বাংলাদেশ দল ঘুরে দাঁড়াতে চায়

দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু আজ

দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথমবারের মত তিন ম্যাচের ওডিআই সিরিজ জয়ের পর দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে অনেকটাই বিবর্ণরূপে দেখা গেছে টাইগারদের। এর পেছনে কারণও ছিল। প্রথমত : ডারবানের প্রথাগত বাউন্সি পিচ বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচকরা একাদশ সাজিয়েছিলেন পেসারদের নিয়ে অথচ ওই পিচে রাজত্ব করেছেন স্পিনাররা। আবার তিন ম্যাচের ওডিআই সিরিজ শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গেই পারিবারিক প্রয়োজনে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরে এসেছেন অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসান। পেটের পীড়ার কারণে মাঠে নামতে পারেননি ওপেনার তামিম ইকবাল। এবারের সফরে বল হাতে দাপট দেখানো তাসকিন আহমেদের সঙ্গে দেশে ফিরেছেন আরেক পেসার শরিফুলও। আজ বাংলাদেশ সময় দুপুর দুইটায় পোর্ট এলিজাবেথের সেইন্ট জর্জ পার্কে দ্বিতীয় টেস্টে মাঠে নামার আগে একাদশে তামিম ইকবালের ফেরা নিশ্চিত হলেও সাকিব-তাসকিনের অনুপস্থিতিতে দলের শক্তি অনেকটাই কমে গেছে নিঃসন্দেহে।

তবুও এই খর্বশক্তির দল নিয়েই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন টাইগারদের টেস্ট দলের অধিনায়ক মোমিনুল হক। তিনি বলেছেন, আমরা অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াব। প্রথম টেস্টের পাঁচদিনের মধ্যে চারদিনই আমরা ভালো খেলেছি। শেষ দিকের ওভারগুলোতে আমরা খুবই বাজে ব্যাটিং করেছি। প্রথম টেস্ট থেকে পাওয়া ইতিবাচক দিকগুলোই দ্বিতীয় টেস্টে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে।

তবে, ওডিআই সিরিজে পরাজয়ের পর প্রথম টেস্টে প্রোটিয়াদের ২২০রানের জয়ে তাদের ব্যাটাররা নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন ঠিকঠাকমত। দুই ইনিংসেই জমা দিয়েছেন বড় স্কোর। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে টপ অর্ডারের চার ব্যাটারকে ফিরিয়ে সিমন হারমার যে ধ্বংসযজ্ঞের সূচনা করেছিলেন তার ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় ইনিংসে কেশব মহারাজ হয়ে উঠেছিলেন টাইগার ব্যাটারদের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক। ডারবান টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ৫৩ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল টাইগাররা। যা কিনা, ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৪৩ রানে অলআউট হবার পর টেস্টে এটিই টাইগারদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রান।

প্রথম টেস্টের সবকিছু ঠিকঠাকমত চলার কারণে দ্বিতীয় টেস্টেও জয়ের মধ্য দিয়ে টাইগারদের হোয়াইটওয়াশের সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইবেনা দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট দল। দ্বিতীয় টেস্টে জিতে গেলে আইসিসির ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের পয়েন্ট টেবিলে দুই নম্বরে উঠে আসবে প্রোটিয়ারা।

অন্যদিকে বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট ম্যাচ জয়, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এবারের সফরের শুরুতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয়ের পর টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচের আগে পাওয়া আত্মবিশ^াসের পাল নিঃসন্দেহে এখন পরাজয়ে বিদীর্ন।

সাকিব-তাসকিন-শরীফুল বিহীন বাংলাদেশ দলকে দ্বিতীয় টেস্টে ভালো করতে হলে সিনিয়র ক্রিকেটারদের নেতৃত্ব দেয়া চাই সামনে থেকে। ব্যাট হাতে দুই ইনিংসেই ডাবল ফিগারে পৌঁছাতে না পারায়, দ্বিতীয় টেস্টের একাদশে ওপেনার সাদমান ইসলামের না থাকাটা প্রায় নিশ্চিত। ফলে, ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টেস্ট সেঞ্চুরি করা ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ের সঙ্গে ইনিংস শুরু করবেন দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। দ্বিতীয় টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়টা মাঠে বাস্তবায়ন করতে হলে অধিনায়ক মোমিনুল হকের ব্যাট থেকে রান আসা চাই। মি. ডিপেন্ডেবল নামে খ্যাত মুশফিকুর রহিম, দলের আরেক সিনিয়র ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ট্যালেন্টেড ব্যাটার লিটন কুমার দাসের কাছ থেকেও বড় স্কোর আশা করছে টাইগার ভক্তরা।

প্রথম টেস্টের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায় প্রোটিয়াদের ব্যাটাররা ভালো করার পাশাপাশি বোলাররা নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন যথাযথভাবে। বিশেষ করে সাইমন হার্মার ও কেশব মহারাজের যুগলবন্দি ছিল দূর্দান্ত। প্রোটিয়া স্পিনে টাইগার ব্যাটিং ডিপার্টমেন্ট অসহায় আত্মসমর্পন করার পর বাংলাদেশের অধিনায়ক মোমিনুল হক পরিস্কারভাবেই মিরপুরের উইকেটের সঙ্গে তুলনা করে বলেছিলেন যে, সব সময় স্পিনিং উইকেটে খেলার পরও দক্ষিন আফ্রিকার মাটিতে স্পিন সামাল দিতে না পারাটা অপরাধের সঙ্গে তুলনীয়। তবে বাংলাদেশের বোলিং কোচ তথা সাবেক প্রোটিয়া পেসার অ্যালান ডোনাল্ড খুবই আশাবাদী টাইগার পেসারদের নিয়ে। তিনি মনে করেন, বর্তমান প্রজন্মের টাইগার পেসাররা যে কোন পিচে ভালো করতে সক্ষম। তবে আজকের ম্যাচের একাদশে কারা থাকছেন, তা নিয়ে আগাম কোন ধারণা দেয়া যাচ্ছেনা। তাসকিন-শরীফুলের অবর্তমানে পেস বোলিং কম্বিনেশন বোঝা যাবে ম্যাচের আগে। আবার উইকেট স্পিনিং হলে মেহেদি মিরাজের সঙ্গে হাত ঘোরানোর জন্য তাইজুল ইসলামকে একাদশে দেখা যেতে পারে। পেস ডিপার্টমেন্টের নেতৃত্ব তর্কাতীতভাবেই দেবেন আবু জায়েদ রাহী।

ক্রিকেটে বাজে দিন বা বাজে ম্যাচ আসাটা অস্বাভাবিক কিছুই নয়। প্রথম টেস্টের হতাশা সত্যি সত্যি ঝেড়ে ফেলতে পারলে টাইগারদের বর্তমান দলটার লড়াই করার সামর্থ্য নিয়ে অন্তত কোন সংশয় নেই।

শুক্রবার, ০৮ এপ্রিল ২০২২ , ২৫ চৈত্র ১৪২৮ ০৬ রমাদ্বান ১৪৪৩

বাংলাদেশ দল ঘুরে দাঁড়াতে চায়

দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু আজ

ক্রীড়া বার্তা পরিবেশক

image

দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথমবারের মত তিন ম্যাচের ওডিআই সিরিজ জয়ের পর দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে অনেকটাই বিবর্ণরূপে দেখা গেছে টাইগারদের। এর পেছনে কারণও ছিল। প্রথমত : ডারবানের প্রথাগত বাউন্সি পিচ বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচকরা একাদশ সাজিয়েছিলেন পেসারদের নিয়ে অথচ ওই পিচে রাজত্ব করেছেন স্পিনাররা। আবার তিন ম্যাচের ওডিআই সিরিজ শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গেই পারিবারিক প্রয়োজনে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরে এসেছেন অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসান। পেটের পীড়ার কারণে মাঠে নামতে পারেননি ওপেনার তামিম ইকবাল। এবারের সফরে বল হাতে দাপট দেখানো তাসকিন আহমেদের সঙ্গে দেশে ফিরেছেন আরেক পেসার শরিফুলও। আজ বাংলাদেশ সময় দুপুর দুইটায় পোর্ট এলিজাবেথের সেইন্ট জর্জ পার্কে দ্বিতীয় টেস্টে মাঠে নামার আগে একাদশে তামিম ইকবালের ফেরা নিশ্চিত হলেও সাকিব-তাসকিনের অনুপস্থিতিতে দলের শক্তি অনেকটাই কমে গেছে নিঃসন্দেহে।

তবুও এই খর্বশক্তির দল নিয়েই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন টাইগারদের টেস্ট দলের অধিনায়ক মোমিনুল হক। তিনি বলেছেন, আমরা অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াব। প্রথম টেস্টের পাঁচদিনের মধ্যে চারদিনই আমরা ভালো খেলেছি। শেষ দিকের ওভারগুলোতে আমরা খুবই বাজে ব্যাটিং করেছি। প্রথম টেস্ট থেকে পাওয়া ইতিবাচক দিকগুলোই দ্বিতীয় টেস্টে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে।

