ঠাণ্ডা-জ্বর ও করোনা উপসর্গে ব্যবহৃত ওষুধের কৃত্রিম সংকট

ঠাণ্ডাজ্বর, সর্দি, কাশি ও করোনাভাইরাসের উপসর্গে ব্যবহৃত ওষুধের তীব্র সংকট চলছে। গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ওষুধের দোকানে নাপা ট্যাবলেট, প্যারাসিটামল, ফেক্্েরা-১২০, প্রোভেয়ার-১০ ট্যাবলেটসহ নানা ধরনের ওষুধ সরবরাহ নেই বলে ওষুধ দোকানদাররা গ্রাহকদের জানান। যার কারণে অনেক গ্রাহক ওষুধ খুঁজে পাচ্ছে না। আবার দু’একটি দোকানে পাওয়া গেলেও অনেকেই অতিরিক্ত ওষুধ কিনে মজুদ করছেন।

ওষুধ সংকটের কারণে সারাদেশে রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে। তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আইসিইউ বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানেসথেসিয়া, অ্যানালজেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর ডা. দেবব্রত বনিক বলেন, ওষুধের কাঁচামাল সংকটের অজুহাতে অসাধু কোম্পানিগুলো বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। অনেকেই ওষুধ পাচ্ছে না বলে তাদের কাছে অভিযোগ করেন।

করোনা ও ঠাণ্ডাজনিত জ্বরের কারণে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই দোকান থেকে প্যারাসিটামল কিংবা নাপা ট্যাবলেটসহ অন্য ওষুধ বেশি বেশি কিনে মজুদ করছেন। যার কারণে বাজারে সংকট চলছে।

এদিকে মিরপুর এলাকার একজন ক্রেতা জানান, তার দুই সন্তান ও স্বামী জ্বর ঠাণ্ডায় আক্রান্ত। গত দু’দিন ধরে তারা মিরপুর কল্যাণপুর আল-আমিন রোড, ও ৬০ ফিটের কয়েকটি ওষুধের দোকানে গিয়ে ফ্যাক্্ের-১২০ ওষুধ পায়নি। দোকানদার বলছেন, ওষুধ সরবরাহ কম।

পুরানা পল্টনে একটি ওষুধের দোকানে ওষুধ কিনতে গিয়ে নাপা ট্যাবলেট পাওয়া যায়নি। দোকানের কর্মচারী বলেছেন, সরবরাহ কম। সরবরাহ বেশি হলে প্রতিটি দোকানে ওষুধ পাওয়া যাবে। এভাবে রাজধানীর অনেক এলাকায় এখন করোনাভাইরাস ও করোনা উপসর্গের ওষুধ সংকট চলছে। কোন কোন এলাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ওষুধ সংকটের অজুহাতে নিম্নমানের ওষুধ কোম্পানি ও নকলবাজরা আবার নকল ওষুধ তৈরি করে বাজারে ছাড়বে বলেও আশঙ্কা করছেন। করোনা ভাইরাসের কারণে ওষুধের দোকানে নজরদারি কমে গেছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। পাড়া-মহল্লার দোকানেও ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ওষুধের সংকট নেই। এটা চালবাজিও হতে পারে। আবার কেউ দুই পাতার যায়গায় পাঁচ পাতা কিনে মজুদ করলে সমস্যা। প্যারাসিটামল, এন্টিহিস্টামিন, ভিটামিন-সিসহ করোনাভাইরাসের অনেক ওষুধ এখন বাজারে আসছে। নতুন করে নিরমাটেল ভির-১৫০ ও রিটনাভির ট্যাবলেট বের হয়েছে। কাঁচামালের দাম একটু বেশি হওয়ায় এ ওষুধের দামও বেশি। তবে করোনাভাইরাসের জন্য উপকারী। এরপরও বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে দেখবো বলে ওই কর্মকর্তা জানান।

এ সম্পর্কে ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব মো. শফিউজ্জামান সংবাদকে মুঠোফোনে বলেন, করোনা, ঠাণ্ডা, জ্বরসহ ভাইরাসজনিত নানা রোগের কারণে ওষুধের চাহিদা বাড়ছে। সংকট নেই। আতঙ্কে অনেকেই ওষুধ মজুদ করছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় অনেক কোম্পানি ওষুধ তৈরি করছেন। আশাকরি সমস্যা হবে না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি একাডেমি প্রফেসর ডা. একেএম মোশারফ হোসেন সংবাদকে জানান, এই মৌসুমে সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে। দেশে ওষুধের কমতি নেই। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে জীবনে পরিবর্তন আনতে হবে। ফল ও পানি বেশি খেতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সোমবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২২ , ১০ মাঘ ১৪২৮ ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

