ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বর্বরতার অভিযোগ রাশিয়ার

দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার হুঁশিয়ারি জেলেনস্কির

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে ক্রামাটোর্স্ক শহরের একটি রেলস্টেশনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কয়েক ডজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পশ্চিমা দেশগুলোকে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।

এদিকে ট্রেন স্টেশনে রকেট হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এক ভাষণে তিনি বলেছেন, এর জন্য দায়ী প্রত্যেককেই বিচারের আওতায় আনা হবে।

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বর্বরতার অভিযোগ

আরটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুরোধ করেছে যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যাতে ইউক্রেনীয় বাহিনীর কর্মকা-ের একটি নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করে তাদের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে এবং সেই সঙ্গে কিয়েভকে অগ্রহণযোগ্য যুদ্ধ পদ্ধতি ত্যাগ করার আহ্বান জানায়।

ক্রামাটোর্স্ক রেলস্টেশনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য মস্কো দায়ী করেছে কিয়েভকে। হামলার সময় রেলস্টেশনে থাকা ব্যক্তিরা যুদ্ধাঞ্চল ত্যাগের চেষ্টা করছিল। রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর দাবি, তারা ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ এলাকা চিহ্নিত করতে পেরেছে। ক্রামাটোর্স্কের দক্ষিণ-পশ্চিমের শহর ডোব্রপোল থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছে। শহরটি ইউক্রেনীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছিল, রেলস্টেশনে হামলাটি চালানো হয়েছে ইউক্রেনের তোচকা-ইউ ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে। এই হামলাকে ‘বর্বর আক্রমণ’ বলে নিন্দা করেছে এবং বলেছে যে এই হামলাই প্রমাণ করে যে রাশিয়ার স্বীকৃত ডনবাস অঞ্চলের দুটি প্রজাতন্ত্রকে সুরক্ষার জন্য রাশিয়ার সামরিক অভিযান সঠিক ছিল। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আমরা মনে করি, কিয়েভ ন্যায়বিচার এড়াতে পারবে না।’ তবে ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় রেল কোম্পানি বলছে ক্রামাটোর্স্ক রেলস্টেশনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এই যুদ্ধের মধ্যেই ইউক্রেনের যে কয়টি রেলস্টেশন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, তার মধ্যে ক্রামাটোর্স্ক রেলস্টেশন একটি। এই রেলস্টেশনটি পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ এলাকা থেকে বেরিয়ে আসার একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ।

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের যে কয়েকটি রেলস্টেশন এখনো যাত্রীসেবা দিয়ে যাচ্ছে সেসবের মধ্যে ক্রামাটোর্¯‹ শহরের ওই স্টেশনটি অন্যতম। রুশ সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় যাত্রীদের নিরাপদস্থানে সরিয়ে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ক্রামাটোর্¯‹। শুক্রবার সকালে যখন রকেট হামলা হয়, সে সময়ও হাজার হাজার মানুষ ছিলেন স্টেশন ও তার আশপাশের এলাকায়। দোনেৎস্কের গভর্নর পাভলো কিরিলেনহো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে এক পোস্টে জানান, দনবাস (দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক) এলাকায় রুশ ও ইউক্রেনীয় বাহিনীর মধ্যে সংঘাত বাড়তে থাকায় বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নিতে কয়েকটি ট্রেন অপেক্ষা করছিল ক্রামাটোর্¯‹ স্টেশনে। ট্রেনগুলোতে ওঠার জন্য যখন যাত্রীদের ব্যস্ততা শুরু হয়েছে, সে সময়েই ২ টি রকেট আঘাত হানে এবং হতাহতের ঘটনা ঘটে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।

ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।

বিচারের আওতায় আনার হুঁশিয়ারি

জেলেনস্কি বলেন, দুনিয়ার সব নেতৃস্থানীয় দেশ ইতোমধ্যেই ক্রামাটোর্স্কে রুশ হামলার নিন্দা জানিয়েছে। আমরা এই যুদ্ধাপরাধের জন্য একটি কঠিন বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশা করছি। এ ঘটনা রাশিয়ার দ্বারা সংঘটিত আরেকটি যুদ্ধাপরাধ। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে আলজাজিরা।

ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় রেল কোম্পানি দাবি করে, ক্রামাটোর্স্ক ট্রেন স্টেশন ব্যবহার করে বেসামরিক মানুষের সরে যাওয়ার চেষ্টার সময়ে রকেট হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে অন্তত ৫০ জন নিহত এবং আরও ৮৭ জন আহত হয়েছে। মস্কোর পক্ষ থেকে অবশ্য ট্রেন স্টেশনটিতে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

এই অভিযোগকে ‘উসকানি’ এবং ‘চরম অসত্য’ বলে দাবি করেছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট রবারতা মেটসোলা বলেছেন, ইউক্রেনের সাধারণ জনগণের ওপর যেভাবে হামলা করা হচ্ছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, গণতন্ত্র ও নিজ দেশের জন্য লড়াইরত ইউক্রেনীয়দের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

image

ক্রামাটোর্স্ক রেলস্টেশনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মরদেহ উদ্ধার করছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা -ডেইলি মেইল

আরও খবর
পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপ সুখকর ছিল না : ম্যাক্রোঁ
রুশ কয়লা থেকে মুখ ফেরালো ইউরোপ

রবিবার, ১০ এপ্রিল ২০২২ , ২৭ চৈত্র ১৪২৮ ০৮ রমাদ্বান ১৪৪৩

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বর্বরতার অভিযোগ রাশিয়ার

দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার হুঁশিয়ারি জেলেনস্কির

image

ক্রামাটোর্স্ক রেলস্টেশনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মরদেহ উদ্ধার করছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা -ডেইলি মেইল

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে ক্রামাটোর্স্ক শহরের একটি রেলস্টেশনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কয়েক ডজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পশ্চিমা দেশগুলোকে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।

এদিকে ট্রেন স্টেশনে রকেট হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এক ভাষণে তিনি বলেছেন, এর জন্য দায়ী প্রত্যেককেই বিচারের আওতায় আনা হবে।

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বর্বরতার অভিযোগ

আরটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুরোধ করেছে যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যাতে ইউক্রেনীয় বাহিনীর কর্মকা-ের একটি নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করে তাদের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে এবং সেই সঙ্গে কিয়েভকে অগ্রহণযোগ্য যুদ্ধ পদ্ধতি ত্যাগ করার আহ্বান জানায়।

ক্রামাটোর্স্ক রেলস্টেশনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য মস্কো দায়ী করেছে কিয়েভকে। হামলার সময় রেলস্টেশনে থাকা ব্যক্তিরা যুদ্ধাঞ্চল ত্যাগের চেষ্টা করছিল। রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর দাবি, তারা ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ এলাকা চিহ্নিত করতে পেরেছে। ক্রামাটোর্স্কের দক্ষিণ-পশ্চিমের শহর ডোব্রপোল থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছে। শহরটি ইউক্রেনীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছিল, রেলস্টেশনে হামলাটি চালানো হয়েছে ইউক্রেনের তোচকা-ইউ ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে। এই হামলাকে ‘বর্বর আক্রমণ’ বলে নিন্দা করেছে এবং বলেছে যে এই হামলাই প্রমাণ করে যে রাশিয়ার স্বীকৃত ডনবাস অঞ্চলের দুটি প্রজাতন্ত্রকে সুরক্ষার জন্য রাশিয়ার সামরিক অভিযান সঠিক ছিল। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আমরা মনে করি, কিয়েভ ন্যায়বিচার এড়াতে পারবে না।’ তবে ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় রেল কোম্পানি বলছে ক্রামাটোর্স্ক রেলস্টেশনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এই যুদ্ধের মধ্যেই ইউক্রেনের যে কয়টি রেলস্টেশন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, তার মধ্যে ক্রামাটোর্স্ক রেলস্টেশন একটি। এই রেলস্টেশনটি পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ এলাকা থেকে বেরিয়ে আসার একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ।

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের যে কয়েকটি রেলস্টেশন এখনো যাত্রীসেবা দিয়ে যাচ্ছে সেসবের মধ্যে ক্রামাটোর্¯‹ শহরের ওই স্টেশনটি অন্যতম। রুশ সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় যাত্রীদের নিরাপদস্থানে সরিয়ে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ক্রামাটোর্¯‹। শুক্রবার সকালে যখন রকেট হামলা হয়, সে সময়ও হাজার হাজার মানুষ ছিলেন স্টেশন ও তার আশপাশের এলাকায়। দোনেৎস্কের গভর্নর পাভলো কিরিলেনহো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে এক পোস্টে জানান, দনবাস (দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক) এলাকায় রুশ ও ইউক্রেনীয় বাহিনীর মধ্যে সংঘাত বাড়তে থাকায় বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নিতে কয়েকটি ট্রেন অপেক্ষা করছিল ক্রামাটোর্¯‹ স্টেশনে। ট্রেনগুলোতে ওঠার জন্য যখন যাত্রীদের ব্যস্ততা শুরু হয়েছে, সে সময়েই ২ টি রকেট আঘাত হানে এবং হতাহতের ঘটনা ঘটে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।

ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।

বিচারের আওতায় আনার হুঁশিয়ারি

জেলেনস্কি বলেন, দুনিয়ার সব নেতৃস্থানীয় দেশ ইতোমধ্যেই ক্রামাটোর্স্কে রুশ হামলার নিন্দা জানিয়েছে। আমরা এই যুদ্ধাপরাধের জন্য একটি কঠিন বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশা করছি। এ ঘটনা রাশিয়ার দ্বারা সংঘটিত আরেকটি যুদ্ধাপরাধ। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে আলজাজিরা।

ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় রেল কোম্পানি দাবি করে, ক্রামাটোর্স্ক ট্রেন স্টেশন ব্যবহার করে বেসামরিক মানুষের সরে যাওয়ার চেষ্টার সময়ে রকেট হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে অন্তত ৫০ জন নিহত এবং আরও ৮৭ জন আহত হয়েছে। মস্কোর পক্ষ থেকে অবশ্য ট্রেন স্টেশনটিতে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

এই অভিযোগকে ‘উসকানি’ এবং ‘চরম অসত্য’ বলে দাবি করেছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট রবারতা মেটসোলা বলেছেন, ইউক্রেনের সাধারণ জনগণের ওপর যেভাবে হামলা করা হচ্ছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, গণতন্ত্র ও নিজ দেশের জন্য লড়াইরত ইউক্রেনীয়দের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে।