নেটওয়ার্কিং ব্যবসার ফাঁদ পেতে চারশ’ কোটি টাকা লোপাট

এসএম গ্রুপের এমডি শুভ চৌধুরী পলাতক

পেশায় শিক্ষক ছিলেন মো. মামুনুর রশিদ। করোনা মহামারীতে স্কুল বন্ধ হওয়ায় বেকার হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় অর্থ সংকটে পড়ে যান। সামান্য কিছু পুঁজি ছিল যা বিনিয়োগ করেন এসএম গ্রুপ নামে একটি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানিতে। উদ্দেশ্য ছিল বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি অচল সংসার সচল রাখার একটা বন্দোবস্ত করা। কিন্তু প্রলোভনে পড়ে পুরো টাকাই খোয়াতে হয়েছে। শুধু মামুনুর রশিদই নয়, এমন ৪০ লাখ মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে লাপাত্তা প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) সোহরাব হোসেন শুভ চৌধুরী।

চাল, ডালসহ নিত্যপণ্য মাল্টি লেভেল মার্কেটিং সিস্টেমে বিক্রির মাধ্যমে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে এক বছরে ৪ শতাধিক কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও শুভ চৌধুরী এখনো অধরা। গ্রেপ্তার হয়নি তার সহযোগীরাও। এখন পর্যন্ত এ প্রতারক ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ডজনখানেক মামলা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের টাকায় দিব্বি আরাম-আয়েশে দিন কাটাচ্ছে শুভ চৌধুরী ও তার সহযোগীরা। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতারক শুভ চৌধুরী এখন নতুন ফাঁদ পাতার চেষ্টায় আছে বলে অভিযোগ বিনিয়োগকারীদের।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকার বাসিন্দা শুভ চৌধুরী ডেসটিনি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানিতে চাকরি করার কারণে নেটওয়াকিং মার্কেটিং সিস্টেমের ব্যবসায় অত্যন্ত পারদর্শী। খুব সহজে মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারতেন। যেকোন ব্যক্তিকে রাতারিত কোটিপতি হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিনিয়োগে আগ্রহী করতে ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ। নিজেই খুলে বসেন এসএম গ্রুপ নামের মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি। কোন অফিস না থাকলেও দামি গাড়িতে ঘুরে বেড়ানো আর দামি সব রেস্টুরেন্টে সভা সেমিনারের মাধ্যমে শোনাতেন সফল হওয়ার গল্প। এসব গল্পে শ্রোতা সংগ্রহে শুভ চৌধুরীর ছিল গ্রুপ। যাদের কাজ ছিল বেকার বা হতাশাগ্রস্ত কর্মহীন ব্যক্তিকে তার কাছে নিয়ে আসা। শুভ চৌধুরীর সঙ্গে একবার কথা বললেই যেকোন বিনিয়োগকারী বিনিয়োগের ব্যাপারে আর কিছু চিন্তা করতেন না।

বিনিয়োগকারী মাইনুল ইসলাম সংবাদকে জানান, ২০২১ সালের আগস্ট মাসে একজনের মাধ্যমে তিনি

এসএম গ্রুপে এক হাজার টাকায় আইডি খোলেন। তখন তাকে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার পণ্য ডেলিভারি দেয়া হয়। পরে তার মাধ্যমে ৮ হাজার ব্যক্তির আইডি খোলা হয়। তবে তারা কেউ কোন পণ্য পায়নি। শুরুতে কিছু টাকা দিলেও পরে টাকা দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। ৮ হাজার বিনিয়োগকারীর এক কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ ছিল। এ ঘটনায় তিনি মামলা করেছেন।

তিনি বলেন, শুভ চৌধুরী নিজেই তাদের বলেছেন ৪১ লাখ আইডি তিনি সারাদেশে বিক্রি করেছেন।

শিক্ষক মামুনুর রশিদ বলেন, আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে চাইনি। কিন্তু এমনভাবে আমাকে মগজ ধোলাই দিয়েছে যে, আমি আড়াই লাখ টাকার মতো বিনিয়োগ করেছি। তবে আমার মাধ্যমে কাউকে সেখানে আইডি খোলাইনি। তাহলে অন্যদেরও সর্বনাশ করতাম।

তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের একজন ছিলেন ক্যাপ্টেন সাহাদত। তিনি এক সময় বিমান বাহিনীতে চাকরি করতেন। অবসরে আসার পর যে টাকা পেয়েছেন এখনে বড় অংশ বিনিয়োগ করেছেন। তার মতো অনেকেই আছেন যারা হাজার হাজার আইডি খুলেছেন। প্রথম দিকে টাকা দিলেও পরে কাউকে টাকা বা মালামাল কোনটাই দেয়া হয়নি।

একজন বিনিয়োগকারী বলেন, মামলা হলেও সিআইডি এখনো মূল প্রতারক শুভ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তাকে মাঝে মধ্যে গাজীপুরে দেখা যায় বলে শুনেছি। সিআইডি বলছে আমাদের সহযোগিতা করতে। এখন সব সময় আমাদের পক্ষে শুভ চৌধুরীর গতিবিধি অনুসরণ করা সম্ভব হয় না। সিআইডি চাইলে যেকোন সময় শুভ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করতে পারে।

সিআইডির ঢাকা মেট্টোর প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন জানান, এসএম গ্রুপ নামে একটি মাল্টিলেভেল কোম্পানি করে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র প্রতারণা করছে বলে অভিযোগ আসে সিআইডির কাছে। প্রতারিত বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত শুরু করে সিআইডির ঢাকা মেট্টো উত্তরের টিম। পুলিশ সুপার খালিদুল হক হাওলাদার তদন্তের সমন্বয়কারী হিসেবে ছিলেন। টিমের এএসপি জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে এসএম গ্রুপের মার্কেটিং ডিরেক্টর মো. সাইদুর রহমান সোহেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে গত ১ জানুয়ারি। এ ঘটনায় সে সময় একজন ভুক্তভোগী মামলা করেছে। প্রতিষ্ঠানটির মূল মালিক সোহরাব হোসেন শুভ চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন এখনো আত্মগোপনে আছে। তাদের গ্রেপ্তারে সিআইডি কাজ করছে।

পুলিশ সুপার খালিদুল হক হাওলাদার জানিয়েছেন, হাবিবুর রহমান নামের বিনিয়োগকারীর করা মামলায় গ্রেপ্তার সাইদুর রহমান সোহেলকে রিমান্ড হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিআইডি। রিমান্ড হেফাজতে সোহেল অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। এখানে ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন এমন গ্রাহকও পাওয়া গেছে। ৫০ জনের মতো ভুক্তভোগী সিআইডির কার্যালয়ে এসেছিল। টাকা চাওয়ায় অনেক গ্রাহককে নির্যাতন করা হয়েছে এমন ভুক্তভোগীও পাওয়া গেছে।

সিআইডি জানিয়েছে বৈধ কোন কাগজপত্র ছাড়াই এসএম গ্রুপ নাম দিয়ে মাল্টিলেভের মার্কেটিং সিস্টেমে (এমএলএম) চাল, ডাল তেল অনলাইনে পেতে আইডি খোলার অফার দেয়া হয়। এসব পণ্য কেনার জন্য বিনিয়োগ হিসেবে এক হাজার টাকায় আইডি খুললে ওই আইডির বিপরীতে যে টাকা বিনিয়েগ করা হবে ৩ মাসে তার দিগুণ টাকা লাভ করা যাবে বলে প্রচারণা চালানো হয়। বিভিন্ন ব্যক্তিদের মাধ্যমে প্রথমে টার্গেট ব্যক্তিদের এখানে বিনিয়োগ করানো হয়। বলা হয় চাল ডাল তেলসহ বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয়ের জন্য আইডি খোলার পর প্রথমে সেগুলো নিয়মিত সরবরাহ করবে। এরপর তাদের বলা হতো পুরাতন সদস্যরা কেউ যদি নতুন বিনিয়োগকারী তৈরি করতে পারে তার বিপরীতে নতুন বিনিয়োগকারীরা যে টাকা বিনিয়োগ করবে বা আইডি খুলবে এজন্য নির্ধারিত লভ্যাংশ মিলবে। পুরাতন বিনিয়োগকারীদের এভাবে লোভ দেখিয়ে তাদের মাধ্যমে নতুন বিনিয়োগকারী এনে কোম্পানিতে যুক্ত করা হতো।

তদন্তে বেরিয়ে আসে আইডির বিপরীতে পয়েন্ট বা অর্থ যুক্ত হলেও সে টাকা গ্রাহকদের দেয়া হতো না। বিভিন্ন সমস্যা বা বিভিন্ন নিয়মের কথা বলে টাকা পরে দেয়া হবে বলে জানানো হতো। এভাবে তারা ৩০০ আইডি বিক্রি করে মার্কেট থেকে ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কোন কোন গ্রাহক একাধিক আইডিও খুলেছে। আইডি খোলার পর প্রথমে কিছু টাকা পেলেও পরে আর টাকা পায়নি।

সিআইডি জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি অভিযান চালিয়ে সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ম্যানেজার মো. সাইদুর রহমান সোহেলকে আটক করা হলেও প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) সোহরাব হোসেন শুভ চৌধুরী, মার্কেটিং এবং একাউন্টস কর্মকর্তা নাজমুন্নাহার, আইটি ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ ইমন নামে ৫ জন অভিযানের সময় পালিয়ে যায়। সিআইডি অফিসে তল্লাশি চালিয়ে একটি এলিয়ন প্রাইভেট কার, রেজিস্টার খাতা, চাকরি প্রত্যাশীদের বায়োডাটা, লোহার রড, হাতুরি, সিল, ডিলার নিয়োগের চুক্তিপত্র, মোবাইলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করেছে। পলাতক আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।

রবিবার, ১০ এপ্রিল ২০২২ , ২৭ চৈত্র ১৪২৮ ০৮ রমাদ্বান ১৪৪৩

নেটওয়ার্কিং ব্যবসার ফাঁদ পেতে চারশ’ কোটি টাকা লোপাট

এসএম গ্রুপের এমডি শুভ চৌধুরী পলাতক

সাইফ বাবলু

পেশায় শিক্ষক ছিলেন মো. মামুনুর রশিদ। করোনা মহামারীতে স্কুল বন্ধ হওয়ায় বেকার হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় অর্থ সংকটে পড়ে যান। সামান্য কিছু পুঁজি ছিল যা বিনিয়োগ করেন এসএম গ্রুপ নামে একটি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানিতে। উদ্দেশ্য ছিল বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি অচল সংসার সচল রাখার একটা বন্দোবস্ত করা। কিন্তু প্রলোভনে পড়ে পুরো টাকাই খোয়াতে হয়েছে। শুধু মামুনুর রশিদই নয়, এমন ৪০ লাখ মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে লাপাত্তা প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) সোহরাব হোসেন শুভ চৌধুরী।

চাল, ডালসহ নিত্যপণ্য মাল্টি লেভেল মার্কেটিং সিস্টেমে বিক্রির মাধ্যমে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে এক বছরে ৪ শতাধিক কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও শুভ চৌধুরী এখনো অধরা। গ্রেপ্তার হয়নি তার সহযোগীরাও। এখন পর্যন্ত এ প্রতারক ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ডজনখানেক মামলা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের টাকায় দিব্বি আরাম-আয়েশে দিন কাটাচ্ছে শুভ চৌধুরী ও তার সহযোগীরা। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতারক শুভ চৌধুরী এখন নতুন ফাঁদ পাতার চেষ্টায় আছে বলে অভিযোগ বিনিয়োগকারীদের।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকার বাসিন্দা শুভ চৌধুরী ডেসটিনি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানিতে চাকরি করার কারণে নেটওয়াকিং মার্কেটিং সিস্টেমের ব্যবসায় অত্যন্ত পারদর্শী। খুব সহজে মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারতেন। যেকোন ব্যক্তিকে রাতারিত কোটিপতি হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিনিয়োগে আগ্রহী করতে ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ। নিজেই খুলে বসেন এসএম গ্রুপ নামের মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি। কোন অফিস না থাকলেও দামি গাড়িতে ঘুরে বেড়ানো আর দামি সব রেস্টুরেন্টে সভা সেমিনারের মাধ্যমে শোনাতেন সফল হওয়ার গল্প। এসব গল্পে শ্রোতা সংগ্রহে শুভ চৌধুরীর ছিল গ্রুপ। যাদের কাজ ছিল বেকার বা হতাশাগ্রস্ত কর্মহীন ব্যক্তিকে তার কাছে নিয়ে আসা। শুভ চৌধুরীর সঙ্গে একবার কথা বললেই যেকোন বিনিয়োগকারী বিনিয়োগের ব্যাপারে আর কিছু চিন্তা করতেন না।

বিনিয়োগকারী মাইনুল ইসলাম সংবাদকে জানান, ২০২১ সালের আগস্ট মাসে একজনের মাধ্যমে তিনি

এসএম গ্রুপে এক হাজার টাকায় আইডি খোলেন। তখন তাকে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার পণ্য ডেলিভারি দেয়া হয়। পরে তার মাধ্যমে ৮ হাজার ব্যক্তির আইডি খোলা হয়। তবে তারা কেউ কোন পণ্য পায়নি। শুরুতে কিছু টাকা দিলেও পরে টাকা দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। ৮ হাজার বিনিয়োগকারীর এক কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ ছিল। এ ঘটনায় তিনি মামলা করেছেন।

তিনি বলেন, শুভ চৌধুরী নিজেই তাদের বলেছেন ৪১ লাখ আইডি তিনি সারাদেশে বিক্রি করেছেন।

শিক্ষক মামুনুর রশিদ বলেন, আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে চাইনি। কিন্তু এমনভাবে আমাকে মগজ ধোলাই দিয়েছে যে, আমি আড়াই লাখ টাকার মতো বিনিয়োগ করেছি। তবে আমার মাধ্যমে কাউকে সেখানে আইডি খোলাইনি। তাহলে অন্যদেরও সর্বনাশ করতাম।

তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের একজন ছিলেন ক্যাপ্টেন সাহাদত। তিনি এক সময় বিমান বাহিনীতে চাকরি করতেন। অবসরে আসার পর যে টাকা পেয়েছেন এখনে বড় অংশ বিনিয়োগ করেছেন। তার মতো অনেকেই আছেন যারা হাজার হাজার আইডি খুলেছেন। প্রথম দিকে টাকা দিলেও পরে কাউকে টাকা বা মালামাল কোনটাই দেয়া হয়নি।

একজন বিনিয়োগকারী বলেন, মামলা হলেও সিআইডি এখনো মূল প্রতারক শুভ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তাকে মাঝে মধ্যে গাজীপুরে দেখা যায় বলে শুনেছি। সিআইডি বলছে আমাদের সহযোগিতা করতে। এখন সব সময় আমাদের পক্ষে শুভ চৌধুরীর গতিবিধি অনুসরণ করা সম্ভব হয় না। সিআইডি চাইলে যেকোন সময় শুভ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করতে পারে।

সিআইডির ঢাকা মেট্টোর প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন জানান, এসএম গ্রুপ নামে একটি মাল্টিলেভেল কোম্পানি করে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র প্রতারণা করছে বলে অভিযোগ আসে সিআইডির কাছে। প্রতারিত বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত শুরু করে সিআইডির ঢাকা মেট্টো উত্তরের টিম। পুলিশ সুপার খালিদুল হক হাওলাদার তদন্তের সমন্বয়কারী হিসেবে ছিলেন। টিমের এএসপি জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে এসএম গ্রুপের মার্কেটিং ডিরেক্টর মো. সাইদুর রহমান সোহেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে গত ১ জানুয়ারি। এ ঘটনায় সে সময় একজন ভুক্তভোগী মামলা করেছে। প্রতিষ্ঠানটির মূল মালিক সোহরাব হোসেন শুভ চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন এখনো আত্মগোপনে আছে। তাদের গ্রেপ্তারে সিআইডি কাজ করছে।

পুলিশ সুপার খালিদুল হক হাওলাদার জানিয়েছেন, হাবিবুর রহমান নামের বিনিয়োগকারীর করা মামলায় গ্রেপ্তার সাইদুর রহমান সোহেলকে রিমান্ড হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিআইডি। রিমান্ড হেফাজতে সোহেল অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। এখানে ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন এমন গ্রাহকও পাওয়া গেছে। ৫০ জনের মতো ভুক্তভোগী সিআইডির কার্যালয়ে এসেছিল। টাকা চাওয়ায় অনেক গ্রাহককে নির্যাতন করা হয়েছে এমন ভুক্তভোগীও পাওয়া গেছে।

সিআইডি জানিয়েছে বৈধ কোন কাগজপত্র ছাড়াই এসএম গ্রুপ নাম দিয়ে মাল্টিলেভের মার্কেটিং সিস্টেমে (এমএলএম) চাল, ডাল তেল অনলাইনে পেতে আইডি খোলার অফার দেয়া হয়। এসব পণ্য কেনার জন্য বিনিয়োগ হিসেবে এক হাজার টাকায় আইডি খুললে ওই আইডির বিপরীতে যে টাকা বিনিয়েগ করা হবে ৩ মাসে তার দিগুণ টাকা লাভ করা যাবে বলে প্রচারণা চালানো হয়। বিভিন্ন ব্যক্তিদের মাধ্যমে প্রথমে টার্গেট ব্যক্তিদের এখানে বিনিয়োগ করানো হয়। বলা হয় চাল ডাল তেলসহ বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয়ের জন্য আইডি খোলার পর প্রথমে সেগুলো নিয়মিত সরবরাহ করবে। এরপর তাদের বলা হতো পুরাতন সদস্যরা কেউ যদি নতুন বিনিয়োগকারী তৈরি করতে পারে তার বিপরীতে নতুন বিনিয়োগকারীরা যে টাকা বিনিয়োগ করবে বা আইডি খুলবে এজন্য নির্ধারিত লভ্যাংশ মিলবে। পুরাতন বিনিয়োগকারীদের এভাবে লোভ দেখিয়ে তাদের মাধ্যমে নতুন বিনিয়োগকারী এনে কোম্পানিতে যুক্ত করা হতো।

তদন্তে বেরিয়ে আসে আইডির বিপরীতে পয়েন্ট বা অর্থ যুক্ত হলেও সে টাকা গ্রাহকদের দেয়া হতো না। বিভিন্ন সমস্যা বা বিভিন্ন নিয়মের কথা বলে টাকা পরে দেয়া হবে বলে জানানো হতো। এভাবে তারা ৩০০ আইডি বিক্রি করে মার্কেট থেকে ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কোন কোন গ্রাহক একাধিক আইডিও খুলেছে। আইডি খোলার পর প্রথমে কিছু টাকা পেলেও পরে আর টাকা পায়নি।

সিআইডি জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি অভিযান চালিয়ে সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ম্যানেজার মো. সাইদুর রহমান সোহেলকে আটক করা হলেও প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) সোহরাব হোসেন শুভ চৌধুরী, মার্কেটিং এবং একাউন্টস কর্মকর্তা নাজমুন্নাহার, আইটি ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ ইমন নামে ৫ জন অভিযানের সময় পালিয়ে যায়। সিআইডি অফিসে তল্লাশি চালিয়ে একটি এলিয়ন প্রাইভেট কার, রেজিস্টার খাতা, চাকরি প্রত্যাশীদের বায়োডাটা, লোহার রড, হাতুরি, সিল, ডিলার নিয়োগের চুক্তিপত্র, মোবাইলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করেছে। পলাতক আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।