রাজাকারের গুলিতে শহীদ দলিলের পরিবারের খোঁজ খবর রাখে না কেউ

যশোরের কেশবপুরে রাজাকারদের নির্মম নির্যাতনসহ গুলি করে হত্যার শিকার হন কন্দর্পপুর গ্রামের ভূমিহীন দলিলউদ্দীন মোড়ল। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছর পার হলেও তার বিধবা স্ত্রী খতেজান বিবির খবর রাখেনি কেউ। ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করলেও তার ভাগ্যে জোটেনি একখন্ড জমি। তাই স্বামীর ভিটা না থাকায় তার অন্যের বাড়িতে রাত্রি যাপন করতে হয়।

জানা গেছে, উপজেলার মঙ্গলকোট ইউনিয়নের কন্দর্পপুর গ্রামের মৃত এজাহার আলীর জমিতে একটি টালির চালের ঘর বেঁধে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করতেন ভূমিহীন দলিলউদ্দীন মোড়ল। স্ত্রী ও চার কন্যাকে নিয়ে ছিল তার সংসার। পরের ক্ষেতে দিনমজুর করে চলত জীবন জীবিকা। দিনমজুর হলেও তিনি ছিলেন একজন স্বাধীনতাকামী মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাকারী।

ওই গ্রামের ৮২ বছর বয়সের বৃদ্ধ শেখ ফজলুল করিম জানান, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কেশবপুর শহরের বর্তমান পাইলট বালিকা বিদ্যালয় ছিল রাজাকারদের টর্চারসেল। কন্দর্পপুর গ্রামের মৃত মুন্সি দীন মোহাম্মদ ও শ্রীরামপুর গ্রামের মৃত আমীনউদ্দীন ছিলেন রাজাকারদের কমান্ডার। এই টর্চার সেলে দেশের মুক্তিকামী মানুষদের ধরে এনে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হতো। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় একদল রাজাকার দলিলউদ্দীনকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে তার ওপর অমানুসিক নির্যাতন চালায়। গভীর রাতে তাকে বুড়িভদ্রা নদীর চারের মাথায় নিয়ে উপর্যুপরি গুলি করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়। এরপর রাজাকাররা তার জীর্ণ কুঠিরটি ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে ও পুড়িয়ে দেয়।

দলিলউদ্দীনের স্ত্রী ৭৪ বছরের বৃদ্ধা খতেজান বিবি জানায়, তার স্বামীর অকাল মৃত্যুতে চার মেয়েকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়। ভিক্ষাবৃত্তি করে অতিকষ্টে মেয়েদের মানুষ করা হয়। কিন্তু তার ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যান ছিলেন এক রাজাকার কমান্ডারের ছেলে। যে কারণে তার ভাগ্যে জোটেনি একখন্ড জমি। তার হিংসাত্মক মনোভাবের কারণে সরকারের সুযোগ সুবিধা থেকেও তাকে বঞ্চিত করা হয়। দেশ স্বাধীন হলেও তার ওপর নির্যাতন থেমে ছিল না। কেশবপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা সাদেক ব্যক্তিগতভাবে তাকে বিধবা ভাতার কার্ড করে দিলেও তাকে ঠিকমতো টাকা দেয়া হতো না। ঘর বাড়ি না থাকায় তার দিন কাটে বিভিন্ন মানুষের ঘরের বারান্দায়। জীবনের শেষ সময়ে তার একটায় আকুতি একটি সরকারি ঘর পাবার। দীর্ঘদিন পর ওই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান হওয়ায় তিনি বড় আশায় বুক বেধেছেন। এবার হয়তো তিনি একটি ঘর পাবেন।

এ ব্যাপারে মঙ্গলকোট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের বিশ্বাস বলেন, ওই বিধবা যদি একাত্তরের নির্যাতিত পরিবার হয়ে থাকে অবশ্যই আমিসহ আমার সরকার তার পাশে থাকবে।

শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২২ , ১৪ মাঘ ১৪২৮, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

