মূল হোতাসহ গ্রেপ্তার ৬
সুসজ্জিত অত্যাধুনিক চেম্বারের বসে রোগী দেখেন, সেই সঙ্গে নামের সঙ্গে এমবিবিএসসহ বিভিন্ন ডাক্তারি ডিগ্রি জুড়ে দেয়া হচ্ছে। বাইরের সাইনবোর্ডে জ্বলজ্বল করতে থাকা ওই ডিগ্রির বিবরণ দেখে যে কেউ বিশ্বাস করে নিবেন, হয়ত বড় কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। কিন্তু বাস্তবে হয়ত কোন মাদ্রাসা থেকে পড়েছেন, অথবা এসএসসির গ-ি পার হননি, নয়ত বিজ্ঞান বিভাগেই পড়েননি। একটি নামসর্বস্ব ভুয়া প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে শুরু করে দিয়েছেন রোগী দেখা। ভুয়া ওই প্রতিষ্ঠানটির সার্টিফিকেট নিয়ে বর্তমানে সারাদেশে কমপক্ষে ২০০ ভুয়া এমবিবিএস চিকিৎসক রোগী দেখছেন। যাদের ইতোমধ্যে নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
এসব চিকিৎসকদের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সার্টিফিকেট দিতেন মো. নুরুল হক সরকার ওরফে শেখ গনি সরকার (৭২) নামে এক ভুয়া চিকিৎসক। প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি নামে নামসর্বস্ব একটি প্রতিষ্ঠান খুলে সেটির ভিসি হিসেবে এমবিবিএস, বিডিএস, এমফিল, পিএইচডি, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ ১৪৪টি বিষয়ের সার্টিফিকেট দিতেন তিনি। ১৯৯৬ সাল থেকে তিনি এমন শত শত ভুয়া চিকিৎসককে এমবিবিএস-বিডিএস সার্টিফিকেট দিয়েছেন। বিনিময়ে প্রতিটি এমবিবিএস সার্টিফিকেটের জন্য হাতিয়েছেন ৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা। মোবাইল ফোনেই ভর্তি করে টাকা নেয়ার পর কুরিয়ারের মাধ্যমে সার্টিফিকেট পৌঁছে দিতেন নুরুল হক। তার ব্যক্তিগত ব্যাংক একাউন্টে ১০ কোটি টাকা ট্রান্সজেকশনের তথ্যও পেয়েছে ডিবি। আর ঢাকার সাভার, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নোয়াখালী ও নারায়ণগঞ্জে ভুয়া এমবিবিএস চিকিৎসকের সংখ্যা বেশি বলে জানা গেছে।
গত বুধবার রাজধানীর মালিবাগের প্যারামাউন্ট টাওয়ারে অভিযান পরিচালনা করে ভুয়া সার্টিফিকেট তৈরির মূল হোতা নুরুল হক ও তার সহযোগী মো. মোয়াজ্জেম হোসেনসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মোট ৬ জনকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য জানিয়েছে ডিবি। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৪ জন ভুয়া ডাক্তার রয়েছেন। তারা হলেনÑ মো. সাইদুর রহমান ওরফে নজরুল, মো. মাহফুজুর রহমান ওরফে মাহফুজ, মো. আমান উল্লাহ ও দেবাশীষ কু-ু। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে অসংখ্য ভুয়া সনদপত্র, টেস্টিমোনিয়াল, ট্রান্সক্রিপ্ট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, অ্যাডমিড কার্ড, নকল সিল, বিভিন্ন ডিগ্রি উল্লেখ সংবলিত ভিজিটিং কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের চারটি চেক, ভুয়া সনদ দেয়ার চটকদার বিজ্ঞাপনের পেপার কাটিং ও লিফলেট, প্রেসক্রিপশন, নবদিগন্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড ডক্টরস চেম্বারের কপি, একটি কম্পিউটার ও একটি প্রিন্টার জব্দ করা হয়। ভুয়া সনদপত্র তৈরি ও ছাপার কাজে কম্পিউটার ও প্রিন্টারটি ব্যবহার করা হতো।
গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবির প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানটি ভুয়া ডাক্তারি ডিগ্রি দিত। এদের আরও ৩টি ভুয়া প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখান থেকে আরও বিভিন্ন ধরনের ডিগ্রি দেয়া হতো। এমবিবিএস ডিগ্রির জন্য প্রথমে ভর্তির কথা বলে এক লাখ, পরে আরও কমপক্ষে ৪ লাখ টাকা নিয়ে কুরিয়ারের মাধ্যমে সার্টিফিকেট পাঠিয়ে দিত। দেয়া হতো রেজিস্ট্রেশন নম্বর। যেগুলোর সঙ্গে বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশনের কোন মিল নেই। ভুয়া ডাক্তাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, কিছু ওষুধের নাম মুখস্থ করে তারা প্রেসক্রিপশন দিত। অনেক রোগী এমনিতেই সুস্থ হয়ে যেতেন, আবার অনেকে অন্য ডাক্তারের কাছে চলে যেতেন। এজন্য তাদের কোন সমস্যায় পড়তে হতো না।
ভুয়া ডিগ্রি দেয়ার মূল হোতা নুরুল হকের ২ ছেলে ও ১ মেয়ে এ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত জানিয়ে ডিবিপ্রধান বলেন, চক্রটি বিভিন্ন ডিগ্রির সর্বমোট ২-৩ হাজার সার্টিফিকেট বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ চক্রের কাছ থেকে যারা সার্টিফিকেট নিয়ে ভুয়া চেম্বার খুলে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন, তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সাইদুর রহমান ওরফে নজরুল, মাহফুজ এবং আমানুল্লাহ মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস করে এমবিবিএসের সার্টিফিকেট নিয়েছে, যা কোনভাবেই সম্ভব না। সাইদুর রহমান নজরুল সাভারে একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছিল। মাহফুজ ডেন্টাল মেডিকেল থেকে পাস করা ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে কুমিল্লায় চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছিল। এছাড়া দেবাশীষ ডাক্তার পরিচয়ে টাঙ্গাইলে প্যাট্রিয়টিক আল্ট্রা মেডিকেল অফিসার হিসেবে ‘বিটস ফর রুর্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিল। আমানুল্লাহও সেই প্রতিষ্ঠানে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিল।
শুক্রবার, ০৮ এপ্রিল ২০২২ , ২৫ চৈত্র ১৪২৮ ০৬ রমাদ্বান ১৪৪৩
মূল হোতাসহ গ্রেপ্তার ৬
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
সুসজ্জিত অত্যাধুনিক চেম্বারের বসে রোগী দেখেন, সেই সঙ্গে নামের সঙ্গে এমবিবিএসসহ বিভিন্ন ডাক্তারি ডিগ্রি জুড়ে দেয়া হচ্ছে। বাইরের সাইনবোর্ডে জ্বলজ্বল করতে থাকা ওই ডিগ্রির বিবরণ দেখে যে কেউ বিশ্বাস করে নিবেন, হয়ত বড় কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। কিন্তু বাস্তবে হয়ত কোন মাদ্রাসা থেকে পড়েছেন, অথবা এসএসসির গ-ি পার হননি, নয়ত বিজ্ঞান বিভাগেই পড়েননি। একটি নামসর্বস্ব ভুয়া প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে শুরু করে দিয়েছেন রোগী দেখা। ভুয়া ওই প্রতিষ্ঠানটির সার্টিফিকেট নিয়ে বর্তমানে সারাদেশে কমপক্ষে ২০০ ভুয়া এমবিবিএস চিকিৎসক রোগী দেখছেন। যাদের ইতোমধ্যে নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
এসব চিকিৎসকদের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সার্টিফিকেট দিতেন মো. নুরুল হক সরকার ওরফে শেখ গনি সরকার (৭২) নামে এক ভুয়া চিকিৎসক। প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি নামে নামসর্বস্ব একটি প্রতিষ্ঠান খুলে সেটির ভিসি হিসেবে এমবিবিএস, বিডিএস, এমফিল, পিএইচডি, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ ১৪৪টি বিষয়ের সার্টিফিকেট দিতেন তিনি। ১৯৯৬ সাল থেকে তিনি এমন শত শত ভুয়া চিকিৎসককে এমবিবিএস-বিডিএস সার্টিফিকেট দিয়েছেন। বিনিময়ে প্রতিটি এমবিবিএস সার্টিফিকেটের জন্য হাতিয়েছেন ৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা। মোবাইল ফোনেই ভর্তি করে টাকা নেয়ার পর কুরিয়ারের মাধ্যমে সার্টিফিকেট পৌঁছে দিতেন নুরুল হক। তার ব্যক্তিগত ব্যাংক একাউন্টে ১০ কোটি টাকা ট্রান্সজেকশনের তথ্যও পেয়েছে ডিবি। আর ঢাকার সাভার, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নোয়াখালী ও নারায়ণগঞ্জে ভুয়া এমবিবিএস চিকিৎসকের সংখ্যা বেশি বলে জানা গেছে।
গত বুধবার রাজধানীর মালিবাগের প্যারামাউন্ট টাওয়ারে অভিযান পরিচালনা করে ভুয়া সার্টিফিকেট তৈরির মূল হোতা নুরুল হক ও তার সহযোগী মো. মোয়াজ্জেম হোসেনসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মোট ৬ জনকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য জানিয়েছে ডিবি। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৪ জন ভুয়া ডাক্তার রয়েছেন। তারা হলেনÑ মো. সাইদুর রহমান ওরফে নজরুল, মো. মাহফুজুর রহমান ওরফে মাহফুজ, মো. আমান উল্লাহ ও দেবাশীষ কু-ু। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে অসংখ্য ভুয়া সনদপত্র, টেস্টিমোনিয়াল, ট্রান্সক্রিপ্ট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, অ্যাডমিড কার্ড, নকল সিল, বিভিন্ন ডিগ্রি উল্লেখ সংবলিত ভিজিটিং কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের চারটি চেক, ভুয়া সনদ দেয়ার চটকদার বিজ্ঞাপনের পেপার কাটিং ও লিফলেট, প্রেসক্রিপশন, নবদিগন্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড ডক্টরস চেম্বারের কপি, একটি কম্পিউটার ও একটি প্রিন্টার জব্দ করা হয়। ভুয়া সনদপত্র তৈরি ও ছাপার কাজে কম্পিউটার ও প্রিন্টারটি ব্যবহার করা হতো।
গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবির প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানটি ভুয়া ডাক্তারি ডিগ্রি দিত। এদের আরও ৩টি ভুয়া প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখান থেকে আরও বিভিন্ন ধরনের ডিগ্রি দেয়া হতো। এমবিবিএস ডিগ্রির জন্য প্রথমে ভর্তির কথা বলে এক লাখ, পরে আরও কমপক্ষে ৪ লাখ টাকা নিয়ে কুরিয়ারের মাধ্যমে সার্টিফিকেট পাঠিয়ে দিত। দেয়া হতো রেজিস্ট্রেশন নম্বর। যেগুলোর সঙ্গে বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশনের কোন মিল নেই। ভুয়া ডাক্তাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, কিছু ওষুধের নাম মুখস্থ করে তারা প্রেসক্রিপশন দিত। অনেক রোগী এমনিতেই সুস্থ হয়ে যেতেন, আবার অনেকে অন্য ডাক্তারের কাছে চলে যেতেন। এজন্য তাদের কোন সমস্যায় পড়তে হতো না।
ভুয়া ডিগ্রি দেয়ার মূল হোতা নুরুল হকের ২ ছেলে ও ১ মেয়ে এ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত জানিয়ে ডিবিপ্রধান বলেন, চক্রটি বিভিন্ন ডিগ্রির সর্বমোট ২-৩ হাজার সার্টিফিকেট বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ চক্রের কাছ থেকে যারা সার্টিফিকেট নিয়ে ভুয়া চেম্বার খুলে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন, তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সাইদুর রহমান ওরফে নজরুল, মাহফুজ এবং আমানুল্লাহ মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস করে এমবিবিএসের সার্টিফিকেট নিয়েছে, যা কোনভাবেই সম্ভব না। সাইদুর রহমান নজরুল সাভারে একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছিল। মাহফুজ ডেন্টাল মেডিকেল থেকে পাস করা ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে কুমিল্লায় চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছিল। এছাড়া দেবাশীষ ডাক্তার পরিচয়ে টাঙ্গাইলে প্যাট্রিয়টিক আল্ট্রা মেডিকেল অফিসার হিসেবে ‘বিটস ফর রুর্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিল। আমানুল্লাহও সেই প্রতিষ্ঠানে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিল।