দেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বছরে ৩৫ হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে

এটা ঠেকানো দরকার, স্বাস্থ্য বিভাগকে ব্যবস্থা নিতে বলা হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মায়ানমার থেকে বল প্রয়োগে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকের সংখ্যা প্রতিবছর ৩৫ হাজার করে বাড়ছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা পরিবারগুলোতে বছরে ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্মগ্রহণ করছে। গতকাল বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির চতুর্থ সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমরা দেখেছি রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় জন্মহার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এটা ঠেকানো দরকার। সেই জায়গায় আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগকে বলবো, ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে বলবো- তারা যাতে সবাইকে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে উদ্ধুদ্ধ করে। সেজন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছি।

রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশের পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে না পারে সেজন্য ইউএনএইচসিআরের (জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার) ডাটাবেইজ ব্যবহার করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ক্যাম্পের ভেতরে পুলিশ, এপিবিএন, র‌্যাব ও আনসার যৌথভাবে সার্বক্ষণিক যে টহল দিচ্ছে, সেটা আরও জোরদার করা হবে। ক্যাম্পের বাইরে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাবের টহল চলবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কাজ করবে।

যদি কোন অভিযান প্রয়োজন হয় সেনাবাহিনীও তাতে অংশ নেবে।

‘উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হচ্ছে এবং তা চলমান থাকবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারপাশে কাটাতারের বেষ্টনী তৈরি করার জন্য আমরা সেনাবাহিনীকে কাজ দিয়েছিলাম, প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। পর্যবেক্ষণ টাওয়ার এখানে তৈরি হয়েছে, এখানে রাস্তা তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। সেখানে টাওয়ারগুলোতে এপিবিএন থাকবে আর রাস্তায় টহল দেবে, কোন রোহিঙ্গা যাতে ক্যাম্পের বাইরে প্রয়োজন ও অনুমতি ছাড়া যেতে না পারে। এটা আমরা জোরদার করছি।

মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা দেখছি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বয়সভিত্তিক রেশন না দিয়ে ব্যক্তি হিসেবে দেয়া হয়। একদিনের শিশুকে যে রেশন দেয়া হয়, একজন প্রাপ্ত বয়স্ককেও সেই রেশন দেয়া হচ্ছে। আমরা বলেছি, এটা বয়সভিত্তিক যেন দেয়া হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে এবং আশপাশে যাতে মাদক ব্যবসা করতে না পারে এজন্য আমরা জোরদার ব্যবস্থা নিচ্ছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা এ জায়গায় কঠোর হতে যাচ্ছি। কোনক্রমেই আমাদের সীমানা পেরিয়ে মায়ানমারের সঙ্গে যাতে মাদক ব্যবসা না করতে পারে, সেজন্য আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি।’

‘আমরা যেটা অনুমান করছি, এখানে (রোহিঙ্গা ক্যাম্পে) মাদক স্টোর করা আছে। এর মধ্যে আমরা কিছু ধরেও ফেলেছি। এর সঙ্গে যারা জড়িত তারা ধরা পড়বে।’

ছিনতাই বাড়েনি বরং কমেছে দাবি মন্ত্রীর

ইদানিং ছিনতাই বেড়ে গেছে, এটা বাড়ার কারণ কী- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের পুলিশ যথাযথ ভূমিকা পালনের জন্য ছিনতাই আগের তুলনায় কমেছে। ১০ বছর আগের কথা চিন্তা করে তুলনা করলে, এটা (ছিনতাই) এখন জিরো। কিন্তু মাঝে মাঝে কয়েকটি ঘটনার কারণে আপনারা উদ্বিগ্ন হচ্ছেন। আমার জানামতে, সবগুলোই ধরা পড়ে গেছে। আমাদের পুলিশ অনেক অ্যাকটিভ। যারা ছিনতাই করুক পার পাবে না।’

সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আথতার হোসেন, পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. মোকাব্বির হোসেনসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সোমবার, ১১ এপ্রিল ২০২২ , ২৮ চৈত্র ১৪২৮ ০৯ রমাদ্বান ১৪৪৩

দেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বছরে ৩৫ হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে

এটা ঠেকানো দরকার, স্বাস্থ্য বিভাগকে ব্যবস্থা নিতে বলা হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মায়ানমার থেকে বল প্রয়োগে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকের সংখ্যা প্রতিবছর ৩৫ হাজার করে বাড়ছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা পরিবারগুলোতে বছরে ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্মগ্রহণ করছে। গতকাল বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির চতুর্থ সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমরা দেখেছি রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় জন্মহার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এটা ঠেকানো দরকার। সেই জায়গায় আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগকে বলবো, ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে বলবো- তারা যাতে সবাইকে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে উদ্ধুদ্ধ করে। সেজন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছি।

রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশের পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে না পারে সেজন্য ইউএনএইচসিআরের (জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার) ডাটাবেইজ ব্যবহার করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ক্যাম্পের ভেতরে পুলিশ, এপিবিএন, র‌্যাব ও আনসার যৌথভাবে সার্বক্ষণিক যে টহল দিচ্ছে, সেটা আরও জোরদার করা হবে। ক্যাম্পের বাইরে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাবের টহল চলবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কাজ করবে।

যদি কোন অভিযান প্রয়োজন হয় সেনাবাহিনীও তাতে অংশ নেবে।

‘উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হচ্ছে এবং তা চলমান থাকবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারপাশে কাটাতারের বেষ্টনী তৈরি করার জন্য আমরা সেনাবাহিনীকে কাজ দিয়েছিলাম, প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। পর্যবেক্ষণ টাওয়ার এখানে তৈরি হয়েছে, এখানে রাস্তা তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। সেখানে টাওয়ারগুলোতে এপিবিএন থাকবে আর রাস্তায় টহল দেবে, কোন রোহিঙ্গা যাতে ক্যাম্পের বাইরে প্রয়োজন ও অনুমতি ছাড়া যেতে না পারে। এটা আমরা জোরদার করছি।

মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা দেখছি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বয়সভিত্তিক রেশন না দিয়ে ব্যক্তি হিসেবে দেয়া হয়। একদিনের শিশুকে যে রেশন দেয়া হয়, একজন প্রাপ্ত বয়স্ককেও সেই রেশন দেয়া হচ্ছে। আমরা বলেছি, এটা বয়সভিত্তিক যেন দেয়া হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে এবং আশপাশে যাতে মাদক ব্যবসা করতে না পারে এজন্য আমরা জোরদার ব্যবস্থা নিচ্ছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা এ জায়গায় কঠোর হতে যাচ্ছি। কোনক্রমেই আমাদের সীমানা পেরিয়ে মায়ানমারের সঙ্গে যাতে মাদক ব্যবসা না করতে পারে, সেজন্য আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি।’

‘আমরা যেটা অনুমান করছি, এখানে (রোহিঙ্গা ক্যাম্পে) মাদক স্টোর করা আছে। এর মধ্যে আমরা কিছু ধরেও ফেলেছি। এর সঙ্গে যারা জড়িত তারা ধরা পড়বে।’

ছিনতাই বাড়েনি বরং কমেছে দাবি মন্ত্রীর

ইদানিং ছিনতাই বেড়ে গেছে, এটা বাড়ার কারণ কী- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের পুলিশ যথাযথ ভূমিকা পালনের জন্য ছিনতাই আগের তুলনায় কমেছে। ১০ বছর আগের কথা চিন্তা করে তুলনা করলে, এটা (ছিনতাই) এখন জিরো। কিন্তু মাঝে মাঝে কয়েকটি ঘটনার কারণে আপনারা উদ্বিগ্ন হচ্ছেন। আমার জানামতে, সবগুলোই ধরা পড়ে গেছে। আমাদের পুলিশ অনেক অ্যাকটিভ। যারা ছিনতাই করুক পার পাবে না।’

সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আথতার হোসেন, পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. মোকাব্বির হোসেনসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।