চিঠি : রাজধানীতে বাড়ি ভাড়ার বাড়াবাড়ি

রাজধানীতে বাড়ি ভাড়ার বাড়াবাড়ি

মানুষের নানান প্রয়োজনে রাজধানী ঢাকার জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে। ঢাকা যেন ভাগ্য বদলানোর তীর্থস্থান! তাই ঢাকার সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর একটি হলো আবাসন। একদিকে থাকার সমস্যা অন্যদিকে উচ্চ ভাড়ায় ঢাকাবাসী পিষ্ট হচ্ছে। তারপরও নতুন বছরের শুরুতে ভাড়া বাড়ানোর আতঙ্ক মানুষকে অর্থনৈতিক নির্যাতনের মুখে ফেলেছে। ঢাকায় এখন এমন অনেক বাড়িওয়ালা আছেন যারা কর্মজীবনে অন্য কিছু করেন না। শুধু ফ্লাটের ভাড়া তুলে সংসার চালান। ফলে ফি বছর ভাড়া বাড়ানোর চেষ্টা চালান। তাদের এ চেষ্টা বহু মানুষের তেষ্টা লাগিয়ে দিচ্ছে।

ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২৫ বছরে রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশ। একই সময়ে নিত্যপণ্যের যে দাম বেড়েছে, সেই তুলনায় বাড়িভাড়া বাড়ার হার প্রায় দ্বিগুণ। এক সমীক্ষায় জানা গেছে, ঢাকা শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ ভাড়া বাসায় থাকেন। ফলে ঢাকা যেন এখন আধুনিক যাযাবরের শহরে পরিণত হয়েছে।

দুঃখজনক ব্যাপার হলো, অনেক ক্ষেত্রে সঠিক নিয়মের অভাবে বাড়িওয়ালা কর্তৃক ভাড়াটিয়া নিগৃহীত হয়। আবার কোনো ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়ার দ্বারা বাড়িওয়ালাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুধু নিজের স্বার্থই সামনে রাখে অন্যের ক্ষতি হলো কিনা বা তার প্রতি জোর-জবরদস্তি হলো কি না-তা ভেবেও দেখে না। এজন্য প্রয়োজন ভাড়ার পরিমাণ নির্দিষ্ট করা। যে বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভাড়া হবে এর সব সুবিধা-অসুবিধা ও সংশ্লিষ্ট বিষয় ভাড়াটিয়াকে সুস্পষ্টভাবে অবহিত করা। ভাড়া কত তা নির্ধারণ করা।

কোভিডকালে কেউ ভালো নেই। তবে ভালো না থাকার দলে আগে থেকেই ছিল ভাড়াটিয়ারা। ফি বছর ভাড়া বৃদ্ধির জন্য তারা থাকে চাপের মুখে। ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাবে রাজি না হলে দেয়া হয় বাড়ি ছাড়ার নোটিশ। মহামারির আগ্রাসনে সিংহভাগ মানুষের আয় কমে গেছে। বিশেষ কিছু নাগরিক ছাড়া সবাই দুরবস্থার শিকার। বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং আয় কমে যাওয়ায় শুধু নিম্নবিত্তই নয়, ঢাকায় বাড়ি ভাড়ার টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও। ফলে তাদের কম দামের বাসা খোঁজ করতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে।

বাড়ির মালিক তার বাড়িটি বসবাসের উপযোগী করে রাখতে আইনত বাধ্য। বাড়ির মালিক ইচ্ছা করলেই ভাড়াটিয়াকে বসবাসের অনুপযোগী বা অযোগ্য অবস্থায় রাখতে পারেন না। আইন থাকলেও তার যথাযথ বাস্তবায়নের অভাবেই বাড়ছে বাড়ি ভাড়ার বাড়াবাড়ি। পরিশেষে এটাই প্রত্যাশা- বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়া সম্পর্ক অটুট থাকুক। পরিমিত মাত্রায় নিয়ম মেনে নির্ধারণ হোক বাড়ি ভাড়া।

নিগার নিশাত

আরও খবর

শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২২ , ১৪ মাঘ ১৪২৮, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

