অভিযোগ সংবাদ সম্মেলনে, বিচার দাবি অপারেটরদের
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় নিমঘুটু গ্রামে সেচের পানি না পেয়ে দু’জন আদিবাসী কৃষক আত্মহত্যার ঘটনায় নিহত দুই কৃষক পরিবার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী নগরীর কাজীহাটা এনজিও ফোরাম কার্যালয়ে ‘রক্ষাগোলা সমন্বয়’ কমিটি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন গোদাগাড়ী রক্ষাগোলা সমন্বয় কমিটির সদস্য রঞ্জিত সাওরীয়া।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মৃত কৃষক অভিনাথ মার্ডির স্ত্রী রোজিনা হেমমর্রম, ও রবি মার্ডির ভাই সুশীল মার্ডি, রক্ষাগোলা সমন্বয় কমিটির উপদেষ্টা প্রসেন এক্কা, সভাপতি সরল এক্কা, সিসিবিভিওর সমন্বয়কারী আরিফ ও প্রশিক্ষণ সমন্বয়কারী নিরাবুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বিএমডিএর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াতের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বলেন, গত ২৩ মার্চ বিকেলে গোদাগাড়ী উপজেলার নিমঘুটু আদিবাসী পল্লীর অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডি ধানের জমিতে সেচের পানি না পেয়ে এবং বিএমডিএর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের অসদাচারনের ফলে বিষপান করলে ওই দিনই অভিনাথ মার্ডি মৃত্যুবরণ করেন। আর তার ভাই রবি মার্ডি ২৫ মার্চ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
ঘটনার পরে সাখাওয়াত হোসেনের নামে গোদাগাড়ী থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের অসহযোগিতা ও অবহেলার দরুন ঘটনার ২ দিন পর ২৫ মার্চ মামলা দায়ের করতে সমর্থ হই।
গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের নামে দীর্ঘদিন ধরেই সেচের পানি দেয়ার ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ থাকলেও তিনি সেগুলোর কোন তোয়াক্কাই করেননি। উপরন্ত সেই গভীর নলকূপের আওতাধীন চাষযোগ্য জমির অর্ধেক কৃষক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষকদের দেরিতে পানি দেয়া হতো। বিগত ২৩ মার্চ এমন একটি ঘটনার করুণ পরিণতি আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, আত্মহত্যার আগে অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডি প্রায় ১২-১৫ দিন ধরে ধানের জমিতে পানি সেচের কথা নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াতকে বলে আসছিল কিন্তু তাদের জমিতে পানি দেয়া হয়নি।
আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কৃষকের আত্মহত্যার পেছনে সাখাওয়াত হোসেনের মতো জাতিবিদ্বেষী ও দুর্নীতিবাজ ডিপ অপারেটর যেমন দায়ী ঠিক তেমনি এই বরেন্দ্র অঞ্চলের সেচ কার্যক্রম পরিচালনাকারী সংস্থা বিএমডিএ’র অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম সমানভাবে দায়ী।
খোদ কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্তে উঠে এসেছে সাখাওয়াত হোসেন বি.এম.ডি.এ. কর্তৃক নির্ধারিত পানির দাম ১২৫ টাকা ঘণ্টার পানি ১৩৫ টাকায় কৃষকদের কাছে বিক্রি করতেন, এই অনিয়ম বহুদিনব্যাপী চলমান থাকলেও কর্তৃপক্ষের কোন তদারকি ছিল না।
গোটা বরেন্দ্র অঞ্চলের সেচের পানি গভীর নলকূপ অপারেটরদের কব্জায়, যাদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে প্রায় ৪ লাখ কৃষক। নলকূপ অপারেটর নির্বাচনের ক্ষেত্রেও বি.এম.ডি.এ কর্র্তৃপক্ষ স্বার্থবাদী চক্র ও দলীয় সমর্থন বিবেচনায় রাখে যার ফলে নলকূপগুলোর পানি বণ্টন নীতি দলীয় নেতাকর্মীদের স্বেচ্ছাচারিতার অংশ হয়ে গেছে, এক্ষেত্রে এসব অসৎ নলকূপ অপারেটররা যে ক্ষমতাসীন দলের নামের অপব্যবহার করছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
এর আগে সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে ২০২০ এবং ২০২১ সালে স্থানীয় কৃষকরা বি.এম.ডি.এ. কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করলে কর্তৃপক্ষ সেই অভিযোগ আমলে নেয়নি। ক্ষেত্র বিশেষে পানি সমস্যা নিরসনে অসৎ অপারেটরকে বরখাস্তের জন্য করা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সুপারিশকেও নজরান্দাজ করা হয়েছে। তারা আরও অভিযোগ করেন, বি.এম.ডি.এ’র কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও অসৎ নলকূপ অপারেটররা মিলে বরেন্দ্র অঞ্চলে একটি পানি মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করেছে যার শিকার এই লাখ লাখ অসহায় কৃষক।
সাখাওয়াত হোসেন কর্তৃক নলকূপ ব্যবস্থাপনা ও সেচের ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি ও অনিয়ম করে গভীর নলকূপের ট্রান্সমিটার পাহারা দেয়ার জন্য প্রতি মৌসুমে কৃষকদের কাছে থেকে জনপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা উত্তোলন করা হত যা খরচের কোন হিসেব নেই। চেম্বার মেরামতের জন্য কৃষকপ্রতি ৫০ টাকা উত্তোলন করা হতো। সেচের পানি দেয়ার ক্ষেত্রে কোন সিরিয়াল অনুসরণ করা হতো না। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে সিরিয়াল থাকলেও ৮-১০ দিন ঘোরানো হতো। নলকূপ অপারেটর স্ক্রিমভুক্ত জমিতে নিজের পাওয়ার টিলার ছাড়া অন্য কোন পাওয়ার টিলার ব্যবহার করতে দিত না এবং বেশি চার্জ আদায় করতো। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে পানি না দেবার ভয় দেখিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে বাড়ির কাজ করিয়ে নিতো। সেচের পানির জন্য পীড়াপীড়ি করলে কৃষকদের বলতো, ‘তোদের পানি দেয়া হবে না, পারলে কেস কর গা।’
ডিপ টিউবয়েলের কোন কিছু নষ্ট হলে ৫০০ টাকার খরচের জন্য কৃষকদের কাছে থেকে ৫০০০ টাকা আদায় করতো। আমাদের পানি উত্তোলনের কার্ড থাকলেও অপারেটর তার নিজের কার্ড ব্যবহারে বাধ্য করতো। বেশি টাকা আয়ের জন্য নির্ধারিত স্কিমের চেয়ে দ্বিগুণ জমিতে সেচ দিত। ডিপ অপারেটর নীতিমালার বাইরে জমিপ্রতি টাকা ও ধান উত্তোলন করতো। ডিপ অপারেটরের মতের সঙ্গে সম্মতি না দিলে সেচের পানি দেয় না। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষকদের ক্ষেত্রে গভীর রাত ছাড়া সেচের পানি দেয় না। ডিপ অপারেটরের নিজস্ব আবাদি জমিতে জোরপূর্বক কম মজুরিতে কাজ করাতে বাধ্য করতো।
আদিবাসীদের বর্গা চাষের জন্য ১০ বিঘা জমি থাকলে পানি না দেয়ার হুমকি দিয়ে ২ বিঘা জমি জোরপূর্বক বর্গা চাষের জন্য কেড়ে নিত। উপরে বর্ণিত ঘটনাগুলো দীর্ঘদিন যাবত ওই ডিপের আওতায় থাকা কৃষকদের সঙ্গে ঘটে এসেছে। বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে অবহেলা ডিপকেন্দ্রিক অপারেটরদের এক ধরনের জমিদারী কায়েম করেছে যার কাছে কৃষকরা অসহায় প্রজা মাত্র।
আমরা মনে করি বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচ ব্যবস্থার নামে যে শোষণ যন্ত্র তৈরি করেছে তার দায় এড়াতে পারে না। এই অঞ্চলে ডিপ অপারেটরদের কাছে থেকে কৃষকদের জিম্মি দশা লাঘবে সুষ্ঠু তদারকি ও জবাবদিহিতার জায়গা তৈরি করা না গেলে ভবিষ্যতে আরও বহু অসহায় অভিনাথ বা রবি মার্ডি আত্মহত্যার পথ বেছে নেবে।
রবিবার, ১০ এপ্রিল ২০২২ , ২৭ চৈত্র ১৪২৮ ০৮ রমাদ্বান ১৪৪৩
অভিযোগ সংবাদ সম্মেলনে, বিচার দাবি অপারেটরদের
জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় নিমঘুটু গ্রামে সেচের পানি না পেয়ে দু’জন আদিবাসী কৃষক আত্মহত্যার ঘটনায় নিহত দুই কৃষক পরিবার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী নগরীর কাজীহাটা এনজিও ফোরাম কার্যালয়ে ‘রক্ষাগোলা সমন্বয়’ কমিটি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন গোদাগাড়ী রক্ষাগোলা সমন্বয় কমিটির সদস্য রঞ্জিত সাওরীয়া।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মৃত কৃষক অভিনাথ মার্ডির স্ত্রী রোজিনা হেমমর্রম, ও রবি মার্ডির ভাই সুশীল মার্ডি, রক্ষাগোলা সমন্বয় কমিটির উপদেষ্টা প্রসেন এক্কা, সভাপতি সরল এক্কা, সিসিবিভিওর সমন্বয়কারী আরিফ ও প্রশিক্ষণ সমন্বয়কারী নিরাবুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বিএমডিএর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াতের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বলেন, গত ২৩ মার্চ বিকেলে গোদাগাড়ী উপজেলার নিমঘুটু আদিবাসী পল্লীর অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডি ধানের জমিতে সেচের পানি না পেয়ে এবং বিএমডিএর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের অসদাচারনের ফলে বিষপান করলে ওই দিনই অভিনাথ মার্ডি মৃত্যুবরণ করেন। আর তার ভাই রবি মার্ডি ২৫ মার্চ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
ঘটনার পরে সাখাওয়াত হোসেনের নামে গোদাগাড়ী থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের অসহযোগিতা ও অবহেলার দরুন ঘটনার ২ দিন পর ২৫ মার্চ মামলা দায়ের করতে সমর্থ হই।
গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের নামে দীর্ঘদিন ধরেই সেচের পানি দেয়ার ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ থাকলেও তিনি সেগুলোর কোন তোয়াক্কাই করেননি। উপরন্ত সেই গভীর নলকূপের আওতাধীন চাষযোগ্য জমির অর্ধেক কৃষক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষকদের দেরিতে পানি দেয়া হতো। বিগত ২৩ মার্চ এমন একটি ঘটনার করুণ পরিণতি আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, আত্মহত্যার আগে অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডি প্রায় ১২-১৫ দিন ধরে ধানের জমিতে পানি সেচের কথা নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াতকে বলে আসছিল কিন্তু তাদের জমিতে পানি দেয়া হয়নি।
আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কৃষকের আত্মহত্যার পেছনে সাখাওয়াত হোসেনের মতো জাতিবিদ্বেষী ও দুর্নীতিবাজ ডিপ অপারেটর যেমন দায়ী ঠিক তেমনি এই বরেন্দ্র অঞ্চলের সেচ কার্যক্রম পরিচালনাকারী সংস্থা বিএমডিএ’র অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম সমানভাবে দায়ী।
খোদ কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্তে উঠে এসেছে সাখাওয়াত হোসেন বি.এম.ডি.এ. কর্তৃক নির্ধারিত পানির দাম ১২৫ টাকা ঘণ্টার পানি ১৩৫ টাকায় কৃষকদের কাছে বিক্রি করতেন, এই অনিয়ম বহুদিনব্যাপী চলমান থাকলেও কর্তৃপক্ষের কোন তদারকি ছিল না।
গোটা বরেন্দ্র অঞ্চলের সেচের পানি গভীর নলকূপ অপারেটরদের কব্জায়, যাদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে প্রায় ৪ লাখ কৃষক। নলকূপ অপারেটর নির্বাচনের ক্ষেত্রেও বি.এম.ডি.এ কর্র্তৃপক্ষ স্বার্থবাদী চক্র ও দলীয় সমর্থন বিবেচনায় রাখে যার ফলে নলকূপগুলোর পানি বণ্টন নীতি দলীয় নেতাকর্মীদের স্বেচ্ছাচারিতার অংশ হয়ে গেছে, এক্ষেত্রে এসব অসৎ নলকূপ অপারেটররা যে ক্ষমতাসীন দলের নামের অপব্যবহার করছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
এর আগে সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে ২০২০ এবং ২০২১ সালে স্থানীয় কৃষকরা বি.এম.ডি.এ. কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করলে কর্তৃপক্ষ সেই অভিযোগ আমলে নেয়নি। ক্ষেত্র বিশেষে পানি সমস্যা নিরসনে অসৎ অপারেটরকে বরখাস্তের জন্য করা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সুপারিশকেও নজরান্দাজ করা হয়েছে। তারা আরও অভিযোগ করেন, বি.এম.ডি.এ’র কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও অসৎ নলকূপ অপারেটররা মিলে বরেন্দ্র অঞ্চলে একটি পানি মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করেছে যার শিকার এই লাখ লাখ অসহায় কৃষক।
সাখাওয়াত হোসেন কর্তৃক নলকূপ ব্যবস্থাপনা ও সেচের ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি ও অনিয়ম করে গভীর নলকূপের ট্রান্সমিটার পাহারা দেয়ার জন্য প্রতি মৌসুমে কৃষকদের কাছে থেকে জনপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা উত্তোলন করা হত যা খরচের কোন হিসেব নেই। চেম্বার মেরামতের জন্য কৃষকপ্রতি ৫০ টাকা উত্তোলন করা হতো। সেচের পানি দেয়ার ক্ষেত্রে কোন সিরিয়াল অনুসরণ করা হতো না। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে সিরিয়াল থাকলেও ৮-১০ দিন ঘোরানো হতো। নলকূপ অপারেটর স্ক্রিমভুক্ত জমিতে নিজের পাওয়ার টিলার ছাড়া অন্য কোন পাওয়ার টিলার ব্যবহার করতে দিত না এবং বেশি চার্জ আদায় করতো। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে পানি না দেবার ভয় দেখিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে বাড়ির কাজ করিয়ে নিতো। সেচের পানির জন্য পীড়াপীড়ি করলে কৃষকদের বলতো, ‘তোদের পানি দেয়া হবে না, পারলে কেস কর গা।’
ডিপ টিউবয়েলের কোন কিছু নষ্ট হলে ৫০০ টাকার খরচের জন্য কৃষকদের কাছে থেকে ৫০০০ টাকা আদায় করতো। আমাদের পানি উত্তোলনের কার্ড থাকলেও অপারেটর তার নিজের কার্ড ব্যবহারে বাধ্য করতো। বেশি টাকা আয়ের জন্য নির্ধারিত স্কিমের চেয়ে দ্বিগুণ জমিতে সেচ দিত। ডিপ অপারেটর নীতিমালার বাইরে জমিপ্রতি টাকা ও ধান উত্তোলন করতো। ডিপ অপারেটরের মতের সঙ্গে সম্মতি না দিলে সেচের পানি দেয় না। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষকদের ক্ষেত্রে গভীর রাত ছাড়া সেচের পানি দেয় না। ডিপ অপারেটরের নিজস্ব আবাদি জমিতে জোরপূর্বক কম মজুরিতে কাজ করাতে বাধ্য করতো।
আদিবাসীদের বর্গা চাষের জন্য ১০ বিঘা জমি থাকলে পানি না দেয়ার হুমকি দিয়ে ২ বিঘা জমি জোরপূর্বক বর্গা চাষের জন্য কেড়ে নিত। উপরে বর্ণিত ঘটনাগুলো দীর্ঘদিন যাবত ওই ডিপের আওতায় থাকা কৃষকদের সঙ্গে ঘটে এসেছে। বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে অবহেলা ডিপকেন্দ্রিক অপারেটরদের এক ধরনের জমিদারী কায়েম করেছে যার কাছে কৃষকরা অসহায় প্রজা মাত্র।
আমরা মনে করি বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচ ব্যবস্থার নামে যে শোষণ যন্ত্র তৈরি করেছে তার দায় এড়াতে পারে না। এই অঞ্চলে ডিপ অপারেটরদের কাছে থেকে কৃষকদের জিম্মি দশা লাঘবে সুষ্ঠু তদারকি ও জবাবদিহিতার জায়গা তৈরি করা না গেলে ভবিষ্যতে আরও বহু অসহায় অভিনাথ বা রবি মার্ডি আত্মহত্যার পথ বেছে নেবে।