পাকিস্তানের পথেই হাঁটছে শ্রীলঙ্কা

অনাস্থা প্রস্তাব আনার হুমকি বিরোধীদের

পাকিস্তানের মতো শ্রীলঙ্কা সরকারের বিরুদ্ধেও আনা হতে পারে অনাস্থা প্রস্তাব। গতকাল পার্লামেন্টে শ্রীলঙ্কার চলমান অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বর্তমান সরকারকে তাগিদ দিয়েছে দেশটির প্রধান বিরোধী দল সমাজি জন বলওয়েগায়ার (এসজেবি)। এসজেবির নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা বলেন, সরকার যদি অর্থনৈতিক সংকট নিরসন এবং শাসনের উন্নতি না ঘটায় তাহলে পার্লামেন্টে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হবে।

মূল্যবৃদ্ধির আগুনে জ্বলছে শ্রীলঙ্কা। ঋণ জর্জরিত শ্রীলঙ্কার হাতে আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য ডলার নেই বললেই চলে। ফলে জ্বালানি, বিদ্যুৎ, খাবার এবং ওষুধের সংকট ক্রমাগত

বাড়ছে।

ভয়াবহ খাদ্যসংকট এবং ব্যাংকগুলোতে বৈদেশিক মুদ্রা ফুরিয়ে যাওয়ায় প্রয়োজনীয় খাবার আমদানি করতে না পারায় শ্রীলঙ্কা দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল। এক মাসের বেশি সময় ধরে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে নাগরিকরা। পাঁচ দিন জরুরি অবস্থা এবং দুই দিন কারফিউ জারি করেও বিক্ষোভ থামানো যায়নি।

প্রেসিডেন্ট গোটাবায়ে রাজাপক্ষে হাতে গোনা কয়েকজন মন্ত্রী নিয়ে বর্তমান সরকার চালাচ্ছেন। কারণ, গত সপ্তাহে পুরো মন্ত্রিসভার সদস্যরা একযোগে পদত্যাগ করেন। বিরোধী দলগুলোকে সরকারে যোগ দিতে আহ্বান জানানো হলেও তাতে সাড়া মেলেনি।

ক্ষমতাসীন জোটের ৪১ আইনপ্রণেতা জোট ছেড়ে বেরিয়ে স্বাধীনভাবে কার্যক্রম চালানোর ঘোষণা দেয়ার পরও সরকার দাবি করেছে, পার্লামেন্টে তারা এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ।

সমাজি জন বলওয়েগায়ার (এসজেবি) নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা বলেন, সরকারের অর্থনৈতিক সংকট স্বীকার করা এবং শাসনে উন্নতি ঘটাতে কাজ করা প্রয়োজন। না হলে আমরা সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের দিকে যাবো। শ্রীলঙ্কাকে অবশ্যই ঋণ খেলাফি হওয়া এড়াতে হবে। সরকারকে অবশ্যই ঋণ বাতিলে কাজ করতে হবে এবং ঋণ পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করতে আর্থিক উপদেষ্টা নিয়োগ করতে হবে।’

গতকাল সকালে পার্লামেন্টের সদস্যরা পরস্পরের বিঘœ ঘটানোয় দুইবার অধিবেশন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। সাময়িকভাবে দুই পার্লামেন্ট সদস্যকে বহিষ্কারও করা হয়।

প্রসঙ্গত, অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে গত ২৮ মার্চ ইমরান খান ও তার জোট সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধীদলগুলো। একপর্যায়ে জোট সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এক শরিক বিরোধী শিবিরে যোগ দিলে জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় সরকার। যদিও গত ৩ এপ্রিল পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনীত অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দেন ডেপুটি স্পিকার কাসেম সুরি। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব বাতিল ও পরবর্তীতে পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে পার্লামেন্ট পুনর্বহালেরও নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতিদের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ।

শনিবার, ০৯ এপ্রিল ২০২২ , ২৬ চৈত্র ১৪২৮ ০৭ রমাদ্বান ১৪৪৩

পাকিস্তানের পথেই হাঁটছে শ্রীলঙ্কা

অনাস্থা প্রস্তাব আনার হুমকি বিরোধীদের

সংবাদ ডেস্ক

image

পাকিস্তানের মতো শ্রীলঙ্কা সরকারের বিরুদ্ধেও আনা হতে পারে অনাস্থা প্রস্তাব। গতকাল পার্লামেন্টে শ্রীলঙ্কার চলমান অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বর্তমান সরকারকে তাগিদ দিয়েছে দেশটির প্রধান বিরোধী দল সমাজি জন বলওয়েগায়ার (এসজেবি)। এসজেবির নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা বলেন, সরকার যদি অর্থনৈতিক সংকট নিরসন এবং শাসনের উন্নতি না ঘটায় তাহলে পার্লামেন্টে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হবে।

মূল্যবৃদ্ধির আগুনে জ্বলছে শ্রীলঙ্কা। ঋণ জর্জরিত শ্রীলঙ্কার হাতে আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য ডলার নেই বললেই চলে। ফলে জ্বালানি, বিদ্যুৎ, খাবার এবং ওষুধের সংকট ক্রমাগত

বাড়ছে।

ভয়াবহ খাদ্যসংকট এবং ব্যাংকগুলোতে বৈদেশিক মুদ্রা ফুরিয়ে যাওয়ায় প্রয়োজনীয় খাবার আমদানি করতে না পারায় শ্রীলঙ্কা দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল। এক মাসের বেশি সময় ধরে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে নাগরিকরা। পাঁচ দিন জরুরি অবস্থা এবং দুই দিন কারফিউ জারি করেও বিক্ষোভ থামানো যায়নি।

প্রেসিডেন্ট গোটাবায়ে রাজাপক্ষে হাতে গোনা কয়েকজন মন্ত্রী নিয়ে বর্তমান সরকার চালাচ্ছেন। কারণ, গত সপ্তাহে পুরো মন্ত্রিসভার সদস্যরা একযোগে পদত্যাগ করেন। বিরোধী দলগুলোকে সরকারে যোগ দিতে আহ্বান জানানো হলেও তাতে সাড়া মেলেনি।

ক্ষমতাসীন জোটের ৪১ আইনপ্রণেতা জোট ছেড়ে বেরিয়ে স্বাধীনভাবে কার্যক্রম চালানোর ঘোষণা দেয়ার পরও সরকার দাবি করেছে, পার্লামেন্টে তারা এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ।

সমাজি জন বলওয়েগায়ার (এসজেবি) নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা বলেন, সরকারের অর্থনৈতিক সংকট স্বীকার করা এবং শাসনে উন্নতি ঘটাতে কাজ করা প্রয়োজন। না হলে আমরা সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের দিকে যাবো। শ্রীলঙ্কাকে অবশ্যই ঋণ খেলাফি হওয়া এড়াতে হবে। সরকারকে অবশ্যই ঋণ বাতিলে কাজ করতে হবে এবং ঋণ পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করতে আর্থিক উপদেষ্টা নিয়োগ করতে হবে।’

গতকাল সকালে পার্লামেন্টের সদস্যরা পরস্পরের বিঘœ ঘটানোয় দুইবার অধিবেশন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। সাময়িকভাবে দুই পার্লামেন্ট সদস্যকে বহিষ্কারও করা হয়।

প্রসঙ্গত, অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে গত ২৮ মার্চ ইমরান খান ও তার জোট সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধীদলগুলো। একপর্যায়ে জোট সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এক শরিক বিরোধী শিবিরে যোগ দিলে জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় সরকার। যদিও গত ৩ এপ্রিল পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনীত অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দেন ডেপুটি স্পিকার কাসেম সুরি। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব বাতিল ও পরবর্তীতে পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে পার্লামেন্ট পুনর্বহালেরও নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতিদের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ।