উত্তরা থেকে মতিঝিল শেষ হলো উড়াল পথ

ঢাকার উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের পথে উড়ালপথ (ভায়াডাক্ট) বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে পুরো অংশের নিরবচ্ছিন্ন কাঠামো দৃশ্যমান হলো। গতকাল বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের কাছে দুটি পিয়ারের মধ্যে ভায়াডাক্টের শেষ অংশটি বসানো হয়। এর মাধ্যমে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার টানা উড়ালপথ নির্মাণ শেষ হলো। পিয়ারগুলোতে কংক্রিটের যে কাঠামো বসিয়ে যোগসূত্র তৈরি করা হয়, তাকে বলে ভায়াডাক্ট। এর ওপরই বসবে রেললাইন, তার ওপর দিয়ে চলবে মেট্রোট্রেন।

সর্বশেষ এ ভায়াডাক্ট স্থাপনের কার্যক্রম ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাংবাদিকদের দেখানো হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক। এ সময় এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণসহ পুরো প্রকল্পে যাত্রীদের প্রবেশ, বের হওয়া এবং বিশ্বমানের যাত্রী পরিষেবা দেয়ার জন্য আমরা প্রায় আট হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি।

তিনি বলেন, এ প্রস্তাব আমরা মন্ত্রণালয়ের পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে তা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাবে। এরপর তা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার এবং পরের বছর ডিসেম্বরের মধ্যে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৮ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার মেট্রোরেল চালু করা হবে, জানান তিনি। সবশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি ৭৪ শতাংশ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৯০ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭৩ দশমিক ০৮ শতাংশ। প্রকল্পটির প্রায় শেষ পর্যায়ে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাবের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ঢাকার বিদ্যমান গণপরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবহারবান্ধব মেট্রোরেল চালুর বিষয়টি মাথায় রেখে ঢোকার ও বাহির হওয়ার পয়েন্টগুলো জনসাধারণের জন্য স্বাচ্ছন্দময় করা হবে। এ জন্য নতুন কাজের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, যেখানে মেট্রোরেলের স্টেশন থাকবে সেখানে প্রচুর মানুষের চলাফেরা হবে। কিন্তু ঢাকা শহরে বর্তমানে সড়ক পরিবহন ও সড়কের যে অবস্থা তাতে এই চাপ সামলানো সম্ভব হবে না। ‘নগরীর সব রাস্তা প্রয়োজনীয় প্রশস্ত না থাকায় প্রয়োজনীয় জায়গায় প্রয়োজনে ভূমি অধিগ্রহণ করে ফুটপাতসহ সড়ক প্রশস্ত করা হবে। যাতে সড়কে যানজট সৃষ্টি না হয় এবং যাত্রীরা যাতে ভোগান্তিতে না পড়েন।’ তিনি বলেন, ‘মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত বিস্তারিত নকশা এবং ভূমি অধিগ্রহণ কাজের শেষ পর্যায় আসছি। আশা করি এ দুটি কাজ আগামী এক দুই মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তারপরই এই অংশের মূল কাজ শুরু হয়ে যাবে।’

ডিটিসিএল এমডি বলেন, মূলত প্রস্তাবিত অতিরিক্ত কাজের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের বেশি ব্যয় হবে। ভূমি অধিগ্রহণ (ব্যয়) আগে দেড়গুণ ছিল। এখন এটা তিনগুণ দিতে হবে। ‘এছাড়া ডলারের বিপরীতে আমাদের টাকা বিনিময় হারে পরিবর্তন এসেছে। অর্থাৎ ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে। সেখানে অতিরিক্ত অর্থ যাচ্ছে। এছাড়া সিডি ভ্যাট বা উন্নয়ন প্রকল্পের মূসক ও শুল্ক হার পরিবর্তন হওয়ায় এ খাতেও ব্যয় বেড়েছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এক পয়সাও বেশি দেয়া হবে না,’ যোগ করেন তিনি। এ সময় তিনি যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য উচ্চ প্রযুক্তির সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং সেখানে ফেস ডিটেকশনের ব্যবস্থা থাকবে বলে জানান। এছাড়া প্রতিটি স্টেশনে যেখানে যে পরিমাণ যাত্রী হতে পারে, সেভাবে উঠানামার জন্য এস্কেলেটর, সিঁড়ি, র‌্যাম্প, লিফট এবং বয়স্ক, রোগী বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করা হবে।

শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২২ , ১৪ মাঘ ১৪২৮, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

