ক্যাম্প ছাড়ছে রোহিঙ্গারা, জড়াচ্ছে অপরাধে, দিশেহারা স্থানীয়রা

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিনই ক্যাম্প ছাড়ছে শত শত রোহিঙ্গা। কখনও কাজের সন্ধানে, আবার কখনও অপরাধমূলক কর্মকা-ের উদ্দেশ্যে এসব রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে বের হচ্ছে। তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। এ নিয়ে ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকারী আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ অন্য সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নিপীড়নের মুখে পড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের একটি অংশ এ ধরনের কর্মকা-ে জড়িত। যা ভবিষ্যতের জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করছে স্থানীয়রা।

গত ৩ দিনে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার প্রাক্কালে প্রায় ৩০০ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। তাদের ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে এসব রোহিঙ্গাদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে পাচার করা হচ্ছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। গত সোমবার উখিয়ার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ১৩৬ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে ট্রানজিট ক্যাম্পে প্রেরণ করে পুলিশ। একইদিন রাতে মানবপাচারে জড়িত ৬ সদস্যকে আটক করা হয়। এসময় ৪৮ জন রোহিঙ্গা নারী পুরুষকে উদ্ধার করে পুলিশ। গত মঙ্গলবার আরও ৪০ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাদেরকেও ট্রানজিট ক্যাম্পে প্রেরণ করে পুলিশ।

সব সুযোগ সুবিধার পরও কেন রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে বিভিন্ন জায়গায় চলে যাচ্ছে এমন প্রশ্নে একাধিক রোহিঙ্গারা বলেন, আমরা ক্যাম্পে কোন উপার্জন করতে পারি না। বিভিন্ন এনজিওর দেয়া মালামাল বাইরে বিক্রি করেও অতিরিক্ত কিছু খেতে চাইলে পারি না অর্থের অভাবে। তাই কাজের উদ্দেশে বিভিন্ন জায়গায় যাই।

ক্যাম্পে নিরাপত্তা জোরদারের পরও রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণের বিষয়ে জানতে চাইলে ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরান হোসেন জানান, রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাফেরা

রোধে ৮ এপিবিএন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সম্প্রতি কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে বের হয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা। এতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে স্থানীয় শ্রম বাজারে। এ নিয়ে স্থানীয়রা বিপাকে পড়েছে।

তারা বিভিন্ন পরিবহনে চালক ও চালকের সহকারি বা শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। কেউ কেউ বাসাবাড়িতে গিয়েও কাজ করছে। এতে স্থানীয় শ্রমজীবীরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাশাপাশি এসব রোহিঙ্গাদের সঙ্গে স্থানীয় অপরাধী চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে উঠায় কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গত ৩ দিনে ৩ শতাধিক রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন স্থান হতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে। এতো কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও কিভাবে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ত্যাগ করে এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ক্যাম্পে দায়িত্বররত শীর্ষ কর্মকর্তারা নানাভাবে এড়িয়ে যায়।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে বের হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণে অভিযান অব্যাহত রাখা হবে। আটকদের উখিয়ার ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। এসব রোহিঙ্গাদের সঙ্গে স্থানীয় অপরাধী চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে উঠায় কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলেও জানান এসপি হাসানুজ্জামান।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দৌজ্জা জানান, ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। তারপরও কেউ কেউ অপরাধমূলক কর্মকা- চালাতে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই ক্যাম্পের বাইরে যাচ্ছে।

ক্যাম্পের বাইরে অনুমতি ছাড়া রোহিঙ্গাদের চলাচল বন্ধে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে মোহাম্মদ সামছু-দৌজ্জা জানান, এ নিয়ে আগামীতে প্রশাসনিকভাবে আরও কঠোরতা অবলম্বন করা হবে।

কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, ক্যাম্প থেকে শত শত রোহিঙ্গা বের হয়ে বাংলাদেশিদের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। অনেক রোহিঙ্গা নানা অপরাধ কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের কোন পরিচয়পত্র বা ফিঙ্গার প্রিন্ট না থাকায় অপরাধ সংঘটনের পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। এসব রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার পর আবার বাইরে যাচ্ছে। ফলে স্থানীয় শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

উল্লেখ্য, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবিরে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ঢলের পর থেকে তাদের সেবায় দেশি-বিদেশি দেড় শতাধিক সংস্থা কাজ করে আসছে।

বৃহস্পতিবার, ০৭ এপ্রিল ২০২২ , ২৪ চৈত্র ১৪২৮ ০৫ রমাদ্বান ১৪৪৩

ক্যাম্প ছাড়ছে রোহিঙ্গারা, জড়াচ্ছে অপরাধে, দিশেহারা স্থানীয়রা

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার

image

ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে আসা আটক রোহিঙ্গারা -সংবাদ

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিনই ক্যাম্প ছাড়ছে শত শত রোহিঙ্গা। কখনও কাজের সন্ধানে, আবার কখনও অপরাধমূলক কর্মকা-ের উদ্দেশ্যে এসব রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে বের হচ্ছে। তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। এ নিয়ে ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকারী আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ অন্য সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নিপীড়নের মুখে পড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের একটি অংশ এ ধরনের কর্মকা-ে জড়িত। যা ভবিষ্যতের জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করছে স্থানীয়রা।

গত ৩ দিনে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার প্রাক্কালে প্রায় ৩০০ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। তাদের ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে এসব রোহিঙ্গাদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে পাচার করা হচ্ছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। গত সোমবার উখিয়ার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ১৩৬ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে ট্রানজিট ক্যাম্পে প্রেরণ করে পুলিশ। একইদিন রাতে মানবপাচারে জড়িত ৬ সদস্যকে আটক করা হয়। এসময় ৪৮ জন রোহিঙ্গা নারী পুরুষকে উদ্ধার করে পুলিশ। গত মঙ্গলবার আরও ৪০ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাদেরকেও ট্রানজিট ক্যাম্পে প্রেরণ করে পুলিশ।

সব সুযোগ সুবিধার পরও কেন রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে বিভিন্ন জায়গায় চলে যাচ্ছে এমন প্রশ্নে একাধিক রোহিঙ্গারা বলেন, আমরা ক্যাম্পে কোন উপার্জন করতে পারি না। বিভিন্ন এনজিওর দেয়া মালামাল বাইরে বিক্রি করেও অতিরিক্ত কিছু খেতে চাইলে পারি না অর্থের অভাবে। তাই কাজের উদ্দেশে বিভিন্ন জায়গায় যাই।

ক্যাম্পে নিরাপত্তা জোরদারের পরও রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণের বিষয়ে জানতে চাইলে ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরান হোসেন জানান, রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাফেরা

রোধে ৮ এপিবিএন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সম্প্রতি কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে বের হয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা। এতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে স্থানীয় শ্রম বাজারে। এ নিয়ে স্থানীয়রা বিপাকে পড়েছে।

তারা বিভিন্ন পরিবহনে চালক ও চালকের সহকারি বা শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। কেউ কেউ বাসাবাড়িতে গিয়েও কাজ করছে। এতে স্থানীয় শ্রমজীবীরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাশাপাশি এসব রোহিঙ্গাদের সঙ্গে স্থানীয় অপরাধী চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে উঠায় কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গত ৩ দিনে ৩ শতাধিক রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন স্থান হতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে। এতো কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও কিভাবে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ত্যাগ করে এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ক্যাম্পে দায়িত্বররত শীর্ষ কর্মকর্তারা নানাভাবে এড়িয়ে যায়।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে বের হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণে অভিযান অব্যাহত রাখা হবে। আটকদের উখিয়ার ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। এসব রোহিঙ্গাদের সঙ্গে স্থানীয় অপরাধী চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে উঠায় কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলেও জানান এসপি হাসানুজ্জামান।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দৌজ্জা জানান, ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। তারপরও কেউ কেউ অপরাধমূলক কর্মকা- চালাতে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই ক্যাম্পের বাইরে যাচ্ছে।

ক্যাম্পের বাইরে অনুমতি ছাড়া রোহিঙ্গাদের চলাচল বন্ধে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে মোহাম্মদ সামছু-দৌজ্জা জানান, এ নিয়ে আগামীতে প্রশাসনিকভাবে আরও কঠোরতা অবলম্বন করা হবে।

কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, ক্যাম্প থেকে শত শত রোহিঙ্গা বের হয়ে বাংলাদেশিদের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। অনেক রোহিঙ্গা নানা অপরাধ কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের কোন পরিচয়পত্র বা ফিঙ্গার প্রিন্ট না থাকায় অপরাধ সংঘটনের পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। এসব রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার পর আবার বাইরে যাচ্ছে। ফলে স্থানীয় শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

উল্লেখ্য, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবিরে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ঢলের পর থেকে তাদের সেবায় দেশি-বিদেশি দেড় শতাধিক সংস্থা কাজ করে আসছে।