রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় : ক্যাম্পাস এখন গাছের জাদুঘর

গাছপালা বিহীন ধু ধু প্রান্তর রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখন সবুজের সমারোহ। মাত্র ৯ বছরে পুরো ক্যাম্পাসে রোপণ করা ৩০০ প্রজাতির বিভিন্ন দুর্লভ গাছ রোপণ করা হয়। সেই গাছের সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজারে। পুরো ক্যাম্পাস এখন শিক্ষার্থীসহ ঘুরতে আসা হাজার হাজার মানুষের মাঝে এক দৃষ্টিনন্দন নৈসর্গিক সৌন্দর্য। এ যেন গাছের জাদুঘর।

২০১৩ সালে নবনির্মিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা এসে দেখে পুরো ক্যাম্পাস খা খা করছে, কোথাও দাঁড়ানোর জায়গা নেই। ছায়ার নিচে একটু দাঁড়িয়ে রোদের তীব্রতা থেকে নিজেদের রক্ষা করবে কোন ব্যবস্থাই ছিল না। ছিল না গাছপালা, যার ছায়ায় রোদের কবল থেকে নিজেকে রক্ষা করে নির্মল বাতাস গ্রহণ করবে।

এ সময় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের সহায়তায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা সংগ্রহ করে গাছ লাগানো শুরু করেন। মাত্র ৯ বছরের মধ্যেই দেখতে দেখতে পুরো ক্যাম্পাসে ৩০০ প্রজাতির ৩৬ হাজার গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে গেছে। এ যেন দৃষ্টিনন্দন সবুজের সমারোহ। পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে এখন সবুজের সমারোহ। শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং ক্যাম্পাস দেখতে আসা নারী পুরুষ গাছের নিচে অবস্থান করে নির্মল বাতাস আর সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। বাংলাদেশে আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০০ প্রজাতির ৩৬ হাজার গাছ নেই। এর মধ্যে ওষুধি, ফলদ, বনজসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ আছে। বিশেষ করে অনেক দুর্লভ

প্রজাতির গাছ আছে যা এখন আর দেখতে পাওয়া যায় না।

ড. তুহিন ওয়াদুদ জানান, আমরা যেভানেই খবর পেয়েছি সেখানে গিয়ে গাছের চারা সংগ্রহ করেছি। আমাদের বেশি আগ্রহ ছিল বিরল প্রজাতির গাছের চারা সংগ্রহ করা। তিনি জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে বিরল প্রজাতির অনেক গাছের চারা আমরা রোপণ করে গাছ লাগিয়েছি। যেগুলো এখন স্ব-মহিমায় দাঁড়িয়ে আছে। এসব বিরল প্রজাতির গাছের মধ্যে আগর, ইটোরিয়া, উদাল, কইনার, কুম্ভী, কুরসি, কুসুম, কাইজেলিয়া, কাউফল, কাজুবাদাম, কানাইডিঙা, কেভেভুইয়া, গি�রিসিডিয়া, চাপালিশ, চালমুগরা, চিকরাশি, জঙলিবাদাম, জেকারান্ডা, ঝুমকাভাদি, ঝুমকোলতা, টিকচাম্বুল, ঢাকিজাম, তমাল, তালমুগরা, তুন, তেলসুর, নাগলিঙ্গম, নীলমণিলতা, পাদাউক, পানিয়াল, পালাম, পুত্রঞ্জীব (২), বনআশরা, বাজনা, বিজলঘণ্টা, বুদ্ধ নারিকেল, ভুঁইকদম, মণিমালা, মহুয়া, মাইলাম, রক্তন, রসকাউ, লকাট, লালসোনালু, লোহা, সিভিট, সিন্দুরী, সুন্দরী, সুলতান চাঁপা, অশোক, হলদু, হিজলসহ অনেক গাছ বাংলাদেশে কোন জায়গাতেই এক জায়গায় পাওয়া যাবে না।

এসব বিরল প্রজাতির অনেক গাছে হয়তো হারিয়ে গেছে। তবে আমরা যেসব বিরল প্রজাতির গাছ রোপণ করেছি এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে যেমন সমৃদ্ধ করেছে তেমনি এই গাছের খোঁজে দূূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন দেখতে। তিনি জানান, আমাদের প্রত্যাশা রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় হবে বৃক্ষের জাদুঘর।

সরেজমিন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে হাজার হাজার গাছ। অনেক গাছ বড় হয়ে গেছে। গাছগুলো এমনভাবে পরিকল্পিতভাবে রোপণ করা হয়েছে কোথাও সারি সারি গাছ আবার কোথাও বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে লাগানো হয়েছে। বেশিরভাগ গাছই পুষ্ট হয়েছে। এখনও অনেক গাছ রোপণ করার পর ৫-৬ মাস বয়স হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চার তলা কিংবা ৫ তলা ভবনে দাঁড়ালে মনে হবে সবুজের সমারোহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, সবুজে ঘেরা বিস্তীর্ণ জনপদ।

বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালায় অনেক বিরল প্রজাতির পাখির দেখা মিলবে। যেখানে ভবন নেই শুধু গাছের সারি, সেখানে গেলে দেখা যায় বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কিচিরমিচির শব্দ, এ যেন নৈসর্গিক দৃশ্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মুনতাসির জানান, আমরা সুযোগ পেলেই গাছের পরিচর্যায় ড. তুহিন ওয়াদুদ স্যারকে সহায়তা করি। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আফসানা জাহান, রোদেলা আর শফিক বললেন, গাছের নিচে বসে আমরা গল্প করি, পাশাপাশি বসে একান্তে লেখাপড়াও করি।

শিক্ষার্থীরা বললেন, সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাসের নির্মল বাতাস আর প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে গর্বিত মনে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সবুজের সমারোহ আর বিরল প্রজাতির বিভিন্ন গাছপালা আর পাখি দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে পরিবারের সদস্য কিংবা একাকি অনেকে আসেন সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাস দেখতে। তারা মোহিত হন।

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আরও নতুন নতুন বিরল প্রজাতির গাছপালায় ভরে উঠুক। সবুজের সমারোহে ভরে উঠুক, সত্যিকার গাছের জাদুঘরে পরিণত হোক এ কামনা সবার।

image

সবুজের সমারোহে নয়নাভিরাম রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস - সংবাদ

আরও খবর
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটে নাকাল যাত্রীরা
মুজিবনগর সরকার গঠন ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদন
ঢাকায় আসছে সীমান্তের মাদক
চলতি বছর ফিতরা জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৭৫, সর্বোচ্চ ২৩১০ টাকা
বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হবে না ওবায়দুল কাদের
পাবনায় লোকসানের মুখে পেঁয়াজ চাষিরা
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক চুক্তির নিন্দা সিপিবির
চৌগাছায় দুই ভাইকে হত্যা পূর্বপরিকল্পিত
ঘিওরে তুচ্ছ ঘটনায় বৃদ্ধাকে পিটিয়ে হত্যা, ২ আসামি আটক
ময়মনসিংহে চাঁদার টাকা ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে বন্ধুদের হাতে খুন হন যুবলীগ কর্মী শান্ত

রবিবার, ১০ এপ্রিল ২০২২ , ২৭ চৈত্র ১৪২৮ ০৮ রমাদ্বান ১৪৪৩

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় : ক্যাম্পাস এখন গাছের জাদুঘর

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

image

সবুজের সমারোহে নয়নাভিরাম রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস - সংবাদ

গাছপালা বিহীন ধু ধু প্রান্তর রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখন সবুজের সমারোহ। মাত্র ৯ বছরে পুরো ক্যাম্পাসে রোপণ করা ৩০০ প্রজাতির বিভিন্ন দুর্লভ গাছ রোপণ করা হয়। সেই গাছের সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজারে। পুরো ক্যাম্পাস এখন শিক্ষার্থীসহ ঘুরতে আসা হাজার হাজার মানুষের মাঝে এক দৃষ্টিনন্দন নৈসর্গিক সৌন্দর্য। এ যেন গাছের জাদুঘর।

২০১৩ সালে নবনির্মিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা এসে দেখে পুরো ক্যাম্পাস খা খা করছে, কোথাও দাঁড়ানোর জায়গা নেই। ছায়ার নিচে একটু দাঁড়িয়ে রোদের তীব্রতা থেকে নিজেদের রক্ষা করবে কোন ব্যবস্থাই ছিল না। ছিল না গাছপালা, যার ছায়ায় রোদের কবল থেকে নিজেকে রক্ষা করে নির্মল বাতাস গ্রহণ করবে।

এ সময় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের সহায়তায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা সংগ্রহ করে গাছ লাগানো শুরু করেন। মাত্র ৯ বছরের মধ্যেই দেখতে দেখতে পুরো ক্যাম্পাসে ৩০০ প্রজাতির ৩৬ হাজার গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে গেছে। এ যেন দৃষ্টিনন্দন সবুজের সমারোহ। পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে এখন সবুজের সমারোহ। শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং ক্যাম্পাস দেখতে আসা নারী পুরুষ গাছের নিচে অবস্থান করে নির্মল বাতাস আর সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। বাংলাদেশে আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০০ প্রজাতির ৩৬ হাজার গাছ নেই। এর মধ্যে ওষুধি, ফলদ, বনজসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ আছে। বিশেষ করে অনেক দুর্লভ

প্রজাতির গাছ আছে যা এখন আর দেখতে পাওয়া যায় না।

ড. তুহিন ওয়াদুদ জানান, আমরা যেভানেই খবর পেয়েছি সেখানে গিয়ে গাছের চারা সংগ্রহ করেছি। আমাদের বেশি আগ্রহ ছিল বিরল প্রজাতির গাছের চারা সংগ্রহ করা। তিনি জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে বিরল প্রজাতির অনেক গাছের চারা আমরা রোপণ করে গাছ লাগিয়েছি। যেগুলো এখন স্ব-মহিমায় দাঁড়িয়ে আছে। এসব বিরল প্রজাতির গাছের মধ্যে আগর, ইটোরিয়া, উদাল, কইনার, কুম্ভী, কুরসি, কুসুম, কাইজেলিয়া, কাউফল, কাজুবাদাম, কানাইডিঙা, কেভেভুইয়া, গি�রিসিডিয়া, চাপালিশ, চালমুগরা, চিকরাশি, জঙলিবাদাম, জেকারান্ডা, ঝুমকাভাদি, ঝুমকোলতা, টিকচাম্বুল, ঢাকিজাম, তমাল, তালমুগরা, তুন, তেলসুর, নাগলিঙ্গম, নীলমণিলতা, পাদাউক, পানিয়াল, পালাম, পুত্রঞ্জীব (২), বনআশরা, বাজনা, বিজলঘণ্টা, বুদ্ধ নারিকেল, ভুঁইকদম, মণিমালা, মহুয়া, মাইলাম, রক্তন, রসকাউ, লকাট, লালসোনালু, লোহা, সিভিট, সিন্দুরী, সুন্দরী, সুলতান চাঁপা, অশোক, হলদু, হিজলসহ অনেক গাছ বাংলাদেশে কোন জায়গাতেই এক জায়গায় পাওয়া যাবে না।

এসব বিরল প্রজাতির অনেক গাছে হয়তো হারিয়ে গেছে। তবে আমরা যেসব বিরল প্রজাতির গাছ রোপণ করেছি এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে যেমন সমৃদ্ধ করেছে তেমনি এই গাছের খোঁজে দূূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন দেখতে। তিনি জানান, আমাদের প্রত্যাশা রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় হবে বৃক্ষের জাদুঘর।

সরেজমিন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে হাজার হাজার গাছ। অনেক গাছ বড় হয়ে গেছে। গাছগুলো এমনভাবে পরিকল্পিতভাবে রোপণ করা হয়েছে কোথাও সারি সারি গাছ আবার কোথাও বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে লাগানো হয়েছে। বেশিরভাগ গাছই পুষ্ট হয়েছে। এখনও অনেক গাছ রোপণ করার পর ৫-৬ মাস বয়স হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চার তলা কিংবা ৫ তলা ভবনে দাঁড়ালে মনে হবে সবুজের সমারোহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, সবুজে ঘেরা বিস্তীর্ণ জনপদ।

বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালায় অনেক বিরল প্রজাতির পাখির দেখা মিলবে। যেখানে ভবন নেই শুধু গাছের সারি, সেখানে গেলে দেখা যায় বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কিচিরমিচির শব্দ, এ যেন নৈসর্গিক দৃশ্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মুনতাসির জানান, আমরা সুযোগ পেলেই গাছের পরিচর্যায় ড. তুহিন ওয়াদুদ স্যারকে সহায়তা করি। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আফসানা জাহান, রোদেলা আর শফিক বললেন, গাছের নিচে বসে আমরা গল্প করি, পাশাপাশি বসে একান্তে লেখাপড়াও করি।

শিক্ষার্থীরা বললেন, সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাসের নির্মল বাতাস আর প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে গর্বিত মনে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সবুজের সমারোহ আর বিরল প্রজাতির বিভিন্ন গাছপালা আর পাখি দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে পরিবারের সদস্য কিংবা একাকি অনেকে আসেন সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাস দেখতে। তারা মোহিত হন।

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আরও নতুন নতুন বিরল প্রজাতির গাছপালায় ভরে উঠুক। সবুজের সমারোহে ভরে উঠুক, সত্যিকার গাছের জাদুঘরে পরিণত হোক এ কামনা সবার।