পাকিস্তান স্পিকারের সিদ্ধান্তকে বেআইনি ঘোষণা করে সংসদ বহালের রায় সুপ্রিম কোর্টের

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব বাতিল ও পরবর্তীতে পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে পার্লামেন্ট পুনর্বহালেরও নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতিদের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ। আগামীকাল সকাল ১০টায় জাতীয় সংসদ অধিবেশন অনুষ্ঠানের নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। অনাস্থা প্রস্তাব নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সংসদ অধিবেশন চলবে বলে আদালত নির্দেশ দিয়েছে।

গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টার দিকে বহুল আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। এ রায়ের ফলে আবারও বিরোধীদের অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হতে হবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে।

এ রায়কে সামনে রেখে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশে নেয়া হয়েছিল কড়া নিরাপত্তা। সর্বোচ্চ আদালতের সামনে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে ‘দ্য ডন’।

গত ৩ এপ্রিল পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনীত অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দেন ডেপুটি স্পিকার কাসেম সুরি। ইমরানের বিরুদ্ধে হতে যাওয়া অনাস্থা পদক্ষেপকে সংবিধানের ৫ অনুচ্ছেদের বিরোধী অ্যাখায়িত করে খারিজ করে দেন তিনি। এরপরই ইমরান খানের অনুরোধে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। ফলে দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে। বিরোধীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ডেপুটি স্পিকার অসাংবিধানিকভাবে অনাস্থা ভোট বাতিল করেছেন। তার এই অসাংবিধানিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় বিরোধী দলগুলো।

গতকাল স্থানীয় সময় সাড়ে ৯টার দিকে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বে বিচারপতিদের পাঁচ সদস্যের একটি বেঞ্চে চতুর্থ দিনের মতো মামলাটির শুনানি শুরু হয়। প্রধান বিচারপতির পাশাপাশি এই বেঞ্চে আর যে বিচারপতিরা আছেন তারা হলেন- ইজাজুল আহসান, মোহাম্মদ আলী মাজহার, মুনিব আখতার ও জামাল খান মান্দোখেল।

এর আগে গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে অনাস্থা ভোট বাতিলের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ স্পিকারের কাউন্সিল নাঈম বোখারিকে গত ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত অধিবেশনের কার্যবিবরণী উপস্থানের নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি।

এছাড়া বুধবারের শুনানিতে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এর আইনজীবীরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে কথা বলেছেন।

এদিন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির আইনজীবী আলি জাফর সংবিধানের কথা উল্লেখ করে বলেন, পার্লামেন্টের প্রক্রিয়ায় আদালতের জড়িত হওয়া উচিত নয়। সংবিধানে স্পষ্টভাবেই উল্লেখ আছে, পার্লামেন্ট বিচারিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না। একইভাবে আদালতও পার্লামেন্টের কার্যক্রম এবং অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

প্রসঙ্গত, অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে গত ২৮ মার্চ ইমরান খান ও তার জোট সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধীদলগুলো। একপর্যায়ে জোট সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এক শরিক বিরোধী শিবিরে যোগ দিলে জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় সরকার। এককভাবে জাতীয় পরিষদে ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) আইনপ্রণেতার সংখ্যা ১৫৫ জন। সরকার গঠনে তাদের প্রয়োজন ছিল ১৭২ জন আইনপ্রণেতার সমর্থন।

শুক্রবার, ০৮ এপ্রিল ২০২২ , ২৫ চৈত্র ১৪২৮ ০৬ রমাদ্বান ১৪৪৩

পাকিস্তান স্পিকারের সিদ্ধান্তকে বেআইনি ঘোষণা করে সংসদ বহালের রায় সুপ্রিম কোর্টের

সংবাদ ডেস্ক

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব বাতিল ও পরবর্তীতে পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে পার্লামেন্ট পুনর্বহালেরও নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতিদের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ। আগামীকাল সকাল ১০টায় জাতীয় সংসদ অধিবেশন অনুষ্ঠানের নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। অনাস্থা প্রস্তাব নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সংসদ অধিবেশন চলবে বলে আদালত নির্দেশ দিয়েছে।

গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টার দিকে বহুল আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। এ রায়ের ফলে আবারও বিরোধীদের অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হতে হবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে।

এ রায়কে সামনে রেখে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশে নেয়া হয়েছিল কড়া নিরাপত্তা। সর্বোচ্চ আদালতের সামনে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে ‘দ্য ডন’।

গত ৩ এপ্রিল পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনীত অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দেন ডেপুটি স্পিকার কাসেম সুরি। ইমরানের বিরুদ্ধে হতে যাওয়া অনাস্থা পদক্ষেপকে সংবিধানের ৫ অনুচ্ছেদের বিরোধী অ্যাখায়িত করে খারিজ করে দেন তিনি। এরপরই ইমরান খানের অনুরোধে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। ফলে দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে। বিরোধীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ডেপুটি স্পিকার অসাংবিধানিকভাবে অনাস্থা ভোট বাতিল করেছেন। তার এই অসাংবিধানিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় বিরোধী দলগুলো।

গতকাল স্থানীয় সময় সাড়ে ৯টার দিকে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বে বিচারপতিদের পাঁচ সদস্যের একটি বেঞ্চে চতুর্থ দিনের মতো মামলাটির শুনানি শুরু হয়। প্রধান বিচারপতির পাশাপাশি এই বেঞ্চে আর যে বিচারপতিরা আছেন তারা হলেন- ইজাজুল আহসান, মোহাম্মদ আলী মাজহার, মুনিব আখতার ও জামাল খান মান্দোখেল।

এর আগে গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে অনাস্থা ভোট বাতিলের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ স্পিকারের কাউন্সিল নাঈম বোখারিকে গত ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত অধিবেশনের কার্যবিবরণী উপস্থানের নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি।

এছাড়া বুধবারের শুনানিতে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এর আইনজীবীরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে কথা বলেছেন।

এদিন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির আইনজীবী আলি জাফর সংবিধানের কথা উল্লেখ করে বলেন, পার্লামেন্টের প্রক্রিয়ায় আদালতের জড়িত হওয়া উচিত নয়। সংবিধানে স্পষ্টভাবেই উল্লেখ আছে, পার্লামেন্ট বিচারিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না। একইভাবে আদালতও পার্লামেন্টের কার্যক্রম এবং অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

প্রসঙ্গত, অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে গত ২৮ মার্চ ইমরান খান ও তার জোট সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধীদলগুলো। একপর্যায়ে জোট সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এক শরিক বিরোধী শিবিরে যোগ দিলে জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় সরকার। এককভাবে জাতীয় পরিষদে ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) আইনপ্রণেতার সংখ্যা ১৫৫ জন। সরকার গঠনে তাদের প্রয়োজন ছিল ১৭২ জন আইনপ্রণেতার সমর্থন।