করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার এক বছর পরও জটিলতা থাকছে

বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে

টানা তিনদিন দেশে ১৫ হাজারের বেশি মানুষের কোভিড শনাক্ত হলো। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনা শনাক্তের হারও ৩১ শতাংশের বেশি। ওমিক্রনের প্রভাবে নিয়মিত সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দেশে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়েছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে যারা করোনায় সংক্রমিত হচ্ছেন, সুস্থ হয়ে ওঠার এক বছর পরও তাদের অনেকের নানা ধরনের কোভিড-পরবর্তী জটিলতা থেকে যাচ্ছে। এর মধ্যে যারা উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের মতো দুরারোগ্য অসংক্রামক রোগে ভুগছেন, তাদের কোভিড-পরবর্তী জটিলতায় ভোগার ঝুঁকি দুই থেকে তিনগুণ বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১৫ হাজার ৮০৭ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। আগের দিন ১৫ হাজার ৫২৭ জন ও ২৫ জানুয়ারি ১৬ হাজার ৩৩ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানিয়েছিল অধিদপ্তর। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) সহযোগিতায় বাংলাদেশের আইইডিসিআরের ফিল্ড এপিডেমিওলজি ট্রেনিং প্রোগ্রাম (এফইটিপি-বি) কোভিড-১৯ রোগীদের প্রাথমিক উপসর্গ এবং পরবর্তী জটিলতাগুলো নিয়ে ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন জানিয়েছেন, করোনায় আক্রান্তরা হলেও তাদের শারীরিক সিস্টেমে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে হাইপারটেনশন, রক্তে চিনি বেড়ে যাওয়া, বুকে ব্যথা, ঘুম না হওয়া, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া, মানসিক সমস্যা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া ও হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হওয়ার মতো সমস্যা থেকে যেতে পারে।

২৬ জানুয়ারি প্রকাশিত আইইডিসিআরের গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, দেশে কোভিড থেকে সেরে ওঠার তিন মাস পর ৭৮ শতাংশের শরীরে এ ধরনের কোভিড-পরবর্তী জটিলতা দেখা যাচ্ছে। এছাড়া ছয় মাস পর ৭০ শতাংশ, ৯ মাস পর ৬৮ শতাংশ এবং এক বছর পর ৪৫ শতাংশ উত্তরাদাতা এ ধরনের জটিলতায় ভোগার কথা বলেছেন। তবে কতজনের মধ্যে এই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে সে সর্ম্পকে কোন তথ্য দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘অসংক্রামক ব্যাধি, যেমন উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের কোভিড-পরবর্তী উপসর্গের আশঙ্কা দুই থেকে তিনগুণ বেশি। এতে প্রতীয়মাণ হয়, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের কোভিড-পরবর্তী উপসর্গে আক্রান্ত হওয়া কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া জরুরি।’

আইইডিসিআর বলছে, উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের মধ্যে যারা নিয়মিত ওষুধ সেবন করছেন, তাদের কোভিড-পরবর্তী জটিলতার ঝুঁকি যারা ওষুধ সেবন করেন না, তাদের তুলনায় ৯ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। একইভাবে ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে নিয়মিত ওষুধ সেবনকারীদের কোভিড-পরবর্তী জটিলতার ঝুঁকি যারা ওষুধ সেবন করেন না তাদের তুলনায় প্রায় সাত শতাংশ কমে যায়।

২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার প্রায় ৩২ শতাংশ

একদিনে শনাক্ত হওয়া নতুন রোগীসহ সরকারি হিসাবে দেশে এ পর্যন্ত মোট ১৭ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩১ জনের কোভিড শনাক্ত হলো। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ১৫ জন মারা গেছেন। তাদের নিয়ে দেশে করোনায় মোট মারা গেছেন ২৮ হাজার ২৮৮ জন। মোট শনাক্ত কোভিড রোগীর মধ্যে একদিনে এক হাজার ৩৭ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৬১ হাজার ৪৩ জন। মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা থেকে সুস্থ হওয়া ও মৃত্যুর সংখ্যা বাদ দিলে দেশে সক্রিয় রোগী অর্থাৎ চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় এক লাখ ৫৮ হাজার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত একদিনে করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৪৯ হাজার ৪২৫টি। দেশে এ পর্যন্ত করোনার মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক কোটি ২৩ লাখ ১০ হাজার ৬৭৭টি।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে রোগী শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৯৮ শতাংশ; আর এ পর্যন্ত মোট রোগী শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ১৯ শতাংশ।

মোট শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৬২ শতাংশ। একদিনে মারা যাওয়া ১৫ জনের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও ১০ জন ছিলেন নারী। আর এ পর্যন্ত মৃত্যু হওয়া মোট লোকজনের মধ্যে পুরুষ ১৮ হাজার ৮০ জন এবং ১০ হাজার ২০৮ জন ছিলেন নারী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, একদিনে মৃত্যু হওয়া ১৫ জনের মধ্যে চারজনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর, তিনজনের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছর, দুজনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ ও দুজনের বয়স ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ছিল। এছাড়া ১১ থেকে ২০ বছর, ২১ থেকে ৩০ বছর, ৩১ থেকে ৪০ এবং ৯১ থেকে ১০০ বছর বয়সী একজন করে রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

একদিনে মৃত্যু হওয়া ১৫ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ আটজন ঢাকার ও দুজন ছিলেন চট্টগ্রামের বাসিন্দা। এছাড়া নোয়াখালী, নওগাঁ, বগুড়া, রংপুর ও বরগুনায় একজন করো কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২২ , ১৪ মাঘ ১৪২৮, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার এক বছর পরও জটিলতা থাকছে

বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

টানা তিনদিন দেশে ১৫ হাজারের বেশি মানুষের কোভিড শনাক্ত হলো। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনা শনাক্তের হারও ৩১ শতাংশের বেশি। ওমিক্রনের প্রভাবে নিয়মিত সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দেশে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়েছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে যারা করোনায় সংক্রমিত হচ্ছেন, সুস্থ হয়ে ওঠার এক বছর পরও তাদের অনেকের নানা ধরনের কোভিড-পরবর্তী জটিলতা থেকে যাচ্ছে। এর মধ্যে যারা উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের মতো দুরারোগ্য অসংক্রামক রোগে ভুগছেন, তাদের কোভিড-পরবর্তী জটিলতায় ভোগার ঝুঁকি দুই থেকে তিনগুণ বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১৫ হাজার ৮০৭ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। আগের দিন ১৫ হাজার ৫২৭ জন ও ২৫ জানুয়ারি ১৬ হাজার ৩৩ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানিয়েছিল অধিদপ্তর। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) সহযোগিতায় বাংলাদেশের আইইডিসিআরের ফিল্ড এপিডেমিওলজি ট্রেনিং প্রোগ্রাম (এফইটিপি-বি) কোভিড-১৯ রোগীদের প্রাথমিক উপসর্গ এবং পরবর্তী জটিলতাগুলো নিয়ে ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন জানিয়েছেন, করোনায় আক্রান্তরা হলেও তাদের শারীরিক সিস্টেমে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে হাইপারটেনশন, রক্তে চিনি বেড়ে যাওয়া, বুকে ব্যথা, ঘুম না হওয়া, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া, মানসিক সমস্যা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া ও হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হওয়ার মতো সমস্যা থেকে যেতে পারে।

২৬ জানুয়ারি প্রকাশিত আইইডিসিআরের গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, দেশে কোভিড থেকে সেরে ওঠার তিন মাস পর ৭৮ শতাংশের শরীরে এ ধরনের কোভিড-পরবর্তী জটিলতা দেখা যাচ্ছে। এছাড়া ছয় মাস পর ৭০ শতাংশ, ৯ মাস পর ৬৮ শতাংশ এবং এক বছর পর ৪৫ শতাংশ উত্তরাদাতা এ ধরনের জটিলতায় ভোগার কথা বলেছেন। তবে কতজনের মধ্যে এই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে সে সর্ম্পকে কোন তথ্য দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘অসংক্রামক ব্যাধি, যেমন উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের কোভিড-পরবর্তী উপসর্গের আশঙ্কা দুই থেকে তিনগুণ বেশি। এতে প্রতীয়মাণ হয়, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের কোভিড-পরবর্তী উপসর্গে আক্রান্ত হওয়া কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া জরুরি।’

আইইডিসিআর বলছে, উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের মধ্যে যারা নিয়মিত ওষুধ সেবন করছেন, তাদের কোভিড-পরবর্তী জটিলতার ঝুঁকি যারা ওষুধ সেবন করেন না, তাদের তুলনায় ৯ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। একইভাবে ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে নিয়মিত ওষুধ সেবনকারীদের কোভিড-পরবর্তী জটিলতার ঝুঁকি যারা ওষুধ সেবন করেন না তাদের তুলনায় প্রায় সাত শতাংশ কমে যায়।

২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার প্রায় ৩২ শতাংশ

একদিনে শনাক্ত হওয়া নতুন রোগীসহ সরকারি হিসাবে দেশে এ পর্যন্ত মোট ১৭ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩১ জনের কোভিড শনাক্ত হলো। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ১৫ জন মারা গেছেন। তাদের নিয়ে দেশে করোনায় মোট মারা গেছেন ২৮ হাজার ২৮৮ জন। মোট শনাক্ত কোভিড রোগীর মধ্যে একদিনে এক হাজার ৩৭ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৬১ হাজার ৪৩ জন। মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা থেকে সুস্থ হওয়া ও মৃত্যুর সংখ্যা বাদ দিলে দেশে সক্রিয় রোগী অর্থাৎ চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় এক লাখ ৫৮ হাজার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত একদিনে করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৪৯ হাজার ৪২৫টি। দেশে এ পর্যন্ত করোনার মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক কোটি ২৩ লাখ ১০ হাজার ৬৭৭টি।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে রোগী শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৯৮ শতাংশ; আর এ পর্যন্ত মোট রোগী শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ১৯ শতাংশ।

মোট শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৬২ শতাংশ। একদিনে মারা যাওয়া ১৫ জনের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও ১০ জন ছিলেন নারী। আর এ পর্যন্ত মৃত্যু হওয়া মোট লোকজনের মধ্যে পুরুষ ১৮ হাজার ৮০ জন এবং ১০ হাজার ২০৮ জন ছিলেন নারী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, একদিনে মৃত্যু হওয়া ১৫ জনের মধ্যে চারজনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর, তিনজনের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছর, দুজনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ ও দুজনের বয়স ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ছিল। এছাড়া ১১ থেকে ২০ বছর, ২১ থেকে ৩০ বছর, ৩১ থেকে ৪০ এবং ৯১ থেকে ১০০ বছর বয়সী একজন করে রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

একদিনে মৃত্যু হওয়া ১৫ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ আটজন ঢাকার ও দুজন ছিলেন চট্টগ্রামের বাসিন্দা। এছাড়া নোয়াখালী, নওগাঁ, বগুড়া, রংপুর ও বরগুনায় একজন করো কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে।