দৌলতদিয়া ঘাট, নিত্য ভোগান্তি ও দুর্ভোগ

ভোগান্তি ও দুর্ভোগের নাম দৌলতদিয়া ঘাট। দেশের গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যানজট লেগেই আছে। ফলে নদী পারের অপেক্ষায় দৌলতদিয়া প্রান্তরে সিরিয়ালে আটকা পড়েছে শত শত পণ্যবাহী ট্রাকসহ সহস্রাধিক যানবাহন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে নদী পার হতে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে আসা শত শত পণ্যবাহী ট্রাকের চালক ও সহযোগী এবং যাত্রীর চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তির শিকার।

জানা যায়, শরীয়তপুর থেকে গত মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ছেড়ে এসে সন্ধ্যার দিকে গোয়ালন্দ মোড়ে ট্রাকের সিরিয়ালে এসে আটকা পড়েন কার্টুন

বোঝাই কাঁচপুরগামী ট্রাকচালক কালাম হোসেন। তিনি গতকাল সকাল ৯টার দিকে গোয়ালন্দ ফায়ার সার্ভিস এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক থেকে বলেন, জীবনের আর কিছু রইলো না। দিনের পর দিন যদি এইটুকু নদী পার হতে সময় লাগে তাহলে আমরা কিভাবে বেঁচে থাকবো? সময় মতো ঘুমানো, নাওয়া-খাওয়া করতে পারি না। চোখে সারাক্ষণ ঘুম নিয়ে সিরিয়ালে গাড়ি ঠেলতে হয়। গত মঙ্গলবার মোড়ে এসে আটকা পড়ার পর গত বৃহস্পতিবার ভোরে ছাড়া পেয়ে আবারো ঘাটে এসে সিরিয়ালে রয়েছি। আমাদের এ যন্ত্রণা দেখার মতো কেউ নেই। ফেরির নাগাল পেতে আরও কত সময় লাগবে সে নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। আপনারা এত লিখে কী আর করবেন। তিনি আরও বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া উভয় ঘাটে অনিয়ম যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘাটে যেন কারও কোন দায়বদ্ধতা নেই।

গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাট ঘুরে দেখা যায়, নদীতে নাব্যতা সংকট, ফেরি সংকট, ঘাট সংকট এবং অব্যবস্থাপনা থাকার কারণে বিভিন্ন প্রকার যানবাহনের দীর্ঘ সারি রয়েছে। দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মার মোড় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক, অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাকের সারি সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ২ কিলোমিটার যাত্রীবাহী বাসের সিরিয়াল রয়েছে। এদিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের সারি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি রাতে এই যানজটের মাত্রা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিুউউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট শাখার অফিস সূত্রে জানা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে অসংখ্য ডুবোচর রয়েছে। যে কারণে উভয় ঘাটে একাধিক ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং করা হচ্ছে। এদিকে নদীর পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় পন্টুন থেকে যানবাহনগুলো উঠা-নামা করতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হচ্ছে। অনেক সময় লোড আনলোডের পণ্যবাহী ট্রাকগুলো সংযোগ সড়কে বিকল হয়ে পড়ায় ট্রাকগুলোকে পরবর্তীতে রেকার দিয়ে টেনে তোলা হয়।

ফরিদপুর থেকে ঢাকাগামী গোল্ডেন লাইনের যাত্রী সুমন মাহমুদ নামের এক যাত্রী বলেন, অফিসের বিশেষ কাজে ঢাকায় যাচ্ছি। দৌলতদিয়া ঘাটের যানজটের যে অবস্থা দেখছি দেড় ঘণ্টা বাসে অপেক্ষার পর বাধ্য হয়ে পায়ে হাঁটা শুরু করেছি। তিনি আরও বলেন, এই গাড়িতে গেলে ঢাকায় গিয়ে আর কোন প্রয়োজনীয় কাজ করা সম্ভব নয়। সেজন্য বাধ্য হয়ে ১ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে লঞ্চে নদী পার হওয়ার উদ্দ্যেশে রওনা হয়েছি। মেহেরপুর থেকে পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাকচালক শরিফ শিকদার বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটের দুর্ভোগ যাচ্ছে না, দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। কাঁচামাল নিয়েও আমাদের সিরিয়ালে থাকতে হচ্ছে। গত বুধবার রাত ১২টার দিকে মোড়ে আটকে থাকার পর বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে এসে আবারও সিরিয়ালে। বর্তমানে এ ঘাটের যতদিন অব্যবস্থাপনা বন্ধ না হবে ততদিন উভয় ঘাটে যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে। তিনি আরও বলেন, এই ঘাটে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করলে সব কিছুই সম্ভব। অতিরিক্ত টাকা ব্যয় না করলে দিনের পর দিন ঘাটে বসে থাকতে হয়।

image

দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি - সংবাদ

আরও খবর
মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যে ফেলছে বিরূপ প্রভাব
জিঞ্জিরায় পাকিস্তান বাহিনীর গণহত্যা
সমতাভিত্তিক দেশ-সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারে যাত্রা শুরু হয়
কোরীয় উপদ্বীপে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে সমর্থন দিবে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের সামুদ্রিক নিরাপত্তায় বিশেষ সফটওয়্যার দিতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন
গার্মেন্টসে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের দাবি
মাঠ গরমের ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি কাদের
আবৃত্তি শিল্পী হাসান আরিফের মৃত্যু
পরিকল্পনা ছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে মেয়র আতিক

