নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরীতে ফসল রক্ষায় বাঁধ মেরামত করছেন কৃষকরা। কৃষকরা স্বেচ্ছশ্রমে পঞ্চম দিনের মতো বাঁধ মেরামত চালিয়ে যাচ্ছেন। বাঁধে বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দেয়ায় আতঙ্কে কাঁচা ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকেরা।
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে বাঁধের জায়গাটি বিলের গভীরতায় পড়ার কারণে এমন ফাটল দেখা দিচ্ছে। স্থানীয় পিআইসি প্রধান উপজেলা প্রশাসন বলছেন প্রতিবারই এই বাঁধ ভেঙ্গেই হাওরে পানি ঢুকে। তবে বাঁধ নির্মাণ কাজে কৃষকদের করা নানা অনিয়মের অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখার আশ^াস দিয়েছেন খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম। জানা গেছে, জেলার দ্বীপ উপজেলা খালিয়াজুরীর প্রায় সকলেই কৃষক। তাদের একমাত্র সম্বল এই বোরো ধান এবং মাছ। এগুলোর ওপরই নির্ভরশীল তারা। প্রতিবছর তাদের একমাত্র ফসল রোপণের পূর্বে থেকেই সরকার বেরিবাঁধের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। আর এগুলোর মনিটরিং করে স্থানীয় প্রশাসনসহ সরকার দলীয় নেতৃবৃন্দ। বরাদ্দ নিয়ে পিআইসির মাধ্যমে কাজ করা হয়। কিন্তু কাজ নিয়ে নানা অভিযোগের সীমা থাকে না। প্রতিবছর পাহাড়ি ঢল বা আকস্মিক বন্যার ভয়ে আতঙ্কে থাকেন তারা। চোখের সামনে কষ্টের ফসল তলিয়ে গেলে নয়নভাগা ছাড়া তাদের আর উপায় থাকে না। এমতাবস্থায় বাঁধ নির্মাণে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলছেন কৃষকরা। হাওরের ধান এখনো পুরো দমে পাকতে আরো ১৫ থেকে ২০ দিনের মতো সময় লাগলেও ভারতের পাহাড়ি ঢল যেন থামছেই না। পানির চাপে সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়েছে কীর্ত্তণখোলার ৭ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধের বিভিন্ন অংশ। গত পাঁচদিন ধরে টানা বাঁধ মেরামতে দিন কাটছে স্থানীয় গ্রামবাসী ও কৃষকদের। নাওয়া খাওয়া ভুলে বাড়ি ঘর রেখে তারা হাওরেই থাকছেন বাঁধ পাহাড়ায়। তবে তাদের সাথে রয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ স্থানীয় প্রশাসনও। স্বেচ্ছাশ্রমে মাটি কেটে বাঁশ চাটাই দিয়ে কোন রকমে ফাটল বন্ধ করতে প্রাণপন চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন তারা। তবে এরই মধ্যে বাঁধ ভাঙ্গার আতঙ্কে কাঁচা ধানই কাটছেন অনেক কৃষক। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, প্রতিদিন রাত পর্যন্ত মেরামত শেষে হলেও পরদিন আবারও ফাটল হচ্ছে। তবে বৃহস্পতিবার সকালে ধনু নদের পানি কমতে শুরু করায় কৃষকদের দুশ্চিন্তা কিছুটা কমছে। বর্তমানে পনি কমে বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রভাহিত হচ্ছে। এভাবে কমতে থাকলে কৃষকের স্বপ্নের ফসল তোলতে পারবেন বলেও আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, খালিয়াজুরীতে ৮৮টি পিআইসির মাধ্যমে প্রায় ৮১টি কিলোমিটার বাঁধের জন্য মোট বাজেট ছিল ১৬ কোটি টাকা। এই কীর্ত্তণখোলাতে দুইটি ফোল্ডারে চারটি পিআইসির মাধ্যমে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।
এদিকে খালিয়াজুরী পিআইসি প্রধান উপজেলা নির্বাহী অফিসার এইচ এম আরিফুল ইসলাম বলেন, এই কীর্ত্তণখোলা বাঁধটি আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ। যতবার হাওরে পানি এসেছে ততবার এই বাঁধ ভেঙ্গেই এসছে। আমাদের উপজেলা কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে এই কাজগুলো দেয়া হয়েছিল। এখন যে অভিযোগগুলো আসছে আমরা এগুলো খতিয়ে দেখবো। তিনি বলেন উপজেলার ৮৮টি পিআইসির বাঁধের কাজই ভালো হয়েছে। শুধুমাত্র ৪ থেকে ৫টি বাঁধে এমন ফাটল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
নেত্রকোনা : বাঁধ ভেঙে ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় কাচা-পাকা ধান কাটছেন কৃষক। (ইনসেটে) ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত করছেন কৃষকরা -সংবাদ
আরও খবররবিবার, ১০ এপ্রিল ২০২২ , ২৭ চৈত্র ১৪২৮ ০৮ রমাদ্বান ১৪৪৩
প্রতিনিধি, নেত্রকোনা
নেত্রকোনা : বাঁধ ভেঙে ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় কাচা-পাকা ধান কাটছেন কৃষক। (ইনসেটে) ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত করছেন কৃষকরা -সংবাদ
নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরীতে ফসল রক্ষায় বাঁধ মেরামত করছেন কৃষকরা। কৃষকরা স্বেচ্ছশ্রমে পঞ্চম দিনের মতো বাঁধ মেরামত চালিয়ে যাচ্ছেন। বাঁধে বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দেয়ায় আতঙ্কে কাঁচা ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকেরা।
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে বাঁধের জায়গাটি বিলের গভীরতায় পড়ার কারণে এমন ফাটল দেখা দিচ্ছে। স্থানীয় পিআইসি প্রধান উপজেলা প্রশাসন বলছেন প্রতিবারই এই বাঁধ ভেঙ্গেই হাওরে পানি ঢুকে। তবে বাঁধ নির্মাণ কাজে কৃষকদের করা নানা অনিয়মের অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখার আশ^াস দিয়েছেন খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম। জানা গেছে, জেলার দ্বীপ উপজেলা খালিয়াজুরীর প্রায় সকলেই কৃষক। তাদের একমাত্র সম্বল এই বোরো ধান এবং মাছ। এগুলোর ওপরই নির্ভরশীল তারা। প্রতিবছর তাদের একমাত্র ফসল রোপণের পূর্বে থেকেই সরকার বেরিবাঁধের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। আর এগুলোর মনিটরিং করে স্থানীয় প্রশাসনসহ সরকার দলীয় নেতৃবৃন্দ। বরাদ্দ নিয়ে পিআইসির মাধ্যমে কাজ করা হয়। কিন্তু কাজ নিয়ে নানা অভিযোগের সীমা থাকে না। প্রতিবছর পাহাড়ি ঢল বা আকস্মিক বন্যার ভয়ে আতঙ্কে থাকেন তারা। চোখের সামনে কষ্টের ফসল তলিয়ে গেলে নয়নভাগা ছাড়া তাদের আর উপায় থাকে না। এমতাবস্থায় বাঁধ নির্মাণে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলছেন কৃষকরা। হাওরের ধান এখনো পুরো দমে পাকতে আরো ১৫ থেকে ২০ দিনের মতো সময় লাগলেও ভারতের পাহাড়ি ঢল যেন থামছেই না। পানির চাপে সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়েছে কীর্ত্তণখোলার ৭ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধের বিভিন্ন অংশ। গত পাঁচদিন ধরে টানা বাঁধ মেরামতে দিন কাটছে স্থানীয় গ্রামবাসী ও কৃষকদের। নাওয়া খাওয়া ভুলে বাড়ি ঘর রেখে তারা হাওরেই থাকছেন বাঁধ পাহাড়ায়। তবে তাদের সাথে রয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ স্থানীয় প্রশাসনও। স্বেচ্ছাশ্রমে মাটি কেটে বাঁশ চাটাই দিয়ে কোন রকমে ফাটল বন্ধ করতে প্রাণপন চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন তারা। তবে এরই মধ্যে বাঁধ ভাঙ্গার আতঙ্কে কাঁচা ধানই কাটছেন অনেক কৃষক। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, প্রতিদিন রাত পর্যন্ত মেরামত শেষে হলেও পরদিন আবারও ফাটল হচ্ছে। তবে বৃহস্পতিবার সকালে ধনু নদের পানি কমতে শুরু করায় কৃষকদের দুশ্চিন্তা কিছুটা কমছে। বর্তমানে পনি কমে বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রভাহিত হচ্ছে। এভাবে কমতে থাকলে কৃষকের স্বপ্নের ফসল তোলতে পারবেন বলেও আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, খালিয়াজুরীতে ৮৮টি পিআইসির মাধ্যমে প্রায় ৮১টি কিলোমিটার বাঁধের জন্য মোট বাজেট ছিল ১৬ কোটি টাকা। এই কীর্ত্তণখোলাতে দুইটি ফোল্ডারে চারটি পিআইসির মাধ্যমে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।
এদিকে খালিয়াজুরী পিআইসি প্রধান উপজেলা নির্বাহী অফিসার এইচ এম আরিফুল ইসলাম বলেন, এই কীর্ত্তণখোলা বাঁধটি আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ। যতবার হাওরে পানি এসেছে ততবার এই বাঁধ ভেঙ্গেই এসছে। আমাদের উপজেলা কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে এই কাজগুলো দেয়া হয়েছিল। এখন যে অভিযোগগুলো আসছে আমরা এগুলো খতিয়ে দেখবো। তিনি বলেন উপজেলার ৮৮টি পিআইসির বাঁধের কাজই ভালো হয়েছে। শুধুমাত্র ৪ থেকে ৫টি বাঁধে এমন ফাটল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।