ময়মনসিংহে চাঁদার টাকা ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে বন্ধুদের হাতে খুন হন যুবলীগ কর্মী শান্ত

ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া এলাকার ফুটপাতে অস্থায়ী দোকান থেকে উঠানো সাপ্তাহিক চাঁদার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বে মহানগর যুবলীগ কর্মী শরীফ চৌধুরী ওরফে শান্ত (২১) খুন হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

গতকাল দুপুরে জেলা পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস এসব তথ্য জানান। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে নারায়নগঞ্জ জেলার ফতুল্লার ভিন্ন ভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এই হত্যাকা-ে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

পরে তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়।

গ্রেপ্তাকৃতরা হলেন, মহানগরীর মো. জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে মো. শান্ত ইসলাম (২০), সদর উপজেলার পরানগগঞ্জ ভাটিপাড়া এলাকার মো. কেরামত আলীর ছেলে মো. আরিফুজ্জামান আরিফ (২২), জেলার তারাকান্দা উপজেলার নুর মোহাম্মদের ছেলে মো. রাকিবুল হাসান তপু (২৫)।

জেলা পিবিআই পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, নিহত শরীফ চৌধুরী শান্ত এবং হত্যাকা-ে জড়িতরা সবাই একে অন্যের বন্ধু ছিলেন। তারা নগরীর চরপাড়া এলাকায় একসাথে ফুটপাতে অস্থায়ী দোকান থেকে সাপ্তাহিক চাঁদা তুলতেন। সম্প্রতি নিহত শরীফ আলাদা গ্রুপ করে চাঁদার টাকা তোলা শুরু করেন। পরে গ্রেপ্তারকৃতরা শরীফকে অনেক বুজিয়ে তাদের গ্রুপে আসতে বলে এবং চাঁদার টাকা ভাগাভাগি করে নিতে বলেন। এতে শরীফ অস্বীকৃতি জানায়। এই ক্ষোভ থেকে গ্রেপ্তারকৃত তিনজনসহ মোট ৫ জন তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা মতে গত বুধবার রাতে ১২টার দিকে ম-ল প্লাজা, চরপাড়া চৌধুরী ক্লিনিকের গলিতে ওৎ পেতে বসে থাকেন। এ সময় শরীফ আসতেই তাকে উপর্যুপরি ১৮ বার বুকে পিঠে ছুরিকাঘাত করে ফেলে রেখে যায়। তবে, শরীফের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে কিনা দেখার জন্য আবার ঘটনাস্থলে আসে। পরে তাকে মৃত পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা শরীফকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। পরে আসামি আরিফুজ্জামান আরিফের দেখানো মতে পরানগঞ্জ ভাটিপাড়া তার নিজ বাড়ির পিছন থেকে খড়ের পুঞ্জির ভিতর হতে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত দুটি চাকু আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়।

এদিকে, নিহতের বাবা শহিদ চৌধুরী বলেন, আমার ছেলে ও গ্রেপ্তারকৃত তিনজনই যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। তবে, তাদের দলীয় কোন পদ ছিল না। অল্প কিছুদিনের মাঝেই আমার ছেলে যুবলীগের পদ পাওয়ার কথা ছিল। ওই পদ নিয়ে দ্বন্দ্বেই আমার ছেলে খুন হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে মহানগর যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহব্বায়ক রাসেল পাঠান বলেন, শরীফ চৌধুরী নামে কেউ যুবলীগের সঙ্গে জড়িত ছিল না। তাছাড়া, আমি ওই ছেলেকে চিনি না।

উল্লেখ্য এই ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে নিহতের বাবা শহিদ চৌধুরী বাদী হয়ে কোতোয়ালী মডেল থানা মামলা দায়ের করেন। তাদের বাড়ি জেলার গৌরীপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ায়। তবে বাবার ক্লিনিক ব্যবসার সুবাদে নগরীর চরপাড়া এলাকাতেই পরিবারের সঙ্গে থাকতেন শরীফ।

রবিবার, ১০ এপ্রিল ২০২২ , ২৭ চৈত্র ১৪২৮ ০৮ রমাদ্বান ১৪৪৩

ফলোআপ

ময়মনসিংহে চাঁদার টাকা ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে বন্ধুদের হাতে খুন হন যুবলীগ কর্মী শান্ত

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া এলাকার ফুটপাতে অস্থায়ী দোকান থেকে উঠানো সাপ্তাহিক চাঁদার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বে মহানগর যুবলীগ কর্মী শরীফ চৌধুরী ওরফে শান্ত (২১) খুন হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

গতকাল দুপুরে জেলা পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস এসব তথ্য জানান। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে নারায়নগঞ্জ জেলার ফতুল্লার ভিন্ন ভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এই হত্যাকা-ে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

পরে তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়।

গ্রেপ্তাকৃতরা হলেন, মহানগরীর মো. জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে মো. শান্ত ইসলাম (২০), সদর উপজেলার পরানগগঞ্জ ভাটিপাড়া এলাকার মো. কেরামত আলীর ছেলে মো. আরিফুজ্জামান আরিফ (২২), জেলার তারাকান্দা উপজেলার নুর মোহাম্মদের ছেলে মো. রাকিবুল হাসান তপু (২৫)।

জেলা পিবিআই পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, নিহত শরীফ চৌধুরী শান্ত এবং হত্যাকা-ে জড়িতরা সবাই একে অন্যের বন্ধু ছিলেন। তারা নগরীর চরপাড়া এলাকায় একসাথে ফুটপাতে অস্থায়ী দোকান থেকে সাপ্তাহিক চাঁদা তুলতেন। সম্প্রতি নিহত শরীফ আলাদা গ্রুপ করে চাঁদার টাকা তোলা শুরু করেন। পরে গ্রেপ্তারকৃতরা শরীফকে অনেক বুজিয়ে তাদের গ্রুপে আসতে বলে এবং চাঁদার টাকা ভাগাভাগি করে নিতে বলেন। এতে শরীফ অস্বীকৃতি জানায়। এই ক্ষোভ থেকে গ্রেপ্তারকৃত তিনজনসহ মোট ৫ জন তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা মতে গত বুধবার রাতে ১২টার দিকে ম-ল প্লাজা, চরপাড়া চৌধুরী ক্লিনিকের গলিতে ওৎ পেতে বসে থাকেন। এ সময় শরীফ আসতেই তাকে উপর্যুপরি ১৮ বার বুকে পিঠে ছুরিকাঘাত করে ফেলে রেখে যায়। তবে, শরীফের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে কিনা দেখার জন্য আবার ঘটনাস্থলে আসে। পরে তাকে মৃত পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা শরীফকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। পরে আসামি আরিফুজ্জামান আরিফের দেখানো মতে পরানগঞ্জ ভাটিপাড়া তার নিজ বাড়ির পিছন থেকে খড়ের পুঞ্জির ভিতর হতে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত দুটি চাকু আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়।

এদিকে, নিহতের বাবা শহিদ চৌধুরী বলেন, আমার ছেলে ও গ্রেপ্তারকৃত তিনজনই যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। তবে, তাদের দলীয় কোন পদ ছিল না। অল্প কিছুদিনের মাঝেই আমার ছেলে যুবলীগের পদ পাওয়ার কথা ছিল। ওই পদ নিয়ে দ্বন্দ্বেই আমার ছেলে খুন হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে মহানগর যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহব্বায়ক রাসেল পাঠান বলেন, শরীফ চৌধুরী নামে কেউ যুবলীগের সঙ্গে জড়িত ছিল না। তাছাড়া, আমি ওই ছেলেকে চিনি না।

উল্লেখ্য এই ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে নিহতের বাবা শহিদ চৌধুরী বাদী হয়ে কোতোয়ালী মডেল থানা মামলা দায়ের করেন। তাদের বাড়ি জেলার গৌরীপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ায়। তবে বাবার ক্লিনিক ব্যবসার সুবাদে নগরীর চরপাড়া এলাকাতেই পরিবারের সঙ্গে থাকতেন শরীফ।