উপকূলের পতিত জমিতে মুগডালের চাষ

এম জি নিয়োগী

দেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলের ৪ লাখ ৩৯ হাজার হেক্টর জমি শুষ্ক মৌসুমে আমন ধান কাটার পরে অনাবাদি থাকছে। অর্থাৎ ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে আমন ধান কাটার পর এই বিশাল পরিমাণ জমি ৬-৭ মাসেরও বেশি সময় পতিত থাকে। মূলত শুষ্ক মৌসুমে ক্রমবর্ধমান লবণাক্ততা, বেশকিছু অঞ্চলে পানি নেমে যেতে না পারার কারণে জলাবদ্ধতা এবং সেচযোগ্য পানির অভাবের কারণেই এসব জমি পতিত থাকছে।

শুষ্ক মৌসুমে এ লবণাক্ত পতিত জমিতে গম ও ডালজাতীয় ফসল ফলানোর লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশ যৌথ প্রকল্পের আওতায় গত ২০১৭ সন থেকে উপকূলের দুর্গম অঞ্চলে গবেষণা করে আসছে। অস্ট্রেলিয়ার এসিআইএআর (Australian Centre for International Agricultural Research) এবং বাংলাদেশের কেজিএফের (Krishi Gobeshona Foundation) অর্থায়নে অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া, সিএসআইআরও এবং বাংলাদেশের বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পোভার্টি ইরাডিকেশন প্রোগ্রাম এ যৌথ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি মুগ-৬ নিয়ে কৃষকের জমিতে গবেষণা করা হয়েছিল। দেখা গেছে, বীজ বপণের মাত্র ৭০-৭৫ দিনের মধ্যেই প্রথমবার এই জাতের ফসল তোলা যায়। ৭০-৭৫ দিনের মধ্যেই পাকে বিধায় ঝড়বৃষ্টির ঝুঁকিও এ জাতের ফসলে কম থাকে। এখানে উল্লেখ্য যে, গত ২০২০ সনে ২০ মে আম্পান ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বেই কৃষক আগাম বপনকৃত অর্থাৎ জানুয়ারিতে প্রথম দিকে মুগডালের বীজ বপনের কারণে বারি মুগ-৬ জাতের মুগডাল তিনবার তুলতে পেরেছিল।

গবেষনায় প্রাপ্ত উপাত্তে দেখা যায়, পাঁচটি বিষয় মাথায় রেখে মুগডাল চাষাবাদ করলে কৃষক উপকূলের ঝড়বৃষ্টি থেকে মুগ ফসলকে রক্ষা করতে পারবে এবং ভালো ফলন নিশ্চিত হবে।

প্রথমত, মুগডালের জমিতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে। মুগডালের জমিতে ভারী বৃষ্টি হলে, বৃষ্টির পানি যেন তাড়াতাড়ি বের হয়ে যেতে পারে, সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। যেখানে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই, সেখানে মুগডাল চাষাবাদ করা ঠিক হবে না।

দ্বিতীয়ত, জানুয়ারিতে মুগডালের বীজ বপন করতে হবে। সম্ভব হলে জানুয়ারির প্রথম দিকে বারি মুগ-৬ বা বিনামুগ-৮ বা বিইউ মুগ-৫ এর মতো স্বল্পমেয়াদি জাতের বীজ বপন করতে হবে। লবণাক্ত জমির জন্য বিঘাপ্রতি (৩৩ শতক) ৫০০ গ্রাম বীজ বেশি বপন করতে হবে। অর্থাৎ বিঘাপ্রতি ২.৫ কেজি বীজের পরিবর্তে ৩ কেজি বীজ বপন করতে হবে।

তৃতীয়ত, আগাছা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রথম দিকেই আগাছা পরিষ্কার করা দরকার। এজন্য লাইনে বীজ বপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চতুর্থত, কৃষক সাধারণত মুগডালের জমিতে কোন প্রকার সার প্রয়োগ করে না। শেষ চাষের সময় বিঘাপ্রতি (৩৩ শতক) ৪-৫ কেজি ইউরিয়া, ১০-১২ কেজি টিএসপি, ৪-৫ কেজি পটাশ, ৮-১০ জিপসাম এবং ১-১.৫ কেজি বোরন সার ছিটিয়ে দিলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে।

পঞ্চমত, মুগ গাছে ও পডে পোকা-মাকড়ের উপদ্রব হয়। অবশ্যই যথাসময়ে পোকামাকড় দমন করতে হবে।

উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তির বদৌলতে কৃষক সামনের শুষ্ক মৌসুমেই উপকূলের বিস্তীর্ণ পতিত জমিতে চাষাবাদ করে উচ্চ মূল্যমানসমৃদ্ধ ফসল ঘরে তুলতে পারবে।

সাধারণত, ডিসেম্বরে আমন ধান কাটার পর জানুয়ারিতে কোন ফসল (শর্ষে, গম, আলু ইত্যাদি) চাষাবাদ করার সময় থাকে না। দক্ষিণাঞ্চলে মুগডাল চাষের উপযুক্ত সময় হলো জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস। তাই অতি সহজেই কৃষক আমন ধান কাটার পর পতিত জমিতে মুগডাল চাষাবাদ করতে পারেন।

মুগডাল অত্যন্ত কম সময়ের ফসল। মাত্র ৭০-৭৫ দিনে মুগ ফসলের ৫০ ভাগেরও বেশি ফসল ঘরে তোলা সম্ভব। এছাড়া মুগ ফসল চাষাবাদে সাধারণত, সেচের প্রয়োজন হয় না। জানুয়ারিতে মুগ বীজ বপন করলে জমিতে যে আদ্রতা থাকে, তা দিয়েই মুগ ফসল বেড়ে উঠতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে গত ১০ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, প্রতি বছরেই মার্চ-এপ্রিলে কোন না কোন সময়ে বৃষ্টি হচ্ছে, যা মুগ ফসলের জন্য ইতিবাচক। তবে মে মাসের অতিরিক্ত বৃষ্টি মুগ ফসলকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আর সে কারণেই মুগ ফসল জানুয়ারিতে বপন করলে মে মাসের আগেই মুগ ফসল তোলা যায় এবং ভালো ফলন নিশ্চিত করা যায়।

মুগ গাছের শিকড়ে এক ধরনের গুটি বা নডুউলের সৃষ্টি হয়, যা জমিকে উর্বর করে। মুগ গাছ থেকে মুগের ছেই বা পড (ফল) তোলার পর সম্পূর্ণ গাছকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিলে জমিতে তা পচে জৈব সার তৈরি হবে এবং জমিকে উর্বর করবে। এতে জমির লবণাক্ততাও কমে যাবে।

প্রতি কেজি মুগডালের বাজারমূল্য ১৫০-১৭০ টাকা, যা অন্য যে কোন ফসলের বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। তাই, মুগডাল চাষ করে কৃষক একদিকে যেমন পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মিটাতে পারবে, অন্যদিকে বাজারে বিক্রি করে আর্থিক দিক দিয়ে লাভবান হতে পারবেন।

মুগডাল চাষাবাদে খরচ অনেক কম। সিডার মেশিন দিয়ে চাষাবাদ করলে খরচ আরও কমে যায়। মেশিন দিয়ে ১ বিঘা জমিতে ১ ঘণ্টায় চাষসহ বীজ বোনা যায়। এতে খরচ মাত্র ৫০০ টাকা। ১ বিঘা জমিতে মেশিন দিয়ে চাষাবাদ করলে মুগ ফসলের মোট উৎপাদন খরচ হবে ২,৫০০ টাকা। এর থেকে ২০০ কেজি মুগডাল পাওয়া যাবে, যার বাজারমূল্য ১৫ হাজার টাকা।

সরকারকে মুগডাল চাষাবাদ সম্প্রসারণে এগিয়ে আসতে হবে। মুগডাল উৎপাদনের পাশপাশি উপকূলের গরিব কৃষক পরিবারের সদস্যরা যথেষ্ট পরিমাণ ডাল খেতে পারবেন। দেহে পুষ্টির চাহিদা মিটাতে পারবেন। বাজারে ডাল বিক্রি করে লাভবান হতে পারবেন।

বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ রাষ্ট্র। বিশাল জনগোষ্ঠীর এই দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের কোথাও যেন এক ইঞ্চি পরিমাণ জমি অনাবাদি না থাকে, সে ব্যাপারে দেশের আপামর জনসাধারণ বিশেষ করে কৃষক সমাজ এবং রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগগুলোকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। উপকূল অঞ্চলে উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মূল ভূমিকা পালন করতে পারে।

সরকারের অন্যান্য সংস্থা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যারা কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত, তারাও এই মহতী উদ্যোগ বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে পারে। উপকূলের পতিত জমিতে উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমেই প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিকে আবাদের আওতায় আনা সম্ভব হবে এবং দেশকে ক্ষুধামুক্ত ও পুষ্টিসমৃদ্ধ করতে ভূমিকা রাখবে।

[লেখক : স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২১ পদকপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী; ডেপুটি প্রজেক্ট লিডার, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া]

শনিবার, ০৯ এপ্রিল ২০২২ , ২৬ চৈত্র ১৪২৮ ০৭ রমাদ্বান ১৪৪৩

উপকূলের পতিত জমিতে মুগডালের চাষ

এম জি নিয়োগী

দেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলের ৪ লাখ ৩৯ হাজার হেক্টর জমি শুষ্ক মৌসুমে আমন ধান কাটার পরে অনাবাদি থাকছে। অর্থাৎ ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে আমন ধান কাটার পর এই বিশাল পরিমাণ জমি ৬-৭ মাসেরও বেশি সময় পতিত থাকে। মূলত শুষ্ক মৌসুমে ক্রমবর্ধমান লবণাক্ততা, বেশকিছু অঞ্চলে পানি নেমে যেতে না পারার কারণে জলাবদ্ধতা এবং সেচযোগ্য পানির অভাবের কারণেই এসব জমি পতিত থাকছে।

শুষ্ক মৌসুমে এ লবণাক্ত পতিত জমিতে গম ও ডালজাতীয় ফসল ফলানোর লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশ যৌথ প্রকল্পের আওতায় গত ২০১৭ সন থেকে উপকূলের দুর্গম অঞ্চলে গবেষণা করে আসছে। অস্ট্রেলিয়ার এসিআইএআর (Australian Centre for International Agricultural Research) এবং বাংলাদেশের কেজিএফের (Krishi Gobeshona Foundation) অর্থায়নে অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া, সিএসআইআরও এবং বাংলাদেশের বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পোভার্টি ইরাডিকেশন প্রোগ্রাম এ যৌথ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি মুগ-৬ নিয়ে কৃষকের জমিতে গবেষণা করা হয়েছিল। দেখা গেছে, বীজ বপণের মাত্র ৭০-৭৫ দিনের মধ্যেই প্রথমবার এই জাতের ফসল তোলা যায়। ৭০-৭৫ দিনের মধ্যেই পাকে বিধায় ঝড়বৃষ্টির ঝুঁকিও এ জাতের ফসলে কম থাকে। এখানে উল্লেখ্য যে, গত ২০২০ সনে ২০ মে আম্পান ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বেই কৃষক আগাম বপনকৃত অর্থাৎ জানুয়ারিতে প্রথম দিকে মুগডালের বীজ বপনের কারণে বারি মুগ-৬ জাতের মুগডাল তিনবার তুলতে পেরেছিল।

গবেষনায় প্রাপ্ত উপাত্তে দেখা যায়, পাঁচটি বিষয় মাথায় রেখে মুগডাল চাষাবাদ করলে কৃষক উপকূলের ঝড়বৃষ্টি থেকে মুগ ফসলকে রক্ষা করতে পারবে এবং ভালো ফলন নিশ্চিত হবে।

প্রথমত, মুগডালের জমিতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে। মুগডালের জমিতে ভারী বৃষ্টি হলে, বৃষ্টির পানি যেন তাড়াতাড়ি বের হয়ে যেতে পারে, সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। যেখানে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই, সেখানে মুগডাল চাষাবাদ করা ঠিক হবে না।

দ্বিতীয়ত, জানুয়ারিতে মুগডালের বীজ বপন করতে হবে। সম্ভব হলে জানুয়ারির প্রথম দিকে বারি মুগ-৬ বা বিনামুগ-৮ বা বিইউ মুগ-৫ এর মতো স্বল্পমেয়াদি জাতের বীজ বপন করতে হবে। লবণাক্ত জমির জন্য বিঘাপ্রতি (৩৩ শতক) ৫০০ গ্রাম বীজ বেশি বপন করতে হবে। অর্থাৎ বিঘাপ্রতি ২.৫ কেজি বীজের পরিবর্তে ৩ কেজি বীজ বপন করতে হবে।

তৃতীয়ত, আগাছা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রথম দিকেই আগাছা পরিষ্কার করা দরকার। এজন্য লাইনে বীজ বপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চতুর্থত, কৃষক সাধারণত মুগডালের জমিতে কোন প্রকার সার প্রয়োগ করে না। শেষ চাষের সময় বিঘাপ্রতি (৩৩ শতক) ৪-৫ কেজি ইউরিয়া, ১০-১২ কেজি টিএসপি, ৪-৫ কেজি পটাশ, ৮-১০ জিপসাম এবং ১-১.৫ কেজি বোরন সার ছিটিয়ে দিলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে।

পঞ্চমত, মুগ গাছে ও পডে পোকা-মাকড়ের উপদ্রব হয়। অবশ্যই যথাসময়ে পোকামাকড় দমন করতে হবে।

উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তির বদৌলতে কৃষক সামনের শুষ্ক মৌসুমেই উপকূলের বিস্তীর্ণ পতিত জমিতে চাষাবাদ করে উচ্চ মূল্যমানসমৃদ্ধ ফসল ঘরে তুলতে পারবে।

সাধারণত, ডিসেম্বরে আমন ধান কাটার পর জানুয়ারিতে কোন ফসল (শর্ষে, গম, আলু ইত্যাদি) চাষাবাদ করার সময় থাকে না। দক্ষিণাঞ্চলে মুগডাল চাষের উপযুক্ত সময় হলো জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস। তাই অতি সহজেই কৃষক আমন ধান কাটার পর পতিত জমিতে মুগডাল চাষাবাদ করতে পারেন।

মুগডাল অত্যন্ত কম সময়ের ফসল। মাত্র ৭০-৭৫ দিনে মুগ ফসলের ৫০ ভাগেরও বেশি ফসল ঘরে তোলা সম্ভব। এছাড়া মুগ ফসল চাষাবাদে সাধারণত, সেচের প্রয়োজন হয় না। জানুয়ারিতে মুগ বীজ বপন করলে জমিতে যে আদ্রতা থাকে, তা দিয়েই মুগ ফসল বেড়ে উঠতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে গত ১০ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, প্রতি বছরেই মার্চ-এপ্রিলে কোন না কোন সময়ে বৃষ্টি হচ্ছে, যা মুগ ফসলের জন্য ইতিবাচক। তবে মে মাসের অতিরিক্ত বৃষ্টি মুগ ফসলকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আর সে কারণেই মুগ ফসল জানুয়ারিতে বপন করলে মে মাসের আগেই মুগ ফসল তোলা যায় এবং ভালো ফলন নিশ্চিত করা যায়।

মুগ গাছের শিকড়ে এক ধরনের গুটি বা নডুউলের সৃষ্টি হয়, যা জমিকে উর্বর করে। মুগ গাছ থেকে মুগের ছেই বা পড (ফল) তোলার পর সম্পূর্ণ গাছকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিলে জমিতে তা পচে জৈব সার তৈরি হবে এবং জমিকে উর্বর করবে। এতে জমির লবণাক্ততাও কমে যাবে।

প্রতি কেজি মুগডালের বাজারমূল্য ১৫০-১৭০ টাকা, যা অন্য যে কোন ফসলের বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। তাই, মুগডাল চাষ করে কৃষক একদিকে যেমন পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মিটাতে পারবে, অন্যদিকে বাজারে বিক্রি করে আর্থিক দিক দিয়ে লাভবান হতে পারবেন।

মুগডাল চাষাবাদে খরচ অনেক কম। সিডার মেশিন দিয়ে চাষাবাদ করলে খরচ আরও কমে যায়। মেশিন দিয়ে ১ বিঘা জমিতে ১ ঘণ্টায় চাষসহ বীজ বোনা যায়। এতে খরচ মাত্র ৫০০ টাকা। ১ বিঘা জমিতে মেশিন দিয়ে চাষাবাদ করলে মুগ ফসলের মোট উৎপাদন খরচ হবে ২,৫০০ টাকা। এর থেকে ২০০ কেজি মুগডাল পাওয়া যাবে, যার বাজারমূল্য ১৫ হাজার টাকা।

সরকারকে মুগডাল চাষাবাদ সম্প্রসারণে এগিয়ে আসতে হবে। মুগডাল উৎপাদনের পাশপাশি উপকূলের গরিব কৃষক পরিবারের সদস্যরা যথেষ্ট পরিমাণ ডাল খেতে পারবেন। দেহে পুষ্টির চাহিদা মিটাতে পারবেন। বাজারে ডাল বিক্রি করে লাভবান হতে পারবেন।

বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ রাষ্ট্র। বিশাল জনগোষ্ঠীর এই দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের কোথাও যেন এক ইঞ্চি পরিমাণ জমি অনাবাদি না থাকে, সে ব্যাপারে দেশের আপামর জনসাধারণ বিশেষ করে কৃষক সমাজ এবং রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগগুলোকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। উপকূল অঞ্চলে উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মূল ভূমিকা পালন করতে পারে।

সরকারের অন্যান্য সংস্থা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যারা কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত, তারাও এই মহতী উদ্যোগ বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে পারে। উপকূলের পতিত জমিতে উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমেই প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিকে আবাদের আওতায় আনা সম্ভব হবে এবং দেশকে ক্ষুধামুক্ত ও পুষ্টিসমৃদ্ধ করতে ভূমিকা রাখবে।

[লেখক : স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২১ পদকপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী; ডেপুটি প্রজেক্ট লিডার, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া]