পাবনায় লোকসানের মুখে পেঁয়াজ চাষিরা

এখন চলছে পেঁয়াজ ঘরে তোলার মৌসুম। পাবনার চাষিরা তাদের পেঁয়াজ ঘরে তুলতে শুরু করেছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ফলন কম হয়েছে। এর উপরে আবার বাজার দাম কম হওয়ায় লোকসানের শিকার হয়েছে কৃষকরা।

পাবনার জেলায় এবার পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চলতি বছর জেলায় পেঁয়াজের আবাদ প্রায় দেড় হাজার হেক্টর বেশি হয়েছে। শীতের সময় জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে একাধিকবার বৃষ্টি হওয়ার কারণে পেঁঁয়াজের ফলন কিছুটা কম হয়েছে। অধিকাংশ পেঁয়াজ মাঠ থেকে কৃষকের ঘরে উঠে গেছে।

কৃষকরা তীব্র গরম উপেক্ষা করে রোজার মধ্যে পেঁয়াজ তুলে তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করছে। খেত মজুর ও কৃষক পরিবারের সদস্যরা নিজ নিজ জমি থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ এবং তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে দিন রাত কাজ করছে।

সুজানগর উপজেলার উলাট গ্রামের কৃষক রইজ উদ্দিন বলেন, তিনি গত বছর যে ফলন পেয়েছেন তার চেয়ে এবার প্রায় এক দশমাংশ ফলন কম পেয়েছেন। কারণ হিসেবে তিনি শীতের সময়ের অতিবৃষ্টিকে দুষলেন। সাঁথিয়া উপজেলার ঘুঘুদহ গ্রামের রহতম আলী জানান তিনি ৪০ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করতে পেঁয়াজের বীজে সাড়ে তিন হাজার, জমি চাষে আড়াই হাজার, সার কিনতে তিন হাজার, কীটনাশকে চার হাজার, জমিতে চারা লাগানো শ্রমিক বাবদ পাঁচ হাজার, সেচ বাবদ ১৮শ’, জমি থেকে আগাছা ও গোড়া আলগা বা নিড়ানি বাবদ পাঁচ হাজার, জমি থেকে পেঁয়াজ তোলা বাবদ চার হাজার টাকা লেগেছে। এক বিঘা জমির লীজ বাবদ মালিককে ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। প্রতি বিঘায় প্রায় ৪০/৪২ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। সে তুলনায় পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় লোকসান হচ্ছে। জেলার কাশিনাথপুর চিনাখাড়া, বনগ্রাম, বোয়াইলমারী, করমজা চতুর হাট ধুলাউড়ি, সাতাবড়িয়া পেঁয়াজের হাট ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে পেঁয়াজ মান ভেদে ৬শ’ থেকে ৯শ’ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। সুজানগর উপজেলার হাটখালি, নাজিরগঞ্জ, ভায়না সাঁথিয়া উপজেলার গৌরীগ্রাম, কালাইচাড়া, বিষ্ণুবাড়িয়া, ভবানিপুর, কল্যাণপুর, সাতানিরচর, পুরানচর, বিলমহিষা, শঙ্করপাশা গ্রামের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে যা শ্রমিকদের দিতেই শেষ হচ্ছে।

সাঁথিয়া উপজেলা সদরের বোয়াইলমারী বাজারে প্রতিদিন ভোর থেকে পেঁয়াজ বিকিকিনি হয়। সোমবার ও বৃহষ্পতিবার হাটের দিন এত পেঁয়াজ আমদানি হয় যে হাটে স্থান সংকুলান হচ্ছিল না, বাজার মন্দা। ব্যাপারীদের চাহিদা কম। অনেক কৃষক পেঁয়াজ বিক্রি করতে না পেরে ফেরত নিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

ক্ষুদ্র কৃষক রজব আলী বললেন, হাটে চার মণ পেঁয়াজ নিয়েছিলাম। প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ৭শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। তিনি বললেন, এক মণ পেঁয়াজ উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে প্রায় ১২শ’ থেকে ১৩শ’ টাকা। ঋণের টাকা দিতে

জায়গা-জমি বিক্রি করতে হবে। উপজেলার অবস্থাপন্ন কৃষকরা তাদের জমির পেঁয়াজ ঘরে সংরক্ষণ করছে বেশি দামের আশায়।

ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা সাংসারিক বিভিন্ন প্রয়োজনে হাটে পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে করে তারা কম দাম পাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়ছে। পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, শীতের সময় বৃষ্টিজনিত কারণে পেঁয়াজের ফুল বেশি হয়েছে। তাতে ফলন কিছুটা কমেছে। তবে এবার ফসল উত্তোলনের সময় বৃষ্টি না হওয়ায় সংরক্ষণে সুবিধা হবে। এবারের পেঁয়াজে পচন ধরবে না, দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যাবে।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল রমজানের আগে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করায় দেশি পেঁয়াজের বাজার এবার পেঁয়াজ উত্তোলনের মৌসুমে কমেছে। তারা আশা করছেন আগামী মাসে পেঁয়াজের বাজার কিছুটা বাড়বে।

রবিবার, ১০ এপ্রিল ২০২২ , ২৭ চৈত্র ১৪২৮ ০৮ রমাদ্বান ১৪৪৩

পাবনায় লোকসানের মুখে পেঁয়াজ চাষিরা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, পাবনা

এখন চলছে পেঁয়াজ ঘরে তোলার মৌসুম। পাবনার চাষিরা তাদের পেঁয়াজ ঘরে তুলতে শুরু করেছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ফলন কম হয়েছে। এর উপরে আবার বাজার দাম কম হওয়ায় লোকসানের শিকার হয়েছে কৃষকরা।

পাবনার জেলায় এবার পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চলতি বছর জেলায় পেঁয়াজের আবাদ প্রায় দেড় হাজার হেক্টর বেশি হয়েছে। শীতের সময় জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে একাধিকবার বৃষ্টি হওয়ার কারণে পেঁঁয়াজের ফলন কিছুটা কম হয়েছে। অধিকাংশ পেঁয়াজ মাঠ থেকে কৃষকের ঘরে উঠে গেছে।

কৃষকরা তীব্র গরম উপেক্ষা করে রোজার মধ্যে পেঁয়াজ তুলে তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করছে। খেত মজুর ও কৃষক পরিবারের সদস্যরা নিজ নিজ জমি থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ এবং তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে দিন রাত কাজ করছে।

সুজানগর উপজেলার উলাট গ্রামের কৃষক রইজ উদ্দিন বলেন, তিনি গত বছর যে ফলন পেয়েছেন তার চেয়ে এবার প্রায় এক দশমাংশ ফলন কম পেয়েছেন। কারণ হিসেবে তিনি শীতের সময়ের অতিবৃষ্টিকে দুষলেন। সাঁথিয়া উপজেলার ঘুঘুদহ গ্রামের রহতম আলী জানান তিনি ৪০ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করতে পেঁয়াজের বীজে সাড়ে তিন হাজার, জমি চাষে আড়াই হাজার, সার কিনতে তিন হাজার, কীটনাশকে চার হাজার, জমিতে চারা লাগানো শ্রমিক বাবদ পাঁচ হাজার, সেচ বাবদ ১৮শ’, জমি থেকে আগাছা ও গোড়া আলগা বা নিড়ানি বাবদ পাঁচ হাজার, জমি থেকে পেঁয়াজ তোলা বাবদ চার হাজার টাকা লেগেছে। এক বিঘা জমির লীজ বাবদ মালিককে ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। প্রতি বিঘায় প্রায় ৪০/৪২ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। সে তুলনায় পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় লোকসান হচ্ছে। জেলার কাশিনাথপুর চিনাখাড়া, বনগ্রাম, বোয়াইলমারী, করমজা চতুর হাট ধুলাউড়ি, সাতাবড়িয়া পেঁয়াজের হাট ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে পেঁয়াজ মান ভেদে ৬শ’ থেকে ৯শ’ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। সুজানগর উপজেলার হাটখালি, নাজিরগঞ্জ, ভায়না সাঁথিয়া উপজেলার গৌরীগ্রাম, কালাইচাড়া, বিষ্ণুবাড়িয়া, ভবানিপুর, কল্যাণপুর, সাতানিরচর, পুরানচর, বিলমহিষা, শঙ্করপাশা গ্রামের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে যা শ্রমিকদের দিতেই শেষ হচ্ছে।

সাঁথিয়া উপজেলা সদরের বোয়াইলমারী বাজারে প্রতিদিন ভোর থেকে পেঁয়াজ বিকিকিনি হয়। সোমবার ও বৃহষ্পতিবার হাটের দিন এত পেঁয়াজ আমদানি হয় যে হাটে স্থান সংকুলান হচ্ছিল না, বাজার মন্দা। ব্যাপারীদের চাহিদা কম। অনেক কৃষক পেঁয়াজ বিক্রি করতে না পেরে ফেরত নিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

ক্ষুদ্র কৃষক রজব আলী বললেন, হাটে চার মণ পেঁয়াজ নিয়েছিলাম। প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ৭শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। তিনি বললেন, এক মণ পেঁয়াজ উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে প্রায় ১২শ’ থেকে ১৩শ’ টাকা। ঋণের টাকা দিতে

জায়গা-জমি বিক্রি করতে হবে। উপজেলার অবস্থাপন্ন কৃষকরা তাদের জমির পেঁয়াজ ঘরে সংরক্ষণ করছে বেশি দামের আশায়।

ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা সাংসারিক বিভিন্ন প্রয়োজনে হাটে পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে করে তারা কম দাম পাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়ছে। পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, শীতের সময় বৃষ্টিজনিত কারণে পেঁয়াজের ফুল বেশি হয়েছে। তাতে ফলন কিছুটা কমেছে। তবে এবার ফসল উত্তোলনের সময় বৃষ্টি না হওয়ায় সংরক্ষণে সুবিধা হবে। এবারের পেঁয়াজে পচন ধরবে না, দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যাবে।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল রমজানের আগে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করায় দেশি পেঁয়াজের বাজার এবার পেঁয়াজ উত্তোলনের মৌসুমে কমেছে। তারা আশা করছেন আগামী মাসে পেঁয়াজের বাজার কিছুটা বাড়বে।