৩০ বছর পর চৈত্র মাসে তিস্তায় বন্যা : দিশেহারা শত শত কৃষক

প্রতিবছরই এপ্রিল মাসে তিস্তার বুকজুড়ে থাকে ধু ধু বালুচর। প্রখর রোদে বালুময় তিস্তা হেঁটে পার হন চরাঞ্চলবাসী। প্রায় ৩০ বছর পর এই প্রথম সেই চিত্র পাল্টে গেছে । অসময়ে ভারতের গজলডোবা ব্যারেজের গেট খুলে দেয়ায় ও উজানে ভারি বৃষ্টিপাতে তিস্তার পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে তলিয়ে গেছে তিস্তার বুকে উজান ও ভাটিতে কৃষকের লাগানো কয়েক হাজার বিঘা জমির মরিচ-পেঁয়াজ, রসুন, মিষ্টি কুমড়া খেত। ব্যারাজের ১০টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। এতে উজানের প্রচুর পরিমাণ পানি ভাটিতে এসেছে। এপ্রিলে তিস্তার এ রকম বন্যায় বাকরুদ্ধ চরাঞ্চলের লাখো মানুষ। এ সময় তিস্তার বুকে যে চাষাবাদ হয় তাই দিয়ে তাদের চলে সারাটা বছর। অসময়ের এই বন্যায় কৃষকের স্বপ্নের ফসল ডোবার সঙ্গে সঙ্গে ডুবেছে কৃষকের কপালও। এদিকে পানি বাড়ার সাথে সাথে তিস্তাপাড়ে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন।

বুধবার দুপুরে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি ছিল ৫১ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার যাহা বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার নিচে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। মার্চের শেষ সপ্তাহে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে মাত্র তিন হাজার কিউসেক পানি ছিল। এক সপ্তাহের ব্যবধানে তা বেড়ে বুধবার দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৬শ’ কিউসেকে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, পানি যে কোন সময় বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এই কর্মকর্তা জানান, বিগত ৩০ বছর আগে এপ্রিল মাসে তিস্তায় বন্যা দেখা দিয়েছিল। আর এ বছরে ঘটল সেই ঘটনা। তিনি জানান, তিস্তায় পানি বাড়ার সাথে সাথে জেলার ৫ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পানি বাড়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে চরাঞ্চলের চাষিরা। লালমনিরহাটের আদিতমারি উপজেলার মহিষখোচা এলাকার পাট চাষি একরামুল হক বলেন, জীবনেও দেখি নাই চৈত্র বৈশাখ মাসে তিস্তার পানি বাড়ে। পানি বাড়ার কারণে ৪ বিঘা জমির উঠতি পাটখেত পানিতে ডুবে গিয়ে নষ্ট হয়েছে। এতে আমার ১৫ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।

সদর উপজেলার চর গোকুন্ডার চাষি এসাহাক মিয়া জানান, গত ৭ দিনে তিস্তার উজান থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি এসে তিস্তায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে । দুই বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছিলাম, অকাল বন্যায় সব নষ্ট হয়ে গেছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, উজানে বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বুধবার দুপুরে ব্যারেজ পয়েন্টে পানি দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৬শ’ কিউসেক। পানি আরো বাড়বে।

লালমনিরহাট কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, তিস্তায় পানি বৃদ্ধির ফলে সাড়ে ১৭ হাজার চরের জমির বিভিন্ন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।

image

লালমনিরহাট : তিস্তায় হঠাৎ পানি বেড়ে প্লাবিত বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। কোটি কোটি টাকার ফসল নষ্টের আশঙ্কা -সংবাদ

আরও খবর
পুলিশের কাছ থেকে রিকশা ছাড়াতে না পেরে চালকের আত্মহত্যা
শরণখোলা হাসপাতালে রোগীকে মেয়াদোত্তীর্ণ স্যালাইন পুশ!
নারায়ণগঞ্জে যুবক হত্যা গ্রেপ্তার ২
অবৈধ অ্যালুমিনিয়াম কারখানায় অভিযান জরিমানা ৪ লাখ
কৃষক আত্মহত্যায় ওসি অপসারণ দাবিতে আদিবাসীদের স্মারকলিপি
প্রস্তাবিত তামাক করে রাজস্ব বাড়বে চল্লিশ হাজার কোটি টাকা
যাত্রীদের ভিক্ষুক মনে করে বিমান
মির্জাপুরে নারীর গলাকাটা দেহ উদ্ধার
বিধবার জমি পুলিশ প্রহরায় দখলচেষ্টা
ছয় দশক ধরে নেতৃত্ব দিয়ে তারা ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন
দুদক আ’লীগের লোকেদের পরিচ্ছন্ন সার্টিফিকেট দেয় : গয়েশ্বর
৩৫ কোটি মূল্যের কষ্টিপাথরের মূর্তি উদ্ধার : ধৃত ৩

শুক্রবার, ০৮ এপ্রিল ২০২২ , ২৫ চৈত্র ১৪২৮ ০৬ রমাদ্বান ১৪৪৩

৩০ বছর পর চৈত্র মাসে তিস্তায় বন্যা : দিশেহারা শত শত কৃষক

মনিরুজ্জামান সরকার, লালমনিরহাট

image

লালমনিরহাট : তিস্তায় হঠাৎ পানি বেড়ে প্লাবিত বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। কোটি কোটি টাকার ফসল নষ্টের আশঙ্কা -সংবাদ

প্রতিবছরই এপ্রিল মাসে তিস্তার বুকজুড়ে থাকে ধু ধু বালুচর। প্রখর রোদে বালুময় তিস্তা হেঁটে পার হন চরাঞ্চলবাসী। প্রায় ৩০ বছর পর এই প্রথম সেই চিত্র পাল্টে গেছে । অসময়ে ভারতের গজলডোবা ব্যারেজের গেট খুলে দেয়ায় ও উজানে ভারি বৃষ্টিপাতে তিস্তার পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে তলিয়ে গেছে তিস্তার বুকে উজান ও ভাটিতে কৃষকের লাগানো কয়েক হাজার বিঘা জমির মরিচ-পেঁয়াজ, রসুন, মিষ্টি কুমড়া খেত। ব্যারাজের ১০টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। এতে উজানের প্রচুর পরিমাণ পানি ভাটিতে এসেছে। এপ্রিলে তিস্তার এ রকম বন্যায় বাকরুদ্ধ চরাঞ্চলের লাখো মানুষ। এ সময় তিস্তার বুকে যে চাষাবাদ হয় তাই দিয়ে তাদের চলে সারাটা বছর। অসময়ের এই বন্যায় কৃষকের স্বপ্নের ফসল ডোবার সঙ্গে সঙ্গে ডুবেছে কৃষকের কপালও। এদিকে পানি বাড়ার সাথে সাথে তিস্তাপাড়ে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন।

বুধবার দুপুরে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি ছিল ৫১ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার যাহা বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার নিচে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। মার্চের শেষ সপ্তাহে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে মাত্র তিন হাজার কিউসেক পানি ছিল। এক সপ্তাহের ব্যবধানে তা বেড়ে বুধবার দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৬শ’ কিউসেকে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, পানি যে কোন সময় বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এই কর্মকর্তা জানান, বিগত ৩০ বছর আগে এপ্রিল মাসে তিস্তায় বন্যা দেখা দিয়েছিল। আর এ বছরে ঘটল সেই ঘটনা। তিনি জানান, তিস্তায় পানি বাড়ার সাথে সাথে জেলার ৫ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পানি বাড়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে চরাঞ্চলের চাষিরা। লালমনিরহাটের আদিতমারি উপজেলার মহিষখোচা এলাকার পাট চাষি একরামুল হক বলেন, জীবনেও দেখি নাই চৈত্র বৈশাখ মাসে তিস্তার পানি বাড়ে। পানি বাড়ার কারণে ৪ বিঘা জমির উঠতি পাটখেত পানিতে ডুবে গিয়ে নষ্ট হয়েছে। এতে আমার ১৫ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।

সদর উপজেলার চর গোকুন্ডার চাষি এসাহাক মিয়া জানান, গত ৭ দিনে তিস্তার উজান থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি এসে তিস্তায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে । দুই বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছিলাম, অকাল বন্যায় সব নষ্ট হয়ে গেছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, উজানে বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বুধবার দুপুরে ব্যারেজ পয়েন্টে পানি দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৬শ’ কিউসেক। পানি আরো বাড়বে।

লালমনিরহাট কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, তিস্তায় পানি বৃদ্ধির ফলে সাড়ে ১৭ হাজার চরের জমির বিভিন্ন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।