অর্থবছর শেষে মাথাপিছু আয় হবে দুই হাজার ৭৮৫ ডলার

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৭৮৫ ডলারে উন্নীত হবে বলে জাতীয় সংসদে দেয়া এক প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

তিনি বলেছেন, ‘করোনা মহামারীর ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। রাজস্ব আদায়, রপ্তানি আয়, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। দেশের অর্থনীতি মহামারী পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। আর তাতেই জাতীয় মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ৭৮৫ ডলারে উন্নীত হবে।’

বর্তমান বিনিময়হার (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ দুই লাখ ৩৯ হাজার ৫১০ টাকা। অর্থমন্ত্রী গত বুধবার জাতীয় সংসদে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ের ‘বাজেট বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন তাতে তিনি এমন আশার কথা বলেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে দেশের মাথাপিছু আয় এখন দুই হাজার ৫৫৪ ডলার। গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এই আয় ছিল দুই হাজার ২২৭ ডলার। এরসঙ্গে ২৩১ ডলার যোগ হয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক দুই হাজার ৭৮৫ ডলারে গিয়ে পৌঁছবে বলে তথ্য দিয়েছেন মুস্তফা কামাল। প্রতিবেদনে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি করোনাভাইরাস মহামারী পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। খুব শীঘ্রই তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। সরকারের নেয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের ফলে দ্রুতই প্রবৃদ্ধি ঘুরে দাঁড়ায়। রাজস্ব আয়, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ ও মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন মৌলিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোর অবস্থান সন্তোষজনক। টাকা-ডলার বিনিময় হার স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নেও ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে।’

মুস্তফা কামাল বলেন, ‘কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধি হ্রাস, বেকারত্বের হার বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য সংকুচিত হওয়া ছাড়াও আন্তঃরাষ্ট্র যোগাযোগ বিঘিœত হওয়ায় অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রবাস আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে শ্রমিকদের বিদেশ যাত্রা পুনরায় শুরু হওয়ায় প্রবাস আয় আগের অবস্থায় ফিরবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বগতির কারণে দেশেও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতির সম্ভাবনা থাকলেও বছর শেষে তা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, গত সেপেটম্বর শেষে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেসরকারি খাতে ঋণ সরবরাহ বেড়েছে ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, মহামারীর অনিশ্চয়তামূলক পরিস্থিতির মধ্যেও কৃষি, রপ্তানিমুখী শিল্প, সিএমএসএমই’র (ছোট ও মাঝারি এবং কুটির শিল্প) মতো অর্থনীতির অগ্রাধিকার খাতে ঋণ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

এছাড়া, খেলাপি ঋণের মাত্রা কমিয়ে আনা, ব্যাংকিং খাতে দায়-সম্পদ ভারসাম্যহীনতা রোধ এবং কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে চেষ্টা চলছে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে বিনিয়োগের গতি বজায় রাখতে কাজ চলছে বলে জানান তিনি।

শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২২ , ১৪ মাঘ ১৪২৮, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

অর্থবছর শেষে মাথাপিছু আয় হবে দুই হাজার ৭৮৫ ডলার

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৭৮৫ ডলারে উন্নীত হবে বলে জাতীয় সংসদে দেয়া এক প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

তিনি বলেছেন, ‘করোনা মহামারীর ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। রাজস্ব আদায়, রপ্তানি আয়, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। দেশের অর্থনীতি মহামারী পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। আর তাতেই জাতীয় মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ৭৮৫ ডলারে উন্নীত হবে।’

বর্তমান বিনিময়হার (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ দুই লাখ ৩৯ হাজার ৫১০ টাকা। অর্থমন্ত্রী গত বুধবার জাতীয় সংসদে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ের ‘বাজেট বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন তাতে তিনি এমন আশার কথা বলেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে দেশের মাথাপিছু আয় এখন দুই হাজার ৫৫৪ ডলার। গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এই আয় ছিল দুই হাজার ২২৭ ডলার। এরসঙ্গে ২৩১ ডলার যোগ হয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক দুই হাজার ৭৮৫ ডলারে গিয়ে পৌঁছবে বলে তথ্য দিয়েছেন মুস্তফা কামাল। প্রতিবেদনে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি করোনাভাইরাস মহামারী পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। খুব শীঘ্রই তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। সরকারের নেয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের ফলে দ্রুতই প্রবৃদ্ধি ঘুরে দাঁড়ায়। রাজস্ব আয়, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ ও মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন মৌলিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোর অবস্থান সন্তোষজনক। টাকা-ডলার বিনিময় হার স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নেও ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে।’

মুস্তফা কামাল বলেন, ‘কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধি হ্রাস, বেকারত্বের হার বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য সংকুচিত হওয়া ছাড়াও আন্তঃরাষ্ট্র যোগাযোগ বিঘিœত হওয়ায় অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রবাস আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে শ্রমিকদের বিদেশ যাত্রা পুনরায় শুরু হওয়ায় প্রবাস আয় আগের অবস্থায় ফিরবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বগতির কারণে দেশেও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতির সম্ভাবনা থাকলেও বছর শেষে তা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, গত সেপেটম্বর শেষে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেসরকারি খাতে ঋণ সরবরাহ বেড়েছে ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, মহামারীর অনিশ্চয়তামূলক পরিস্থিতির মধ্যেও কৃষি, রপ্তানিমুখী শিল্প, সিএমএসএমই’র (ছোট ও মাঝারি এবং কুটির শিল্প) মতো অর্থনীতির অগ্রাধিকার খাতে ঋণ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

এছাড়া, খেলাপি ঋণের মাত্রা কমিয়ে আনা, ব্যাংকিং খাতে দায়-সম্পদ ভারসাম্যহীনতা রোধ এবং কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে চেষ্টা চলছে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে বিনিয়োগের গতি বজায় রাখতে কাজ চলছে বলে জানান তিনি।