সরকার বিরোধী দলকে পুরোপুরি নির্মূল করতে চায় ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার (আওয়ামী লীগ) বিরোধী দলকে পুরোপুরি নির্মূল করতে কাজ করছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে সরকার বিরোধী দলের নেতাদের অতিদ্রুত সাজা দিতে আলাদা সেল গঠন করেছে।

গতকাল গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সেই ২০১৩ সালের মুগদা থানার একটি মামলা। এটা মিথ্যা, গায়েবি মামলা। এখন একজন মানুষকে একই ঘটনায় ২টা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। মুগদা থানার বিস্ফোরক মামলায় ৩৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। এখানে ৩২ জন খালাস পেয়েছেন আর ৭ জনকে ২ বছর ৩ মাস, ২ বছর ১ মাস এভাবে সাজা দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা শুনেছি, তালিকা তৈরি করেছে সরকার। সেই তালিকা ধরে বিভিন্ন জেলায় গুরুত্বপূর্ণ

নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা আছে, সেগুলো দ্রুত শেষ করার জন্য একটা সেল তৈরি করে দেয়া হয়েছে। এই সেল তৈরি করে দিয়ে অতিদ্রুত মামলাগুলো শেষ করার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার বিরোধী দলকে পুরোপুরি নির্মূল করতে কাজ করছে। ঠিক আজকে ধরেন, ইউক্রেনে রাশিয়া আক্রমণ করার পরে যেভাবে নির্মূল করে দিচ্ছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে একইভাবে ইহুদিদের নির্মূল করেছে জার্মানির হিটলার, পাকিস্তান আমলে আমাদের এই বাংলাদেশে একটা জাতিকে নির্মূল করার জন্য যেমন নির্যাতন-নিপীড়ন-হত্যা সব কিছু চালানো হয়েছিল, পোড়ামাটির একটা অবস্থা তৈরি করা হয়েছিল, আজকে ঠিক একইভাবে বাংলাদেশ থেকে বিরোধী দলকে নির্মূল করার জন্য সেই একই অভিযান চালানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, যখনই বিরোধী দল কর্মসূচি নিয়ে মাঠে এসেছে, তাদের একইভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে, মামলা দেয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে বাম জোট যে কর্মসূচিতে দিয়েছিল, সেখানেও একইভাবে তারা মামলা দিয়েছে, গ্রেপ্তার করেছে। গত ৬ তারিখ ইশরাক, যাকে ঢাকার লোকেরা জনতার মেয়র বলে, তিনি দ্রব্যমূল্যের প্রতিবাদে মতিঝিলে লিফলেট বিতরণ করছিলেন। সেই সময় তাকে বিনা উসকানিতে গ্রেপ্তার করা হয়। সেখানে অনেককে মারধর করা হয়, লাঠিচার্জ করা হয়।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন নাটক করেই যাচ্ছে। সিভিল সোসাইটিকে ডাকছে, সাংবাদিকদের ডাকছে। তাদের ডেকে খুব সুন্দর কথা বলছেন। নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার যিনি, উনি সুন্দর বাংলা বলেন। কথা বলার ভঙ্গিও সুন্দর। আগের ভদ্রলোক যিনি ছিলেন, এ কথাই ভিন্নভাবে বলতেন।

গণমাধ্যমকর্মী আইন প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, আপনারা সাংবাদিকরাও কম ভুক্তভোগী নন। ইতোমধ্যে আপনাদের অনেকেই নিহত হয়েছেন, মারা গেছেন। অনেককে জেলে যেতে হয়েছে সত্য কথা লেখার জন্য। এখানে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করা হয়েছে। এখন গণমাধ্যমকর্মী আইন করতে যাচ্ছে। আমাদের তথ্যমন্ত্রী সাহেব বলছেন এটা নাকি রিভিউ করা হবে।

তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে মামলা, এটা কোন মামলা না, এটার মধ্যে কিছুই নেই। সমস্ত মিথ্যা কথা দিয়ে সাজানো মামলা। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ।

ফখরুল আরও বলেন, এই দেশ কোথায় চলে যাচ্ছে? যারা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী, তারা যে ভাষায় কথা বলেন, এই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা, তাদের দেখে মনে হয় না আমরা কোন সভ্য সমাজে বাস করছি। এ সময় বিএনপির মহানগর দক্ষিণের সদস্য-সচিব রফিকুল আলম মজনু, সদস্য ইশরাক হোসেন ও রিমান্ডে নেয়া নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী প্রমুখ।

শনিবার, ০৯ এপ্রিল ২০২২ , ২৬ চৈত্র ১৪২৮ ০৭ রমাদ্বান ১৪৪৩

সরকার বিরোধী দলকে পুরোপুরি নির্মূল করতে চায় ফখরুল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার (আওয়ামী লীগ) বিরোধী দলকে পুরোপুরি নির্মূল করতে কাজ করছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে সরকার বিরোধী দলের নেতাদের অতিদ্রুত সাজা দিতে আলাদা সেল গঠন করেছে।

গতকাল গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সেই ২০১৩ সালের মুগদা থানার একটি মামলা। এটা মিথ্যা, গায়েবি মামলা। এখন একজন মানুষকে একই ঘটনায় ২টা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। মুগদা থানার বিস্ফোরক মামলায় ৩৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। এখানে ৩২ জন খালাস পেয়েছেন আর ৭ জনকে ২ বছর ৩ মাস, ২ বছর ১ মাস এভাবে সাজা দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা শুনেছি, তালিকা তৈরি করেছে সরকার। সেই তালিকা ধরে বিভিন্ন জেলায় গুরুত্বপূর্ণ

নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা আছে, সেগুলো দ্রুত শেষ করার জন্য একটা সেল তৈরি করে দেয়া হয়েছে। এই সেল তৈরি করে দিয়ে অতিদ্রুত মামলাগুলো শেষ করার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার বিরোধী দলকে পুরোপুরি নির্মূল করতে কাজ করছে। ঠিক আজকে ধরেন, ইউক্রেনে রাশিয়া আক্রমণ করার পরে যেভাবে নির্মূল করে দিচ্ছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে একইভাবে ইহুদিদের নির্মূল করেছে জার্মানির হিটলার, পাকিস্তান আমলে আমাদের এই বাংলাদেশে একটা জাতিকে নির্মূল করার জন্য যেমন নির্যাতন-নিপীড়ন-হত্যা সব কিছু চালানো হয়েছিল, পোড়ামাটির একটা অবস্থা তৈরি করা হয়েছিল, আজকে ঠিক একইভাবে বাংলাদেশ থেকে বিরোধী দলকে নির্মূল করার জন্য সেই একই অভিযান চালানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, যখনই বিরোধী দল কর্মসূচি নিয়ে মাঠে এসেছে, তাদের একইভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে, মামলা দেয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে বাম জোট যে কর্মসূচিতে দিয়েছিল, সেখানেও একইভাবে তারা মামলা দিয়েছে, গ্রেপ্তার করেছে। গত ৬ তারিখ ইশরাক, যাকে ঢাকার লোকেরা জনতার মেয়র বলে, তিনি দ্রব্যমূল্যের প্রতিবাদে মতিঝিলে লিফলেট বিতরণ করছিলেন। সেই সময় তাকে বিনা উসকানিতে গ্রেপ্তার করা হয়। সেখানে অনেককে মারধর করা হয়, লাঠিচার্জ করা হয়।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন নাটক করেই যাচ্ছে। সিভিল সোসাইটিকে ডাকছে, সাংবাদিকদের ডাকছে। তাদের ডেকে খুব সুন্দর কথা বলছেন। নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার যিনি, উনি সুন্দর বাংলা বলেন। কথা বলার ভঙ্গিও সুন্দর। আগের ভদ্রলোক যিনি ছিলেন, এ কথাই ভিন্নভাবে বলতেন।

গণমাধ্যমকর্মী আইন প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, আপনারা সাংবাদিকরাও কম ভুক্তভোগী নন। ইতোমধ্যে আপনাদের অনেকেই নিহত হয়েছেন, মারা গেছেন। অনেককে জেলে যেতে হয়েছে সত্য কথা লেখার জন্য। এখানে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করা হয়েছে। এখন গণমাধ্যমকর্মী আইন করতে যাচ্ছে। আমাদের তথ্যমন্ত্রী সাহেব বলছেন এটা নাকি রিভিউ করা হবে।

তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে মামলা, এটা কোন মামলা না, এটার মধ্যে কিছুই নেই। সমস্ত মিথ্যা কথা দিয়ে সাজানো মামলা। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ।

ফখরুল আরও বলেন, এই দেশ কোথায় চলে যাচ্ছে? যারা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী, তারা যে ভাষায় কথা বলেন, এই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা, তাদের দেখে মনে হয় না আমরা কোন সভ্য সমাজে বাস করছি। এ সময় বিএনপির মহানগর দক্ষিণের সদস্য-সচিব রফিকুল আলম মজনু, সদস্য ইশরাক হোসেন ও রিমান্ডে নেয়া নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী প্রমুখ।