ভূমধ্যসাগরে বাংলাদেশি নাগরিকদের করুণ মৃত্যু

ভূমধ্যসাগরকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মানব পাচারের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রুট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইউরোপে যাওয়ার পথে অভিবাসনপ্রত্যাশী অনেক মানুষই সাগরে ডুবে বা অন্য কোনভাবে প্রাণ হারান। অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশি নাগরিকদেরও বিপজ্জনক এই পথ পাড়ি দিতে দেখা যায়।

ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার সময় প্রচন্ড ঠান্ডায় সাতজন বাংলাদেশি মারা গেছেন। এর আগেও অবৈধপথে বিদেশে যাওয়ার সময় বাংলাদেশি নাগরিকরা প্রাণ হারিয়েছেন। অনেকে আটক হয়েছেন। ২০১৯ সালে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে ডুবে অন্তত ৪০ জন বাংলাদেশি নাগরিক মারা গিয়েছিলেন।

মূলত উন্নত জীবনের আশায় মৃত্যুর ঝুঁকি উপেক্ষা করে বাংলাদেশ থেকে মানুষ অবৈধভাবে বিদেশে যাচ্ছেন। তাদের অন্যতম প্রধান গন্তব্য হচ্ছে ইউরোপ, বিশেষ করে ইতালি। এ উদ্দেশ্যেই তারা লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেন। গত বছর অভিবাসনবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ফ্রন্টিয়ার যে তথ্য দিয়েছে তা থেকে জানা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যত সংখ্যক মানুষ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করে আটক হয়েছেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়।

দেশের বহু মানুষের মধ্যে বিদেশ প্রশ্নে মোহ কাজ করছে। তারা মনে করেন, কোনরকমে একবার বিদেশে যেতে পারলে জীবন বদলে যাবে। ভিনদেশে গিয়ে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা-যোগ্যতা আছে কিনা সেটা না ভেবেই তারা বিদেশে যেতে উদ্যত হন। এজন্য ভিটেমাটি বিক্রি করতেও তারা পিছ-পা হন না। এ সুযোগটি নেয় মানব পাচারকারী চক্র। এ মোহের যতদিন না অবসান হবে ততদিন এই অবস্থার অবসান হবে না।

মানব পাচার বন্ধে যতটা নজর দেয়া দরকার ততটা দেয়া হয় না। মানব পাচারবিষয়ক অপরাধের তদন্ত, মামলা পরিচালনা ও অপরাধীর দন্ড দেয়ার প্রশ্নে অনেক দুর্বলতা রয়েছে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা না গেলে মানব পাচার বন্ধ হবে কীভাবে? পাচারের নেপথ্যের গডফাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা গেলে অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন হতে পারে।

শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২২ , ১৪ মাঘ ১৪২৮, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

ভূমধ্যসাগরে বাংলাদেশি নাগরিকদের করুণ মৃত্যু

ভূমধ্যসাগরকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মানব পাচারের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রুট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইউরোপে যাওয়ার পথে অভিবাসনপ্রত্যাশী অনেক মানুষই সাগরে ডুবে বা অন্য কোনভাবে প্রাণ হারান। অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশি নাগরিকদেরও বিপজ্জনক এই পথ পাড়ি দিতে দেখা যায়।

ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার সময় প্রচন্ড ঠান্ডায় সাতজন বাংলাদেশি মারা গেছেন। এর আগেও অবৈধপথে বিদেশে যাওয়ার সময় বাংলাদেশি নাগরিকরা প্রাণ হারিয়েছেন। অনেকে আটক হয়েছেন। ২০১৯ সালে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে ডুবে অন্তত ৪০ জন বাংলাদেশি নাগরিক মারা গিয়েছিলেন।

মূলত উন্নত জীবনের আশায় মৃত্যুর ঝুঁকি উপেক্ষা করে বাংলাদেশ থেকে মানুষ অবৈধভাবে বিদেশে যাচ্ছেন। তাদের অন্যতম প্রধান গন্তব্য হচ্ছে ইউরোপ, বিশেষ করে ইতালি। এ উদ্দেশ্যেই তারা লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেন। গত বছর অভিবাসনবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ফ্রন্টিয়ার যে তথ্য দিয়েছে তা থেকে জানা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যত সংখ্যক মানুষ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করে আটক হয়েছেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়।

দেশের বহু মানুষের মধ্যে বিদেশ প্রশ্নে মোহ কাজ করছে। তারা মনে করেন, কোনরকমে একবার বিদেশে যেতে পারলে জীবন বদলে যাবে। ভিনদেশে গিয়ে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা-যোগ্যতা আছে কিনা সেটা না ভেবেই তারা বিদেশে যেতে উদ্যত হন। এজন্য ভিটেমাটি বিক্রি করতেও তারা পিছ-পা হন না। এ সুযোগটি নেয় মানব পাচারকারী চক্র। এ মোহের যতদিন না অবসান হবে ততদিন এই অবস্থার অবসান হবে না।

মানব পাচার বন্ধে যতটা নজর দেয়া দরকার ততটা দেয়া হয় না। মানব পাচারবিষয়ক অপরাধের তদন্ত, মামলা পরিচালনা ও অপরাধীর দন্ড দেয়ার প্রশ্নে অনেক দুর্বলতা রয়েছে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা না গেলে মানব পাচার বন্ধ হবে কীভাবে? পাচারের নেপথ্যের গডফাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা গেলে অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন হতে পারে।