ঠাণ্ডা-জ্বর ও করোনা উপসর্গে ব্যবহৃত ওষুধের কৃত্রিম সংকট

বাকী বিল্লাহ

ঠাণ্ডাজ্বর, সর্দি, কাশি ও করোনাভাইরাসের উপসর্গে ব্যবহৃত ওষুধের তীব্র সংকট চলছে। গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ওষুধের দোকানে নাপা ট্যাবলেট, প্যারাসিটামল, ফেক্্েরা-১২০, প্রোভেয়ার-১০ ট্যাবলেটসহ নানা ধরনের ওষুধ সরবরাহ নেই বলে ওষুধ দোকানদাররা গ্রাহকদের জানান। যার কারণে অনেক গ্রাহক ওষুধ খুঁজে পাচ্ছে না। আবার দু’একটি দোকানে পাওয়া গেলেও অনেকেই অতিরিক্ত ওষুধ কিনে মজুদ করছেন।

ওষুধ সংকটের কারণে সারাদেশে রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে। তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আইসিইউ বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানেসথেসিয়া, অ্যানালজেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর ডা. দেবব্রত বনিক বলেন, ওষুধের কাঁচামাল সংকটের অজুহাতে অসাধু কোম্পানিগুলো বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। অনেকেই ওষুধ পাচ্ছে না বলে তাদের কাছে অভিযোগ করেন।

করোনা ও ঠাণ্ডাজনিত জ্বরের কারণে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই দোকান থেকে প্যারাসিটামল কিংবা নাপা ট্যাবলেটসহ অন্য ওষুধ বেশি বেশি কিনে মজুদ করছেন। যার কারণে বাজারে সংকট চলছে।

এদিকে মিরপুর এলাকার একজন ক্রেতা জানান, তার দুই সন্তান ও স্বামী জ্বর ঠাণ্ডায় আক্রান্ত। গত দু’দিন ধরে তারা মিরপুর কল্যাণপুর আল-আমিন রোড, ও ৬০ ফিটের কয়েকটি ওষুধের দোকানে গিয়ে ফ্যাক্্ের-১২০ ওষুধ পায়নি। দোকানদার বলছেন, ওষুধ সরবরাহ কম।

পুরানা পল্টনে একটি ওষুধের দোকানে ওষুধ কিনতে গিয়ে নাপা ট্যাবলেট পাওয়া যায়নি। দোকানের কর্মচারী বলেছেন, সরবরাহ কম। সরবরাহ বেশি হলে প্রতিটি দোকানে ওষুধ পাওয়া যাবে। এভাবে রাজধানীর অনেক এলাকায় এখন করোনাভাইরাস ও করোনা উপসর্গের ওষুধ সংকট চলছে। কোন কোন এলাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ওষুধ সংকটের অজুহাতে নিম্নমানের ওষুধ কোম্পানি ও নকলবাজরা আবার নকল ওষুধ তৈরি করে বাজারে ছাড়বে বলেও আশঙ্কা করছেন। করোনা ভাইরাসের কারণে ওষুধের দোকানে নজরদারি কমে গেছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। পাড়া-মহল্লার দোকানেও ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ওষুধের সংকট নেই। এটা চালবাজিও হতে পারে। আবার কেউ দুই পাতার যায়গায় পাঁচ পাতা কিনে মজুদ করলে সমস্যা। প্যারাসিটামল, এন্টিহিস্টামিন, ভিটামিন-সিসহ করোনাভাইরাসের অনেক ওষুধ এখন বাজারে আসছে। নতুন করে নিরমাটেল ভির-১৫০ ও রিটনাভির ট্যাবলেট বের হয়েছে। কাঁচামালের দাম একটু বেশি হওয়ায় এ ওষুধের দামও বেশি। তবে করোনাভাইরাসের জন্য উপকারী। এরপরও বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে দেখবো বলে ওই কর্মকর্তা জানান।

এ সম্পর্কে ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব মো. শফিউজ্জামান সংবাদকে মুঠোফোনে বলেন, করোনা, ঠাণ্ডা, জ্বরসহ ভাইরাসজনিত নানা রোগের কারণে ওষুধের চাহিদা বাড়ছে। সংকট নেই। আতঙ্কে অনেকেই ওষুধ মজুদ করছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় অনেক কোম্পানি ওষুধ তৈরি করছেন। আশাকরি সমস্যা হবে না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি একাডেমি প্রফেসর ডা. একেএম মোশারফ হোসেন সংবাদকে জানান, এই মৌসুমে সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে। দেশে ওষুধের কমতি নেই। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে জীবনে পরিবর্তন আনতে হবে। ফল ও পানি বেশি খেতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।