর এটা অব্যাহত রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সামর্থ্য অসীম নয়, তাই সীমিত জনবল, সীমিত সমর্থ্যরে সর্বোত্তম ব্যবহার যদি করতে হয়, তাহলে প্রত্যেককেই দায়িত্বপূর্ণ আচরণ করতে হবে, আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোন কারণ নেই।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১ জানুয়ারি দেশে সক্রিয় রোগী (চিকিৎসাধীন) ছিল আট হাজার ৫২৬ জন। এর দুই সপ্তাহ পর ১৫ জানুয়ারি সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩১ হাজার ৭৫৩ জনে। সর্বশেষ গতকাল সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ছিল এক লাখ ৫২ জন। মোট শনাক্ত রোগীর মধ্য থেকে মৃত্যু হওয়া ও সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা বাদ দিলে সক্রিয় রোগীর এই সংখ্যা দাঁড়ায়।

ওমিক্রনের প্রধান লক্ষণ সর্দি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ওমিক্রনের প্রধান লক্ষণ বা উপসর্গ হলো নাক দিয়ে পানি ঝরা। এজন্য করোনার উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে অধিদপ্তর। ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘ওমিক্রনে সংক্রমিতদের শতকরা ৭৩ শতাংশ মানুষ সর্দিতে আক্রান্ত, মাথা ব্যথা করছে ৬৮ শতাংশের, অবসন্নতা বা ক্লান্তি অনুভব করছেন ৬৪ শতাংশ, হাঁচি দিচ্ছেন ৬০ শতাংশ, গলা ব্যথা ৬০ শতাংশ এবং কাশি দিচ্ছেন ৪৪ শতাংশ রোগী। এ বিষয়গুলো আমাদের মাথায় রাখতে হবে। এর সঙ্গে কিন্তু সিজনাল যে ফ্লু হচ্ছে, ইনফ্লুয়েঞ্জা হচ্ছে, তার সঙ্গেও কিন্তু মিল রয়েছে।’

২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ও মৃত্যু

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে; যা আগের দিন ছিল ১৭ জন। এ নিয়ে দেশে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ২৮ হাজার ২২৩ জনে। একদিনে শনাক্ত হওয়া ১০ হাজার ৯০৬ জনকে নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত ১৬ লাখ ৮৫ হাজার ১৩৬ জনের করোনা শনাক্ত হলো। মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ।

করোনা আক্রান্তদের মধ্যে একদিনে ৭৮২ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৫৬ হাজার ৮৬১ জন। মোট শনাক্ত অনুপাতে সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং শনাক্ত অনুপাতে মৃত্যুহার এক দশমিক ৬৭ শতাংশ।

একদিনে মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে নারী আটজন ও পুরুষ ছিলেন ছয়জন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে চারজন মারা গেছেন। এছাড়া ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, ভোলা, সিলেট এবং হবিগঞ্জে একজন করে কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

শনাক্তের হারে শীর্ষে ময়মনসিংহ বিভাগ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে ১৩ জেলায় মোট ২৪ হাজার ২০৬টি নমুনা পরীক্ষায় সাত হাজার ২৯২ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা অনুপাতে এই বিভাগে শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ১২ শতাংশ। ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় একদিনে ৫০৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৮৮ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ হিসাবে শনাক্তের হার ৩৭ দশমিক ০৮ শতাংশ।

চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলায় একদিনে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে চার হাজার ৭১৩ জনের। এই পরীক্ষায় এক হাজার ৫৪৬ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের কোভিড শনাক্তের হার ৩২ দশমিক ৮০ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৫২৮ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এতে ৫২৫ জনের দেহে করোনাভাইরাসের জীবাণু পাওয়া গেছে। পরীক্ষা বিবেচনায় রাজশাহীতে শনাক্তের হার ৩৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

রংপুর বিভাগের আট জেলায় একদিনে ৪৫১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে ১৬৫ জনের দেহে করোনার জীবাণু পাওয়া গেছে। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে রংপুর বিভাগে শনাক্তের হার ৩৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় একদিনে এক হাজার ৪১১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এই পরীক্ষায় ৪৮৭ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ হিসাবে খুলনায় কোভিড শনাক্তের হার ৩৪ দশমিক ৫১ শতাংশ।

বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ২৪ ঘণ্টায় ৫৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৭৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই বিভাগে নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনা শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৩১ শতাংশ। সিলেট বিভাগের চার জেলায় একদিনে এক হাজার ৪৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে ৫২৯ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছ। পরীক্ষা বিবেচনায় সিলেট বিভাগে রোগী শনাক্তের হার ৩৬ দশমিক ১৩ শতাংশ।