ডায়রিয়া : ঢাকার বাইরেও বাড়ছে

পরিস্থিতি উদ্বেগজনক, প্রয়োজন সচেতনতা

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক আকারে বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর’বি) হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালে প্রতিদিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, সম্প্রতি সারাদেশের ডায়রিয়া পরিস্থিতি খানিকটা উদ্বেগ তৈরি করেছে। তবে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতালগুলোও প্রস্তুত রয়েছে।

গতকাল দুপুরে ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষ করে ঢাকায় বেশি সংখ্যক মানুষ ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে আইসিডিডিআর’বি হাসপাতালে স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি সংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, বেশির ভাগ রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা করার জন্য পর্যাপ্ত শয্যা, খাবার স্যালাইন, ওষুধসহ অন্যান্য লজিস্টিক সাপোর্ট মজুদ রয়েছে।

নাজমুল ইসলাম বলেন, ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে প্রয়োজন সচেতনতা। এ সময়ে বিশুদ্ধ নিরাপদ পানি পান করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, নিয়মিত সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া, যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ না করা, খোলা ও অনিরাপদ খাবার না খাওয়া এসব বিষয়ে নজর রাখলে ডায়রিয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, এবার মৌসুম শুরুর আগেই থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বাতাসের আর্দ্রতা বেশি আছে, পর্যাপ্ত রোদের তাপও আছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমরা দেখছি এডিস মশার বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে।

গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআর’বি) সামনে একটু পরপর থামছে অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেটকার ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা। ওইসব যানবাহন থেকে দুই থেকে তিনজন মিলে একেকজন ডায়রিয়ার রোগী নামাচ্ছে। তাদের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ।

গতকাল আইসিডিডিআর’বি হাসপাতালে রাত ১২টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় মোট ৫৩৯ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। সে হিসাবে প্রতি ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ৪৫ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী। আইসিডিডিআর’বি কর্তৃপক্ষ বলছে, গত ১ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ডায়রিয়ার এই প্রকোপ চলছে।

গত শনিবার আইসিডিডিআর’বি হাসপাতালে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৫৪ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। গত শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকে গতকাল বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ হাসপাতালে ৮৬১ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। তার আগের ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছিল এক হাজার ২৭৪ জন। কর্তৃপক্ষ বলছে, ভর্তি রোগীদের ২৩ শতাংশ তীব্র ডায়রিয়া বা কলেরার রোগী। চিকিৎসকরা মনে করছেন, তীব্র গরম ও অনিরাপদ পানি পানের কারণে হঠাৎ করে রোগী বেড়েছে। রোগীর ভিড় সামলাতেও হিমশিম খাচ্ছে আইসিডিডিআর’বি হাসপাতাল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে যাত্রাবাড়ী এলাকার মানুষ বেশি। এরপর দক্ষিণখান, বাসাবো, কদমতলী ও মোহাম্মদপুর এলাকার রোগী রয়েছে। এর বাইরে রাজধানীর সায়েদাবাদ, শনিরআখড়া, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, বাড্ডা, উত্তরখান, উত্তরা ও রাজধানীর পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকেও রোগী আসছে।

আইসিডিডিআরবি’র হাসপাতাল শাখার প্রধান ডা. বাহারুল আলম বলেন, আগের বছরগুলোয় গরমের মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে ৭০০-৮০০ রোগী ভর্তি হতো। এবার রোগীর চাপ অনেক বেশি। কোন কোন দিন ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৩০০ অতিক্রম করেছে। ১৬ মার্চ থেকে একদিনও নতুন ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা এক হাজারের নিচে নামেনি। অন্যান্য বছর শিশু রোগী বেশি ভর্তি হতো। এবার ১৮ বছরের বেশি বয়সী রোগী বেশি ভর্তি হচ্ছে। ভর্তি রোগীদের মধ্যে তীব্র পানিশূন্যতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, মানুষ গরমে রাস্তাঘাটে তৈরি করা লেবুর শরবত পান ও বাসি খাবার গ্রহণ করছে। এসব খাবার ডায়রিয়ার জীবাণুর অন্যতম উৎস। সবাই একসঙ্গে এসব খাবার গ্রহণ করছে এবং ডায়রিয়া রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, করোনাকালে মানুষ নানা ধরনের স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে ছিল। ঘন ঘন হাত পরিষ্কার করার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল কিন্তু সংক্রমণ কমে আসায় ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার প্রবণতা কমেছে। ডায়রিয়া প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে খাবার প্রস্তুত, স্পর্শ, পরিবেশন ও খাবার খাওয়ার আগে হাত এবং টয়লেট থেকে বের হয়ে ও বাইরে থেকে এসে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া।