উত্তরা থেকে মতিঝিল শেষ হলো উড়াল পথ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দুটি পিয়ারের মধ্যে ভায়াডাক্টের শেষ অংশটি বসানোর মধ্য দিয়ে উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেলের পথ তৈরির কাজ শেষ হলো -সংবাদ

ঢাকার উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের পথে উড়ালপথ (ভায়াডাক্ট) বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে পুরো অংশের নিরবচ্ছিন্ন কাঠামো দৃশ্যমান হলো। গতকাল বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের কাছে দুটি পিয়ারের মধ্যে ভায়াডাক্টের শেষ অংশটি বসানো হয়। এর মাধ্যমে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার টানা উড়ালপথ নির্মাণ শেষ হলো। পিয়ারগুলোতে কংক্রিটের যে কাঠামো বসিয়ে যোগসূত্র তৈরি করা হয়, তাকে বলে ভায়াডাক্ট। এর ওপরই বসবে রেললাইন, তার ওপর দিয়ে চলবে মেট্রোট্রেন।

সর্বশেষ এ ভায়াডাক্ট স্থাপনের কার্যক্রম ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাংবাদিকদের দেখানো হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক। এ সময় এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণসহ পুরো প্রকল্পে যাত্রীদের প্রবেশ, বের হওয়া এবং বিশ্বমানের যাত্রী পরিষেবা দেয়ার জন্য আমরা প্রায় আট হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি।

তিনি বলেন, এ প্রস্তাব আমরা মন্ত্রণালয়ের পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে তা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাবে। এরপর তা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার এবং পরের বছর ডিসেম্বরের মধ্যে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৮ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার মেট্রোরেল চালু করা হবে, জানান তিনি। সবশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি ৭৪ শতাংশ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৯০ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭৩ দশমিক ০৮ শতাংশ। প্রকল্পটির প্রায় শেষ পর্যায়ে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাবের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ঢাকার বিদ্যমান গণপরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবহারবান্ধব মেট্রোরেল চালুর বিষয়টি মাথায় রেখে ঢোকার ও বাহির হওয়ার পয়েন্টগুলো জনসাধারণের জন্য স্বাচ্ছন্দময় করা হবে। এ জন্য নতুন কাজের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, যেখানে মেট্রোরেলের স্টেশন থাকবে সেখানে প্রচুর মানুষের চলাফেরা হবে। কিন্তু ঢাকা শহরে বর্তমানে সড়ক পরিবহন ও সড়কের যে অবস্থা তাতে এই চাপ সামলানো সম্ভব হবে না। ‘নগরীর সব রাস্তা প্রয়োজনীয় প্রশস্ত না থাকায় প্রয়োজনীয় জায়গায় প্রয়োজনে ভূমি অধিগ্রহণ করে ফুটপাতসহ সড়ক প্রশস্ত করা হবে। যাতে সড়কে যানজট সৃষ্টি না হয় এবং যাত্রীরা যাতে ভোগান্তিতে না পড়েন।’ তিনি বলেন, ‘মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত বিস্তারিত নকশা এবং ভূমি অধিগ্রহণ কাজের শেষ পর্যায় আসছি। আশা করি এ দুটি কাজ আগামী এক দুই মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তারপরই এই অংশের মূল কাজ শুরু হয়ে যাবে।’

ডিটিসিএল এমডি বলেন, মূলত প্রস্তাবিত অতিরিক্ত কাজের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের বেশি ব্যয় হবে। ভূমি অধিগ্রহণ (ব্যয়) আগে দেড়গুণ ছিল। এখন এটা তিনগুণ দিতে হবে। ‘এছাড়া ডলারের বিপরীতে আমাদের টাকা বিনিময় হারে পরিবর্তন এসেছে। অর্থাৎ ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে। সেখানে অতিরিক্ত অর্থ যাচ্ছে। এছাড়া সিডি ভ্যাট বা উন্নয়ন প্রকল্পের মূসক ও শুল্ক হার পরিবর্তন হওয়ায় এ খাতেও ব্যয় বেড়েছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এক পয়সাও বেশি দেয়া হবে না,’ যোগ করেন তিনি। এ সময় তিনি যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য উচ্চ প্রযুক্তির সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং সেখানে ফেস ডিটেকশনের ব্যবস্থা থাকবে বলে জানান। এছাড়া প্রতিটি স্টেশনে যেখানে যে পরিমাণ যাত্রী হতে পারে, সেভাবে উঠানামার জন্য এস্কেলেটর, সিঁড়ি, র‌্যাম্প, লিফট এবং বয়স্ক, রোগী বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করা হবে।