শনিবার, ০২ এপ্রিল ২০২২ , ১৯ চৈত্র ১৪২৮ ২৯ শাবান ১৪৪৩

দৌলতদিয়া ঘাট, নিত্য ভোগান্তি ও দুর্ভোগ

প্রতিনিধি, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)

image

দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি - সংবাদ

ভোগান্তি ও দুর্ভোগের নাম দৌলতদিয়া ঘাট। দেশের গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যানজট লেগেই আছে। ফলে নদী পারের অপেক্ষায় দৌলতদিয়া প্রান্তরে সিরিয়ালে আটকা পড়েছে শত শত পণ্যবাহী ট্রাকসহ সহস্রাধিক যানবাহন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে নদী পার হতে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে আসা শত শত পণ্যবাহী ট্রাকের চালক ও সহযোগী এবং যাত্রীর চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তির শিকার।

জানা যায়, শরীয়তপুর থেকে গত মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ছেড়ে এসে সন্ধ্যার দিকে গোয়ালন্দ মোড়ে ট্রাকের সিরিয়ালে এসে আটকা পড়েন কার্টুন

বোঝাই কাঁচপুরগামী ট্রাকচালক কালাম হোসেন। তিনি গতকাল সকাল ৯টার দিকে গোয়ালন্দ ফায়ার সার্ভিস এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক থেকে বলেন, জীবনের আর কিছু রইলো না। দিনের পর দিন যদি এইটুকু নদী পার হতে সময় লাগে তাহলে আমরা কিভাবে বেঁচে থাকবো? সময় মতো ঘুমানো, নাওয়া-খাওয়া করতে পারি না। চোখে সারাক্ষণ ঘুম নিয়ে সিরিয়ালে গাড়ি ঠেলতে হয়। গত মঙ্গলবার মোড়ে এসে আটকা পড়ার পর গত বৃহস্পতিবার ভোরে ছাড়া পেয়ে আবারো ঘাটে এসে সিরিয়ালে রয়েছি। আমাদের এ যন্ত্রণা দেখার মতো কেউ নেই। ফেরির নাগাল পেতে আরও কত সময় লাগবে সে নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। আপনারা এত লিখে কী আর করবেন। তিনি আরও বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া উভয় ঘাটে অনিয়ম যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘাটে যেন কারও কোন দায়বদ্ধতা নেই।

গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাট ঘুরে দেখা যায়, নদীতে নাব্যতা সংকট, ফেরি সংকট, ঘাট সংকট এবং অব্যবস্থাপনা থাকার কারণে বিভিন্ন প্রকার যানবাহনের দীর্ঘ সারি রয়েছে। দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মার মোড় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক, অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাকের সারি সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ২ কিলোমিটার যাত্রীবাহী বাসের সিরিয়াল রয়েছে। এদিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের সারি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি রাতে এই যানজটের মাত্রা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিুউউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট শাখার অফিস সূত্রে জানা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে অসংখ্য ডুবোচর রয়েছে। যে কারণে উভয় ঘাটে একাধিক ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং করা হচ্ছে। এদিকে নদীর পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় পন্টুন থেকে যানবাহনগুলো উঠা-নামা করতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হচ্ছে। অনেক সময় লোড আনলোডের পণ্যবাহী ট্রাকগুলো সংযোগ সড়কে বিকল হয়ে পড়ায় ট্রাকগুলোকে পরবর্তীতে রেকার দিয়ে টেনে তোলা হয়।

ফরিদপুর থেকে ঢাকাগামী গোল্ডেন লাইনের যাত্রী সুমন মাহমুদ নামের এক যাত্রী বলেন, অফিসের বিশেষ কাজে ঢাকায় যাচ্ছি। দৌলতদিয়া ঘাটের যানজটের যে অবস্থা দেখছি দেড় ঘণ্টা বাসে অপেক্ষার পর বাধ্য হয়ে পায়ে হাঁটা শুরু করেছি। তিনি আরও বলেন, এই গাড়িতে গেলে ঢাকায় গিয়ে আর কোন প্রয়োজনীয় কাজ করা সম্ভব নয়। সেজন্য বাধ্য হয়ে ১ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে লঞ্চে নদী পার হওয়ার উদ্দ্যেশে রওনা হয়েছি। মেহেরপুর থেকে পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাকচালক শরিফ শিকদার বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটের দুর্ভোগ যাচ্ছে না, দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। কাঁচামাল নিয়েও আমাদের সিরিয়ালে থাকতে হচ্ছে। গত বুধবার রাত ১২টার দিকে মোড়ে আটকে থাকার পর বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে এসে আবারও সিরিয়ালে। বর্তমানে এ ঘাটের যতদিন অব্যবস্থাপনা বন্ধ না হবে ততদিন উভয় ঘাটে যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে। তিনি আরও বলেন, এই ঘাটে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করলে সব কিছুই সম্ভব। অতিরিক্ত টাকা ব্যয় না করলে দিনের পর দিন ঘাটে বসে থাকতে হয়।