দুই বছর নৌকায় বসবাসের পরও ঘরে ফিরে শঙ্কায়

বাংলাদেশের সুন্দরবন উপকূলের দূর্যোগকবলিত মানুষ ২ বছর নদী খালের নৌকায় কাটানোর পর অবশেষে ঘরে ফিরলেও আরও বড় ধরনের দুর্যোগের আঙ্ককায় রয়েছে। এবার কোন দুর্যোগ আঘাত করলে সুন্দরবন ঘেষা এই মানুষ কোথায় আশ্রয় নেবে, কিভাবে তারা বেঁচে থাকবে, তাদের জানমাল কিভাবে রক্ষা হবে তার কোন নিশ্চয়তা মিলছে না। এজন্য তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারের জরুরিভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করা দরকার। সেইসঙ্গে জার্মান সরকারও তাদের ভাগ্যের উন্নয়নে সাহায্য করতে প্রস্তুত।

গতকাল বিকেলে জার্মান সরকারের ক্লাইমেট সেক্রেটারি জেনিফার মর্গেন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম থ্রিয়েস্টারসহ ৫ সদস্যের টিম সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা পদ্মপুকুর ও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের মধ্যবর্তী দুর্যোগকবলিত বন্যতলা এলাকা পরিদর্শনকালে সাংবাদিক ও উপস্থিত সুধীজনদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন। পাঁচ সদস্যের এই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন জেনিফার মর্গেন।

বন্যতলা অঞ্চলে ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষের বসবাস উল্লেখ করে জেনিফার মর্গেন বলেন, তাদের জন্য রয়েছে একটিমাত্র আশ্রয়কেন্দ্র। অথচ প্রয়োজন কমপক্ষে ৩০টি। এখানে বেড়িবাঁধ ভঙ্গুর অবস্থায়। এই বাঁধ ভাঙে আবার মেরামত হয়। আবার দুর্যোগে জলোচ্ছ্বাসে তা ধ্বংস হয়ে যায়। এভাবেই এখানকার মানুষ বারবার বিপদের মুখে পড়ে স্থান ত্যাগে বাধ্য হয়েছে।

কমপক্ষে ২৫ শতাংশ লোক এরই মধ্যে বাস্তুহারা হয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। তারা স্থান নিয়েছে সাতক্ষীরা জেলা শহর অথবা খুলনা এলাকার বস্তিতে। সিডর, আইলা, বুলবুল, আম্পান ও ইয়াশ এর মতো ভয়াবহ দুর্যোগের মুখে বারবার ক্ষতবিক্ষত হওয়া মানুষ হারিয়েছে তাদের কর্মসংস্থান।

বসতবাড়ি না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে কেউ গ্রাম ছেড়েছে আবার কেউ কেউ নৌকায় সংসার পেতেছে। এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রতিবেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। লোনা পানির দাপটে তারা খাবার পানির সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়েছে। গবাদিপশু পালনের সুযোগ নেই। বারবারই দুর্যোগ ও জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাদের।

জেনিফার মর্গেন আরও বলেন, এখানকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। যোগাযোগ বলতে দুর্গম নদী খাল নৌকায় পারাপার। এমন অবস্থায় ঝড় জলোচ্ছ্বাস তাদের জীবন ও জীবিকাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। তিনি আরও বলেন, আমি সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা কর্মকারপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় গৃহহারা মানুষের কাছে গিয়েছি। তারা বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে কাজকর্ম করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। এদেরকেও পুনর্বাসন করা দরকার।

জেনিফার মর্গেন বলেন, জার্মান সরকারের ক্লাইমেট সেক্রেটারি হিসেবে আমি আমার সরকারের মাধ্যমে জলবায়ূ পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতির শিকার এসব দুর্যোগপীড়িত মানুষের সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। একইসঙ্গে বাংলাদেশ সরকারকেও অনুরোধ জানাবো, এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে তাদেরকে বাঁচানোর জন্য সব ব্যবস্থা নিন। কারণ আরও দূর্যোগ ঝুঁকি এলে হয়তো এই এলাকাই মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।

বন্যতলা পরিদর্শনকালে প্রতাপনগরের চেয়ারম্যান হাজী আবু দাউদ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ছিলেন।

image

গতকাল বিকেলে জার্মান ক্লাইমেট সেক্রেটারি জেনিফার মর্গেন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূতসহ পাঁচ সদস্যের কমিটি দুর্যোগকবলিত বন্যতলাবাসীর সঙ্গে বৈঠক করে-সংবাদ

আরও খবর
ডিজিটাল নিরাপত্তা জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর
শহীদ হন বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদুর রউফ
পিএইচডি, এমবিবিএসসহ ১৪৪ বিষয়ে ভুা সার্টিফিকেট প্রদানকারী প্রতারক চক্র
বিএনপি নেতারা ঘরে বসে দুর্ভিক্ষের কাহিনী বানাচ্ছে
র‌্যাব পরিচয়ে গার্মেন্টসকর্মী অপহরণ, মুক্তিপণ দাবি
রাশেদকে ফেরাতে জোর প্রচেষ্টা চলছে
নিজের খাদ্য নিজেদেরই উৎপাদন করতে হবে : কৃষিমন্ত্রী
সিলেটে অনির্দিষ্টকালের জন্য গরু-ছাগলের মাংস বিক্রি বন্ধ
বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে আ’লীগ বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে

শুক্রবার, ০৮ এপ্রিল ২০২২ , ২৫ চৈত্র ১৪২৮ ০৬ রমাদ্বান ১৪৪৩

দুই বছর নৌকায় বসবাসের পরও ঘরে ফিরে শঙ্কায়

প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা

image

গতকাল বিকেলে জার্মান ক্লাইমেট সেক্রেটারি জেনিফার মর্গেন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূতসহ পাঁচ সদস্যের কমিটি দুর্যোগকবলিত বন্যতলাবাসীর সঙ্গে বৈঠক করে-সংবাদ

বাংলাদেশের সুন্দরবন উপকূলের দূর্যোগকবলিত মানুষ ২ বছর নদী খালের নৌকায় কাটানোর পর অবশেষে ঘরে ফিরলেও আরও বড় ধরনের দুর্যোগের আঙ্ককায় রয়েছে। এবার কোন দুর্যোগ আঘাত করলে সুন্দরবন ঘেষা এই মানুষ কোথায় আশ্রয় নেবে, কিভাবে তারা বেঁচে থাকবে, তাদের জানমাল কিভাবে রক্ষা হবে তার কোন নিশ্চয়তা মিলছে না। এজন্য তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারের জরুরিভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করা দরকার। সেইসঙ্গে জার্মান সরকারও তাদের ভাগ্যের উন্নয়নে সাহায্য করতে প্রস্তুত।

গতকাল বিকেলে জার্মান সরকারের ক্লাইমেট সেক্রেটারি জেনিফার মর্গেন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম থ্রিয়েস্টারসহ ৫ সদস্যের টিম সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা পদ্মপুকুর ও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের মধ্যবর্তী দুর্যোগকবলিত বন্যতলা এলাকা পরিদর্শনকালে সাংবাদিক ও উপস্থিত সুধীজনদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন। পাঁচ সদস্যের এই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন জেনিফার মর্গেন।

বন্যতলা অঞ্চলে ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষের বসবাস উল্লেখ করে জেনিফার মর্গেন বলেন, তাদের জন্য রয়েছে একটিমাত্র আশ্রয়কেন্দ্র। অথচ প্রয়োজন কমপক্ষে ৩০টি। এখানে বেড়িবাঁধ ভঙ্গুর অবস্থায়। এই বাঁধ ভাঙে আবার মেরামত হয়। আবার দুর্যোগে জলোচ্ছ্বাসে তা ধ্বংস হয়ে যায়। এভাবেই এখানকার মানুষ বারবার বিপদের মুখে পড়ে স্থান ত্যাগে বাধ্য হয়েছে।

কমপক্ষে ২৫ শতাংশ লোক এরই মধ্যে বাস্তুহারা হয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। তারা স্থান নিয়েছে সাতক্ষীরা জেলা শহর অথবা খুলনা এলাকার বস্তিতে। সিডর, আইলা, বুলবুল, আম্পান ও ইয়াশ এর মতো ভয়াবহ দুর্যোগের মুখে বারবার ক্ষতবিক্ষত হওয়া মানুষ হারিয়েছে তাদের কর্মসংস্থান।

বসতবাড়ি না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে কেউ গ্রাম ছেড়েছে আবার কেউ কেউ নৌকায় সংসার পেতেছে। এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রতিবেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। লোনা পানির দাপটে তারা খাবার পানির সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়েছে। গবাদিপশু পালনের সুযোগ নেই। বারবারই দুর্যোগ ও জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাদের।

জেনিফার মর্গেন আরও বলেন, এখানকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। যোগাযোগ বলতে দুর্গম নদী খাল নৌকায় পারাপার। এমন অবস্থায় ঝড় জলোচ্ছ্বাস তাদের জীবন ও জীবিকাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। তিনি আরও বলেন, আমি সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা কর্মকারপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় গৃহহারা মানুষের কাছে গিয়েছি। তারা বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে কাজকর্ম করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। এদেরকেও পুনর্বাসন করা দরকার।

জেনিফার মর্গেন বলেন, জার্মান সরকারের ক্লাইমেট সেক্রেটারি হিসেবে আমি আমার সরকারের মাধ্যমে জলবায়ূ পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতির শিকার এসব দুর্যোগপীড়িত মানুষের সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। একইসঙ্গে বাংলাদেশ সরকারকেও অনুরোধ জানাবো, এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে তাদেরকে বাঁচানোর জন্য সব ব্যবস্থা নিন। কারণ আরও দূর্যোগ ঝুঁকি এলে হয়তো এই এলাকাই মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।

বন্যতলা পরিদর্শনকালে প্রতাপনগরের চেয়ারম্যান হাজী আবু দাউদ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ছিলেন।