বৈদেশিক বিনিয়োগের গুরুত্ব

আর কে চৌধুরী

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অন্যতম শর্ত বিনিয়োগ। আধুনিক বিশ্বে কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৈদেশিক বিনিয়োগের গুরুত্ব অপরিসীম। নিজেদের দেশের বিনিয়োগের পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ উন্নয়নের নেপথ্য শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। নতুন নতুন বিনিয়োগ বিকাশমান অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

সম্প্রতি রাজধানীতে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি আয়োজিত ‘পরবর্তী উন্নয়ন যাত্রায় বাংলাদেশ জাপানের অংশীদারিত্ব’ শীর্ষক সংলাপে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেছেন, ৬৮ শতাংশ জাপানি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসা বাড়াতে চায়। জাপান বাংলাদেশে চলমান বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখতে চায়। এ জন্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ অথবা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি বা পিটিএ সম্পাদন এবং উভয় দেশের বাণিজ্য-বিনিয়োগ বাড়াতে একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী জাপান স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। এলডিসি থেকে বের হওয়ার পরও বাংলাদেশকে দেয়া বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখার চিন্তা করছে তারা। মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পের অবকাঠামো উন্নয়নে তারা ভূমিকা রাখছে।

অন্যদিকে সৌদি আরবের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ নিয়ে বেশ আগ্রহী বলে জানিয়েছেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ। গত বুধবার ঢাকায় একটি হোটেলে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে যদি সৌদি সরকার বা সৌদি কোম্পানিগুলো আসতে চায়, তাদের সব ধরনের সুবিধা দেয়া হবে। এরই মধ্যে ২০টি সৌদি কম্পানি আগ্রহ দেখিয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। বিশ্ব বাংলাদেশকে চিনেছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে আমাদের উত্তরণ ঘটেছে। ২০৪১ সালে আমরা উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। এই অবস্থায় অর্থনীতির স্বাভাবিক গতি ধরে রাখতে এখন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সব সমন্বয়হীনতা ও আমলান্ত্রিক জটিলতা দূর করতে হবে। পরিবেশ সৃষ্টি করে আস্থা অর্জন করতে হবে।

আমাদের কর্মক্ষম জনশক্তির সংখ্যা বিপুল এবং শিক্ষার দ্রুত প্রসার ঘটছে। তদুপরি রয়েছে সরকারের বিনিয়োগ সহায়ক নীতি। সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুৎ, সড়ক-রেল, বন্দর প্রভৃতি অবকাঠামোর অগ্রগতি হয়েছে। একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, এসব খাতের উন্নয়নেও চাই বিনিয়োগ।

সরকারের কাজ ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করে দেয়া এবং সে জন্যই কাজ চলছে। আশা করব, সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান এ বার্তার গুরুত্ব উপলব্ধি করবে এবং নিজ নিজ করণীয় সম্পাদনে উদ্যোগী হবে। এটা মনে রাখতে হবে, দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা কাক্সিক্ষত পরিবেশ পেলেই শুধু আমাদের উন্নয়নে মূলধন খাটাতে উৎসাহী হবে।

[লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক]

শনিবার, ০৯ এপ্রিল ২০২২ , ২৬ চৈত্র ১৪২৮ ০৭ রমাদ্বান ১৪৪৩

বৈদেশিক বিনিয়োগের গুরুত্ব

আর কে চৌধুরী

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অন্যতম শর্ত বিনিয়োগ। আধুনিক বিশ্বে কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৈদেশিক বিনিয়োগের গুরুত্ব অপরিসীম। নিজেদের দেশের বিনিয়োগের পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ উন্নয়নের নেপথ্য শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। নতুন নতুন বিনিয়োগ বিকাশমান অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

সম্প্রতি রাজধানীতে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি আয়োজিত ‘পরবর্তী উন্নয়ন যাত্রায় বাংলাদেশ জাপানের অংশীদারিত্ব’ শীর্ষক সংলাপে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেছেন, ৬৮ শতাংশ জাপানি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসা বাড়াতে চায়। জাপান বাংলাদেশে চলমান বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখতে চায়। এ জন্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ অথবা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি বা পিটিএ সম্পাদন এবং উভয় দেশের বাণিজ্য-বিনিয়োগ বাড়াতে একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী জাপান স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। এলডিসি থেকে বের হওয়ার পরও বাংলাদেশকে দেয়া বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখার চিন্তা করছে তারা। মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পের অবকাঠামো উন্নয়নে তারা ভূমিকা রাখছে।

অন্যদিকে সৌদি আরবের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ নিয়ে বেশ আগ্রহী বলে জানিয়েছেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ। গত বুধবার ঢাকায় একটি হোটেলে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে যদি সৌদি সরকার বা সৌদি কোম্পানিগুলো আসতে চায়, তাদের সব ধরনের সুবিধা দেয়া হবে। এরই মধ্যে ২০টি সৌদি কম্পানি আগ্রহ দেখিয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। বিশ্ব বাংলাদেশকে চিনেছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে আমাদের উত্তরণ ঘটেছে। ২০৪১ সালে আমরা উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। এই অবস্থায় অর্থনীতির স্বাভাবিক গতি ধরে রাখতে এখন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সব সমন্বয়হীনতা ও আমলান্ত্রিক জটিলতা দূর করতে হবে। পরিবেশ সৃষ্টি করে আস্থা অর্জন করতে হবে।

আমাদের কর্মক্ষম জনশক্তির সংখ্যা বিপুল এবং শিক্ষার দ্রুত প্রসার ঘটছে। তদুপরি রয়েছে সরকারের বিনিয়োগ সহায়ক নীতি। সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুৎ, সড়ক-রেল, বন্দর প্রভৃতি অবকাঠামোর অগ্রগতি হয়েছে। একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, এসব খাতের উন্নয়নেও চাই বিনিয়োগ।

সরকারের কাজ ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করে দেয়া এবং সে জন্যই কাজ চলছে। আশা করব, সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান এ বার্তার গুরুত্ব উপলব্ধি করবে এবং নিজ নিজ করণীয় সম্পাদনে উদ্যোগী হবে। এটা মনে রাখতে হবে, দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা কাক্সিক্ষত পরিবেশ পেলেই শুধু আমাদের উন্নয়নে মূলধন খাটাতে উৎসাহী হবে।

[লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক]