অসময়ে বন্যা : ফসল হারিয়ে দুশ্চিন্তায় তিস্তাপাড়ের কৃষকরা

প্রতিবছর মার্চ ও এপ্রিল মাসজুড়ে তিস্তার নদী হয়ে যায় ধু ধু বালুচর। প্রখর রোদে বালুময় তিস্তা হেঁটে পার হন চরাঞ্চলবাসী। চরের চাষিরা বলছেন, প্রায় ৫০ বছর পর এই প্রথম সেই চিত্র পাল্টে গেছে। তারা জীবনেও চৈত্র মাসে তিস্তায় এরকম পানি দেখেননি।

অসময়ে ভারত গজলডোবা ব্যারাজের গেট খুলে দেয়ায় ও উজানে ভারি বৃষ্টিপাতে তিস্তার পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ডুবে গেছে তিস্তার বুকে উজান ও ভাটিতে কৃষকের লাগানো কয়েক হাজার বিঘা জমির মরিচ-পেঁয়াজ, রসুন, ভুট্টা, গম, পাট, মিষ্টি কুমড়ার খেত। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিস্তাপাড়ের লাখো কৃষক।

এপ্রিল মাসে তিস্তার এমন বন্যায় হতবাক চরাঞ্চলের কৃষক। এ সময় তিস্তার বুকে যে চাষাবাদ হয় তাই দিয়ে তাদের চলে ১২ মাস। অসময়ের এই বন্যায় তিস্তার চরে কৃষকরা নিঃস্ব। বাকি দিনগুলো পরিবার-পরিজন নিয়ে কিভাবে কাটবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাজারও কৃষক। এদিকে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তাপাড়ে দেখা দিয়েছে ভাঙন।

গতকাল বিকেল ৩টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি ছিল ৫১ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার যা বিপদসীমার ১১০ সেন্টিমিটার নিচে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

তিস্তা ব্যারাজ সূত্রে জানা গেছে, ভারত গজলডোবা ব্যারেজের ২১টি গেট খুলে দিয়েছে। পক্ষান্তরে তিস্তা ব্যারাজের ১১টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি ছিল ৫১ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার যা বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হয়। গত ৭ দিন থেকে

ভারতের উজানের প্রচুর পরিমাণ পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি ও ভাঙন দেখা দিয়েছে।

মার্চের শেষ সপ্তাহে তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে মাত্র তিন হাজার কিউসেক পানি ছিল। এক সপ্তাহের ব্যবধানে তা বেড়ে গতকাল দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার কিউসেকে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, তিস্তার পানি কিছুটা কমে গেছে। তিনি আরও জানান, গত ৭ দিনে তিস্তায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার ৫ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা এলাকার পাটচাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিবছর শুকিয়ে যাওয়া তিস্তা নদীতে পাট চাষ করি। এবারও করছি কিন্তু হঠাৎ নদীর পানি বাড়ায় সব ডুবে গেছে।

গড্ডিমারী ইউপির দোয়ানী গ্রামের কৃষক আয়নুল হক বলেন, ৭ দিন ভারত থেকে পানি প্রবেশ করায় এলাকায় অনেক কৃষকের বোরো ধান, পেঁয়াজ, গম খেত পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। চরে আমার দুই বিঘা পেঁয়াজ খেত নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, সরকার যদি আমাদের ক্ষতি পূরণ করে তাহলে একটু উপকৃত হব।

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউপির দোয়ানী গ্রামের কৃষক হবিবর রহমান জানান, তিস্তার বুকে ২৫ বিঘা জমিতে গম লাগিয়েছি তার মধ্যে ১৮ বিঘা আনতে পেরেছি আর বাকিগুলো নদীতে ভেসে গেছে। ১৫ বিঘা পেঁয়াজের মধ্যে ১০ বিঘা জমির পেঁয়াজ নদীতে তলিয়ে গেছে । এদিকে লাগানো ১০ বিঘা বোরো ধান নদীতে তলিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছি। সরকার যেন আমাদের ক্ষতি পূরণ দেয়।

হাতীবান্ধা উপজেলার কৃষি অফিসার ওমর ফারুক জানান, হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তাচর বেষ্টিত এলাকায় তিস্তার পানিতে প্রায় এক হেক্টর জমির পেঁয়াজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যারাজ পয়েন্টে প্রায় ২০ হাজার কিউসেক পানি রয়েছে। পানি বৃদ্ধিতে কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

লালমনিরহাট কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, তিস্তায় পানি বৃদ্ধিতে নদীর বুকে কৃষি জমির বিভিন্ন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে জেলায় কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার তালিকা তৈরি করছে উপজেলা কৃষি অফিস।

image

বন্যায় নষ্ট ফসল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পিতা-পুত্র - সংবাদ

আরও খবর
শক্তিশালী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা না থাকলে মহামারীর প্রভাব বাংলাদেশে ধ্বংসাত্মক হতো : প্রধানমন্ত্রী
টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের দায়িত্ব দেয়া হয়
নির্বাচনে কাউকে আনা, না আনা সরকারের দায়িত্ব না ওবায়দুল কাদের
অটিস্টিক মানুষের সমাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে : মোমেন
শিক্ষার্থী মীম নিহতের ঘটনায় চালক ও সহকর্মী কারাগারে
সরকার বিরোধী দলকে পুরোপুরি নির্মূল করতে চায় ফখরুল
মূল্য কম দেখিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার
দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড
কুমিল্লায় র‌্যাব-মাদক কারবারি গোলাগুলি
তিন দিনের সাজানো ধর্মঘট শেষ

শনিবার, ০৯ এপ্রিল ২০২২ , ২৬ চৈত্র ১৪২৮ ০৭ রমাদ্বান ১৪৪৩

অসময়ে বন্যা : ফসল হারিয়ে দুশ্চিন্তায় তিস্তাপাড়ের কৃষকরা

মনিরুজ্জামান সরকার, লালমনিরহাট

image

বন্যায় নষ্ট ফসল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পিতা-পুত্র - সংবাদ

প্রতিবছর মার্চ ও এপ্রিল মাসজুড়ে তিস্তার নদী হয়ে যায় ধু ধু বালুচর। প্রখর রোদে বালুময় তিস্তা হেঁটে পার হন চরাঞ্চলবাসী। চরের চাষিরা বলছেন, প্রায় ৫০ বছর পর এই প্রথম সেই চিত্র পাল্টে গেছে। তারা জীবনেও চৈত্র মাসে তিস্তায় এরকম পানি দেখেননি।

অসময়ে ভারত গজলডোবা ব্যারাজের গেট খুলে দেয়ায় ও উজানে ভারি বৃষ্টিপাতে তিস্তার পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ডুবে গেছে তিস্তার বুকে উজান ও ভাটিতে কৃষকের লাগানো কয়েক হাজার বিঘা জমির মরিচ-পেঁয়াজ, রসুন, ভুট্টা, গম, পাট, মিষ্টি কুমড়ার খেত। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিস্তাপাড়ের লাখো কৃষক।

এপ্রিল মাসে তিস্তার এমন বন্যায় হতবাক চরাঞ্চলের কৃষক। এ সময় তিস্তার বুকে যে চাষাবাদ হয় তাই দিয়ে তাদের চলে ১২ মাস। অসময়ের এই বন্যায় তিস্তার চরে কৃষকরা নিঃস্ব। বাকি দিনগুলো পরিবার-পরিজন নিয়ে কিভাবে কাটবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাজারও কৃষক। এদিকে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তাপাড়ে দেখা দিয়েছে ভাঙন।

গতকাল বিকেল ৩টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি ছিল ৫১ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার যা বিপদসীমার ১১০ সেন্টিমিটার নিচে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

তিস্তা ব্যারাজ সূত্রে জানা গেছে, ভারত গজলডোবা ব্যারেজের ২১টি গেট খুলে দিয়েছে। পক্ষান্তরে তিস্তা ব্যারাজের ১১টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি ছিল ৫১ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার যা বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হয়। গত ৭ দিন থেকে

ভারতের উজানের প্রচুর পরিমাণ পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি ও ভাঙন দেখা দিয়েছে।

মার্চের শেষ সপ্তাহে তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে মাত্র তিন হাজার কিউসেক পানি ছিল। এক সপ্তাহের ব্যবধানে তা বেড়ে গতকাল দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার কিউসেকে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, তিস্তার পানি কিছুটা কমে গেছে। তিনি আরও জানান, গত ৭ দিনে তিস্তায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার ৫ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা এলাকার পাটচাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিবছর শুকিয়ে যাওয়া তিস্তা নদীতে পাট চাষ করি। এবারও করছি কিন্তু হঠাৎ নদীর পানি বাড়ায় সব ডুবে গেছে।

গড্ডিমারী ইউপির দোয়ানী গ্রামের কৃষক আয়নুল হক বলেন, ৭ দিন ভারত থেকে পানি প্রবেশ করায় এলাকায় অনেক কৃষকের বোরো ধান, পেঁয়াজ, গম খেত পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। চরে আমার দুই বিঘা পেঁয়াজ খেত নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, সরকার যদি আমাদের ক্ষতি পূরণ করে তাহলে একটু উপকৃত হব।

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউপির দোয়ানী গ্রামের কৃষক হবিবর রহমান জানান, তিস্তার বুকে ২৫ বিঘা জমিতে গম লাগিয়েছি তার মধ্যে ১৮ বিঘা আনতে পেরেছি আর বাকিগুলো নদীতে ভেসে গেছে। ১৫ বিঘা পেঁয়াজের মধ্যে ১০ বিঘা জমির পেঁয়াজ নদীতে তলিয়ে গেছে । এদিকে লাগানো ১০ বিঘা বোরো ধান নদীতে তলিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছি। সরকার যেন আমাদের ক্ষতি পূরণ দেয়।

হাতীবান্ধা উপজেলার কৃষি অফিসার ওমর ফারুক জানান, হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তাচর বেষ্টিত এলাকায় তিস্তার পানিতে প্রায় এক হেক্টর জমির পেঁয়াজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যারাজ পয়েন্টে প্রায় ২০ হাজার কিউসেক পানি রয়েছে। পানি বৃদ্ধিতে কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

লালমনিরহাট কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, তিস্তায় পানি বৃদ্ধিতে নদীর বুকে কৃষি জমির বিভিন্ন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে জেলায় কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার তালিকা তৈরি করছে উপজেলা কৃষি অফিস।