বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ : ৫২ বছরে পদার্পণ

সমতাভিত্তিক দেশ-সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারে যাত্রা শুরু হয়

দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক দেশ ও সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে যখন স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল, সে সময় গঠন করা হয় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

১৯৭০ সালের এপ্রিল মাস, সে সময়ের প্রগতিশীল সচেতন ছাত্রী তরুণীদের উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমের অঙ্গীকার নিয়ে কবি সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে গঠিত হয় আন্দোলনমুখী জাতীয়ভিত্তিক, অরাজনৈতিক এই স্বেচ্ছাসেবী নারী সংগঠন।

নারীর সমঅংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা, নারীর ব্যক্তি অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক তথা সামগ্রিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে নারী সমাজকে সচেতন ও সংগঠিত করে আন্দোলন পরিচালনা করে আসছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

সে হিসেবে গতকাল ছিল বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এ উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘সমতার চেতনা প্রতিষ্ঠা করি, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে শক্তিশালী নেতৃত্ব গড়ে তুলি’ সেøাগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে।

জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের শুভসূচনা হয়। সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম।

সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের ও অনুষ্ঠানের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘৫০ বছরে বাংলাদেশের অগ্রগতিতে নারীর অনেক ভূমিকা আছে। নারীদের অগ্রগতি হলেও আজও হাজার হাজার নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। জাতীয় ও বৈশ্বিক নারী আন্দোলনের মাধ্যমে নারীবান্ধব অনেক আইন হয়েছে তবে তার প্রয়োগের ক্ষেত্রে থাকা বাধাকে ভেঙে দিয়ে বেরিয়ে আসতে হবে।’

সমতাপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক দলকে নারী পুরুষের সমতার আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ডা. ফওজিয়া আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আজকের নারীদের অগ্রসর করেছে।

এ সময় সংগঠকদের ধর্মান্ধতায় আছন্ন সাম্প্রদায়িক শক্তি থেকে সতর্ক, দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন এবং তৃণমূলের আন্দোলনেকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলারও আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, ‘সে¦চ্ছাসেবী এই নারী সংগঠনের ৫২ বছরের পদযাত্রা অত্যন্ত গৌরবের।’

‘নারীর প্রতি সহিংসতা আজ নারীর অগ্রযাত্রার পথে বড় বাধা’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৫২ বছরের নারী আন্দোলনের সফলতাকে ধরে রাখতে হলে কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের সব সংগঠককে নতুন কৌশল তৈরি ও বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি নারীবান্ধব সব আইনের কার্যকর প্রয়োগ এবং নারী আন্দোলনের সঙ্গে তরুণ সমাজকে যুক্ত করতে হবে।’

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হাসিনা খান বলেন, ‘৫২ বছরে এসে নারীদের মধ্যে যে সাহসের সঞ্চার হতে দেখি তা মহিলা পরিষদ যুগিয়েছে। তবে ঘরের কাজের বোঝা এখনো নারীকেই বহন করতে হয়, এজন্য পুরুষদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।’

বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী ও দৈনিক প্রথম আলোর প্রধান শিল্পনির্দেশক শিল্পী অশোক কর্মকার বলেন, ‘নারীর অধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত না হলে কারও অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না। আজ নারীদের অগ্রযাত্রা দৃশ্যমান হলেও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আজও লড়াই করতে হয় যা দুঃখজনক।’

বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ডিরেক্টর শাহানা জেফরীন বলেন, ‘সমতার চেতনা প্রতিষ্ঠিত করতে প্রত্যেক নারীকে যোগ্য হতে হবে। পরিবারে, রাজনীতিতে নারীর নিজ অধিকারকে আদায় করে নিতে ভয়েজ রেইজ করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা ও কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।’

আলোচনা শেষে পটগান পরিবেশন করে রূপান্তর থিয়েটার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম। অনুষ্ঠান শেষে একটি র‌্যালি শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে শেষ হয়। র‌্যালি শেষে মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা, ঢাকা মহানগর, নারায়ণগঞ্জ ও সাভার জেলা শাখার বিভিন্ন পাড়া কমিটির সদস্য ও মহিলা পরিষদের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

image

গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বেলুন উড়িয়ে মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হয় -সংবাদ

আরও খবর
মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যে ফেলছে বিরূপ প্রভাব
জিঞ্জিরায় পাকিস্তান বাহিনীর গণহত্যা
কোরীয় উপদ্বীপে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে সমর্থন দিবে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের সামুদ্রিক নিরাপত্তায় বিশেষ সফটওয়্যার দিতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন
গার্মেন্টসে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের দাবি
মাঠ গরমের ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি কাদের
আবৃত্তি শিল্পী হাসান আরিফের মৃত্যু
পরিকল্পনা ছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে মেয়র আতিক
দৌলতদিয়া ঘাট, নিত্য ভোগান্তি ও দুর্ভোগ

