নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠায় যোগদান করতে না করতেই কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুর হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তিনি গত ৩ এপ্রিল করিমগঞ্জ উপজেলায় যোগদান করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে আগের কর্মস্থল বাসাইল উপজেলায় ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।
এমন পরিস্থিতিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চিঠির প্রেক্ষিতে তাকে রিলিজ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম।
জানা গেছে, এর আগে বিয়ের কথা বলে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে প্রতিকার চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে আবেদনের পাশাপাশি ইউএনও মনজুর হোসেনকে আইনি নোটিশ পাঠান ওই ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী। এমন আবেদনের পর এ ঘটনা তদন্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ভুক্তভোগী ওই কলেজছাত্রী টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা।
ওই কলেজছাত্রী অভিযোগ করেন, ২০২১ সালে বাসাইলের ইউএনও থাকাকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইউএনওর সঙ্গে পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে ইউএনও ওই ছাত্রীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার বাসাইলের সরকারি বাসভবনে নিয়ে যান। সেখানে বিয়ের কথা বলে কৌশলে তাকে ধর্ষণ করেন তিনি।
অভিযোগকারী শিক্ষার্থী বলেন, ওই সময়ে একাধিক বিয়ের প্রস্তাব এলে ইউএনওর পরামর্শে তা প্রত্যাখ্যান করেন ওই ছাত্রী। ওই কলেজছাত্রীকে নিয়ে ইউএনও মনজুর হোসেন এক পর্যায়ে টাঙ্গাইল শহরের কুমুদিনী কলেজের পাশে পাওয়ার হাউজের পেছনে এক বাসায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তারা দুই মাস থাকার পর বিয়ের মাধ্যমে সামাজিক
স্বীকৃতি দিতে চাপ দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
ওই ছাত্রীর চাপাপাচির ফলে ইউএনও সেই সময় আশ্বাস দেন, ভারত ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করবেন।
২০২১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে মনজুর হোসেনের পরিচিত জোবায়েত হোসেন ও সরকারি গাড়ির চালক বুলবুল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে তারা বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসা ভিসায় ভারতে যান। ওই বছরের ১২ অক্টোবর তারা ভারত থেকে দেশে ফেরেন। ভারতে অবস্থানকালে তারা অধিকাংশ সময় নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়েছেন। তারা ভারতের হায়দারাবাদ হাসপাতালের কাছে একটি বাসা নিয়ে সেখানে অবস্থান করে চিকিৎসা নেন।
ওই সময় কলেজছাত্রী ইউএনও’র ব্যক্তিগত ব্যাগ থেকে পাসপোর্ট বের করে জানতে পারেন মনজুর হোসেন বিবাহিত এবং তার দুই সন্তান রয়েছে। ইউএনওর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিয়ের বিষয়টি গোপন করেছে বলে স্বীকার করেন।
১২ অক্টোবর ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার পর তারা নিজ নিজ ঠিকানায় চলে যান। পরে ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবরে তারা আবার দেখা করেন। এ সময় মনজুর হোসেন পুনরায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাসের প্রস্তাব দিলে ভুক্তভোগী ছাত্রী তা প্রত্যাখ্যান করেন ।
উপায়ন্তর না পেয়ে, এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
জানা গেছে, ওই ছাত্রীকে আইনি সহায়তা দিচ্ছেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। তিনি ওই ছাত্রীর পক্ষে গত ২২ মার্চ ইউএনও মনজুর হোসেনের কাছে আইনি নোটিশ পাঠান।
ইউএনও প্রভাবশালী হওয়ায় ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে ওই কলেজছাত্রীর পরিবারে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। অভিযোগকারী ওই কলেজছাত্রী বলেন, ‘ন্যায় বিচার নিয়ে শঙ্কিত আছি, যেহেতু তিনি ইউএনও আর আমি একজন সাধারণ ছাত্রী। যিনি তদন্ত করছেন তিনিও একজন বিসিএস ক্যাডার আর যার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে তিনিও বিসিএস ক্যাডার। তিনি ইউএনও হিসেবে ফ্যাসালিটি পাবে বা পাচ্ছে কিন্তু আমি কতটুকু পাবো সেটাই বিষয়।’
সোমবার, ১১ এপ্রিল ২০২২ , ২৮ চৈত্র ১৪২৮ ০৯ রমাদ্বান ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠায় যোগদান করতে না করতেই কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুর হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তিনি গত ৩ এপ্রিল করিমগঞ্জ উপজেলায় যোগদান করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে আগের কর্মস্থল বাসাইল উপজেলায় ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।
এমন পরিস্থিতিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চিঠির প্রেক্ষিতে তাকে রিলিজ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম।
জানা গেছে, এর আগে বিয়ের কথা বলে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে প্রতিকার চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে আবেদনের পাশাপাশি ইউএনও মনজুর হোসেনকে আইনি নোটিশ পাঠান ওই ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী। এমন আবেদনের পর এ ঘটনা তদন্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ভুক্তভোগী ওই কলেজছাত্রী টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা।
ওই কলেজছাত্রী অভিযোগ করেন, ২০২১ সালে বাসাইলের ইউএনও থাকাকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইউএনওর সঙ্গে পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে ইউএনও ওই ছাত্রীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার বাসাইলের সরকারি বাসভবনে নিয়ে যান। সেখানে বিয়ের কথা বলে কৌশলে তাকে ধর্ষণ করেন তিনি।
অভিযোগকারী শিক্ষার্থী বলেন, ওই সময়ে একাধিক বিয়ের প্রস্তাব এলে ইউএনওর পরামর্শে তা প্রত্যাখ্যান করেন ওই ছাত্রী। ওই কলেজছাত্রীকে নিয়ে ইউএনও মনজুর হোসেন এক পর্যায়ে টাঙ্গাইল শহরের কুমুদিনী কলেজের পাশে পাওয়ার হাউজের পেছনে এক বাসায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তারা দুই মাস থাকার পর বিয়ের মাধ্যমে সামাজিক
স্বীকৃতি দিতে চাপ দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
ওই ছাত্রীর চাপাপাচির ফলে ইউএনও সেই সময় আশ্বাস দেন, ভারত ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করবেন।
২০২১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে মনজুর হোসেনের পরিচিত জোবায়েত হোসেন ও সরকারি গাড়ির চালক বুলবুল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে তারা বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসা ভিসায় ভারতে যান। ওই বছরের ১২ অক্টোবর তারা ভারত থেকে দেশে ফেরেন। ভারতে অবস্থানকালে তারা অধিকাংশ সময় নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়েছেন। তারা ভারতের হায়দারাবাদ হাসপাতালের কাছে একটি বাসা নিয়ে সেখানে অবস্থান করে চিকিৎসা নেন।
ওই সময় কলেজছাত্রী ইউএনও’র ব্যক্তিগত ব্যাগ থেকে পাসপোর্ট বের করে জানতে পারেন মনজুর হোসেন বিবাহিত এবং তার দুই সন্তান রয়েছে। ইউএনওর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিয়ের বিষয়টি গোপন করেছে বলে স্বীকার করেন।
১২ অক্টোবর ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার পর তারা নিজ নিজ ঠিকানায় চলে যান। পরে ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবরে তারা আবার দেখা করেন। এ সময় মনজুর হোসেন পুনরায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাসের প্রস্তাব দিলে ভুক্তভোগী ছাত্রী তা প্রত্যাখ্যান করেন ।
উপায়ন্তর না পেয়ে, এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
জানা গেছে, ওই ছাত্রীকে আইনি সহায়তা দিচ্ছেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। তিনি ওই ছাত্রীর পক্ষে গত ২২ মার্চ ইউএনও মনজুর হোসেনের কাছে আইনি নোটিশ পাঠান।
ইউএনও প্রভাবশালী হওয়ায় ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে ওই কলেজছাত্রীর পরিবারে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। অভিযোগকারী ওই কলেজছাত্রী বলেন, ‘ন্যায় বিচার নিয়ে শঙ্কিত আছি, যেহেতু তিনি ইউএনও আর আমি একজন সাধারণ ছাত্রী। যিনি তদন্ত করছেন তিনিও একজন বিসিএস ক্যাডার আর যার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে তিনিও বিসিএস ক্যাডার। তিনি ইউএনও হিসেবে ফ্যাসালিটি পাবে বা পাচ্ছে কিন্তু আমি কতটুকু পাবো সেটাই বিষয়।’