বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের জামিনের শুনানি ১০ এপ্রিল

শ্রেণীকক্ষে বিজ্ঞান ক্লাসে ধর্ম নিয়ে আলোচনার পর একদল শিক্ষার্থীর বিক্ষোভের মুখে গ্রেপ্তার মুন্সীগঞ্জের শিক্ষক হৃদয় কৃষ্ণ মন্ডল জামিন পাননি। মুন্সীগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আমজাদ হোসেনের আদালতে গত সোমবার তার পক্ষে জামিন আবেদন করা হলে তা নাকচ হয়ে যায়। আদালত তার মামলার জামিন শুনানি আগামী ১০ এপ্রিল ধার্য করেছে।

এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহীন মোহাম্মদ আমান উল্লাহ জানান, আগামী ১০ এপ্রিল শুনানির দিন ধার্য করেছে আদালত। আসামিপক্ষের অ্যাডভোকেট জামিন চেয়েছে ধার্যের দিন জামিন দেয়া না দেয়া বিচারকের ওপর নির্ভর করবে। ধার্যকৃত দিন ছাড়া আসামির জামিন হওয়ার কোন সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন এই মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহীন মোহাম্মদ আমান উল্লাহ। তিন সপ্তাহ আগে সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হৃদয় কৃষ্ণ মন্ডল বিজ্ঞান পড়ানোর সময় প্রসঙ্গক্রমে ধর্ম নিয়ে কথা বলেন। পুলিশ জানিয়েছে, ওইদিনই হৃদয় মন্ডলকে আটক করা হয়। দু’দিন পর এ ঘটনায় মামলা হলে তাকে সেই মমালায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

ঘটনার পর হৃদয় কৃষ্ণ মন্ডলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মনিরুজ্জামান শরীফ জানিয়েছেন। মামলার বরাতে মনিরুজ্জামান জানান, গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণীর পঞ্চম ঘণ্টায় সাধারণ বিজ্ঞানের ক্লাস ছিল। মানবিক ও বাণিজ্য শাখার ক্লাসটি নিচ্ছিলেন শিক্ষক হৃদয় কৃষ্ণ মন্ডল।

‘সেদিন হৃদয় কৃষ্ণ মন্ডল ওই ক্লাসে ধর্ম নিয়ে আলোচনা করেন, যা কয়েকজন শিক্ষার্থী রেকর্ড করে।’ তিনি জানান, পরে ধর্ম নিয়ে ‘আপত্তিকর’ কথা বলার অভিযোগ তুলে কিছু শিক্ষার্থী এলাকায় হৃদয় কৃষ্ণ মন্ডলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। ওই অবস্থায় এই শিক্ষককে মুন্সীগঞ্জ সদর থানা পুলিশ নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়। পরে মামলা হলে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, ঘটনার দু’দিন পর (২২ মার্চ) ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী (ইলেকট্রেশিয়ান) মো. আসাদ বাদী হয়ে হৃদয় কৃষ্ণ মন্ডলের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরদিন তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করলে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

ওসি আরও জানান, এরপর গত ২৮ মার্চ মুন্সীগঞ্জ বিচারিক হাকিম আদালতে প্রথমে তার জামিন আবেদন করা হলে তা নাকচ হয়ে যায়। এরপর সোমবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবার জামিনের আবেদন করা হয় এবং তাও নাকচ হয়।

এ আদালত আগামী ১০ এপ্রিল মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে বলে জানান ওসি।

এদিকে ওই ঘটনার পর থেকে শিক্ষকের পরিবার নিরাপত্তা শঙ্কায় রয়েছে বলে দাবি করেছেন হৃদয় মন্ডলের স্ত্রী ববিতা হওলাদার।

প্রসঙ্গত, গত ২০ মার্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর একটি ক্লাস চলাচকালে ধর্মীয় বিষয়ে হৃদয় মন্ডলের বিভিন্ন কথোপকথন শিক্ষার্থীরা গোপনে মোবাইলে রেকর্ড করে। ওইসব কথোপকথনে ধর্ম বিষয়ে আপত্তিকর কথা ও অবমাননার অভিযোগ তুলে ক্লাস শেষে শিক্ষকের বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক বরাবর লিখিত আবেদন করেন। পরদিন ২১ মার্চ ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন মিয়া বরাবর ছাত্ররা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করে। তখন স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা বিষয়টির সুরাহা না করে শিক্ষার্থীদের নীরব থাকতে বলেন। পরবর্তীতে ২২ মার্চ স্কুল ক্যাম্পাসে শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। সেদিন স্কুল চলাকালীন শিক্ষার্র্থীদের সঙ্গে বহিরাগতরাও যোগ দেয়। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই শিক্ষককে থানায় নেয়া হয়। ওইদিনই বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. আসাদ বাদী হয়ে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ।

শুক্রবার, ০৮ এপ্রিল ২০২২ , ২৫ চৈত্র ১৪২৮ ০৬ রমাদ্বান ১৪৪৩

বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের জামিনের শুনানি ১০ এপ্রিল

প্রতিনিধি, মুন্সীগঞ্জ

শ্রেণীকক্ষে বিজ্ঞান ক্লাসে ধর্ম নিয়ে আলোচনার পর একদল শিক্ষার্থীর বিক্ষোভের মুখে গ্রেপ্তার মুন্সীগঞ্জের শিক্ষক হৃদয় কৃষ্ণ মন্ডল জামিন পাননি। মুন্সীগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আমজাদ হোসেনের আদালতে গত সোমবার তার পক্ষে জামিন আবেদন করা হলে তা নাকচ হয়ে যায়। আদালত তার মামলার জামিন শুনানি আগামী ১০ এপ্রিল ধার্য করেছে।

এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহীন মোহাম্মদ আমান উল্লাহ জানান, আগামী ১০ এপ্রিল শুনানির দিন ধার্য করেছে আদালত। আসামিপক্ষের অ্যাডভোকেট জামিন চেয়েছে ধার্যের দিন জামিন দেয়া না দেয়া বিচারকের ওপর নির্ভর করবে। ধার্যকৃত দিন ছাড়া আসামির জামিন হওয়ার কোন সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন এই মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহীন মোহাম্মদ আমান উল্লাহ। তিন সপ্তাহ আগে সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হৃদয় কৃষ্ণ মন্ডল বিজ্ঞান পড়ানোর সময় প্রসঙ্গক্রমে ধর্ম নিয়ে কথা বলেন। পুলিশ জানিয়েছে, ওইদিনই হৃদয় মন্ডলকে আটক করা হয়। দু’দিন পর এ ঘটনায় মামলা হলে তাকে সেই মমালায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

ঘটনার পর হৃদয় কৃষ্ণ মন্ডলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মনিরুজ্জামান শরীফ জানিয়েছেন। মামলার বরাতে মনিরুজ্জামান জানান, গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণীর পঞ্চম ঘণ্টায় সাধারণ বিজ্ঞানের ক্লাস ছিল। মানবিক ও বাণিজ্য শাখার ক্লাসটি নিচ্ছিলেন শিক্ষক হৃদয় কৃষ্ণ মন্ডল।

‘সেদিন হৃদয় কৃষ্ণ মন্ডল ওই ক্লাসে ধর্ম নিয়ে আলোচনা করেন, যা কয়েকজন শিক্ষার্থী রেকর্ড করে।’ তিনি জানান, পরে ধর্ম নিয়ে ‘আপত্তিকর’ কথা বলার অভিযোগ তুলে কিছু শিক্ষার্থী এলাকায় হৃদয় কৃষ্ণ মন্ডলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। ওই অবস্থায় এই শিক্ষককে মুন্সীগঞ্জ সদর থানা পুলিশ নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়। পরে মামলা হলে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, ঘটনার দু’দিন পর (২২ মার্চ) ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী (ইলেকট্রেশিয়ান) মো. আসাদ বাদী হয়ে হৃদয় কৃষ্ণ মন্ডলের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরদিন তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করলে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

ওসি আরও জানান, এরপর গত ২৮ মার্চ মুন্সীগঞ্জ বিচারিক হাকিম আদালতে প্রথমে তার জামিন আবেদন করা হলে তা নাকচ হয়ে যায়। এরপর সোমবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবার জামিনের আবেদন করা হয় এবং তাও নাকচ হয়।

এ আদালত আগামী ১০ এপ্রিল মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে বলে জানান ওসি।

এদিকে ওই ঘটনার পর থেকে শিক্ষকের পরিবার নিরাপত্তা শঙ্কায় রয়েছে বলে দাবি করেছেন হৃদয় মন্ডলের স্ত্রী ববিতা হওলাদার।

প্রসঙ্গত, গত ২০ মার্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর একটি ক্লাস চলাচকালে ধর্মীয় বিষয়ে হৃদয় মন্ডলের বিভিন্ন কথোপকথন শিক্ষার্থীরা গোপনে মোবাইলে রেকর্ড করে। ওইসব কথোপকথনে ধর্ম বিষয়ে আপত্তিকর কথা ও অবমাননার অভিযোগ তুলে ক্লাস শেষে শিক্ষকের বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক বরাবর লিখিত আবেদন করেন। পরদিন ২১ মার্চ ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন মিয়া বরাবর ছাত্ররা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করে। তখন স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা বিষয়টির সুরাহা না করে শিক্ষার্থীদের নীরব থাকতে বলেন। পরবর্তীতে ২২ মার্চ স্কুল ক্যাম্পাসে শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। সেদিন স্কুল চলাকালীন শিক্ষার্র্থীদের সঙ্গে বহিরাগতরাও যোগ দেয়। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই শিক্ষককে থানায় নেয়া হয়। ওইদিনই বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. আসাদ বাদী হয়ে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ।