১ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

যাদের বিদেশি ঋণ বেশি, তারাই বিপদে, আমরা নই : অর্থমন্ত্রী

শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের নিয়ে বাংলাদেশের শঙ্কার কোন কারণ থাকতে পারে না বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ তুলনামূলক কম। যাদের এই ঋণ বেশি, তাদের দুশ্চিন্তার কারণ থাকতে পারে। গতকাল অর্থনৈতিক বিষয়ক ও ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।০

অর্থমন্ত্রী বলেন, যেসব দেশের জিডিপির তুলনায় ঋণের হার বেশি তারা বিপদে আছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ঋণের হার জিডিপির তুলনায় সহনীয় অবস্থানে। কাজেই, আমরা বিপদে নেই বরং নিরাপদেই আছি।’

সভায় পদ্মসেতুর টোল আদায়ে সার্ভিস প্রোভাইডার নিয়োগের একটি প্রস্তাবসহ মোট ১০টি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ১৮০৭ কোটি ৮২ লাখ ৫২ হাজার ৫০২ টাকা। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এক ভার্চুয়াল সভায় প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেয়া হয়।

সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী।

শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা হচ্ছে কেন- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, আমরা কোন আলোচনা করেনি। আলোচনা যে কেউ করতে পারে। তবে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটের ঘটনা আমাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকের তথ্য তুলে ধরে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমাদের রিজার্ভ বাড়ছে, প্রবাসী আয় বা রেমিট্যন্স বাড়ছে। মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে। ফলে আমাদের কোন সমস্যা নেই। আমি মনে করি, বাংলাদেশ নিরাপদেই আছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র ১০ম এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র ১২তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদনের জন্য একটি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য (টেবিলে তিনটি উপস্থাপনসহ) ১১টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। ক্রয় কমিটির প্রস্তাবগুলোর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের তিনটি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের দুটি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের একটি এবং সেতু বিভাগের একটি প্রস্তাব ছিল। তবে সভায় ১০টি প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে এতে মোট ব্যয় হবে ১৮০৭ কোটি ৮২ লাখ ৫২ হাজার ৫০২ টাকা। অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিস্তারিত তথ্য জানাবেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী।

সভায় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় সৌদিআরব থেকে ২য় লটে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বিএডিসি কর্তৃক সৌদিআরব থেকে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে ডিএপি সার আমদানি করা হয়। সে চুক্তির মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসারে সৌদিআরব থেকে ২য় লটে ৪০ হাজার (+১০%) মেট্রিক টন ডিএপি সার বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে সর্বমোট তিন কোটি ৯৩ লক্ষ ২০ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৩৯ কোটি ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টন ডিএপি সারের দাম ৯৮৩ মার্কিন ডলার।

‘রাজশাহী জেলার চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় পদ্মা নদীর বাম তীরের স্থাপনাসমূহ নদী ভাঙন হতে রক্ষা’ প্রকল্পের ড্রেজিংয়ের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ড্রেজিংয়ের পূর্ত কাজ ক্রয়ের জন্য উম্মুক্ত পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ১১টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। এর মধ্যে মাত্র একটি কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে অ্যাকুয়া মেরিন ড্রেজিং লিমিটেড এবং নবারুন ট্রেডার্স লিমিটেডের দরগ্রহণ যোগ্য হয়। এই কাজে মোট ব্যয় হবে ২৭ কোটি ৪৪ লক্ষ ৭৪ হাজার ৩৭১ টাকা।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘নাটোর রোড (রুয়েট) থেকে রাজশাহী বাইপাস রোড পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘আবদুল মোনেম লি.’ এর সঙ্গে থেকে ৮৯ কোটি ৯৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩১৫ টাকায় ক্রয়ের চুক্তি করা হয়। সে অনুসারে পূর্ত কাজ চলাকালে টেন্ডারভুক্ত এবং টেন্ডার বহির্ভূত কিছু আইটেম কম/বেশি হওয়ায় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৩৮ কোটি ২২ লাখ ৪১ হাজার ৭৮৫ টাকার ব্যয় বাড়ানো প্রস্তাব করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে।

কমিটি চট্টগ্রামে ‘বে-টার্মিনাল নির্মাণ’ পিপিপি প্রকল্পের আওতায় আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে। চট্টগ্রামের আনন্দবাজার এলাকায় সাগর তীরে ‘বে-টার্মিনাল নির্মাণ’ পিপিপি প্রকল্পের আওতায় আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকার ছয়টি প্রতিষ্ঠানের কাছে রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল (আরএফপি) পাঠানো হলে চারটি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দাখিল করে। তাদের মধ্যে কারিগরিভাবে দুটি প্রস্তাব রেসপনসিভ হয়। প্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে পিইসি কর্তৃক নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত সর্বোচ্চ স্কোর অর্জনকারী রেসপনসিভ দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে কুনওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনসাল্টিং কোম্পানি লিমিটেড, কোরিয়া এবং দাইওয়াং ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড কোরিয়ার প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পে ব্যয় হবে ১২৬ কোটি ৪৯ লক্ষ ৭৩ হাজার ৯৮৬ টাকা।

তিনি বলেন, ‘এস্টাব্লিশিং ডিজিটাল কানেক্টিভিটি (ইডিসি) প্রকল্পের আওতায় চীন থেকে জি-টু-জি সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় পণ্য, ভৌত কাজ এবং সেবা ক্রয়ের একটি প্রস্তাব সংশ্লিস্ট মন্ত্রনালয় প্রত্যাহার করে নিয়েছে।’

সভায় পদ্মা বহুমুখী সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের লক্ষ্যে সার্ভিস প্রোভাইডার/অপারেটর হিসেবে যৌথ প্রতিষ্ঠান কেইসি-এমবিইসি জেভিকে নিয়োগের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এর আগে ২০২০ সালে প্রস্তাবটি অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। সংস্থা দুটি কর্তৃক যৌথ কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব দাখিল করে। প্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে কারিগরি কমিটি নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত দরদাতা প্রতিষ্ঠান কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন কেইসি এবং চায়না ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (এমবিইসি)-কে পাঁচ বছর মেয়াদে নিয়োগের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে। এ জন্য ব্যয় হবে ৬৯২ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘রাজাপুর-কাঁঠালিয়া-আমুয়া-বামনা-পাথরঘাটা মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প (ঝালকাঠি অংশ) (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউপি-৪-এর নির্মাণ কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের আওতায় চারটি সেতু নির্মাণ হয়। প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে যৌথভাবে বাস্তবায়ন করেছে রানা বিল্ডার্স লিমিটেড, মোহাম্মদ ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স লিমিটেড এবং ইসলাম ব্রাদার্স কন্সট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। প্রকল্পে ব্যয় ধরা ছিল ৩৩ কোটি ৭৬ লক্ষ ৮৬ হাজার ৭৫৮ টাকা। পূর্ত কাজ চলমানকালে মূল ডিপিপি বহির্ভূত কিছু আইটেম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ১১ কোটি ১৮ লাখ ৮৪ হাজার ৬৪২ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।’

সভায় ‘এলেঙ্গা-জামালপুর জাতীয় মহাসড়ক প্রশস্তকরণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউপি-১-এর নির্মাণ কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবেও অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ওয়াহিদ কন্সট্রাকশন লিমিটেড। প্রকল্পে ব্যয় ধরা ছিল ৯৮ কোটি ৮৭ লাখ ৪২ হাজার ৬৪১ টাকা। সে অনুসারে পূর্ত কাজ চলাকালে টেন্ডারভুক্ত এবং টেন্ডার বহির্ভূত কিছু আইটেম কম/বেশি হওয়ায় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৩৯ লাখ ৯৩ হাজার ৩৫৮ টাকার ব্যয় বেড়েছে। কমিটি ব্যয় বাড়ার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘টেবিলে ওঠা শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) কর্তৃক কাতার থেকে ১৪ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) বাল্ক প্রিল্ড (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ২৪৭ কোটি ১০ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা।’

সভায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) কর্তৃক ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (ডিএপিএফসিএল)-এর জন্য ১০ হাজার মেট্রিক টন (+১০%) ফসফরিক এসিড আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। মেসার্স আর. কে. এন্টারপ্রাইজ, ঢাকা (প্রধান সরবরাহকারী : মেসার্স সান ইন্টারন্যাশনাল এফজেডই, ইউএই) এই সার সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ৮২ কোটি ৯৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯৫০ টাকা।

তিনি বলেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) কর্তৃক কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশের নিকট থেকে ১৬তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ২৪১ কোটি ৯৬ লাখ ৩৫ হাজার ৯৩৭ টাকা।’ এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সৌদি আরব থেকে সার আমাদানির একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।

