করোনা : পরিস্থিতি ‘স্বস্তিদায়ক’ তবে ঝুঁকিমুক্ত নয়

বাংলাদেশ থেকে বিদায়ের পথে করোনা মহামারী। শনাক্ত নেমেছে দুই অঙ্কের ঘরে। দৈনিক মৃত্যু শূন্যের ঘরে। শনাক্তের হারও এক শতাংশের নিচে রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, পরিস্থিতি ‘স্বস্তিদায়ক’, তবে ‘ঝুঁকিমুক্ত’ নয়। মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন থাকলে সামনে কোন বিপদ নেই বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।

সম্প্রতি ভারতে করোনার নতুন ধরন ‘এক্সই’ শনাক্ত হলেও এটি সংক্রমণ ছড়াতে পারেনি। এর আগে যুক্তরাজ্যে ‘এক্সই’ শনাক্ত হলেও দেশটিতে এর তেমন সংক্রমণ ছড়ায়নি। ভারতেও নিয়ন্ত্রণের পথে করোনা মহামারী। তবে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশে এখনও করোনার উচ্চ সংক্রমণ ঘটছে, যদিও দেশগুলোতে করোনায় মৃত্যু অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের পথে।

বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যু শূন্যের পথে। চলতি মাসের ৯ দিনে দেশে ৪৪৬ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ে করোনায় মাত্র একজনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণ শনাক্তের হার এক শতাংশের নিচে ওঠানামা করছে।

দেশের সার্বিক করোনা পরিস্থিতি সর্ম্পকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের এখানে করোনা একেবারে নির্মূল হয়েছে তা বলা যাবে না। তবে পরিস্থিতি স্বস্থিদায়ক। আমরা সবাই সচেতন থাকলে আগামীতে পরিস্থিতি ভালোই থাকবে।’

দেশে করোনার নতুন ধরন ‘এক্সই’ সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে কী না জানতে চাইলে ডা. আলমগীর বলেন, এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। ‘এক্সই প্রথম শনাক্ত হয়েছে যুক্তরাজ্যে। সেখানে কিন্তু এটি নিয়ে তেমন হৈ চৈ হয়নি। ভারতেও এটি শনাক্ত হয়েছে, সেখানেও খুব একটা আতঙ্কিত হতে দেখা যাচ্ছে না। তবে আমরা সতর্ক আছি, দেখা যাক কী হয়।’

দেশে করোনায় মৃত্যু শূন্যের ঘরে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের ৯ দিনে দেশে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র একজন মারা গেছেন। এই সময়ে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪৪৬ জনের দেহে। আর ১ এপ্রিলের পর টানা আট দিনই নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে ‘কোভিড-১৯’ শনাক্তের হার এক শতাংশের নিচে রয়েছে।

দেশের সার্বিক করোনা পরিস্থিতি সর্ম্পকে ‘আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘দেশে করোনা সংক্রমণ এখন সর্বনি¤œ পর্যায়ে রয়েছে। পরিস্থিতি খুবই ভালো, স্বস্তিদায়ক। তবে একবারে ঝুঁকিমুক্ত নয়। কারণ বিশে^র অনেক দেশেই এখন উচ্চ সংক্রমণ হচ্ছে।’

তিন মাস পরপর করোনার নতুন ঢেউ আসে মন্তব্য করে মুশতাক হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে দেড়মাস হয়েছে, আরও দেশমাস গেলে বুঝা যাবে সংক্রমণ বিদায় নিয়েছে কি-না।’

ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘বিশ^ব্যাপী করোনাভাইরাসের যে টিকা দেয়া হচ্ছে সেটিতে করোনা একেবারে নির্মূল হবে না। টিকা দেয়া হচ্ছে যাতে আক্রান্তদের শারীরিক অবস্থা গুরুতর না হয়। করোনা নির্মূলের টিকা এখনও আবিস্কৃত হয়নি। ভাইরাসটি বিশ^ব্যাপী এখনও সক্রিয় রয়েছে। এ কারণে ঝুঁকিও রয়েছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় কারো মৃত্যু হয়নি। এ নিয়ে টানা পঞ্চম মৃত্যুহীন দিন দেখলো বাংলাদেশ। দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত কোভিড রোগীর মধ্যে ২৯ হাজার ১২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৫ এপ্রিল থেকে এই সংখ্যাটি স্থির রয়েছে।

সর্বশেষ একদিনে দেশে ২৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, যা গত দুই বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে কম।

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম একজনের করোনা শনাক্ত হয়। এরপর ওই বছরের ৫ এপ্রিল ১৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। এরপর একদিনে এত কম রোগী আর শনাক্ত হয়নি।

একদিনে শনাক্ত রোগীর নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট ১৯ লাখ ৫২ হাজার ২৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

একদিনে করোনায় আক্রান্তদের থেকে সেরে উঠেছেন ৬১০ জন। তাদের নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যা দাঁড়ালো ১৮ লাখ ৮৭ হাজার ৯৩৩ জনে। এই হিসাবে এখন দেশে সক্রিয় কোভিড বা চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ৩৪ হাজার ৯৬৭ জন।

সর্বশেষ একদিনে শনাক্ত হওয়া ২৮ জন নতুন রোগীর মধ্যে ২০ জনই ঢাকা বিভাগের। তাদের ১৭ জনই ঢাকা জেলার। এর বাইরে কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর ও গাজীপুরে একজন করে রোগী শনাক্ত হয়েছে।

এছাড়া ময়মনসিংহে তিনজন এবং জামালপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, চাঁদপুর ও হবিগঞ্জে একজন করে রোগী শনাক্ত হয়েছে। দেশের বাকি ৫৪ জেলায় একদিনে কারো দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া যায়নি।

নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে একদিনে শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশে। আর এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৪ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ। মোট শনাক্ত অনুপাতে মৃত্যুহার এক দশমিক ৪৯ শতাংশ।

ভারতে নতুন ধরন ‘এক্সই’ শনাক্ত, তবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে

ভারতে করোনা সংক্রমণ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে চার হাজারেরও কম মানুষের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। দৈনিক মৃত্যুও একশ’র নিচেই রয়েছে। সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে আসায় দেশটিতে সম্প্রতি বিদেশি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে ভারতে গত ৬ এপ্রিল করোনার নতুন ধরন ‘এক্সই’ শনাক্ত হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতের মুম্বাইয়ে আসা ৫০ বছর বয়সী এক নারীর করোনা পরীক্ষায় নতুন এই ধরন শনাক্ত হয়।

মুম্বাই সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, ওই নারী করোনাভাইরাসের দুই ডোজ টিকাই নিয়েছেন। তিনি গত ১০ ফেব্রুয়ারি ভারতে আসেন, তখন তার করোনার কোন উপসর্গ ছিল না এবং নমুনা পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ আসে।

তবে, জিনোম সিকোয়েন্সিয়ের ফলাফলে তার একটি নমুনায় ‘এক্সই’ ধরন পাওয়া যায়। গতকাল ভারতের গুজরাট প্রদেশে আরেকজনের দেহে ‘এক্সই’ শনাক্তের খবর দিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনার নতুন এই ধরনটিকে এখন পর্যন্ত পাওয়া ধরনগুলোর মধ্যে সম্ভাব্য সবচেয়ে বেশি সংক্রামক বলে অভিহিত করেছে। করোনার নতুন ধরনটি ওমিক্রনের ‘বিএ.২’ উপধরনের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি সংক্রামক বলে সংস্থাটি মনে করছে।

বিশ^ব্যাপী নি¤œমুখী করোনা সংক্রমণ

করোনা মহামারীর শুরু থেকেই এ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান সংরক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবসাইট ‘ওয়ার্ল্ডোমিটার’। প্রতিষ্ঠানটির গতকালের তথ্য অনুযায়ী চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ কয়েকটি দেশ ছাড়া বিশ^ব্যাপী নিয়মিত কমছে করোনা সংক্রমণ।

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর গত ২১ জানুয়ারি বিশ^ব্যাপী একদিনে রেকর্ড ৩৮ লাখ ১৭ হাজার ৫২৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। ওইদিন বিশে^ প্রায় ১৭ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল করোনায়।

সর্বশেষ গত ৮ এপ্রিল সারাবিশে^ একদিনে কোভিড শনাক্ত হয় এক লাখ ৮৭ হাজার মানুষের। এদিন করোনায় বিশে^ তিন হাজার ৬৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

চীনে সম্প্রতি করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। তবে লকডাউনসহ নানা পদক্ষেপ নিয়ে দেশটি ভালোভাবেই মোকাবিলা করছে। টানা দেড় বছরই দেশটিতে করোনা নিয়ন্ত্রণে ছিল। সম্প্রতি সংক্রমণ কিছুটা বেড়েছে চীনে। এখন দৈনিক দেড় থেকে দুই হাজার মানুষের করোনা শনাক্ত হচ্ছে। তবে দেশটিতে করোনায় মৃত্যু ঠেকাতে সক্ষম হচ্ছে।

চীনে এ পর্যন্ত মোট এক লাখ ৬৩ হাজার ৪২ জনের করোনা শনাক্ত এবং আক্রান্তদের মধ্যে চার হাজার ৬৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে দক্ষিণ কোরিয়া সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় এক লাখ ৮৫ হাজারের বেশি মানুষের কোভিড শনাক্ত এবং ৩৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিন জাপানে ৫২ হাজারের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত এবং ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিন অস্ট্রেলিয়ায় ৪৮ হাজারের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত এবং করোনা আক্রান্তদের মধ্যে একদিনে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রবিবার, ১০ এপ্রিল ২০২২ , ২৭ চৈত্র ১৪২৮ ০৮ রমাদ্বান ১৪৪৩

করোনা : পরিস্থিতি ‘স্বস্তিদায়ক’ তবে ঝুঁকিমুক্ত নয়

রাকিব উদ্দিন

বাংলাদেশ থেকে বিদায়ের পথে করোনা মহামারী। শনাক্ত নেমেছে দুই অঙ্কের ঘরে। দৈনিক মৃত্যু শূন্যের ঘরে। শনাক্তের হারও এক শতাংশের নিচে রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, পরিস্থিতি ‘স্বস্তিদায়ক’, তবে ‘ঝুঁকিমুক্ত’ নয়। মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন থাকলে সামনে কোন বিপদ নেই বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।

সম্প্রতি ভারতে করোনার নতুন ধরন ‘এক্সই’ শনাক্ত হলেও এটি সংক্রমণ ছড়াতে পারেনি। এর আগে যুক্তরাজ্যে ‘এক্সই’ শনাক্ত হলেও দেশটিতে এর তেমন সংক্রমণ ছড়ায়নি। ভারতেও নিয়ন্ত্রণের পথে করোনা মহামারী। তবে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশে এখনও করোনার উচ্চ সংক্রমণ ঘটছে, যদিও দেশগুলোতে করোনায় মৃত্যু অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের পথে।

বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যু শূন্যের পথে। চলতি মাসের ৯ দিনে দেশে ৪৪৬ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ে করোনায় মাত্র একজনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণ শনাক্তের হার এক শতাংশের নিচে ওঠানামা করছে।

দেশের সার্বিক করোনা পরিস্থিতি সর্ম্পকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের এখানে করোনা একেবারে নির্মূল হয়েছে তা বলা যাবে না। তবে পরিস্থিতি স্বস্থিদায়ক। আমরা সবাই সচেতন থাকলে আগামীতে পরিস্থিতি ভালোই থাকবে।’

দেশে করোনার নতুন ধরন ‘এক্সই’ সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে কী না জানতে চাইলে ডা. আলমগীর বলেন, এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। ‘এক্সই প্রথম শনাক্ত হয়েছে যুক্তরাজ্যে। সেখানে কিন্তু এটি নিয়ে তেমন হৈ চৈ হয়নি। ভারতেও এটি শনাক্ত হয়েছে, সেখানেও খুব একটা আতঙ্কিত হতে দেখা যাচ্ছে না। তবে আমরা সতর্ক আছি, দেখা যাক কী হয়।’

দেশে করোনায় মৃত্যু শূন্যের ঘরে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের ৯ দিনে দেশে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র একজন মারা গেছেন। এই সময়ে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪৪৬ জনের দেহে। আর ১ এপ্রিলের পর টানা আট দিনই নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে ‘কোভিড-১৯’ শনাক্তের হার এক শতাংশের নিচে রয়েছে।

দেশের সার্বিক করোনা পরিস্থিতি সর্ম্পকে ‘আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘দেশে করোনা সংক্রমণ এখন সর্বনি¤œ পর্যায়ে রয়েছে। পরিস্থিতি খুবই ভালো, স্বস্তিদায়ক। তবে একবারে ঝুঁকিমুক্ত নয়। কারণ বিশে^র অনেক দেশেই এখন উচ্চ সংক্রমণ হচ্ছে।’

তিন মাস পরপর করোনার নতুন ঢেউ আসে মন্তব্য করে মুশতাক হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে দেড়মাস হয়েছে, আরও দেশমাস গেলে বুঝা যাবে সংক্রমণ বিদায় নিয়েছে কি-না।’

ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘বিশ^ব্যাপী করোনাভাইরাসের যে টিকা দেয়া হচ্ছে সেটিতে করোনা একেবারে নির্মূল হবে না। টিকা দেয়া হচ্ছে যাতে আক্রান্তদের শারীরিক অবস্থা গুরুতর না হয়। করোনা নির্মূলের টিকা এখনও আবিস্কৃত হয়নি। ভাইরাসটি বিশ^ব্যাপী এখনও সক্রিয় রয়েছে। এ কারণে ঝুঁকিও রয়েছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় কারো মৃত্যু হয়নি। এ নিয়ে টানা পঞ্চম মৃত্যুহীন দিন দেখলো বাংলাদেশ। দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত কোভিড রোগীর মধ্যে ২৯ হাজার ১২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৫ এপ্রিল থেকে এই সংখ্যাটি স্থির রয়েছে।

সর্বশেষ একদিনে দেশে ২৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, যা গত দুই বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে কম।

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম একজনের করোনা শনাক্ত হয়। এরপর ওই বছরের ৫ এপ্রিল ১৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। এরপর একদিনে এত কম রোগী আর শনাক্ত হয়নি।

একদিনে শনাক্ত রোগীর নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট ১৯ লাখ ৫২ হাজার ২৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

একদিনে করোনায় আক্রান্তদের থেকে সেরে উঠেছেন ৬১০ জন। তাদের নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যা দাঁড়ালো ১৮ লাখ ৮৭ হাজার ৯৩৩ জনে। এই হিসাবে এখন দেশে সক্রিয় কোভিড বা চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ৩৪ হাজার ৯৬৭ জন।

সর্বশেষ একদিনে শনাক্ত হওয়া ২৮ জন নতুন রোগীর মধ্যে ২০ জনই ঢাকা বিভাগের। তাদের ১৭ জনই ঢাকা জেলার। এর বাইরে কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর ও গাজীপুরে একজন করে রোগী শনাক্ত হয়েছে।

এছাড়া ময়মনসিংহে তিনজন এবং জামালপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, চাঁদপুর ও হবিগঞ্জে একজন করে রোগী শনাক্ত হয়েছে। দেশের বাকি ৫৪ জেলায় একদিনে কারো দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া যায়নি।

নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে একদিনে শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশে। আর এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৪ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ। মোট শনাক্ত অনুপাতে মৃত্যুহার এক দশমিক ৪৯ শতাংশ।

ভারতে নতুন ধরন ‘এক্সই’ শনাক্ত, তবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে

ভারতে করোনা সংক্রমণ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে চার হাজারেরও কম মানুষের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। দৈনিক মৃত্যুও একশ’র নিচেই রয়েছে। সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে আসায় দেশটিতে সম্প্রতি বিদেশি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে ভারতে গত ৬ এপ্রিল করোনার নতুন ধরন ‘এক্সই’ শনাক্ত হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতের মুম্বাইয়ে আসা ৫০ বছর বয়সী এক নারীর করোনা পরীক্ষায় নতুন এই ধরন শনাক্ত হয়।

মুম্বাই সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, ওই নারী করোনাভাইরাসের দুই ডোজ টিকাই নিয়েছেন। তিনি গত ১০ ফেব্রুয়ারি ভারতে আসেন, তখন তার করোনার কোন উপসর্গ ছিল না এবং নমুনা পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ আসে।

তবে, জিনোম সিকোয়েন্সিয়ের ফলাফলে তার একটি নমুনায় ‘এক্সই’ ধরন পাওয়া যায়। গতকাল ভারতের গুজরাট প্রদেশে আরেকজনের দেহে ‘এক্সই’ শনাক্তের খবর দিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনার নতুন এই ধরনটিকে এখন পর্যন্ত পাওয়া ধরনগুলোর মধ্যে সম্ভাব্য সবচেয়ে বেশি সংক্রামক বলে অভিহিত করেছে। করোনার নতুন ধরনটি ওমিক্রনের ‘বিএ.২’ উপধরনের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি সংক্রামক বলে সংস্থাটি মনে করছে।

বিশ^ব্যাপী নি¤œমুখী করোনা সংক্রমণ

করোনা মহামারীর শুরু থেকেই এ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান সংরক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবসাইট ‘ওয়ার্ল্ডোমিটার’। প্রতিষ্ঠানটির গতকালের তথ্য অনুযায়ী চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ কয়েকটি দেশ ছাড়া বিশ^ব্যাপী নিয়মিত কমছে করোনা সংক্রমণ।

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর গত ২১ জানুয়ারি বিশ^ব্যাপী একদিনে রেকর্ড ৩৮ লাখ ১৭ হাজার ৫২৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। ওইদিন বিশে^ প্রায় ১৭ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল করোনায়।

সর্বশেষ গত ৮ এপ্রিল সারাবিশে^ একদিনে কোভিড শনাক্ত হয় এক লাখ ৮৭ হাজার মানুষের। এদিন করোনায় বিশে^ তিন হাজার ৬৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

চীনে সম্প্রতি করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। তবে লকডাউনসহ নানা পদক্ষেপ নিয়ে দেশটি ভালোভাবেই মোকাবিলা করছে। টানা দেড় বছরই দেশটিতে করোনা নিয়ন্ত্রণে ছিল। সম্প্রতি সংক্রমণ কিছুটা বেড়েছে চীনে। এখন দৈনিক দেড় থেকে দুই হাজার মানুষের করোনা শনাক্ত হচ্ছে। তবে দেশটিতে করোনায় মৃত্যু ঠেকাতে সক্ষম হচ্ছে।

চীনে এ পর্যন্ত মোট এক লাখ ৬৩ হাজার ৪২ জনের করোনা শনাক্ত এবং আক্রান্তদের মধ্যে চার হাজার ৬৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে দক্ষিণ কোরিয়া সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় এক লাখ ৮৫ হাজারের বেশি মানুষের কোভিড শনাক্ত এবং ৩৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিন জাপানে ৫২ হাজারের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত এবং ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিন অস্ট্রেলিয়ায় ৪৮ হাজারের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত এবং করোনা আক্রান্তদের মধ্যে একদিনে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।