পরিবারের নিরাপত্তা ও স্বামীকে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি স্ত্রীর
শ্রেণীকক্ষে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত বিষয়ের সহকারী শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। গতকাল বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে তিনি মুন্সীগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন।
এর আগে দুপুর সোয়া ১টার দিকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোতাহারাত আক্তার ভূঁইয়ার আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। জামিনের আদেশ কারাগারে পেটৗছানোর পরই তিনি মুক্তি পান।
কারাফটকে দেখা যায়, হৃদয় মণ্ডল বেরিয়ে এসেই তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একটি গাড়িতে উঠেন।
হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের স্ত্রী ববিতা রানী হাওলাদার বলেন, আমার স্বামীর জামিন হওয়ায় আমি খুশি হয়েছি। আমার, সন্তানের ও স্বামীসহ আমার পরিবারের নিরাপত্তা এবং আমার স্বামীর চাকরি পুনর্বহালেরও দাবি করছি। তিনি সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
আদালত সূত্র জানায়, পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় তাকে জামিন দেন বিচারক। হৃদয় মণ্ডলের আইনজীবী শাহিন মোহাম্মদ আমানুল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ সময় আদালতে বিভিন্ন জেলার বাম ফ্রন্টের ৮-১০ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ছিলেন কমরেড হামিদা খানম, নারায়ণগঞ্জের কমরেড বিমল কান্তি দাস, নাটোরের কমরেড
মো. ইদ্রিস আলী, পঞ্চগড়ের কমরেড মো. আকরাম এবং মুন্সীগঞ্জের কমরেড শ ম. কামালা, হিন্দু বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বাবু সমর ঘোষ।
কমরেড হামিদা খানম হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের পরিবারের নিরাপত্তা এবং স্কুলে তার শিক্ষকতায় ফিরে যাওয়ারও দাবি জানান।
গত মঙ্গলবার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করেন হৃদয় মণ্ডলের আইনজীবী শাহিন মোহাম্মদ আমানুল্লাহ। সেদিন মামলাটিতে আসামির জামিন শুনানি ১০ এপ্রিল ধার্য করেন আদালত। এর আগে ২৩ ও ২৮ মার্চ আদালতে তার জামিন চাওয়া হয়েছিল। সে সময় আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছিলেন।
ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে গত ২২ মার্চ রাতে মামলা করেন একই স্কুলের অফিস সহকারী মো. আসাদ মিয়া। মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় দণ্ডবিধির ২৯৫ ও ২৯৫(এ) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। ওই রাতেই হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান বলেন, মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছিল। আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। তদন্তের বিষয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, মামলাটি স্পর্শকাতর। খুটিনাটি বিষয়ে গভীরভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে কিছুই বলা যাচ্ছে না। তদন্ত প্রতিবেদন দিলেই প্রকৃত ঘটনা বলা যাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রের সঙ্গে কথা বলেছি। এ ঘটনায় ধারণ করা অডিও, ভিডিও শুনেছি। সব মিলিয়ে নিবিড়ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ঘটনা সম্পর্কে ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ২০ মার্চ দশম শ্রেণীর মানবিক শাখার সাধারণ বিজ্ঞানের ক্লাস নিচ্ছিলেন হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল। সেখানে বিজ্ঞান ও ধর্ম বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কয়েকজনের পক্ষে-বিপক্ষে কথোপকথন হয়। কোন এক শিক্ষার্থী ওই কথোপকথনের ভিডিও ধারণ করেন। পরবর্তী সময়ে প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দীনকে বিষয়টি জানানো হয়। প্রধান শিক্ষক সেদিনই হৃদয় চন্দ্রকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন এবং শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকতে বলেন।
তবে শিক্ষার্থীরা স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি ও সাবেক শিক্ষার্থীদের বিষয়টি জানায়। এর পরদিন সকালে তারা বিদ্যালয়ে এসে ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে বলেন, এই ঘটনায় যেসব শিক্ষার্থীরা ক্লাসে মোবাইলে অডিও রেকর্ড করে তাদেরও নিরাপত্তা বর্তমানে বিঘিœত হতে পারে। তাদেরকেও প্রচণ্ড চাপের মুখে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মুক্তির পর জেল গেট থেকে পুলিশী পাহারায় বাসায় রওয়ানা দেন তিনি। এ সময় পরিবারের সকলের নিরাপত্তার দাবী জানিয়েছেন হৃদয় চন্দ্র মন্ডল।
সোমবার, ১১ এপ্রিল ২০২২ , ২৮ চৈত্র ১৪২৮ ০৯ রমাদ্বান ১৪৪৩
পরিবারের নিরাপত্তা ও স্বামীকে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি স্ত্রীর
মাহাবুব আলম লিটন, মুন্সীগঞ্জ
শ্রেণীকক্ষে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত বিষয়ের সহকারী শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। গতকাল বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে তিনি মুন্সীগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন।
এর আগে দুপুর সোয়া ১টার দিকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোতাহারাত আক্তার ভূঁইয়ার আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। জামিনের আদেশ কারাগারে পেটৗছানোর পরই তিনি মুক্তি পান।
কারাফটকে দেখা যায়, হৃদয় মণ্ডল বেরিয়ে এসেই তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একটি গাড়িতে উঠেন।
হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের স্ত্রী ববিতা রানী হাওলাদার বলেন, আমার স্বামীর জামিন হওয়ায় আমি খুশি হয়েছি। আমার, সন্তানের ও স্বামীসহ আমার পরিবারের নিরাপত্তা এবং আমার স্বামীর চাকরি পুনর্বহালেরও দাবি করছি। তিনি সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
আদালত সূত্র জানায়, পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় তাকে জামিন দেন বিচারক। হৃদয় মণ্ডলের আইনজীবী শাহিন মোহাম্মদ আমানুল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ সময় আদালতে বিভিন্ন জেলার বাম ফ্রন্টের ৮-১০ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ছিলেন কমরেড হামিদা খানম, নারায়ণগঞ্জের কমরেড বিমল কান্তি দাস, নাটোরের কমরেড
মো. ইদ্রিস আলী, পঞ্চগড়ের কমরেড মো. আকরাম এবং মুন্সীগঞ্জের কমরেড শ ম. কামালা, হিন্দু বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বাবু সমর ঘোষ।
কমরেড হামিদা খানম হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের পরিবারের নিরাপত্তা এবং স্কুলে তার শিক্ষকতায় ফিরে যাওয়ারও দাবি জানান।
গত মঙ্গলবার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করেন হৃদয় মণ্ডলের আইনজীবী শাহিন মোহাম্মদ আমানুল্লাহ। সেদিন মামলাটিতে আসামির জামিন শুনানি ১০ এপ্রিল ধার্য করেন আদালত। এর আগে ২৩ ও ২৮ মার্চ আদালতে তার জামিন চাওয়া হয়েছিল। সে সময় আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছিলেন।
ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে গত ২২ মার্চ রাতে মামলা করেন একই স্কুলের অফিস সহকারী মো. আসাদ মিয়া। মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় দণ্ডবিধির ২৯৫ ও ২৯৫(এ) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। ওই রাতেই হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান বলেন, মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছিল। আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। তদন্তের বিষয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, মামলাটি স্পর্শকাতর। খুটিনাটি বিষয়ে গভীরভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে কিছুই বলা যাচ্ছে না। তদন্ত প্রতিবেদন দিলেই প্রকৃত ঘটনা বলা যাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রের সঙ্গে কথা বলেছি। এ ঘটনায় ধারণ করা অডিও, ভিডিও শুনেছি। সব মিলিয়ে নিবিড়ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ঘটনা সম্পর্কে ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ২০ মার্চ দশম শ্রেণীর মানবিক শাখার সাধারণ বিজ্ঞানের ক্লাস নিচ্ছিলেন হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল। সেখানে বিজ্ঞান ও ধর্ম বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কয়েকজনের পক্ষে-বিপক্ষে কথোপকথন হয়। কোন এক শিক্ষার্থী ওই কথোপকথনের ভিডিও ধারণ করেন। পরবর্তী সময়ে প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দীনকে বিষয়টি জানানো হয়। প্রধান শিক্ষক সেদিনই হৃদয় চন্দ্রকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন এবং শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকতে বলেন।
তবে শিক্ষার্থীরা স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি ও সাবেক শিক্ষার্থীদের বিষয়টি জানায়। এর পরদিন সকালে তারা বিদ্যালয়ে এসে ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে বলেন, এই ঘটনায় যেসব শিক্ষার্থীরা ক্লাসে মোবাইলে অডিও রেকর্ড করে তাদেরও নিরাপত্তা বর্তমানে বিঘিœত হতে পারে। তাদেরকেও প্রচণ্ড চাপের মুখে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মুক্তির পর জেল গেট থেকে পুলিশী পাহারায় বাসায় রওয়ানা দেন তিনি। এ সময় পরিবারের সকলের নিরাপত্তার দাবী জানিয়েছেন হৃদয় চন্দ্র মন্ডল।