শুক্রবার, ০৮ এপ্রিল ২০২২ , ২৫ চৈত্র ১৪২৮ ০৬ রমাদ্বান ১৪৪৩

১ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

যাদের বিদেশি ঋণ বেশি, তারাই বিপদে, আমরা নই : অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের নিয়ে বাংলাদেশের শঙ্কার কোন কারণ থাকতে পারে না বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ তুলনামূলক কম। যাদের এই ঋণ বেশি, তাদের দুশ্চিন্তার কারণ থাকতে পারে। গতকাল অর্থনৈতিক বিষয়ক ও ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।০

অর্থমন্ত্রী বলেন, যেসব দেশের জিডিপির তুলনায় ঋণের হার বেশি তারা বিপদে আছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ঋণের হার জিডিপির তুলনায় সহনীয় অবস্থানে। কাজেই, আমরা বিপদে নেই বরং নিরাপদেই আছি।’

সভায় পদ্মসেতুর টোল আদায়ে সার্ভিস প্রোভাইডার নিয়োগের একটি প্রস্তাবসহ মোট ১০টি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ১৮০৭ কোটি ৮২ লাখ ৫২ হাজার ৫০২ টাকা। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এক ভার্চুয়াল সভায় প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেয়া হয়।

সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী।

শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা হচ্ছে কেন- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, আমরা কোন আলোচনা করেনি। আলোচনা যে কেউ করতে পারে। তবে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটের ঘটনা আমাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকের তথ্য তুলে ধরে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমাদের রিজার্ভ বাড়ছে, প্রবাসী আয় বা রেমিট্যন্স বাড়ছে। মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে। ফলে আমাদের কোন সমস্যা নেই। আমি মনে করি, বাংলাদেশ নিরাপদেই আছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র ১০ম এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র ১২তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদনের জন্য একটি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য (টেবিলে তিনটি উপস্থাপনসহ) ১১টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। ক্রয় কমিটির প্রস্তাবগুলোর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের তিনটি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের দুটি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের একটি এবং সেতু বিভাগের একটি প্রস্তাব ছিল। তবে সভায় ১০টি প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে এতে মোট ব্যয় হবে ১৮০৭ কোটি ৮২ লাখ ৫২ হাজার ৫০২ টাকা। অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিস্তারিত তথ্য জানাবেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী।

সভায় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় সৌদিআরব থেকে ২য় লটে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বিএডিসি কর্তৃক সৌদিআরব থেকে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে ডিএপি সার আমদানি করা হয়। সে চুক্তির মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসারে সৌদিআরব থেকে ২য় লটে ৪০ হাজার (+১০%) মেট্রিক টন ডিএপি সার বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে সর্বমোট তিন কোটি ৯৩ লক্ষ ২০ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৩৯ কোটি ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টন ডিএপি সারের দাম ৯৮৩ মার্কিন ডলার।

‘রাজশাহী জেলার চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় পদ্মা নদীর বাম তীরের স্থাপনাসমূহ নদী ভাঙন হতে রক্ষা’ প্রকল্পের ড্রেজিংয়ের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ড্রেজিংয়ের পূর্ত কাজ ক্রয়ের জন্য উম্মুক্ত পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ১১টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। এর মধ্যে মাত্র একটি কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে অ্যাকুয়া মেরিন ড্রেজিং লিমিটেড এবং নবারুন ট্রেডার্স লিমিটেডের দরগ্রহণ যোগ্য হয়। এই কাজে মোট ব্যয় হবে ২৭ কোটি ৪৪ লক্ষ ৭৪ হাজার ৩৭১ টাকা।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘নাটোর রোড (রুয়েট) থেকে রাজশাহী বাইপাস রোড পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘আবদুল মোনেম লি.’ এর সঙ্গে থেকে ৮৯ কোটি ৯৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩১৫ টাকায় ক্রয়ের চুক্তি করা হয়। সে অনুসারে পূর্ত কাজ চলাকালে টেন্ডারভুক্ত এবং টেন্ডার বহির্ভূত কিছু আইটেম কম/বেশি হওয়ায় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৩৮ কোটি ২২ লাখ ৪১ হাজার ৭৮৫ টাকার ব্যয় বাড়ানো প্রস্তাব করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে।

