ভাতা বন্ধ বেগমগঞ্জের ১৪৮ মুক্তিযোদ্ধার

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে হঠাৎ করে ১৪৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে ভাতা বন্ধ হওয়ার বিষয়ে কোন চিঠি পাননি এসব মুক্তিযোদ্ধারা। এতে তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ১৯৯৬ থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তারা নিয়মিত ভাতা পেলেও ফেব্রুয়ারি মাসের ভাতা তারা পাননি। ভাতা না পাওয়া মুক্তিযোদ্ধারা হলেন, মজিবুল হক, আজিম উদ্দিন, লোকমান আহম্মদ, বেলায়েত হোসেন, নাদরের জামানের স্ত্রী জায়েরা বেগম, মো. শহীদ উল্যা, মৃত মমতাজ মিয়ার স্ত্রী রোকেয়া বেগম, মো. শহিদ উল্যা বাচ্চু, আক্তারের জামান, লাতু মিয়া, নুরুল ইসলাম মাস্টারসহ ১৪৮ জন।

জানা যায়, বেগমগঞ্জে সরকারি গেজেট অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় ১৩৬২ জন। তাদের প্রত্যেকের ভাতার টাকা প্রতি মাসে সোনালী ব্যাংক চৌমুহনী শাখায় আসে। ফেব্রুয়ারি মাসে সবার ভাতা এলেও এই ১৪৮ জনের ভাতা আসেনি। তাদের ভাতা ব্যাংকে না আসার বিষয়টি স্বীকার করেন ব্যাংক ম্যানেজার। তবে কী কারণে তাদের ভাতা আসেনি, সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।

মজিবুল হক বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে নিয়মিত ভাতা পেতেম। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে হঠাৎ সেটি বন্ধ হয়ে যায়। কেন বন্ধ হলো, সেই উত্তর নেই কারো কাছে। তিনি আরো বলেন, ২০০৪ সালের যাচাই-বাছাই তালিকা করে আমাদের নাম রেজ্যুলেশন করা হয়। তিনি বলেন বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ অংশগ্রহণ করি এবং ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশকে হানাদার বাহিনীর হাতে থেকে মুক্ত করতে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। মো. শহিদ উল্যা বাচ্চু বলেন, এতদিন নিয়মিত ভাতা পেয়ে এসেছি। হঠাৎ ফেব্রুয়ারিতে কী হলো টাকা ব্যাংকে আসেনি। কোন চিঠি বা নোটিসও দেয়নি। শুনেছি অনেকের বিএনপি করার কারণে সম্মানী ভাতা আটকে গেছে। ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধা মৃত মমতাজ মিয়ার স্ত্রী রোকেয়া বেগম বলেন, ভাতা চালুর পর থেকে আমার স্বামী ভাতা পান। তিনি মৃত্যুবরণ করলে স্বামীর অধিকারে আমি ভাতা পাই। আমার স্বামী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। কোন অভিযোগ নেই তার বিরুদ্ধে। তবে কেন আমার ভাতা বন্ধ করল তার জবাব পাচ্ছি না কারও কাছ থেকে।

ভাতাবঞ্চিত লোকমান আহম্মদ বলেন, আমি জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ভাতা পেয়েছি কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে কোন টাকা পাননি। ২০০৫-এ অনেকগুলো গেজেট হয়। এরমধ্যে লাল মুক্তিবার্তায় অনেকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। যারা যুদ্ধ করেছেন তারাও হয়েছেন। যারা যুদ্ধ করেননি তারাও তালিকায় নাম দিয়েছিলেন।

ভাতা বন্ধের বিষয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল হোসেন বাঙালি বলেন, পুরনো ও নতুন তালিকার মধ্য থেকে ১৪৮ জনের ভাতা বন্ধ রয়েছে। ২০১৭ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম যাচাই-বাছাইতে যাদের নাম বাদ পড়েছে, ভাতার জন্য যারা এম.এস করেনি বা হাজিরা দেয়নি মূলত তাদের ভাতা বন্ধ হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আবার অনেকের যাচাই-বাছাই নাম আছে, এম.এস ও হাজিরা দিয়েছে তাদেরও অনেকের ভাতা আসেনি। এ ব্যাপারে আমরা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।

এ ব্যাপারে বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুন নাহার জানান, নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের সময় যাদের ব্যাপারে আপত্তি এসেছে তাদের ভাতা বন্ধ হতে পারে। তবুও আমরা বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। ভাতা দেওয়ার দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ের।

যাদের ভাতা বন্ধ তারা কি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বা এতদিন তারা যে ভাতা নিয়েছেন সেগুলোর কি হবে বা যদি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, সেটি তদন্ত সাপেক্ষ ব্যাপার, কে ভুয়া আর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তা নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয় আমাদের নির্দেশনা দিলে আমরা সেই মতে কাজ করব।

রবিবার, ১০ এপ্রিল ২০২২ , ২৭ চৈত্র ১৪২৮ ০৮ রমাদ্বান ১৪৪৩

ভাতা বন্ধ বেগমগঞ্জের ১৪৮ মুক্তিযোদ্ধার

প্রতিনিধি, বেগমগঞ্জ (নোয়াখালী)

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে হঠাৎ করে ১৪৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে ভাতা বন্ধ হওয়ার বিষয়ে কোন চিঠি পাননি এসব মুক্তিযোদ্ধারা। এতে তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ১৯৯৬ থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তারা নিয়মিত ভাতা পেলেও ফেব্রুয়ারি মাসের ভাতা তারা পাননি। ভাতা না পাওয়া মুক্তিযোদ্ধারা হলেন, মজিবুল হক, আজিম উদ্দিন, লোকমান আহম্মদ, বেলায়েত হোসেন, নাদরের জামানের স্ত্রী জায়েরা বেগম, মো. শহীদ উল্যা, মৃত মমতাজ মিয়ার স্ত্রী রোকেয়া বেগম, মো. শহিদ উল্যা বাচ্চু, আক্তারের জামান, লাতু মিয়া, নুরুল ইসলাম মাস্টারসহ ১৪৮ জন।

জানা যায়, বেগমগঞ্জে সরকারি গেজেট অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় ১৩৬২ জন। তাদের প্রত্যেকের ভাতার টাকা প্রতি মাসে সোনালী ব্যাংক চৌমুহনী শাখায় আসে। ফেব্রুয়ারি মাসে সবার ভাতা এলেও এই ১৪৮ জনের ভাতা আসেনি। তাদের ভাতা ব্যাংকে না আসার বিষয়টি স্বীকার করেন ব্যাংক ম্যানেজার। তবে কী কারণে তাদের ভাতা আসেনি, সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।

মজিবুল হক বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে নিয়মিত ভাতা পেতেম। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে হঠাৎ সেটি বন্ধ হয়ে যায়। কেন বন্ধ হলো, সেই উত্তর নেই কারো কাছে। তিনি আরো বলেন, ২০০৪ সালের যাচাই-বাছাই তালিকা করে আমাদের নাম রেজ্যুলেশন করা হয়। তিনি বলেন বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ অংশগ্রহণ করি এবং ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশকে হানাদার বাহিনীর হাতে থেকে মুক্ত করতে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। মো. শহিদ উল্যা বাচ্চু বলেন, এতদিন নিয়মিত ভাতা পেয়ে এসেছি। হঠাৎ ফেব্রুয়ারিতে কী হলো টাকা ব্যাংকে আসেনি। কোন চিঠি বা নোটিসও দেয়নি। শুনেছি অনেকের বিএনপি করার কারণে সম্মানী ভাতা আটকে গেছে। ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধা মৃত মমতাজ মিয়ার স্ত্রী রোকেয়া বেগম বলেন, ভাতা চালুর পর থেকে আমার স্বামী ভাতা পান। তিনি মৃত্যুবরণ করলে স্বামীর অধিকারে আমি ভাতা পাই। আমার স্বামী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। কোন অভিযোগ নেই তার বিরুদ্ধে। তবে কেন আমার ভাতা বন্ধ করল তার জবাব পাচ্ছি না কারও কাছ থেকে।

ভাতাবঞ্চিত লোকমান আহম্মদ বলেন, আমি জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ভাতা পেয়েছি কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে কোন টাকা পাননি। ২০০৫-এ অনেকগুলো গেজেট হয়। এরমধ্যে লাল মুক্তিবার্তায় অনেকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। যারা যুদ্ধ করেছেন তারাও হয়েছেন। যারা যুদ্ধ করেননি তারাও তালিকায় নাম দিয়েছিলেন।

ভাতা বন্ধের বিষয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল হোসেন বাঙালি বলেন, পুরনো ও নতুন তালিকার মধ্য থেকে ১৪৮ জনের ভাতা বন্ধ রয়েছে। ২০১৭ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম যাচাই-বাছাইতে যাদের নাম বাদ পড়েছে, ভাতার জন্য যারা এম.এস করেনি বা হাজিরা দেয়নি মূলত তাদের ভাতা বন্ধ হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আবার অনেকের যাচাই-বাছাই নাম আছে, এম.এস ও হাজিরা দিয়েছে তাদেরও অনেকের ভাতা আসেনি। এ ব্যাপারে আমরা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।

এ ব্যাপারে বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুন নাহার জানান, নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের সময় যাদের ব্যাপারে আপত্তি এসেছে তাদের ভাতা বন্ধ হতে পারে। তবুও আমরা বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। ভাতা দেওয়ার দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ের।

যাদের ভাতা বন্ধ তারা কি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বা এতদিন তারা যে ভাতা নিয়েছেন সেগুলোর কি হবে বা যদি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, সেটি তদন্ত সাপেক্ষ ব্যাপার, কে ভুয়া আর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তা নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয় আমাদের নির্দেশনা দিলে আমরা সেই মতে কাজ করব।