করোনায় পর্যটন খাতে ক্ষতি ৬০ হাজার কোটি টাকা

মহামারীর করোনার কারণে দেশের হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম সেক্টরের ক্ষতি ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর পাশাপাশি এ খাতের প্রায় ১ লাখ ৪১ হাজার মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। গতকাল রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) মিলনায়তনে ‘দ্য কোভিড-১৯ প্যানডেমিক অ্যান্ড দ্য হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম সেক্টর ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিআইডিএস’র সিনিয়র রিচার্স ফেলো মোহাম্মদ ইউনুস প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এ সময় বিআইডিএস মহাপরিচালক বিনায়ক সেন ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) জাবেদ আহমেদসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কোভিড-১৯ এর কারণে এ খাতে মোট ৬০০ বিলিয়ন টাকার টাকার ক্ষতি হয়। মোট ক্ষতির মধ্যে পরিবহনে ৪০ শতাংশ, হোটেলে ২৯ শতাংশ এবং রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁয় ক্ষতি ২৫ শতাংশ। করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পরিবহন খাতে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পর্যটন খাতে করোনা সংক্রমণের প্রভাব পুনরুদ্ধার করা সরকারের সহায়তা ছাড়া অসম্ভব। এ ক্ষেত্রে উপখাতগুলোকে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরিয়ে আনতে দুই ধরনের সহায়তা প্রয়োজন হবে ফিসক্যাল স্টিমুলাস (প্রণাদনা) এবং কম সুদে ঋণ সুবিধা। অন্যদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বেসরকারি খাতকে তাদের ব্যবসা করার সুবিধার জন্য পর্যটন স্থান এবং আশপাশের জনসাধারণের অবকাঠামোর উন্নয়ন অপরিহার্য। সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন, যেন পর্যটক ও সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থা উভয়ই অপ্রয়োজনীয় ঝামেলা ও হয়রানি এড়াতে পারে। একইসঙ্গে কর্মচারীদের উপযুক্ত মজুরি ও বেতন বাজারের সঙ্গে যেন সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং উদ্যোক্তারা শোষণের শিকার না হন, এটিও নিশ্চিত করার তাগিদ দেয়া হয়েছে।

পর্যটন খাত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব তুলে ধরে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-জুন) পুরো খাতে বিক্রি ও আয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এই পতন হোটেল ও রিসোর্টগুলোর জন্য প্রায় ৮৪ শতাংশ এবং ট্যুর অপারেটর, ট্রাভেল এজেন্ট ও বিনোদন পার্কের জন্য ৯৮ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ। বেশির ভাগ এন্টারপ্রাইজে তৃতীয় ত্রৈমাসিক (জুলাই-সেপেটম্বর) থেকে বিক্রি বেড়েছে, যা ২০২১ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) আরও বেড়েছে।

কোভিড মহামারী পূর্ববর্তী সময়ের সঙ্গে তুলনা করে বলা হয়েছে, আগের তুলনায় সংক্রমণ চলাকালীন বছরে হোটেল ও রিসোর্টে কর্মীর গড় সংখ্যা ৪২ শতাংশ কম ছিল। একই সঙ্গে কর্মী ছাঁটাই হয় ৩১৭ শতাংশ বেশি। ২০১৯-২০ সালে যেখানে ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যুর অপারেটর ও পর্যটন খাতের এসএমই কোম্পানিগুলোতে কর্মী নিয়োগ বেড়েছিল, সেখানে করোনাকালীন কর্মীদের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমেছে।

ড. বিনায়ক সেন বলেন, ‘পর্যটন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পুরো শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়েছে। যদিও এর পেছনে অন্য কারণও আছে। বাংলাদেশের উচিত শ্রীলঙ্কা থেকে শিক্ষা নিয়ে পর্যটন খাত পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা নেয়া।’

জাবেদ আহমেদ বলেন, ‘পর্যটন খাত উন্নয়নে গবেষণার বিকল্প নেই। এই গবেষণার মাধ্যমে এই খাত নিয়ে গবেষণা কেবল শুরু হয়েছে। আশা করছি ভবিষ্যতে আরও বেশি গবেষণা হবে।’

এদিকে ট্যুরিজম বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, করোনা শুরুর আগের বছর, অর্থাৎ ২০১৯ সালে পাঁচ লাখের বেশি বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে এসেছিল। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে ভ্রমণে গিয়েছেন ১৩ লাখ মানুষ। পাশাপাশি দেশের মধ্যে ঘুরে বেড়ান ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত একজন বিদেশি পর্যটকও বাংলাদেশে ঘুরতে আসেননি।

বাংলাদেশের ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস কোম্পানিগুলো সাধারণত ট্যুরিস্ট ভিসা, বিজনেস ভিসা, মেডিকেল ভিসা, হজ ও উমরাহ ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেস এবং ট্যুর প্যাকেজ, ট্যুর কনসালট্যান্সি ও এয়ার টিকেটিংয়ের কাজ করে থাকে। ইউরোপ-অ্যামেরিকার দেশগুলোর পাশাপাশি চীন, রাশিয়া, জাপান, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে প্রতি মাসে হাজার হাজার বাংলাদেশি নাগরিক ভ্রমণ করে। দিন দিন বাড়ছিল ভ্রমণকারীর সংখ্যা। সেইসঙ্গে বাড়ছিল এ খাতের উদ্যোক্তার সংখ্যা ও বিনিয়োগও। গত দুই দশকে এই খাতে নতুন করে অন্তত দুই হাজার উদ্যোক্তা তাদের পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন। ফলে ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস খাতে তৈরি হয়েছিল প্রচুর নতুন কর্মসংস্থান।

সোমবার, ১১ এপ্রিল ২০২২ , ২৮ চৈত্র ১৪২৮ ০৯ রমাদ্বান ১৪৪৩

বিআইডিএসের গবেষণায় প্রকাশ

করোনায় পর্যটন খাতে ক্ষতি ৬০ হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

মহামারীর করোনার কারণে দেশের হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম সেক্টরের ক্ষতি ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর পাশাপাশি এ খাতের প্রায় ১ লাখ ৪১ হাজার মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। গতকাল রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) মিলনায়তনে ‘দ্য কোভিড-১৯ প্যানডেমিক অ্যান্ড দ্য হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম সেক্টর ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিআইডিএস’র সিনিয়র রিচার্স ফেলো মোহাম্মদ ইউনুস প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এ সময় বিআইডিএস মহাপরিচালক বিনায়ক সেন ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) জাবেদ আহমেদসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কোভিড-১৯ এর কারণে এ খাতে মোট ৬০০ বিলিয়ন টাকার টাকার ক্ষতি হয়। মোট ক্ষতির মধ্যে পরিবহনে ৪০ শতাংশ, হোটেলে ২৯ শতাংশ এবং রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁয় ক্ষতি ২৫ শতাংশ। করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পরিবহন খাতে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পর্যটন খাতে করোনা সংক্রমণের প্রভাব পুনরুদ্ধার করা সরকারের সহায়তা ছাড়া অসম্ভব। এ ক্ষেত্রে উপখাতগুলোকে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরিয়ে আনতে দুই ধরনের সহায়তা প্রয়োজন হবে ফিসক্যাল স্টিমুলাস (প্রণাদনা) এবং কম সুদে ঋণ সুবিধা। অন্যদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বেসরকারি খাতকে তাদের ব্যবসা করার সুবিধার জন্য পর্যটন স্থান এবং আশপাশের জনসাধারণের অবকাঠামোর উন্নয়ন অপরিহার্য। সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন, যেন পর্যটক ও সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থা উভয়ই অপ্রয়োজনীয় ঝামেলা ও হয়রানি এড়াতে পারে। একইসঙ্গে কর্মচারীদের উপযুক্ত মজুরি ও বেতন বাজারের সঙ্গে যেন সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং উদ্যোক্তারা শোষণের শিকার না হন, এটিও নিশ্চিত করার তাগিদ দেয়া হয়েছে।

পর্যটন খাত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব তুলে ধরে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-জুন) পুরো খাতে বিক্রি ও আয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এই পতন হোটেল ও রিসোর্টগুলোর জন্য প্রায় ৮৪ শতাংশ এবং ট্যুর অপারেটর, ট্রাভেল এজেন্ট ও বিনোদন পার্কের জন্য ৯৮ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ। বেশির ভাগ এন্টারপ্রাইজে তৃতীয় ত্রৈমাসিক (জুলাই-সেপেটম্বর) থেকে বিক্রি বেড়েছে, যা ২০২১ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) আরও বেড়েছে।

কোভিড মহামারী পূর্ববর্তী সময়ের সঙ্গে তুলনা করে বলা হয়েছে, আগের তুলনায় সংক্রমণ চলাকালীন বছরে হোটেল ও রিসোর্টে কর্মীর গড় সংখ্যা ৪২ শতাংশ কম ছিল। একই সঙ্গে কর্মী ছাঁটাই হয় ৩১৭ শতাংশ বেশি। ২০১৯-২০ সালে যেখানে ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যুর অপারেটর ও পর্যটন খাতের এসএমই কোম্পানিগুলোতে কর্মী নিয়োগ বেড়েছিল, সেখানে করোনাকালীন কর্মীদের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমেছে।

ড. বিনায়ক সেন বলেন, ‘পর্যটন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পুরো শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়েছে। যদিও এর পেছনে অন্য কারণও আছে। বাংলাদেশের উচিত শ্রীলঙ্কা থেকে শিক্ষা নিয়ে পর্যটন খাত পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা নেয়া।’

জাবেদ আহমেদ বলেন, ‘পর্যটন খাত উন্নয়নে গবেষণার বিকল্প নেই। এই গবেষণার মাধ্যমে এই খাত নিয়ে গবেষণা কেবল শুরু হয়েছে। আশা করছি ভবিষ্যতে আরও বেশি গবেষণা হবে।’

এদিকে ট্যুরিজম বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, করোনা শুরুর আগের বছর, অর্থাৎ ২০১৯ সালে পাঁচ লাখের বেশি বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে এসেছিল। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে ভ্রমণে গিয়েছেন ১৩ লাখ মানুষ। পাশাপাশি দেশের মধ্যে ঘুরে বেড়ান ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত একজন বিদেশি পর্যটকও বাংলাদেশে ঘুরতে আসেননি।

বাংলাদেশের ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস কোম্পানিগুলো সাধারণত ট্যুরিস্ট ভিসা, বিজনেস ভিসা, মেডিকেল ভিসা, হজ ও উমরাহ ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেস এবং ট্যুর প্যাকেজ, ট্যুর কনসালট্যান্সি ও এয়ার টিকেটিংয়ের কাজ করে থাকে। ইউরোপ-অ্যামেরিকার দেশগুলোর পাশাপাশি চীন, রাশিয়া, জাপান, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে প্রতি মাসে হাজার হাজার বাংলাদেশি নাগরিক ভ্রমণ করে। দিন দিন বাড়ছিল ভ্রমণকারীর সংখ্যা। সেইসঙ্গে বাড়ছিল এ খাতের উদ্যোক্তার সংখ্যা ও বিনিয়োগও। গত দুই দশকে এই খাতে নতুন করে অন্তত দুই হাজার উদ্যোক্তা তাদের পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন। ফলে ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস খাতে তৈরি হয়েছিল প্রচুর নতুন কর্মসংস্থান।