রাজাকারের গুলিতে শহীদ দলিলের পরিবারের খোঁজ খবর রাখে না কেউ

প্রতিনিধি, কেশবপুর (যশোর)

image

কেশবপুর (যশোর) : মুক্তিযুদ্ধে শহীদ দলিলের পরিবার -সংবাদ

যশোরের কেশবপুরে রাজাকারদের নির্মম নির্যাতনসহ গুলি করে হত্যার শিকার হন কন্দর্পপুর গ্রামের ভূমিহীন দলিলউদ্দীন মোড়ল। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছর পার হলেও তার বিধবা স্ত্রী খতেজান বিবির খবর রাখেনি কেউ। ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করলেও তার ভাগ্যে জোটেনি একখন্ড জমি। তাই স্বামীর ভিটা না থাকায় তার অন্যের বাড়িতে রাত্রি যাপন করতে হয়।

জানা গেছে, উপজেলার মঙ্গলকোট ইউনিয়নের কন্দর্পপুর গ্রামের মৃত এজাহার আলীর জমিতে একটি টালির চালের ঘর বেঁধে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করতেন ভূমিহীন দলিলউদ্দীন মোড়ল। স্ত্রী ও চার কন্যাকে নিয়ে ছিল তার সংসার। পরের ক্ষেতে দিনমজুর করে চলত জীবন জীবিকা। দিনমজুর হলেও তিনি ছিলেন একজন স্বাধীনতাকামী মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাকারী।

ওই গ্রামের ৮২ বছর বয়সের বৃদ্ধ শেখ ফজলুল করিম জানান, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কেশবপুর শহরের বর্তমান পাইলট বালিকা বিদ্যালয় ছিল রাজাকারদের টর্চারসেল। কন্দর্পপুর গ্রামের মৃত মুন্সি দীন মোহাম্মদ ও শ্রীরামপুর গ্রামের মৃত আমীনউদ্দীন ছিলেন রাজাকারদের কমান্ডার। এই টর্চার সেলে দেশের মুক্তিকামী মানুষদের ধরে এনে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হতো। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় একদল রাজাকার দলিলউদ্দীনকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে তার ওপর অমানুসিক নির্যাতন চালায়। গভীর রাতে তাকে বুড়িভদ্রা নদীর চারের মাথায় নিয়ে উপর্যুপরি গুলি করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়। এরপর রাজাকাররা তার জীর্ণ কুঠিরটি ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে ও পুড়িয়ে দেয়।

দলিলউদ্দীনের স্ত্রী ৭৪ বছরের বৃদ্ধা খতেজান বিবি জানায়, তার স্বামীর অকাল মৃত্যুতে চার মেয়েকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়। ভিক্ষাবৃত্তি করে অতিকষ্টে মেয়েদের মানুষ করা হয়। কিন্তু তার ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যান ছিলেন এক রাজাকার কমান্ডারের ছেলে। যে কারণে তার ভাগ্যে জোটেনি একখন্ড জমি। তার হিংসাত্মক মনোভাবের কারণে সরকারের সুযোগ সুবিধা থেকেও তাকে বঞ্চিত করা হয়। দেশ স্বাধীন হলেও তার ওপর নির্যাতন থেমে ছিল না। কেশবপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা সাদেক ব্যক্তিগতভাবে তাকে বিধবা ভাতার কার্ড করে দিলেও তাকে ঠিকমতো টাকা দেয়া হতো না। ঘর বাড়ি না থাকায় তার দিন কাটে বিভিন্ন মানুষের ঘরের বারান্দায়। জীবনের শেষ সময়ে তার একটায় আকুতি একটি সরকারি ঘর পাবার। দীর্ঘদিন পর ওই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান হওয়ায় তিনি বড় আশায় বুক বেধেছেন। এবার হয়তো তিনি একটি ঘর পাবেন।

এ ব্যাপারে মঙ্গলকোট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের বিশ্বাস বলেন, ওই বিধবা যদি একাত্তরের নির্যাতিত পরিবার হয়ে থাকে অবশ্যই আমিসহ আমার সরকার তার পাশে থাকবে।