র‌্যাব পরিচয়ে গার্মেন্টসকর্মী অপহরণ, মুক্তিপণ দাবি

গার্মেন্ট কর্মীকে র‌্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে ৫০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে পরিবারের কাছে। গত ৪ এপ্রিল এ ঘটনায় দিশেহারা হয়ে পড়ে অপহৃত গার্মেন্ট কর্মী আব্দুস সালামের পরিবার। শেষ পর্যন্ত কথিত র‌্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে অপহরণকারী চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। উদ্ধার করা হয়েছে অপহৃত গার্মেন্ট কর্মী আব্দুস সালামকে। র‌্যাবের ভাষ্য, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যদের পরিচয় দিয়ে টার্গেট ব্যাক্তিকে অপহরণ করে এবং মুক্তিপণ আদায় করে।

র‌্যাব জানিয়েছে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে গতকাল খিলক্ষেত নিকুঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভুয়া র‌্যাব সদস্য মো. হারুন-অর-রশিদ (৪০) মো. সোহেল হাওলাদার (২৮), মো. রবিউল সরদার (৩২), মো. জামাল শেখ (১৯), আবদুল সাত্তার (১৯) এবং মো. আশিককে (২০) গ্রেপ্তার করে এবং অপহৃত ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় আটক আসামিদের কাছ থেকে ৪টি মোবাইল ফোন ও ১টি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে কখনও র‌্যাব, কখনও ডিবি পরিচয়ে টার্গেট ব্যক্তিদের তুলে নিয়ে যায়। এরপর বাসায় আটকে রেখে নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায় করে পরিবারের কাছ থেকে।

র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, গত ৪ এপ্রিল ভিকটিম গার্মেন্টস কর্মী আব্দুছ ছালামকে ৫ থেকে ৬ জন ব্যক্তি নিজেদের র‌্যাব পরিচয় দিয়ে মিরপুরের বাসা থেকে মারধর করতে করতে বের কয়ে নিয়ে আসে। বাসার বাহিরে আগ থেকে রাখা একটি প্রাইভেটকারে তুলে সালামকে বাড্ডা এলাকার দিকে নিয়ে যায়। সংঘবদ্ধ অপহরণকারীরা ভিকটিমকে গাড়িতে তোলার পরপরই তার নিকট ৫০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ভিকটিম টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে অপহরণকারী চক্রের সদস্য হারুনের বাসায় আটকিয়ে রেখে বেধড়ক মারধর শুরু করে। ভিকটিম পরে কোন উপায় না দেখে টাকা দিতে রাজি হয়।

অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা অপহৃত সালামের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে তার (সালামের) মেয়েকে মুক্তিপণের টাকা নিয়ে নিকুঞ্জ এলাকায় আসতে বলে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিলে সালামকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। বাবার মুক্তিপণের জন্য মেয়ে এতো টাকা দিতে পারবে না বলে জানায়। শেষ পর্যন্ত ৫ লক্ষ টাকা দিলে ছেড়ে দেয়ার আশ্বাস দেয় অপহরণকারী চক্র। সালামের মেয়ে এ ঘটনার বিষয়ে র‌্যাবের কাছে অভিযোগ করলে র‌্যাব খোজ খবর নিয়ে জানতে পারে তাদের কোন ইউনিট এ নামে কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করেনি। মূলত ওই চক্রটি ভুয়া র‌্যাব সদস্য বলে নিশ্চিত হয়।

র‌্যাবের বিশেষ ইউনিট অপহৃত সালামের মেয়েকে অপহরণকারীদের সঙ্গে মুক্তিপণের বিষয়ে নিয়মিত কথা বলে যোগাযোগ রাখতে বলে। সালামের মেয়েকে অপহরণকারীরা টাকা নিয়ে তাদের নির্ধারিত জায়গায় যেতে বলে। র‌্যাবও গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে। গতকাল র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর খিলক্ষেত থানা এলাকায় অবস্থান নেয়। নিকুঞ্জ-২ এলাকার রোড নং-১/এ, বাড়ি নং-২১, বিনু জেনারেল স্টোরের সামনে থেকে ভূয়া র‌্যাব সদস্য মো. হারুন-অর-রশিদ, মো. সোহেল হাওলাদার, মো. রবিউল সরদার, মো. জামাল শেখ, আবদুল সাত্তার এবং মো. আশিককে গ্রেপ্তার এবং অপহৃত ভিকটিমকে উদ্ধার করে।

গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা একটি অপহরণকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা পরস্পর যোগসাজশে নিজেদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ডিবি বা র‌্যাব পরিচয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ রাজধানী ঢাকাসহ আশে পাশের এলাকায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন স্থানে ওৎ পেতে থাকে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের উপর হামলা করে ও অস্ত্রের ভয় প্রাণ নাশের হুমকি শারীরিক নির্যাতন ও বিভিন্নভাবে ভয় ভীতি প্রদর্শন করে অপহরণ করে বিপুল পরিমাণ মুক্তিপণ আদায় করে আসছে জানায়।

শুক্রবার, ০৮ এপ্রিল ২০২২ , ২৫ চৈত্র ১৪২৮ ০৬ রমাদ্বান ১৪৪৩

র‌্যাব পরিচয়ে গার্মেন্টসকর্মী অপহরণ, মুক্তিপণ দাবি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

গার্মেন্ট কর্মীকে র‌্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে ৫০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে পরিবারের কাছে। গত ৪ এপ্রিল এ ঘটনায় দিশেহারা হয়ে পড়ে অপহৃত গার্মেন্ট কর্মী আব্দুস সালামের পরিবার। শেষ পর্যন্ত কথিত র‌্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে অপহরণকারী চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। উদ্ধার করা হয়েছে অপহৃত গার্মেন্ট কর্মী আব্দুস সালামকে। র‌্যাবের ভাষ্য, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যদের পরিচয় দিয়ে টার্গেট ব্যাক্তিকে অপহরণ করে এবং মুক্তিপণ আদায় করে।

র‌্যাব জানিয়েছে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে গতকাল খিলক্ষেত নিকুঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভুয়া র‌্যাব সদস্য মো. হারুন-অর-রশিদ (৪০) মো. সোহেল হাওলাদার (২৮), মো. রবিউল সরদার (৩২), মো. জামাল শেখ (১৯), আবদুল সাত্তার (১৯) এবং মো. আশিককে (২০) গ্রেপ্তার করে এবং অপহৃত ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় আটক আসামিদের কাছ থেকে ৪টি মোবাইল ফোন ও ১টি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে কখনও র‌্যাব, কখনও ডিবি পরিচয়ে টার্গেট ব্যক্তিদের তুলে নিয়ে যায়। এরপর বাসায় আটকে রেখে নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায় করে পরিবারের কাছ থেকে।

র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, গত ৪ এপ্রিল ভিকটিম গার্মেন্টস কর্মী আব্দুছ ছালামকে ৫ থেকে ৬ জন ব্যক্তি নিজেদের র‌্যাব পরিচয় দিয়ে মিরপুরের বাসা থেকে মারধর করতে করতে বের কয়ে নিয়ে আসে। বাসার বাহিরে আগ থেকে রাখা একটি প্রাইভেটকারে তুলে সালামকে বাড্ডা এলাকার দিকে নিয়ে যায়। সংঘবদ্ধ অপহরণকারীরা ভিকটিমকে গাড়িতে তোলার পরপরই তার নিকট ৫০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ভিকটিম টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে অপহরণকারী চক্রের সদস্য হারুনের বাসায় আটকিয়ে রেখে বেধড়ক মারধর শুরু করে। ভিকটিম পরে কোন উপায় না দেখে টাকা দিতে রাজি হয়।

অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা অপহৃত সালামের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে তার (সালামের) মেয়েকে মুক্তিপণের টাকা নিয়ে নিকুঞ্জ এলাকায় আসতে বলে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিলে সালামকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। বাবার মুক্তিপণের জন্য মেয়ে এতো টাকা দিতে পারবে না বলে জানায়। শেষ পর্যন্ত ৫ লক্ষ টাকা দিলে ছেড়ে দেয়ার আশ্বাস দেয় অপহরণকারী চক্র। সালামের মেয়ে এ ঘটনার বিষয়ে র‌্যাবের কাছে অভিযোগ করলে র‌্যাব খোজ খবর নিয়ে জানতে পারে তাদের কোন ইউনিট এ নামে কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করেনি। মূলত ওই চক্রটি ভুয়া র‌্যাব সদস্য বলে নিশ্চিত হয়।

র‌্যাবের বিশেষ ইউনিট অপহৃত সালামের মেয়েকে অপহরণকারীদের সঙ্গে মুক্তিপণের বিষয়ে নিয়মিত কথা বলে যোগাযোগ রাখতে বলে। সালামের মেয়েকে অপহরণকারীরা টাকা নিয়ে তাদের নির্ধারিত জায়গায় যেতে বলে। র‌্যাবও গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে। গতকাল র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর খিলক্ষেত থানা এলাকায় অবস্থান নেয়। নিকুঞ্জ-২ এলাকার রোড নং-১/এ, বাড়ি নং-২১, বিনু জেনারেল স্টোরের সামনে থেকে ভূয়া র‌্যাব সদস্য মো. হারুন-অর-রশিদ, মো. সোহেল হাওলাদার, মো. রবিউল সরদার, মো. জামাল শেখ, আবদুল সাত্তার এবং মো. আশিককে গ্রেপ্তার এবং অপহৃত ভিকটিমকে উদ্ধার করে।

গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা একটি অপহরণকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা পরস্পর যোগসাজশে নিজেদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ডিবি বা র‌্যাব পরিচয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ রাজধানী ঢাকাসহ আশে পাশের এলাকায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন স্থানে ওৎ পেতে থাকে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের উপর হামলা করে ও অস্ত্রের ভয় প্রাণ নাশের হুমকি শারীরিক নির্যাতন ও বিভিন্নভাবে ভয় ভীতি প্রদর্শন করে অপহরণ করে বিপুল পরিমাণ মুক্তিপণ আদায় করে আসছে জানায়।