তারা প্রতারণায়ও বহুরূপী

উচ্চপদস্থদের কণ্ঠ নকল করে তদবির করতেন চন্দ্রশেখর , কখনো দুদক, কখনো রাজউক কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন মামুন

রাজধানীতে বহুরূপী দুই প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলো মো. হাফিজুল ইসলাম সরদার ওরফে ডা. মো. শফিক শাহরিয়ার ওরফে মো. শফিক ওরফে মামুন এবং চন্দ্র শেখর মিস্ত্রি। হাফিজুলকে গ্রেপ্তার করে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ এবং চন্দ্র শেখরকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রেপ্তারকৃতরা বহুরূপী প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম ইনচার্জ এডিসি আশরাফউল্লাহ বলেন, হাফিজুল ভুয়া দুদক, রাজউক, বিআরটিএ, ডাক্তার, আরআইসি কর্মকর্তা এবং সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণা করছিল। তিনি দুদকের সহকারী কমিশনার অব ইনভেস্টিগেশন, বিআরটিএ’র অফিসার, রাজউকের সহকারী ইঞ্জিনিয়ার, আরআইসির ক্রেডিট অফিসার, দৈনিক স্বাধীন সংবাদের হেলথ অ্যাফেয়ারস এডিটর হিসেবে পরিচয় দিতেন। তথ্যপ্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত বুধবার রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে হাফিজুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ সময় তার কাছ থেকে ডাক্তারের ১২টি ভিজিটিং কার্ড, পিপলস ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড কনসালটেশনের ল্যাব রিপোর্ট সরবরাহে খালি ৮০টি খাম, রিপোর্ট লেখার প্যাডের ৪৫টি খালি পাতা, দুদকের লোগো সংবলিত লিগাল নোটিশের খালি প্যাডের ৫টি পাতা, বিআরটিএ অস্থায়ী অনুমতিপত্র (খালি ফরম) ১০ পাতা, বিভিন্ন টেলিভিশনের ১৩১টি স্টিকার, বিআরটিএর তিনটি সিল, আসামির ছবিযুক্ত দুদক, রাজউক, বিআরটিএ, আরআইসি কর্মকর্তা পরিচয়ের পাঁচটি আইডি কার্ড, একটি মোবাইল ফোন ও দুইটি সিম কার্ডসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।

এদিকে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের এডিসি মো. হাফিজ আল ফারুক বলেন, গত ২০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিফ কম্পট্রোলার পরিচয়ে একজন ব্যক্তি ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের অধ্যক্ষকে ফোন দেন। তিনি একজন ছাত্রকে ভর্তির জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে গত বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের নাজনীনবাগ এলাকা থেকে চন্দ্র শেখর মিস্ত্রিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ সময় তার কাছ থেকে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জব সার্কুলারের বিপরীতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চাকরিপ্রার্থীর সিভি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরির বিজ্ঞপ্তি, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের বদলির আবেদন, বিভিন্ন সরকারি স্কুল কলেজের ভর্তির আবেদন, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নাম, মোবাইল নম্বর ও সিল এবং ছয়টি মোবাইল ফোন, চারটি ডেবিট কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক জব্দ করা হয়।

এডিসি হাফিজ আরও বলেন, গ্রেপ্তার চন্দ্র শেখর নিজেকে কখনও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিফ কম্পট্রোলার, প্রধানমন্ত্রীর এপিএস, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এপিএস, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পিএস, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরিচয় দিতেন। তিনি সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে নিয়োগ, বদলি, স্কুল কলেজে ভর্তি, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে প্রেরণ, গনভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশ পাশ ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দেয়ার কথা বলে শতাধিক লোকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। চন্দ্র শেখর যখন মোবাইল ফোনে কাউকে ফোন দিতেন, এর আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কণ্ঠ নকল করে অবিকলভাবে তার মতো করে কথা বলতেন। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিল চন্দ্র শেখর।

আরও খবর
যশোর শিক্ষাবোর্ডের ৭ কোটি টাকা উদ্ধারের উদ্যোগ নেই
কবিতায় প্রতিবাদের ভাষায় মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়, তা আর কিছুতেই হয় না : প্রধানমন্ত্রী
দক্ষ জনবল না থাকায় জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল হচ্ছে : আইনমন্ত্রী
চার বছরে ২২৮ এনজিওর নিবন্ধন বাতিল
ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দূষিত শহর : তাপস
পটিয়ায় ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে গৃহবধূ ধৃর্ষণের অভিযোগ
চাঁদপুর বিশ্ববিদ্যালয় ‘দুুর্নীতির সঙ্গে আমার পরিবার জড়িত নয়’-দীপু মনি
সিমেন্ট কোম্পানির পরামর্শে আত্মগোপনে যান ট্রাকচালক জসিম
সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে : আইভী
নরসিংদী ও ধামরাইয়ে ইটভাটায় জরিমানা
সরগরম জাতীয় রাজনীতি চলছে পট পরিবর্তনের খেলা

শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২২ , ১৪ মাঘ ১৪২৮, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

তারা প্রতারণায়ও বহুরূপী

উচ্চপদস্থদের কণ্ঠ নকল করে তদবির করতেন চন্দ্রশেখর , কখনো দুদক, কখনো রাজউক কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন মামুন

রাজধানীতে বহুরূপী দুই প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলো মো. হাফিজুল ইসলাম সরদার ওরফে ডা. মো. শফিক শাহরিয়ার ওরফে মো. শফিক ওরফে মামুন এবং চন্দ্র শেখর মিস্ত্রি। হাফিজুলকে গ্রেপ্তার করে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ এবং চন্দ্র শেখরকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রেপ্তারকৃতরা বহুরূপী প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম ইনচার্জ এডিসি আশরাফউল্লাহ বলেন, হাফিজুল ভুয়া দুদক, রাজউক, বিআরটিএ, ডাক্তার, আরআইসি কর্মকর্তা এবং সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণা করছিল। তিনি দুদকের সহকারী কমিশনার অব ইনভেস্টিগেশন, বিআরটিএ’র অফিসার, রাজউকের সহকারী ইঞ্জিনিয়ার, আরআইসির ক্রেডিট অফিসার, দৈনিক স্বাধীন সংবাদের হেলথ অ্যাফেয়ারস এডিটর হিসেবে পরিচয় দিতেন। তথ্যপ্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত বুধবার রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে হাফিজুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ সময় তার কাছ থেকে ডাক্তারের ১২টি ভিজিটিং কার্ড, পিপলস ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড কনসালটেশনের ল্যাব রিপোর্ট সরবরাহে খালি ৮০টি খাম, রিপোর্ট লেখার প্যাডের ৪৫টি খালি পাতা, দুদকের লোগো সংবলিত লিগাল নোটিশের খালি প্যাডের ৫টি পাতা, বিআরটিএ অস্থায়ী অনুমতিপত্র (খালি ফরম) ১০ পাতা, বিভিন্ন টেলিভিশনের ১৩১টি স্টিকার, বিআরটিএর তিনটি সিল, আসামির ছবিযুক্ত দুদক, রাজউক, বিআরটিএ, আরআইসি কর্মকর্তা পরিচয়ের পাঁচটি আইডি কার্ড, একটি মোবাইল ফোন ও দুইটি সিম কার্ডসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।

এদিকে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের এডিসি মো. হাফিজ আল ফারুক বলেন, গত ২০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিফ কম্পট্রোলার পরিচয়ে একজন ব্যক্তি ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের অধ্যক্ষকে ফোন দেন। তিনি একজন ছাত্রকে ভর্তির জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে গত বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের নাজনীনবাগ এলাকা থেকে চন্দ্র শেখর মিস্ত্রিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ সময় তার কাছ থেকে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জব সার্কুলারের বিপরীতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চাকরিপ্রার্থীর সিভি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরির বিজ্ঞপ্তি, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের বদলির আবেদন, বিভিন্ন সরকারি স্কুল কলেজের ভর্তির আবেদন, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নাম, মোবাইল নম্বর ও সিল এবং ছয়টি মোবাইল ফোন, চারটি ডেবিট কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক জব্দ করা হয়।

এডিসি হাফিজ আরও বলেন, গ্রেপ্তার চন্দ্র শেখর নিজেকে কখনও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিফ কম্পট্রোলার, প্রধানমন্ত্রীর এপিএস, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এপিএস, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পিএস, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরিচয় দিতেন। তিনি সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে নিয়োগ, বদলি, স্কুল কলেজে ভর্তি, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে প্রেরণ, গনভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশ পাশ ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দেয়ার কথা বলে শতাধিক লোকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। চন্দ্র শেখর যখন মোবাইল ফোনে কাউকে ফোন দিতেন, এর আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কণ্ঠ নকল করে অবিকলভাবে তার মতো করে কথা বলতেন। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিল চন্দ্র শেখর।