ঘটনার তিন দিন পর বিদ্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগে জিডি

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চবিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে হিজাব পরায় ছাত্রীদের মারধরের অভিযোগ তুলে বিদ্যালয়ে হামলার ঘটনার তিন দিন পর গতকাল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণ বাদী হয়ে হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অজ্ঞাত ১৪০-১৫০ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই জিডি করেন।

গতকাল বিকেলে মুঠোফোনে মহাদেবপুর থানার ওসি আজম উদ্দিন মাহমুদ জিডির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গত বৃহস্পতিবার উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চবিদ্যালয়ে হামলার ঘটনায় ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একটি জিডি করেছেন। জিডিতে তিনি ১৪০ থেকে ১৫০ অজ্ঞাত ব্যক্তি হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন। হামলাকারীরা ওইদিন বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের পাঁচ থেকে ছয়টি প্লাস্টিকের চেয়ার ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন তদন্ত করে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

হিজাব পরায় বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়েছে বলে গত বুধবার অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনার জের ধরে পরদিন স্থানীয় অনেক মানুষ ওই স্কুলে গিয়ে প্রতিবাদ জানান এবং স্কুলের আসবাব ভাঙচুর করেন। কিন্তু পরবর্তীতে সরেজমিন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আসলে নির্ধারিত পোশাক (স্কুলড্রেস) পরে না আসার কারণে দুই শিক্ষক কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীকে পিটুনি দিয়েছিলেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক আমোদিনি পাল স্কুলড্রেস পরে না

আসা ছাত্রীদের এবং শরীরচর্চার শিক্ষক বদিউল আলম ছাত্রদের বেত্রাঘাত করেন।

স্কুল কর্তৃপক্ষের করা এই জিডিকে ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করে এই ঘটনায় আলোচিত শিক্ষিকা আমোদিনি পাল বলেন, ‘বিদ্যালয়ে হামলার সময় অনেকেই ফেইসবুকে লাইভ করেছেন। এখনও ফেইসবুকে সেসব ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভিডিও ছাড়াও হামলারকারীদের অনেককে চেনা সম্ভব। তারপরও হামলাকারী সবাইকে অজ্ঞাত উল্লেখ করে জিডি করা হলো আমার বোধগম্য হচ্ছে না। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হামলাকারীদের বাঁচানো বা আড়াল করার চেষ্টা করছেন।’

প্রকাশ্য দিবালোকে হামলা ও ভিডিও থাকার পরও হামলাকারী সবাইকে অজ্ঞাত হিসেবে জিডি করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক ধরনী কান্ত বর্মণ দাবি করেন, ‘বিদ্যালয়ে যখন হামলা হয়, তখন হামলাকারীরা আমাকে এক প্রকার বন্দী করে রেখেছিলেন। ওই পরিস্থিতিতে আমার পক্ষে কাউকে চেনা সম্ভব হয়নি।

আর ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, প্রশাসনের লোকজন ও তদন্ত দলের সদস্যদের সঙ্গে একাধিক মিটিংসহ নানা ঝামেলার কারণে জিডি করতে দেরি হলো। এছাড়া এই কয়দিনের ঝামেলার কারণে আমার পক্ষে ভিডিওগুলো বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়নি। আমার বিশ্বাস পুলিশ তদন্ত করে হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে পারবে। আমি পুলিশ বাহিনীকে সর্বাত্মক সহায়তা করব।’

হামলাকারীদের আড়াল করার চেষ্টার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ তোলার কোন সুযোগ নেই। এটা কারও কারও মনগড়া অভিযোগ।’

সোমবার, ১১ এপ্রিল ২০২২ , ২৮ চৈত্র ১৪২৮ ০৯ রমাদ্বান ১৪৪৩

নওগাঁয় হিজাব বিতর্ক

ঘটনার তিন দিন পর বিদ্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগে জিডি

কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চবিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে হিজাব পরায় ছাত্রীদের মারধরের অভিযোগ তুলে বিদ্যালয়ে হামলার ঘটনার তিন দিন পর গতকাল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণ বাদী হয়ে হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অজ্ঞাত ১৪০-১৫০ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই জিডি করেন।

গতকাল বিকেলে মুঠোফোনে মহাদেবপুর থানার ওসি আজম উদ্দিন মাহমুদ জিডির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গত বৃহস্পতিবার উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চবিদ্যালয়ে হামলার ঘটনায় ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একটি জিডি করেছেন। জিডিতে তিনি ১৪০ থেকে ১৫০ অজ্ঞাত ব্যক্তি হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন। হামলাকারীরা ওইদিন বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের পাঁচ থেকে ছয়টি প্লাস্টিকের চেয়ার ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন তদন্ত করে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

হিজাব পরায় বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়েছে বলে গত বুধবার অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনার জের ধরে পরদিন স্থানীয় অনেক মানুষ ওই স্কুলে গিয়ে প্রতিবাদ জানান এবং স্কুলের আসবাব ভাঙচুর করেন। কিন্তু পরবর্তীতে সরেজমিন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আসলে নির্ধারিত পোশাক (স্কুলড্রেস) পরে না আসার কারণে দুই শিক্ষক কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীকে পিটুনি দিয়েছিলেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক আমোদিনি পাল স্কুলড্রেস পরে না

আসা ছাত্রীদের এবং শরীরচর্চার শিক্ষক বদিউল আলম ছাত্রদের বেত্রাঘাত করেন।

স্কুল কর্তৃপক্ষের করা এই জিডিকে ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করে এই ঘটনায় আলোচিত শিক্ষিকা আমোদিনি পাল বলেন, ‘বিদ্যালয়ে হামলার সময় অনেকেই ফেইসবুকে লাইভ করেছেন। এখনও ফেইসবুকে সেসব ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভিডিও ছাড়াও হামলারকারীদের অনেককে চেনা সম্ভব। তারপরও হামলাকারী সবাইকে অজ্ঞাত উল্লেখ করে জিডি করা হলো আমার বোধগম্য হচ্ছে না। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হামলাকারীদের বাঁচানো বা আড়াল করার চেষ্টা করছেন।’

প্রকাশ্য দিবালোকে হামলা ও ভিডিও থাকার পরও হামলাকারী সবাইকে অজ্ঞাত হিসেবে জিডি করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক ধরনী কান্ত বর্মণ দাবি করেন, ‘বিদ্যালয়ে যখন হামলা হয়, তখন হামলাকারীরা আমাকে এক প্রকার বন্দী করে রেখেছিলেন। ওই পরিস্থিতিতে আমার পক্ষে কাউকে চেনা সম্ভব হয়নি।

আর ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, প্রশাসনের লোকজন ও তদন্ত দলের সদস্যদের সঙ্গে একাধিক মিটিংসহ নানা ঝামেলার কারণে জিডি করতে দেরি হলো। এছাড়া এই কয়দিনের ঝামেলার কারণে আমার পক্ষে ভিডিওগুলো বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়নি। আমার বিশ্বাস পুলিশ তদন্ত করে হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে পারবে। আমি পুলিশ বাহিনীকে সর্বাত্মক সহায়তা করব।’

হামলাকারীদের আড়াল করার চেষ্টার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ তোলার কোন সুযোগ নেই। এটা কারও কারও মনগড়া অভিযোগ।’