তবে, ওডিআই সিরিজে পরাজয়ের পর প্রথম টেস্টে প্রোটিয়াদের ২২০রানের জয়ে তাদের ব্যাটাররা নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন ঠিকঠাকমত। দুই ইনিংসেই জমা দিয়েছেন বড় স্কোর। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে টপ অর্ডারের চার ব্যাটারকে ফিরিয়ে সিমন হারমার যে ধ্বংসযজ্ঞের সূচনা করেছিলেন তার ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় ইনিংসে কেশব মহারাজ হয়ে উঠেছিলেন টাইগার ব্যাটারদের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক। ডারবান টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ৫৩ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল টাইগাররা। যা কিনা, ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৪৩ রানে অলআউট হবার পর টেস্টে এটিই টাইগারদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রান।

প্রথম টেস্টের সবকিছু ঠিকঠাকমত চলার কারণে দ্বিতীয় টেস্টেও জয়ের মধ্য দিয়ে টাইগারদের হোয়াইটওয়াশের সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইবেনা দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট দল। দ্বিতীয় টেস্টে জিতে গেলে আইসিসির ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের পয়েন্ট টেবিলে দুই নম্বরে উঠে আসবে প্রোটিয়ারা।

অন্যদিকে বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট ম্যাচ জয়, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এবারের সফরের শুরুতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয়ের পর টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচের আগে পাওয়া আত্মবিশ^াসের পাল নিঃসন্দেহে এখন পরাজয়ে বিদীর্ন।

সাকিব-তাসকিন-শরীফুল বিহীন বাংলাদেশ দলকে দ্বিতীয় টেস্টে ভালো করতে হলে সিনিয়র ক্রিকেটারদের নেতৃত্ব দেয়া চাই সামনে থেকে। ব্যাট হাতে দুই ইনিংসেই ডাবল ফিগারে পৌঁছাতে না পারায়, দ্বিতীয় টেস্টের একাদশে ওপেনার সাদমান ইসলামের না থাকাটা প্রায় নিশ্চিত। ফলে, ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টেস্ট সেঞ্চুরি করা ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ের সঙ্গে ইনিংস শুরু করবেন দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। দ্বিতীয় টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়টা মাঠে বাস্তবায়ন করতে হলে অধিনায়ক মোমিনুল হকের ব্যাট থেকে রান আসা চাই। মি. ডিপেন্ডেবল নামে খ্যাত মুশফিকুর রহিম, দলের আরেক সিনিয়র ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ট্যালেন্টেড ব্যাটার লিটন কুমার দাসের কাছ থেকেও বড় স্কোর আশা করছে টাইগার ভক্তরা।

প্রথম টেস্টের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায় প্রোটিয়াদের ব্যাটাররা ভালো করার পাশাপাশি বোলাররা নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন যথাযথভাবে। বিশেষ করে সাইমন হার্মার ও কেশব মহারাজের যুগলবন্দি ছিল দূর্দান্ত। প্রোটিয়া স্পিনে টাইগার ব্যাটিং ডিপার্টমেন্ট অসহায় আত্মসমর্পন করার পর বাংলাদেশের অধিনায়ক মোমিনুল হক পরিস্কারভাবেই মিরপুরের উইকেটের সঙ্গে তুলনা করে বলেছিলেন যে, সব সময় স্পিনিং উইকেটে খেলার পরও দক্ষিন আফ্রিকার মাটিতে স্পিন সামাল দিতে না পারাটা অপরাধের সঙ্গে তুলনীয়। তবে বাংলাদেশের বোলিং কোচ তথা সাবেক প্রোটিয়া পেসার অ্যালান ডোনাল্ড খুবই আশাবাদী টাইগার পেসারদের নিয়ে। তিনি মনে করেন, বর্তমান প্রজন্মের টাইগার পেসাররা যে কোন পিচে ভালো করতে সক্ষম। তবে আজকের ম্যাচের একাদশে কারা থাকছেন, তা নিয়ে আগাম কোন ধারণা দেয়া যাচ্ছেনা। তাসকিন-শরীফুলের অবর্তমানে পেস বোলিং কম্বিনেশন বোঝা যাবে ম্যাচের আগে। আবার উইকেট স্পিনিং হলে মেহেদি মিরাজের সঙ্গে হাত ঘোরানোর জন্য তাইজুল ইসলামকে একাদশে দেখা যেতে পারে। পেস ডিপার্টমেন্টের নেতৃত্ব তর্কাতীতভাবেই দেবেন আবু জায়েদ রাহী।

ক্রিকেটে বাজে দিন বা বাজে ম্যাচ আসাটা অস্বাভাবিক কিছুই নয়। প্রথম টেস্টের হতাশা সত্যি সত্যি ঝেড়ে ফেলতে পারলে টাইগারদের বর্তমান দলটার লড়াই করার সামর্থ্য নিয়ে অন্তত কোন সংশয় নেই।