চিঠি : রাজধানীতে বাড়ি ভাড়ার বাড়াবাড়ি

রাজধানীতে বাড়ি ভাড়ার বাড়াবাড়ি

মানুষের নানান প্রয়োজনে রাজধানী ঢাকার জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে। ঢাকা যেন ভাগ্য বদলানোর তীর্থস্থান! তাই ঢাকার সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর একটি হলো আবাসন। একদিকে থাকার সমস্যা অন্যদিকে উচ্চ ভাড়ায় ঢাকাবাসী পিষ্ট হচ্ছে। তারপরও নতুন বছরের শুরুতে ভাড়া বাড়ানোর আতঙ্ক মানুষকে অর্থনৈতিক নির্যাতনের মুখে ফেলেছে। ঢাকায় এখন এমন অনেক বাড়িওয়ালা আছেন যারা কর্মজীবনে অন্য কিছু করেন না। শুধু ফ্লাটের ভাড়া তুলে সংসার চালান। ফলে ফি বছর ভাড়া বাড়ানোর চেষ্টা চালান। তাদের এ চেষ্টা বহু মানুষের তেষ্টা লাগিয়ে দিচ্ছে।

ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২৫ বছরে রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশ। একই সময়ে নিত্যপণ্যের যে দাম বেড়েছে, সেই তুলনায় বাড়িভাড়া বাড়ার হার প্রায় দ্বিগুণ। এক সমীক্ষায় জানা গেছে, ঢাকা শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ ভাড়া বাসায় থাকেন। ফলে ঢাকা যেন এখন আধুনিক যাযাবরের শহরে পরিণত হয়েছে।

দুঃখজনক ব্যাপার হলো, অনেক ক্ষেত্রে সঠিক নিয়মের অভাবে বাড়িওয়ালা কর্তৃক ভাড়াটিয়া নিগৃহীত হয়। আবার কোনো ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়ার দ্বারা বাড়িওয়ালাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুধু নিজের স্বার্থই সামনে রাখে অন্যের ক্ষতি হলো কিনা বা তার প্রতি জোর-জবরদস্তি হলো কি না-তা ভেবেও দেখে না। এজন্য প্রয়োজন ভাড়ার পরিমাণ নির্দিষ্ট করা। যে বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভাড়া হবে এর সব সুবিধা-অসুবিধা ও সংশ্লিষ্ট বিষয় ভাড়াটিয়াকে সুস্পষ্টভাবে অবহিত করা। ভাড়া কত তা নির্ধারণ করা।

কোভিডকালে কেউ ভালো নেই। তবে ভালো না থাকার দলে আগে থেকেই ছিল ভাড়াটিয়ারা। ফি বছর ভাড়া বৃদ্ধির জন্য তারা থাকে চাপের মুখে। ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাবে রাজি না হলে দেয়া হয় বাড়ি ছাড়ার নোটিশ। মহামারির আগ্রাসনে সিংহভাগ মানুষের আয় কমে গেছে। বিশেষ কিছু নাগরিক ছাড়া সবাই দুরবস্থার শিকার। বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং আয় কমে যাওয়ায় শুধু নিম্নবিত্তই নয়, ঢাকায় বাড়ি ভাড়ার টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও। ফলে তাদের কম দামের বাসা খোঁজ করতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে।

বাড়ির মালিক তার বাড়িটি বসবাসের উপযোগী করে রাখতে আইনত বাধ্য। বাড়ির মালিক ইচ্ছা করলেই ভাড়াটিয়াকে বসবাসের অনুপযোগী বা অযোগ্য অবস্থায় রাখতে পারেন না। আইন থাকলেও তার যথাযথ বাস্তবায়নের অভাবেই বাড়ছে বাড়ি ভাড়ার বাড়াবাড়ি। পরিশেষে এটাই প্রত্যাশা- বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়া সম্পর্ক অটুট থাকুক। পরিমিত মাত্রায় নিয়ম মেনে নির্ধারণ হোক বাড়ি ভাড়া।

নিগার নিশাত