ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, সরকারি চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে এর আগে ফাঁদে ফেলে জিম্মি, ব্ল্যাকমেইল ও প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ছিল প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে। তবে এবার প্রতারক চক্র এক ট্রান্সজেন্ডারকে ফাঁদে ফেলে জিম্মি ও নির্যাতন করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। রাজধানীর ফার্মগেট ও মহাখালী থেকে ঘটনার মূল হোতা ফুয়াদ আমিন ইশতিয়াক ওরফে সানি (২১), সহযোগী সাইমা শিকদার নিরা ওরফে আরজে নিরা (২৩) ও আবদুল্লাহ আফিফ সাদমান ওরফে রিশুকে (১৯) গ্রেপ্তার এবং তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব এ তথ্য জানিয়েছে।
গতকাল কারওয়ান বাজার র?্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। র্যাব জানায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাদমান আফিফ রিশুর সঙ্গে পরিচয় হয় ট্রান্সজেন্ডার বিউটি ব্লগার সাদ মুআর। পরিচয় সূত্রে গত ১০ জানুয়ারি রাজধানীর ভাটারায় একটি রেস্টুরেন্টে দেখা করেন। এরপর তাকে কৌশলে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ইশতিয়াকের ভাড়া বাসায় নিয়ে যান রিশু। সেখানে ইশতিয়াক, নিরা ও রিশু জোরপূর্বক ভিকটিমকে মারধর, শ্লীলতাহানি ও যৌন নিপীড়ন করার পাশাপাশি ভিডিও ধারণ করেন। এ সবই তারা করেছেন মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য। তারা ভিকটিমের মোবাইল ফোন, স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেন। আরও এক লাখ টাকা দাবি করেন। শুধু তাই নয়, পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর ভুয়া পরিচয়ে ভীতি প্রদর্শন ও ভুক্তভোগীকে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরিয়ে রামপুরায় নামিয়ে দেয়। খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, গত ১০ জানুয়ারি রাজধানীর ভাটারা এলাকায় বিউটি ব্লøগার ট্রান্সজেন্ডারকে যৌন নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটে। ভিকটিম একজন প্রতিষ্ঠিত কর্মজীবী। তিনি নিজ যোগ্যতা, অধ্যবসায় ও কর্মদক্ষতায় উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তিনি দেশের প্রচলিত আইন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা থেকে স্ব-উদ্যোগে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সচেষ্ট হন। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী গত শুক্রবার রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার নম্বর ৩৫। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে র?্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র?্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র?্যাব-১ ও র?্যাব-২ এর যৌথ অভিযানে গত শনিবার থেকে গতকাল দুপুর ১টা পর্যন্ত রাজধানীর ফার্মগেট ও মহাখালী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার মূল হোতা ফুয়াদ আমিন ইশতিয়াক ওরফে সানি (২১), সহযোগী সাইমা শিকদার নিরা ওরফে আরজে নিরা (২৩) ও আবদুল্লাহ আফিফ সাদমান ওরফে রিশুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অভিযানে ভিকটিমের ছিনিয়ে নেয়া আইফোন উদ্ধারসহ জব্দ করা হয় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, খেলনা পিস্তল, মোবাইল ও অন্যান্য সামগ্রী। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তরকৃতরা ঘটনার সম্পৃক্ততার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রদান করে। গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃতরা সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। গ্রেপ্তার ইশতিয়াক চক্রের মূল হোতা এবং গ্রেপ্তার আরজে নীরা ও গ্রেপ্তার অন্য সদস্য সাদমান আফিফ ওরফে রিশু তার অন্যতম সহযোগী।
গ্রেপ্তারকৃতরা বিগত প্রায় দুই বছর যাবত নানা কৌশলে জিম্মি, ব্ল্যাকমেইল ও প্রতারণা করে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নারী-পুরুষদের অর্থ হাতিয়ে আসছিল। তারা সাধারণত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন জনের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। অতঃপর কৌশলে বিভিন্ন সময়ের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে ভিকটিমকে হেনস্থা ও ব্ল্যাকমেইল করে। অপকর্মের জন্য তাদের ভাড়াকৃত বাসা ব্যবহার করে থাকে। যেখানে জোরপূর্বক আপত্তিকর ভিডিওগুলো ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করা হতো। এছাড়া অনলাইনেও ভিকটিমদের ফাঁদে ফেলে থাকে। এসব অপকর্ম করার ক্ষেত্রে তারা নিজেদের সেনা কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে ভুয়া পরিচয় দিয়ে আসছিল। গ্রেপ্তারকৃতরা ট্রান্সজেন্ডার নারীকে হেনস্তা ও নির্যাতন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয় হয় রিশুর। পরিচয়ের সূত্রে ১০ জানুয়ারি ভাটারা বসুন্ধরা এলাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রেস্টুরেন্টে ভিকটিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রিশু। সেখান থেকে সারপ্রাইজ দেয়ার কথা বলে কৌশলে ভিকটিমকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইশতিয়াকের ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। সেখানেই তিনজন মিলে ভিকটিমকে মারধর, শ্লীলতাহানি ও যৌন নিপীড়ন করার পাশাপাশি ভিডিও ধারণ করে। গ্রেপ্তার ইশতিয়াকের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দুটি মামলা রয়েছে। ইতিপূর্বে বিভিন্ন মামলায় তিনি কারাভোগ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
সোমবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২২ , ১০ মাঘ ১৪২৮ ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, সরকারি চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে এর আগে ফাঁদে ফেলে জিম্মি, ব্ল্যাকমেইল ও প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ছিল প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে। তবে এবার প্রতারক চক্র এক ট্রান্সজেন্ডারকে ফাঁদে ফেলে জিম্মি ও নির্যাতন করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। রাজধানীর ফার্মগেট ও মহাখালী থেকে ঘটনার মূল হোতা ফুয়াদ আমিন ইশতিয়াক ওরফে সানি (২১), সহযোগী সাইমা শিকদার নিরা ওরফে আরজে নিরা (২৩) ও আবদুল্লাহ আফিফ সাদমান ওরফে রিশুকে (১৯) গ্রেপ্তার এবং তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব এ তথ্য জানিয়েছে।
গতকাল কারওয়ান বাজার র?্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। র্যাব জানায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাদমান আফিফ রিশুর সঙ্গে পরিচয় হয় ট্রান্সজেন্ডার বিউটি ব্লগার সাদ মুআর। পরিচয় সূত্রে গত ১০ জানুয়ারি রাজধানীর ভাটারায় একটি রেস্টুরেন্টে দেখা করেন। এরপর তাকে কৌশলে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ইশতিয়াকের ভাড়া বাসায় নিয়ে যান রিশু। সেখানে ইশতিয়াক, নিরা ও রিশু জোরপূর্বক ভিকটিমকে মারধর, শ্লীলতাহানি ও যৌন নিপীড়ন করার পাশাপাশি ভিডিও ধারণ করেন। এ সবই তারা করেছেন মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য। তারা ভিকটিমের মোবাইল ফোন, স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেন। আরও এক লাখ টাকা দাবি করেন। শুধু তাই নয়, পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর ভুয়া পরিচয়ে ভীতি প্রদর্শন ও ভুক্তভোগীকে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরিয়ে রামপুরায় নামিয়ে দেয়। খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, গত ১০ জানুয়ারি রাজধানীর ভাটারা এলাকায় বিউটি ব্লøগার ট্রান্সজেন্ডারকে যৌন নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটে। ভিকটিম একজন প্রতিষ্ঠিত কর্মজীবী। তিনি নিজ যোগ্যতা, অধ্যবসায় ও কর্মদক্ষতায় উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তিনি দেশের প্রচলিত আইন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা থেকে স্ব-উদ্যোগে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সচেষ্ট হন। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী গত শুক্রবার রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার নম্বর ৩৫। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে র?্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র?্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র?্যাব-১ ও র?্যাব-২ এর যৌথ অভিযানে গত শনিবার থেকে গতকাল দুপুর ১টা পর্যন্ত রাজধানীর ফার্মগেট ও মহাখালী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার মূল হোতা ফুয়াদ আমিন ইশতিয়াক ওরফে সানি (২১), সহযোগী সাইমা শিকদার নিরা ওরফে আরজে নিরা (২৩) ও আবদুল্লাহ আফিফ সাদমান ওরফে রিশুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অভিযানে ভিকটিমের ছিনিয়ে নেয়া আইফোন উদ্ধারসহ জব্দ করা হয় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, খেলনা পিস্তল, মোবাইল ও অন্যান্য সামগ্রী। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তরকৃতরা ঘটনার সম্পৃক্ততার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রদান করে। গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃতরা সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। গ্রেপ্তার ইশতিয়াক চক্রের মূল হোতা এবং গ্রেপ্তার আরজে নীরা ও গ্রেপ্তার অন্য সদস্য সাদমান আফিফ ওরফে রিশু তার অন্যতম সহযোগী।
গ্রেপ্তারকৃতরা বিগত প্রায় দুই বছর যাবত নানা কৌশলে জিম্মি, ব্ল্যাকমেইল ও প্রতারণা করে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নারী-পুরুষদের অর্থ হাতিয়ে আসছিল। তারা সাধারণত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন জনের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। অতঃপর কৌশলে বিভিন্ন সময়ের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে ভিকটিমকে হেনস্থা ও ব্ল্যাকমেইল করে। অপকর্মের জন্য তাদের ভাড়াকৃত বাসা ব্যবহার করে থাকে। যেখানে জোরপূর্বক আপত্তিকর ভিডিওগুলো ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করা হতো। এছাড়া অনলাইনেও ভিকটিমদের ফাঁদে ফেলে থাকে। এসব অপকর্ম করার ক্ষেত্রে তারা নিজেদের সেনা কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে ভুয়া পরিচয় দিয়ে আসছিল। গ্রেপ্তারকৃতরা ট্রান্সজেন্ডার নারীকে হেনস্তা ও নির্যাতন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয় হয় রিশুর। পরিচয়ের সূত্রে ১০ জানুয়ারি ভাটারা বসুন্ধরা এলাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রেস্টুরেন্টে ভিকটিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রিশু। সেখান থেকে সারপ্রাইজ দেয়ার কথা বলে কৌশলে ভিকটিমকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইশতিয়াকের ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। সেখানেই তিনজন মিলে ভিকটিমকে মারধর, শ্লীলতাহানি ও যৌন নিপীড়ন করার পাশাপাশি ভিডিও ধারণ করে। গ্রেপ্তার ইশতিয়াকের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দুটি মামলা রয়েছে। ইতিপূর্বে বিভিন্ন মামলায় তিনি কারাভোগ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।