প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার বলি একরামুল

যশোরের মণিরামপুরে কলেজছাত্র একরামুল ইসলাম হত্যার মূল রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত দুই সহোদরকে আটক করা হয়েছে। আটক দুই সহোদর গত শুক্রবার ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মাহাদী হাসান তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

এরা হলেন মণিরামপুর উপজেলার ভরতপুর গ্রামের আমিনুর রহমান (২৬) ও কামরুল ইসলাম (৩২)। এছাড়া এদের ভাইপো মাহেদীকেও আটক করা হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের এসআই সৈয়দ রবিউল ইসলাম পলাশ জানান, আটক কামরুলের স্ত্রীর সঙ্গে কলেজছাত্র একরামুলের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। কামরুল কুয়েতে থাকতেন। ৫ মাস আগে তিনি দেশে ফিরেছেন। বাড়িতে আসার পর তিনি স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্কের কথা জানতে পারেন। এরই মধ্যে কামরুলের ভাই আমিনুরও ভাবির সঙ্গে একরামুলের পরকীয়া সম্পর্ক জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

তিনি পরিবারের মানসম্মান রক্ষার্থে গোপনে একরামুলের সঙ্গে দেখা করে এ পথ থেকে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু একরামুল শোনেনি। উল্টো আমিনুরকে হুমকি দিয়ে বলেন, তার ভাবির সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কের ধারণকৃত ভিডিও তার মোবাইল ফোনে আছে। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য আমিনুরকে নিষেধ করেন একরামুল। ফলে কোন উপায় না পেয়ে একরামুলের কাছ থেকে মোবাইল ফোন সেট নিয়ে ওই আপত্তিকর ভিডিও ডিলিট করে দেয়ার পরিকল্পনা করেন আমিনুর।

ঘটনার দিন গত ২৮ মার্চ সন্ধ্যায় আমিনুর তার ভাইপো মেহেদীর কাছ থেকে জানতে পারেন, একরামুল নোয়ালী গ্রামের কাড়াখালী ব্রিজের ওপর অবস্থান করছেন। এ খবর পেয়ে তিনি গোপনে সেখানে গিয়ে তাকে দেখতে পান। এরপর বাড়ি ফিরে আসেন এবং একটি বৈদ্যুতিক তার নিয়ে ফের সেখানে যান। কোনকিছু বুঝে ওঠার আগেই পেছন থেকে গলায় বৈদ্যুতিক তার পেঁচিয়ে একরামুলের কাছে থাকা মোবাইল ফোনসেটটি দিতে বলেন আমিনুর। কিন্তু ফোনসেট দেয়ার সুযোগ হয়ে উঠেনি। বৈদ্যুতিক তার গলায় পেঁচিয়ে ধরার কারণে শ্বাসরোধে মারা যান একরামুল। মারা যাওয়ার কারণে শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ায় ভয় পেয়ে যান আমিনুর। পরে লাশটি ব্রিজের পাশে রেখে বাড়িতে চলে আসেন তিনি এবং সব ঘটনা ভাই কামরুলকে জানান। এ কথা শুনে কামরুল ভয় পেয়ে তাকে প্রচ- বকাঝকা করেন। পরে দুই সহোদর ঘটনাস্থলে যান এবং লাশ বস্তাবন্দি করে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে পাশের মদনপুর গ্রামের লিয়াকত আলীর পুকুর পাড়ে মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখেন।

তদন্ত কর্মকর্তা জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই সহোদরসহ তাদের ভাইপো মেহেদীকে গত বৃহস্পতিবার সকালে আটক করা হয়। শুক্রবার তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয় এবং আমিনুর ও কামরুল ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।

পুলিশ জানায়, কলেজছাত্র একরামুল হত্যার ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে মণিরামপুর থানায় ৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। নিহতের বাবার ফুফাতো ভাই ভরতপুর গ্রামের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান মামলাটি করেছেন।

আসামিরা হলেন, ভরতপুর গ্রামের আমিনুর, কামরুল, মেহেদী, একই গ্রামের কাশেম মোড়লের ছেলে গোলাম মোস্তফা (৫০), হোসেন মোড়লের ছেলে জিয়াউর রহমান (৩৮), ষোলখাদা গ্রামের আবুল কালাম দফাদারের ছেলে হুমায়ুন (২৬) ও হেলাল।

আরও খবর
ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তি, অটিজমদের স্থায়ী বাসস্থান ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে : প্রধানমন্ত্রী
দিল্লিতে ইন্দিরা-তাজউদ্দীন আলোচনা, টাঙ্গাইলে পাকিস্তান বাহিনীর গণহত্যা
অটিজম শিশুর মায়েদের বিষণ্ণতা ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন আশাব্যঞ্জক
রমজানে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে : শিল্পমন্ত্রী
স্বাস্থ্য খাতে অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের সঙ্গে বাড়ছে বৈষম্য
রংপুরে পরকীয়ায় যুবককে বাসায় ডেকে হত্যা, দম্পতি আটক
ডিসেম্বরেই আ’লীগের জাতীয় সম্মেলন
অবশেষে মামলা নিল পুলিশ!
উন্নয়নের রাজনীতিতে বাধা দিলে রুখে দাঁড়াবো : আইভী
প্ররোচনাকারীদের শাস্তি দাবিতে মানববন্ধন

রবিবার, ০৩ এপ্রিল ২০২২ , ২০ চৈত্র ১৪২৮ ৩০ শাবান ১৪৪৩

মণিরামপুরে আটক দুই সহোদরের স্বীকারোক্তি

প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার বলি একরামুল

যশোর অফিস

যশোরের মণিরামপুরে কলেজছাত্র একরামুল ইসলাম হত্যার মূল রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত দুই সহোদরকে আটক করা হয়েছে। আটক দুই সহোদর গত শুক্রবার ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মাহাদী হাসান তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

এরা হলেন মণিরামপুর উপজেলার ভরতপুর গ্রামের আমিনুর রহমান (২৬) ও কামরুল ইসলাম (৩২)। এছাড়া এদের ভাইপো মাহেদীকেও আটক করা হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের এসআই সৈয়দ রবিউল ইসলাম পলাশ জানান, আটক কামরুলের স্ত্রীর সঙ্গে কলেজছাত্র একরামুলের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। কামরুল কুয়েতে থাকতেন। ৫ মাস আগে তিনি দেশে ফিরেছেন। বাড়িতে আসার পর তিনি স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্কের কথা জানতে পারেন। এরই মধ্যে কামরুলের ভাই আমিনুরও ভাবির সঙ্গে একরামুলের পরকীয়া সম্পর্ক জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

তিনি পরিবারের মানসম্মান রক্ষার্থে গোপনে একরামুলের সঙ্গে দেখা করে এ পথ থেকে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু একরামুল শোনেনি। উল্টো আমিনুরকে হুমকি দিয়ে বলেন, তার ভাবির সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কের ধারণকৃত ভিডিও তার মোবাইল ফোনে আছে। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য আমিনুরকে নিষেধ করেন একরামুল। ফলে কোন উপায় না পেয়ে একরামুলের কাছ থেকে মোবাইল ফোন সেট নিয়ে ওই আপত্তিকর ভিডিও ডিলিট করে দেয়ার পরিকল্পনা করেন আমিনুর।

ঘটনার দিন গত ২৮ মার্চ সন্ধ্যায় আমিনুর তার ভাইপো মেহেদীর কাছ থেকে জানতে পারেন, একরামুল নোয়ালী গ্রামের কাড়াখালী ব্রিজের ওপর অবস্থান করছেন। এ খবর পেয়ে তিনি গোপনে সেখানে গিয়ে তাকে দেখতে পান। এরপর বাড়ি ফিরে আসেন এবং একটি বৈদ্যুতিক তার নিয়ে ফের সেখানে যান। কোনকিছু বুঝে ওঠার আগেই পেছন থেকে গলায় বৈদ্যুতিক তার পেঁচিয়ে একরামুলের কাছে থাকা মোবাইল ফোনসেটটি দিতে বলেন আমিনুর। কিন্তু ফোনসেট দেয়ার সুযোগ হয়ে উঠেনি। বৈদ্যুতিক তার গলায় পেঁচিয়ে ধরার কারণে শ্বাসরোধে মারা যান একরামুল। মারা যাওয়ার কারণে শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ায় ভয় পেয়ে যান আমিনুর। পরে লাশটি ব্রিজের পাশে রেখে বাড়িতে চলে আসেন তিনি এবং সব ঘটনা ভাই কামরুলকে জানান। এ কথা শুনে কামরুল ভয় পেয়ে তাকে প্রচ- বকাঝকা করেন। পরে দুই সহোদর ঘটনাস্থলে যান এবং লাশ বস্তাবন্দি করে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে পাশের মদনপুর গ্রামের লিয়াকত আলীর পুকুর পাড়ে মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখেন।

তদন্ত কর্মকর্তা জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই সহোদরসহ তাদের ভাইপো মেহেদীকে গত বৃহস্পতিবার সকালে আটক করা হয়। শুক্রবার তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয় এবং আমিনুর ও কামরুল ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।

পুলিশ জানায়, কলেজছাত্র একরামুল হত্যার ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে মণিরামপুর থানায় ৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। নিহতের বাবার ফুফাতো ভাই ভরতপুর গ্রামের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান মামলাটি করেছেন।

আসামিরা হলেন, ভরতপুর গ্রামের আমিনুর, কামরুল, মেহেদী, একই গ্রামের কাশেম মোড়লের ছেলে গোলাম মোস্তফা (৫০), হোসেন মোড়লের ছেলে জিয়াউর রহমান (৩৮), ষোলখাদা গ্রামের আবুল কালাম দফাদারের ছেলে হুমায়ুন (২৬) ও হেলাল।