রাশেদকে ফেরাতে জোর প্রচেষ্টা চলছে

আইনমন্ত্রী

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, এই সমস্যা জিইয়ে না রেখে দ্রুত সমাধান করতে হবে। তাই নতুন করে চিঠি পাঠানো হবে। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আনিসুল হক এ কথা বলেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের খুনিদের মধ্যে এএম রাশেদ চৌধুরী একজন। খুনি রাশেদ যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তাকে ফিরিয়ে আনতে কয়েক বছর ধরে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। সরকারের কূটনৈতিক পর্যায়ের ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাওয়া যাবে রাশেদ চৌধুরীকে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরানোর আইনি প্রক্রিয়া চলমান আছে। তাকে ফেরানোর কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, আমাদের আইনি প্রক্রিয়া চলমান আছে। যুক্তরাষ্ট্রে থাকা খুনি রাশেদ চৌধুরীকে নিয়ে আমরা কিছুটা আশাবাদী। কারণ ও (রাশেদ চৌধুরী) যে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশটির নাগরিকত্ব নিয়েছে, সেটির রিভিউ হচ্ছে। বিষয়টি যেহেতু সেদেশের আদালতের, তাই আমরা কোন চাপও দিতে পারছি না।

গত বছরের আগস্ট মাসে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে খুনের দায়ে সর্বোচ্চ আদালত থেকে যারা সাজাপ্রাপ্ত হয়ে পলাতক রয়েছেন, তাদের ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের ব্যাপারে সরকার বদ্ধপরিকর। শুধু সরকার নয় আওয়ামী লীগ যতক্ষণ থাকবে, আমার মনে হয় বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর একজন অনুসারী থাকলেও এই হত্যাকারীদের ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর হবে। খুনিদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলমান। যতই সময় লাগুক না কেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রায় কার্যকর করা হবে। তাদের ধরে আনতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

খুনি রাশেদ চৌধুরী ব্রাজিল থেকে ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। ২০০৪ সালে দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পান তিনি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করে। কিন্তু ফাঁসির আসামি বলে তাকে ফেরত দিতে অনীহা দেখায় যুক্তরাষ্ট্র। রাশেদকে ফেরত দেয়ার জন্য ২০১৮ সালে দু’বার এবং ২০২০ সালে আরও একবার সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে একাধিক বৈঠকে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর দাবি তুলেছিলেন। ২০১৯ সালে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যালিস ওয়েলসের সঙ্গে এক বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে রাশেদ চৌধুরীর বিচারের নথিপত্র চেয়েছে ওয়াশিংটন।

ঢাকার কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে গত বছরের মাঝামাঝিতে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা রাশেদ চৌধুরীকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের বিষয়টি পর্যালোচনার উদ্যোগ নেয় দেশটির বিচার বিভাগ। এর মধ্যেই দেশটির ক্ষমতার পালাবদল হয়ে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। সর্বশেষ গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন। দেশে ফিরে তিনি জানিয়েছেন, রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকারের সঙ্গে আলাপ করেছেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের ১৮ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সে সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পরবর্তীতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে হত্যাকারীদের বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়।

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে গতকাল আনিসুল হক বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এই আইন বাকস্বাধীনতা কিংবা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য করা হয়নি। এটা করা হয়েছে সাইবার নিরাপত্তার জন্য। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্প্রতি বাংলাদেশের বন্ধুত্বের ৫০ বছর পূর্তি হলো। এই সম্পর্ক রক্ষার জন্য আগামীতে দুই দেশের মধ্যকার সমস্যা মিটিয়ে ফেলে নতুন করে বন্ধুত্ব গাঢ় করার পথে হাটবে দুই দেশ।

শুক্রবার, ০৮ এপ্রিল ২০২২ , ২৫ চৈত্র ১৪২৮ ০৬ রমাদ্বান ১৪৪৩

রাশেদকে ফেরাতে জোর প্রচেষ্টা চলছে

আইনমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, এই সমস্যা জিইয়ে না রেখে দ্রুত সমাধান করতে হবে। তাই নতুন করে চিঠি পাঠানো হবে। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আনিসুল হক এ কথা বলেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের খুনিদের মধ্যে এএম রাশেদ চৌধুরী একজন। খুনি রাশেদ যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তাকে ফিরিয়ে আনতে কয়েক বছর ধরে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। সরকারের কূটনৈতিক পর্যায়ের ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাওয়া যাবে রাশেদ চৌধুরীকে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরানোর আইনি প্রক্রিয়া চলমান আছে। তাকে ফেরানোর কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, আমাদের আইনি প্রক্রিয়া চলমান আছে। যুক্তরাষ্ট্রে থাকা খুনি রাশেদ চৌধুরীকে নিয়ে আমরা কিছুটা আশাবাদী। কারণ ও (রাশেদ চৌধুরী) যে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশটির নাগরিকত্ব নিয়েছে, সেটির রিভিউ হচ্ছে। বিষয়টি যেহেতু সেদেশের আদালতের, তাই আমরা কোন চাপও দিতে পারছি না।

গত বছরের আগস্ট মাসে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে খুনের দায়ে সর্বোচ্চ আদালত থেকে যারা সাজাপ্রাপ্ত হয়ে পলাতক রয়েছেন, তাদের ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের ব্যাপারে সরকার বদ্ধপরিকর। শুধু সরকার নয় আওয়ামী লীগ যতক্ষণ থাকবে, আমার মনে হয় বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর একজন অনুসারী থাকলেও এই হত্যাকারীদের ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর হবে। খুনিদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলমান। যতই সময় লাগুক না কেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রায় কার্যকর করা হবে। তাদের ধরে আনতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

খুনি রাশেদ চৌধুরী ব্রাজিল থেকে ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। ২০০৪ সালে দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পান তিনি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করে। কিন্তু ফাঁসির আসামি বলে তাকে ফেরত দিতে অনীহা দেখায় যুক্তরাষ্ট্র। রাশেদকে ফেরত দেয়ার জন্য ২০১৮ সালে দু’বার এবং ২০২০ সালে আরও একবার সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে একাধিক বৈঠকে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর দাবি তুলেছিলেন। ২০১৯ সালে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যালিস ওয়েলসের সঙ্গে এক বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে রাশেদ চৌধুরীর বিচারের নথিপত্র চেয়েছে ওয়াশিংটন।

ঢাকার কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে গত বছরের মাঝামাঝিতে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা রাশেদ চৌধুরীকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের বিষয়টি পর্যালোচনার উদ্যোগ নেয় দেশটির বিচার বিভাগ। এর মধ্যেই দেশটির ক্ষমতার পালাবদল হয়ে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। সর্বশেষ গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন। দেশে ফিরে তিনি জানিয়েছেন, রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকারের সঙ্গে আলাপ করেছেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের ১৮ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সে সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পরবর্তীতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে হত্যাকারীদের বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়।

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে গতকাল আনিসুল হক বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এই আইন বাকস্বাধীনতা কিংবা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য করা হয়নি। এটা করা হয়েছে সাইবার নিরাপত্তার জন্য। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্প্রতি বাংলাদেশের বন্ধুত্বের ৫০ বছর পূর্তি হলো। এই সম্পর্ক রক্ষার জন্য আগামীতে দুই দেশের মধ্যকার সমস্যা মিটিয়ে ফেলে নতুন করে বন্ধুত্ব গাঢ় করার পথে হাটবে দুই দেশ।