শনিবার, ০২ এপ্রিল ২০২২ , ১৯ চৈত্র ১৪২৮ ২৯ শাবান ১৪৪৩

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ : ৫২ বছরে পদার্পণ

সমতাভিত্তিক দেশ-সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারে যাত্রা শুরু হয়

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বেলুন উড়িয়ে মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হয় -সংবাদ

দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক দেশ ও সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে যখন স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল, সে সময় গঠন করা হয় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

১৯৭০ সালের এপ্রিল মাস, সে সময়ের প্রগতিশীল সচেতন ছাত্রী তরুণীদের উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমের অঙ্গীকার নিয়ে কবি সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে গঠিত হয় আন্দোলনমুখী জাতীয়ভিত্তিক, অরাজনৈতিক এই স্বেচ্ছাসেবী নারী সংগঠন।

নারীর সমঅংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা, নারীর ব্যক্তি অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক তথা সামগ্রিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে নারী সমাজকে সচেতন ও সংগঠিত করে আন্দোলন পরিচালনা করে আসছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

সে হিসেবে গতকাল ছিল বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এ উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘সমতার চেতনা প্রতিষ্ঠা করি, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে শক্তিশালী নেতৃত্ব গড়ে তুলি’ সেøাগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে।

জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের শুভসূচনা হয়। সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম।

সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের ও অনুষ্ঠানের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘৫০ বছরে বাংলাদেশের অগ্রগতিতে নারীর অনেক ভূমিকা আছে। নারীদের অগ্রগতি হলেও আজও হাজার হাজার নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। জাতীয় ও বৈশ্বিক নারী আন্দোলনের মাধ্যমে নারীবান্ধব অনেক আইন হয়েছে তবে তার প্রয়োগের ক্ষেত্রে থাকা বাধাকে ভেঙে দিয়ে বেরিয়ে আসতে হবে।’

সমতাপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক দলকে নারী পুরুষের সমতার আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ডা. ফওজিয়া আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আজকের নারীদের অগ্রসর করেছে।

এ সময় সংগঠকদের ধর্মান্ধতায় আছন্ন সাম্প্রদায়িক শক্তি থেকে সতর্ক, দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন এবং তৃণমূলের আন্দোলনেকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলারও আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, ‘সে¦চ্ছাসেবী এই নারী সংগঠনের ৫২ বছরের পদযাত্রা অত্যন্ত গৌরবের।’

‘নারীর প্রতি সহিংসতা আজ নারীর অগ্রযাত্রার পথে বড় বাধা’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৫২ বছরের নারী আন্দোলনের সফলতাকে ধরে রাখতে হলে কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের সব সংগঠককে নতুন কৌশল তৈরি ও বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি নারীবান্ধব সব আইনের কার্যকর প্রয়োগ এবং নারী আন্দোলনের সঙ্গে তরুণ সমাজকে যুক্ত করতে হবে।’

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হাসিনা খান বলেন, ‘৫২ বছরে এসে নারীদের মধ্যে যে সাহসের সঞ্চার হতে দেখি তা মহিলা পরিষদ যুগিয়েছে। তবে ঘরের কাজের বোঝা এখনো নারীকেই বহন করতে হয়, এজন্য পুরুষদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।’

বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী ও দৈনিক প্রথম আলোর প্রধান শিল্পনির্দেশক শিল্পী অশোক কর্মকার বলেন, ‘নারীর অধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত না হলে কারও অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না। আজ নারীদের অগ্রযাত্রা দৃশ্যমান হলেও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আজও লড়াই করতে হয় যা দুঃখজনক।’

বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ডিরেক্টর শাহানা জেফরীন বলেন, ‘সমতার চেতনা প্রতিষ্ঠিত করতে প্রত্যেক নারীকে যোগ্য হতে হবে। পরিবারে, রাজনীতিতে নারীর নিজ অধিকারকে আদায় করে নিতে ভয়েজ রেইজ করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা ও কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।’

আলোচনা শেষে পটগান পরিবেশন করে রূপান্তর থিয়েটার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম। অনুষ্ঠান শেষে একটি র‌্যালি শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে শেষ হয়। র‌্যালি শেষে মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা, ঢাকা মহানগর, নারায়ণগঞ্জ ও সাভার জেলা শাখার বিভিন্ন পাড়া কমিটির সদস্য ও মহিলা পরিষদের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।