সোমবার, ০৪ এপ্রিল ২০২২ , ২১ চৈত্র ১৪২৮ ০১ রমাদ্বান ১৪৪৩

ডায়রিয়া : ঢাকার বাইরেও বাড়ছে

পরিস্থিতি উদ্বেগজনক, প্রয়োজন সচেতনতা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

রাজধানীর মহাখালীর উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইসিডিডিআর’বিতে বেহাল অবস্থা -সংবাদ

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক আকারে বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর’বি) হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালে প্রতিদিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, সম্প্রতি সারাদেশের ডায়রিয়া পরিস্থিতি খানিকটা উদ্বেগ তৈরি করেছে। তবে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতালগুলোও প্রস্তুত রয়েছে।

গতকাল দুপুরে ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষ করে ঢাকায় বেশি সংখ্যক মানুষ ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে আইসিডিডিআর’বি হাসপাতালে স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি সংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, বেশির ভাগ রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা করার জন্য পর্যাপ্ত শয্যা, খাবার স্যালাইন, ওষুধসহ অন্যান্য লজিস্টিক সাপোর্ট মজুদ রয়েছে।

নাজমুল ইসলাম বলেন, ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে প্রয়োজন সচেতনতা। এ সময়ে বিশুদ্ধ নিরাপদ পানি পান করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, নিয়মিত সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া, যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ না করা, খোলা ও অনিরাপদ খাবার না খাওয়া এসব বিষয়ে নজর রাখলে ডায়রিয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, এবার মৌসুম শুরুর আগেই থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বাতাসের আর্দ্রতা বেশি আছে, পর্যাপ্ত রোদের তাপও আছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমরা দেখছি এডিস মশার বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে।

গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআর’বি) সামনে একটু পরপর থামছে অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেটকার ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা। ওইসব যানবাহন থেকে দুই থেকে তিনজন মিলে একেকজন ডায়রিয়ার রোগী নামাচ্ছে। তাদের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ।

গতকাল আইসিডিডিআর’বি হাসপাতালে রাত ১২টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় মোট ৫৩৯ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। সে হিসাবে প্রতি ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ৪৫ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী। আইসিডিডিআর’বি কর্তৃপক্ষ বলছে, গত ১ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ডায়রিয়ার এই প্রকোপ চলছে।

গত শনিবার আইসিডিডিআর’বি হাসপাতালে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৫৪ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। গত শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকে গতকাল বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ হাসপাতালে ৮৬১ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। তার আগের ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছিল এক হাজার ২৭৪ জন। কর্তৃপক্ষ বলছে, ভর্তি রোগীদের ২৩ শতাংশ তীব্র ডায়রিয়া বা কলেরার রোগী। চিকিৎসকরা মনে করছেন, তীব্র গরম ও অনিরাপদ পানি পানের কারণে হঠাৎ করে রোগী বেড়েছে। রোগীর ভিড় সামলাতেও হিমশিম খাচ্ছে আইসিডিডিআর’বি হাসপাতাল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে যাত্রাবাড়ী এলাকার মানুষ বেশি। এরপর দক্ষিণখান, বাসাবো, কদমতলী ও মোহাম্মদপুর এলাকার রোগী রয়েছে। এর বাইরে রাজধানীর সায়েদাবাদ, শনিরআখড়া, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, বাড্ডা, উত্তরখান, উত্তরা ও রাজধানীর পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকেও রোগী আসছে।

আইসিডিডিআরবি’র হাসপাতাল শাখার প্রধান ডা. বাহারুল আলম বলেন, আগের বছরগুলোয় গরমের মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে ৭০০-৮০০ রোগী ভর্তি হতো। এবার রোগীর চাপ অনেক বেশি। কোন কোন দিন ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৩০০ অতিক্রম করেছে। ১৬ মার্চ থেকে একদিনও নতুন ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা এক হাজারের নিচে নামেনি। অন্যান্য বছর শিশু রোগী বেশি ভর্তি হতো। এবার ১৮ বছরের বেশি বয়সী রোগী বেশি ভর্তি হচ্ছে। ভর্তি রোগীদের মধ্যে তীব্র পানিশূন্যতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, মানুষ গরমে রাস্তাঘাটে তৈরি করা লেবুর শরবত পান ও বাসি খাবার গ্রহণ করছে। এসব খাবার ডায়রিয়ার জীবাণুর অন্যতম উৎস। সবাই একসঙ্গে এসব খাবার গ্রহণ করছে এবং ডায়রিয়া রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, করোনাকালে মানুষ নানা ধরনের স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে ছিল। ঘন ঘন হাত পরিষ্কার করার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল কিন্তু সংক্রমণ কমে আসায় ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার প্রবণতা কমেছে। ডায়রিয়া প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে খাবার প্রস্তুত, স্পর্শ, পরিবেশন ও খাবার খাওয়ার আগে হাত এবং টয়লেট থেকে বের হয়ে ও বাইরে থেকে এসে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া।