কমিটি চট্টগ্রামে ‘বে-টার্মিনাল নির্মাণ’ পিপিপি প্রকল্পের আওতায় আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে। চট্টগ্রামের আনন্দবাজার এলাকায় সাগর তীরে ‘বে-টার্মিনাল নির্মাণ’ পিপিপি প্রকল্পের আওতায় আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকার ছয়টি প্রতিষ্ঠানের কাছে রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল (আরএফপি) পাঠানো হলে চারটি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দাখিল করে। তাদের মধ্যে কারিগরিভাবে দুটি প্রস্তাব রেসপনসিভ হয়। প্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে পিইসি কর্তৃক নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত সর্বোচ্চ স্কোর অর্জনকারী রেসপনসিভ দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে কুনওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনসাল্টিং কোম্পানি লিমিটেড, কোরিয়া এবং দাইওয়াং ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড কোরিয়ার প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পে ব্যয় হবে ১২৬ কোটি ৪৯ লক্ষ ৭৩ হাজার ৯৮৬ টাকা।

তিনি বলেন, ‘এস্টাব্লিশিং ডিজিটাল কানেক্টিভিটি (ইডিসি) প্রকল্পের আওতায় চীন থেকে জি-টু-জি সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় পণ্য, ভৌত কাজ এবং সেবা ক্রয়ের একটি প্রস্তাব সংশ্লিস্ট মন্ত্রনালয় প্রত্যাহার করে নিয়েছে।’

সভায় পদ্মা বহুমুখী সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের লক্ষ্যে সার্ভিস প্রোভাইডার/অপারেটর হিসেবে যৌথ প্রতিষ্ঠান কেইসি-এমবিইসি জেভিকে নিয়োগের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এর আগে ২০২০ সালে প্রস্তাবটি অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। সংস্থা দুটি কর্তৃক যৌথ কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব দাখিল করে। প্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে কারিগরি কমিটি নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত দরদাতা প্রতিষ্ঠান কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন কেইসি এবং চায়না ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (এমবিইসি)-কে পাঁচ বছর মেয়াদে নিয়োগের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে। এ জন্য ব্যয় হবে ৬৯২ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘রাজাপুর-কাঁঠালিয়া-আমুয়া-বামনা-পাথরঘাটা মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প (ঝালকাঠি অংশ) (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউপি-৪-এর নির্মাণ কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের আওতায় চারটি সেতু নির্মাণ হয়। প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে যৌথভাবে বাস্তবায়ন করেছে রানা বিল্ডার্স লিমিটেড, মোহাম্মদ ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স লিমিটেড এবং ইসলাম ব্রাদার্স কন্সট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। প্রকল্পে ব্যয় ধরা ছিল ৩৩ কোটি ৭৬ লক্ষ ৮৬ হাজার ৭৫৮ টাকা। পূর্ত কাজ চলমানকালে মূল ডিপিপি বহির্ভূত কিছু আইটেম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ১১ কোটি ১৮ লাখ ৮৪ হাজার ৬৪২ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।’

সভায় ‘এলেঙ্গা-জামালপুর জাতীয় মহাসড়ক প্রশস্তকরণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউপি-১-এর নির্মাণ কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবেও অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ওয়াহিদ কন্সট্রাকশন লিমিটেড। প্রকল্পে ব্যয় ধরা ছিল ৯৮ কোটি ৮৭ লাখ ৪২ হাজার ৬৪১ টাকা। সে অনুসারে পূর্ত কাজ চলাকালে টেন্ডারভুক্ত এবং টেন্ডার বহির্ভূত কিছু আইটেম কম/বেশি হওয়ায় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৩৯ লাখ ৯৩ হাজার ৩৫৮ টাকার ব্যয় বেড়েছে। কমিটি ব্যয় বাড়ার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘টেবিলে ওঠা শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) কর্তৃক কাতার থেকে ১৪ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) বাল্ক প্রিল্ড (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ২৪৭ কোটি ১০ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা।’

সভায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) কর্তৃক ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (ডিএপিএফসিএল)-এর জন্য ১০ হাজার মেট্রিক টন (+১০%) ফসফরিক এসিড আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। মেসার্স আর. কে. এন্টারপ্রাইজ, ঢাকা (প্রধান সরবরাহকারী : মেসার্স সান ইন্টারন্যাশনাল এফজেডই, ইউএই) এই সার সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ৮২ কোটি ৯৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯৫০ টাকা।

তিনি বলেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) কর্তৃক কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশের নিকট থেকে ১৬তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ২৪১ কোটি ৯৬ লাখ ৩৫ হাজার ৯৩৭ টাকা।’ এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সৌদি আরব থেকে সার আমাদানির একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।