হৃদয় মণ্ডল : মুন্সীগঞ্জের শিক্ষক ‘পরিকল্পনার শিকার’

নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পরিবার

মুন্সীগঞ্জ জেলায় একটি স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বক্তব্য রেকর্ড করেছে ছাত্ররা। সেখানে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় কয়েকজন ছাত্রকে বারবার ধর্মের প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন করতে শোনা যায়। ঐ শিক্ষকের কাছে ধর্ম ও বিজ্ঞান নিয়ে ছাত্রদের যে ধরনের প্রশ্ন ছিল তা আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে করা হয়েছে বলেই অনেকের ধারণা।

আর এর পরই তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ করা হয়। ঘটনা পরম্পরায় স্কুলটির শিক্ষক এবং সেখানকার আইনজীবীদের অনেকেই সন্দেহ করছেন পুরো ঘটনাটি ‘পূর্ব পরিকল্পিত’। ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের পরিবার।

গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, স্কুলসংলগ্ন নিজ কোয়ার্টারের প্রধান ফটক বন্ধ। কথা বলতে চাইলে অসহায় চোখে তাকিয়ে শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের স্ত্রী ববিতা হাওলাদার বলেন, ‘ছেলেটা সারাদিন বাসায় মন খারাপ করে বসে থাকে। স্কুলে গেলে সবাই আসামির ছেলে বলে ডাকে, তাই স্কুল থেকেও বলে দিয়েছে আপাতত না যেতে। বাসায় কোন পুরুষ মানুষ নাই, তাই ঢাকা থেকে ভাই কাজ ফেলে আমাদের এখানে থাকছেন। আমি চাই, আমার স্বামীর সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, এ রকম যেন কোন শিক্ষকের বেলায় না ঘটে।’

ওই ঘটনার পর বাসায় অবস্থান করছে হৃদয় মণ্ডলের পরিবার। বাসা থেকে কেউ বাইরে বের হয় না। কেউ দেখা করতে এলে পরিচয় জেনে তারপর কথা বলেন বলেও জানান ববিতা হাওলাদার।

তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার আগে বাসার দরজা সব সময়ই খোলা রাখতাম। এখন ভয়ে থাকি, কখন আবার কে এসে হামলা করে। তাকে অন্যায়ভাবে পুলিশ নিয়ে গেছে।

এদিকে এ ঘটনার পর থেকেই স্কুলে যেতে পারছে না হৃদয় মণ্ডলের ছেলে ওই স্কুলেরই পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শ্রেষ্ঠ (১১)। ববিতা হাওলাদার বলেন, ‘শ্রেষ্ঠর ছোট বোন সৃষ্টিকে (৫) এবার স্কুলে ভর্তি করানোর কথা ছিল। কিন্তু এ ঘটনার পর তাকে স্কুলে আর ভর্তি করানো হয়নি। আর ছেলেকেও স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। কারণ, কটুবাক্য শুনে সহ্য করতে না পেরে সে সারাদিন মন খারাপ করে থাকে।’

ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, বিদ্যালয়টিতে ২২ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন হৃদয় মণ্ডল। জীবনে এ ধরনের ধর্ম অবমাননার কোন অভিযোগ ওঠেনি।

‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ দেয়ার অভিযোগে গত ২২ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয় মুন্সীগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে। পরে সেদিন রাতেই বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. আসাদ ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও কোরআন অবমাননার’ অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন।

পরদিন পুলিশ আদালতে তোলার পর বিচারক তাকে কারাগারে পাঠান।

ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তারের পর গত সপ্তাহে স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দুই দফায় তার জামিনের আবেদন নাকচ করেছে। এখন ১০ এপ্রিল মামলার শুনানির দিন রয়েছে। সেদিন তার পক্ষে আবার জামিনের আবেদন করা হবে বলে তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

‘পূর্বপরিকল্পিত’ : হৃদয় মণ্ডল গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণীর বাংলা দ্বিতীয়পত্রের ক্লাস নিচ্ছিলেন। ওইদিন তিনি বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক নিয়েও আলোচনা করেন।

আর তখন গোপনে তার বক্তব্যের অডিও ধারণ করা হয়। প্রায় ১৭ মিনিটের ওই অডিও ছড়িয়ে দেয়া হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেখানে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় কয়েকজন ছাত্রকে বারবার ধর্মের প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন করতে শোনা যায়। শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল ধর্মকে একটি ‘বিশ্বাস’ এবং বিজ্ঞানকে ‘প্রমাণভিত্তিক জ্ঞান’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।

ওই অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে পরদিন শিক্ষার্থীরা হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

সেই স্কুলের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, যেভাবে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষক এবং ছাত্রদের কথাবার্তা গোপনে রেকর্ড করে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়, তাতে ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত বলে তাদের মনে হয়েছে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, দশম শ্রেণীর ক্লাসে ছাত্র শিক্ষকের প্রশ্ন উত্তরের ঘটনা ঘটে ২০ মার্চ। কিন্তু তার পরদিন ১০-১২ জন ছাত্র এসে তার কাছে বিজ্ঞান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ করে।

আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ছাত্রদের অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি ওই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ার পাশাপাশি সাময়িকভাবে বরখাস্তও করেন। এরপরও ২২ মার্চ ওই শিক্ষকের বাড়িতে আক্রমণ করা হয়।

মুন্সীগঞ্জের আইনজীবী সমিতির সভাপতিরও ধারণা পেছন থেকে কলকাঠি নেড়ে পরিকল্পনা মাফিক পুরো ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। সমিতির সভাপতি অজয় চক্রবর্তী বলছেন, ‘আসলে পরিকল্পিতভাবে তাকে (শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল) হয়রানি করার জন্য এই কাজ করা হয়েছে।’

তিনি মনে করেন, আগের পরিকল্পনা ছাড়া শিক্ষকের বক্তব্য গোপনে রেকর্ড করা ছাত্রদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। ধর্ম এবং বিজ্ঞান সম্পর্কে ছাত্ররা শিক্ষকের কাছে যে ধরনের প্রশ্ন করেছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে আইনজীবী অজয় চক্রবর্তীর।

‘প্রশ্নগুলোও আগের প্রস্তুতি নিয়ে করা হয়েছে। তারা দেখতে চেয়েছে যে প্রশ্নের জবাব ওই শিক্ষক কীভাবে দেন। সেখানে বিভিন্নভাবে জবাব নিয়ে সেটা দিয়েই উস্কে দিল আরকি’, বলেন মুন্সীগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি।

কী বলছে পুলিশ : পুলিশ বলেছে, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এবং অন্য সবকিছুই তারা তদন্ত করবে। মুন্সীগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘ঘটনায় মামলা হয়েছে। সে মামলার তদন্তে সব বিষয়ই দেখা হবে।’

ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত বলে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে তদন্ত করা হবে কি-না এই প্রশ্নে পুলিশ সুপার জানান, ‘সবই তদন্ত করা হবে’।

পরিবার আতঙ্কে : গ্রেপ্তার শিক্ষকের স্ত্রী ববিতা হালদার বলেছেন, তারা আতঙ্কিত, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ‘ভয়ের মধ্যে আছি। আমরা বাসার ছাদে উঠলেই আশপাশ থেকে অনেকে কটূক্তি করে। আমার ছেলেকেও স্কুলে পাঠাচ্ছি না।’

তবে পুলিশের পক্ষ থেকে শিক্ষকের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা জানানো হয়েছে।

শনিবার, ০৯ এপ্রিল ২০২২ , ২৬ চৈত্র ১৪২৮ ০৭ রমাদ্বান ১৪৪৩

হৃদয় মণ্ডল : মুন্সীগঞ্জের শিক্ষক ‘পরিকল্পনার শিকার’

নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পরিবার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

মুন্সীগঞ্জ জেলায় একটি স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বক্তব্য রেকর্ড করেছে ছাত্ররা। সেখানে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় কয়েকজন ছাত্রকে বারবার ধর্মের প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন করতে শোনা যায়। ঐ শিক্ষকের কাছে ধর্ম ও বিজ্ঞান নিয়ে ছাত্রদের যে ধরনের প্রশ্ন ছিল তা আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে করা হয়েছে বলেই অনেকের ধারণা।

আর এর পরই তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ করা হয়। ঘটনা পরম্পরায় স্কুলটির শিক্ষক এবং সেখানকার আইনজীবীদের অনেকেই সন্দেহ করছেন পুরো ঘটনাটি ‘পূর্ব পরিকল্পিত’। ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের পরিবার।

গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, স্কুলসংলগ্ন নিজ কোয়ার্টারের প্রধান ফটক বন্ধ। কথা বলতে চাইলে অসহায় চোখে তাকিয়ে শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের স্ত্রী ববিতা হাওলাদার বলেন, ‘ছেলেটা সারাদিন বাসায় মন খারাপ করে বসে থাকে। স্কুলে গেলে সবাই আসামির ছেলে বলে ডাকে, তাই স্কুল থেকেও বলে দিয়েছে আপাতত না যেতে। বাসায় কোন পুরুষ মানুষ নাই, তাই ঢাকা থেকে ভাই কাজ ফেলে আমাদের এখানে থাকছেন। আমি চাই, আমার স্বামীর সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, এ রকম যেন কোন শিক্ষকের বেলায় না ঘটে।’

ওই ঘটনার পর বাসায় অবস্থান করছে হৃদয় মণ্ডলের পরিবার। বাসা থেকে কেউ বাইরে বের হয় না। কেউ দেখা করতে এলে পরিচয় জেনে তারপর কথা বলেন বলেও জানান ববিতা হাওলাদার।

তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার আগে বাসার দরজা সব সময়ই খোলা রাখতাম। এখন ভয়ে থাকি, কখন আবার কে এসে হামলা করে। তাকে অন্যায়ভাবে পুলিশ নিয়ে গেছে।

এদিকে এ ঘটনার পর থেকেই স্কুলে যেতে পারছে না হৃদয় মণ্ডলের ছেলে ওই স্কুলেরই পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শ্রেষ্ঠ (১১)। ববিতা হাওলাদার বলেন, ‘শ্রেষ্ঠর ছোট বোন সৃষ্টিকে (৫) এবার স্কুলে ভর্তি করানোর কথা ছিল। কিন্তু এ ঘটনার পর তাকে স্কুলে আর ভর্তি করানো হয়নি। আর ছেলেকেও স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। কারণ, কটুবাক্য শুনে সহ্য করতে না পেরে সে সারাদিন মন খারাপ করে থাকে।’

ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, বিদ্যালয়টিতে ২২ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন হৃদয় মণ্ডল। জীবনে এ ধরনের ধর্ম অবমাননার কোন অভিযোগ ওঠেনি।

‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ দেয়ার অভিযোগে গত ২২ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয় মুন্সীগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে। পরে সেদিন রাতেই বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. আসাদ ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও কোরআন অবমাননার’ অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন।

পরদিন পুলিশ আদালতে তোলার পর বিচারক তাকে কারাগারে পাঠান।

ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তারের পর গত সপ্তাহে স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দুই দফায় তার জামিনের আবেদন নাকচ করেছে। এখন ১০ এপ্রিল মামলার শুনানির দিন রয়েছে। সেদিন তার পক্ষে আবার জামিনের আবেদন করা হবে বলে তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

‘পূর্বপরিকল্পিত’ : হৃদয় মণ্ডল গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণীর বাংলা দ্বিতীয়পত্রের ক্লাস নিচ্ছিলেন। ওইদিন তিনি বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক নিয়েও আলোচনা করেন।

আর তখন গোপনে তার বক্তব্যের অডিও ধারণ করা হয়। প্রায় ১৭ মিনিটের ওই অডিও ছড়িয়ে দেয়া হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেখানে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় কয়েকজন ছাত্রকে বারবার ধর্মের প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন করতে শোনা যায়। শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল ধর্মকে একটি ‘বিশ্বাস’ এবং বিজ্ঞানকে ‘প্রমাণভিত্তিক জ্ঞান’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।

ওই অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে পরদিন শিক্ষার্থীরা হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

সেই স্কুলের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, যেভাবে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষক এবং ছাত্রদের কথাবার্তা গোপনে রেকর্ড করে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়, তাতে ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত বলে তাদের মনে হয়েছে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, দশম শ্রেণীর ক্লাসে ছাত্র শিক্ষকের প্রশ্ন উত্তরের ঘটনা ঘটে ২০ মার্চ। কিন্তু তার পরদিন ১০-১২ জন ছাত্র এসে তার কাছে বিজ্ঞান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ করে।

আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ছাত্রদের অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি ওই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ার পাশাপাশি সাময়িকভাবে বরখাস্তও করেন। এরপরও ২২ মার্চ ওই শিক্ষকের বাড়িতে আক্রমণ করা হয়।

মুন্সীগঞ্জের আইনজীবী সমিতির সভাপতিরও ধারণা পেছন থেকে কলকাঠি নেড়ে পরিকল্পনা মাফিক পুরো ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। সমিতির সভাপতি অজয় চক্রবর্তী বলছেন, ‘আসলে পরিকল্পিতভাবে তাকে (শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল) হয়রানি করার জন্য এই কাজ করা হয়েছে।’

তিনি মনে করেন, আগের পরিকল্পনা ছাড়া শিক্ষকের বক্তব্য গোপনে রেকর্ড করা ছাত্রদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। ধর্ম এবং বিজ্ঞান সম্পর্কে ছাত্ররা শিক্ষকের কাছে যে ধরনের প্রশ্ন করেছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে আইনজীবী অজয় চক্রবর্তীর।

‘প্রশ্নগুলোও আগের প্রস্তুতি নিয়ে করা হয়েছে। তারা দেখতে চেয়েছে যে প্রশ্নের জবাব ওই শিক্ষক কীভাবে দেন। সেখানে বিভিন্নভাবে জবাব নিয়ে সেটা দিয়েই উস্কে দিল আরকি’, বলেন মুন্সীগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি।

কী বলছে পুলিশ : পুলিশ বলেছে, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এবং অন্য সবকিছুই তারা তদন্ত করবে। মুন্সীগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘ঘটনায় মামলা হয়েছে। সে মামলার তদন্তে সব বিষয়ই দেখা হবে।’

ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত বলে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে তদন্ত করা হবে কি-না এই প্রশ্নে পুলিশ সুপার জানান, ‘সবই তদন্ত করা হবে’।

পরিবার আতঙ্কে : গ্রেপ্তার শিক্ষকের স্ত্রী ববিতা হালদার বলেছেন, তারা আতঙ্কিত, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ‘ভয়ের মধ্যে আছি। আমরা বাসার ছাদে উঠলেই আশপাশ থেকে অনেকে কটূক্তি করে। আমার ছেলেকেও স্কুলে পাঠাচ্ছি না।’

তবে পুলিশের পক্ষ থেকে শিক্ষকের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা জানানো হয়েছে।