ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে বড় বাধা নগর পরিকল্পনায় ঘাটতি

অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজ ঢাকায় বায়ুদূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী বলে এক গবেষণায় জানা গেছে। গবেষণা বলছে, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে গড় বায়ুদূষণের পরিমাণ বেড়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ২৫ দিনের গড় বায়ুমান সূচক ২১৯ দশমিক ৫২তে এসে দাঁড়িয়েছে, যার হার ৩০ শতাংশ। যা খুবই অস্বাস্থ্যকর। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ হচ্ছে ইটভাটা ও শিল্প কারখানার মাধ্যমে। যার হার ২৯ শতাংশ। বায়ু দূষণের তৃতীয় সর্বোচ্চ কারণ হলো যানবাহনের কালো ধোঁয়া, যার শতকরা হার ১৫ শতাংশ। বায়ুদূষণের জন্য নির্মাণ খাত ৩০ শতাংশ দায়ী।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০২১ সালে ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের বায়ুর মান পর্যবেক্ষেণ করে। এ সময় তারা বায়ুতে বস্তুকণা ২.৫ এর উপস্থিতির পরিমাণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পর্যালোচনা করে। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত ‘বিপজ্জনক মাত্রায় ঢাকার বায়ুদূষণ : জনস্বাস্থ্য ও দুর্যোগ মোকাবিলায় করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়। বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিলের সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনায় এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাপার যুগ্ম সম্পাদক এবং স্টামফোর্ড বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।

বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজ (৩০%) থেকে সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ হয়। এরপরই আছে ইটভাটা ও শিল্প কারখানা (২৯%), যানবাহনের কালো ধোঁয়া (১৫%), আন্তঃদেশীয় বায়ুদূষণ (১০%), গৃহস্থালি ও রান্নার চুলা থেকে নির্গত দূষক (৯%) এবং বর্জ্য পোড়ানোর (৭%) কারণে বায়ুদূষণ হয়ে থাকে।

গবেষণায় বলা হয়, গত বছর ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত ছিল তেজগাঁও এলাকা (প্রতি ঘনমিটারে ৭০ মাইক্রোগ্রাম) এবং পরের অবস্থানে রয়েছে শাহবাগ এলাকা (প্রতি ঘনমিটারে ৬৮ মাইক্রোগ্রাম)। প্রত্যকটি স্থানের গড় বস্তুকণা ২.৫ ছিল নির্ধারিত মানমাত্রার কয়েক গুণ বেশি। এছাড়া আহসান মঞ্জিল, আবদুল্লাহপুর, মতিঝিল, ধানমন্ডি-৩২, সংসদ ভবন, আগারগাঁও, মিরপুর-১০ এবং গুলশান-২ এই এলাকাগুলোতে গড় বস্তুকণা ২.৫ ছিল প্রতি ঘনমিটারে যথাক্রমে ৫৭, ৬২, ৬০, ৬৩, ৫৯, ৬১,৬৬ এবং ৬৫ মাইক্রোগ্রাম এবং যা নির্ধারিত মান মাত্রার প্রায় চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি। ওই এলাকাগুলোতে এমআরটি ও বিআরটি প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মাস অনুযায়ী ১০টি স্থানের গড় বস্তুকণা ২.৫ বিশ্লেষণে দেখা যায় ডিসেম্বর মাসে বস্তুকণা ২.৫ এর উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি যা প্রতি ঘনমিটারে ১০২ মাইক্রোগ্রাম আর জুলাই মাসে সবচেয়ে কম যা ২৯.০১ মাইক্রোগ্রাম।

সভাপতির বক্তব্যে বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, বায়ুদূষণের কারণে ঢাকায় একটি মানবিক বিপর্যয় হচ্ছে এবং আমরা সেই উন্নয়ন চাই না যে উন্নয়ন জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়। ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ২০২১ সালে ঢাকা শহরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত ছিল তেজগাঁও এলাকা (প্রতি ঘনমিটারে ৭০ মাইক্রোগ্রাম) এবং পরের অবস্থানে রয়েছে শাহবাগ এলাকা (প্রতি ঘনমিটারে ৬৮ মাইক্রোগ্রাম)। তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়, প্রতিটি স্থানের গড় বস্তুকণা দুই দশমিক পাঁচ ছিল নির্ধারিত মানমাত্রার কয়েক গুণ বেশি। গবেষণা অনুযায়ী, আহসান মঞ্জিল, আবদুল্লাহপুর, মতিঝিল, ধানমন্ডি ৩২, সংসদ ভবন, আগারগাঁও, মিরপুর-১০ এবং গুলশান-২ এই এলাকাগুলোতে গড় বস্তুকণা দুই দশমিক পাঁচ ছিল প্রতি ঘনমিটারে যথাক্রমে ৫৭, ৬২, ৬০, ৬৩, ৫৯, ৬১, ৬৬ এবং ৬৫ মাইক্রোগ্রাম এবং যা নির্ধারিত মানমাত্রার প্রায় ৪-৫ গুণ বেশি।

সভায় নির্মাণ কাজের মাধ্যমে দূষণ বন্ধ করতে এ সময় চলমান নির্মাণ স্থান ঘেরাও দিয়ে রাখার ও নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করতে জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।

শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২২ , ১৪ মাঘ ১৪২৮, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে বড় বাধা নগর পরিকল্পনায় ঘাটতি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

ধূলি দূষণে আচ্ছন্ন ঢাকার আকাশ -সংবাদ

অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজ ঢাকায় বায়ুদূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী বলে এক গবেষণায় জানা গেছে। গবেষণা বলছে, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে গড় বায়ুদূষণের পরিমাণ বেড়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ২৫ দিনের গড় বায়ুমান সূচক ২১৯ দশমিক ৫২তে এসে দাঁড়িয়েছে, যার হার ৩০ শতাংশ। যা খুবই অস্বাস্থ্যকর। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ হচ্ছে ইটভাটা ও শিল্প কারখানার মাধ্যমে। যার হার ২৯ শতাংশ। বায়ু দূষণের তৃতীয় সর্বোচ্চ কারণ হলো যানবাহনের কালো ধোঁয়া, যার শতকরা হার ১৫ শতাংশ। বায়ুদূষণের জন্য নির্মাণ খাত ৩০ শতাংশ দায়ী।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০২১ সালে ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের বায়ুর মান পর্যবেক্ষেণ করে। এ সময় তারা বায়ুতে বস্তুকণা ২.৫ এর উপস্থিতির পরিমাণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পর্যালোচনা করে। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত ‘বিপজ্জনক মাত্রায় ঢাকার বায়ুদূষণ : জনস্বাস্থ্য ও দুর্যোগ মোকাবিলায় করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়। বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিলের সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনায় এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাপার যুগ্ম সম্পাদক এবং স্টামফোর্ড বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।

বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজ (৩০%) থেকে সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ হয়। এরপরই আছে ইটভাটা ও শিল্প কারখানা (২৯%), যানবাহনের কালো ধোঁয়া (১৫%), আন্তঃদেশীয় বায়ুদূষণ (১০%), গৃহস্থালি ও রান্নার চুলা থেকে নির্গত দূষক (৯%) এবং বর্জ্য পোড়ানোর (৭%) কারণে বায়ুদূষণ হয়ে থাকে।

গবেষণায় বলা হয়, গত বছর ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত ছিল তেজগাঁও এলাকা (প্রতি ঘনমিটারে ৭০ মাইক্রোগ্রাম) এবং পরের অবস্থানে রয়েছে শাহবাগ এলাকা (প্রতি ঘনমিটারে ৬৮ মাইক্রোগ্রাম)। প্রত্যকটি স্থানের গড় বস্তুকণা ২.৫ ছিল নির্ধারিত মানমাত্রার কয়েক গুণ বেশি। এছাড়া আহসান মঞ্জিল, আবদুল্লাহপুর, মতিঝিল, ধানমন্ডি-৩২, সংসদ ভবন, আগারগাঁও, মিরপুর-১০ এবং গুলশান-২ এই এলাকাগুলোতে গড় বস্তুকণা ২.৫ ছিল প্রতি ঘনমিটারে যথাক্রমে ৫৭, ৬২, ৬০, ৬৩, ৫৯, ৬১,৬৬ এবং ৬৫ মাইক্রোগ্রাম এবং যা নির্ধারিত মান মাত্রার প্রায় চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি। ওই এলাকাগুলোতে এমআরটি ও বিআরটি প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মাস অনুযায়ী ১০টি স্থানের গড় বস্তুকণা ২.৫ বিশ্লেষণে দেখা যায় ডিসেম্বর মাসে বস্তুকণা ২.৫ এর উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি যা প্রতি ঘনমিটারে ১০২ মাইক্রোগ্রাম আর জুলাই মাসে সবচেয়ে কম যা ২৯.০১ মাইক্রোগ্রাম।

সভাপতির বক্তব্যে বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, বায়ুদূষণের কারণে ঢাকায় একটি মানবিক বিপর্যয় হচ্ছে এবং আমরা সেই উন্নয়ন চাই না যে উন্নয়ন জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়। ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ২০২১ সালে ঢাকা শহরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত ছিল তেজগাঁও এলাকা (প্রতি ঘনমিটারে ৭০ মাইক্রোগ্রাম) এবং পরের অবস্থানে রয়েছে শাহবাগ এলাকা (প্রতি ঘনমিটারে ৬৮ মাইক্রোগ্রাম)। তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়, প্রতিটি স্থানের গড় বস্তুকণা দুই দশমিক পাঁচ ছিল নির্ধারিত মানমাত্রার কয়েক গুণ বেশি। গবেষণা অনুযায়ী, আহসান মঞ্জিল, আবদুল্লাহপুর, মতিঝিল, ধানমন্ডি ৩২, সংসদ ভবন, আগারগাঁও, মিরপুর-১০ এবং গুলশান-২ এই এলাকাগুলোতে গড় বস্তুকণা দুই দশমিক পাঁচ ছিল প্রতি ঘনমিটারে যথাক্রমে ৫৭, ৬২, ৬০, ৬৩, ৫৯, ৬১, ৬৬ এবং ৬৫ মাইক্রোগ্রাম এবং যা নির্ধারিত মানমাত্রার প্রায় ৪-৫ গুণ বেশি।

সভায় নির্মাণ কাজের মাধ্যমে দূষণ বন্ধ করতে এ সময় চলমান নির্মাণ স্থান ঘেরাও দিয়ে রাখার ও নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করতে জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।